অস্থায়ী সেতু ভেঙে পড়ায় ৫ মাস ধরে ভোগান্তি
Published: 21st, January 2025 GMT
কুমিল্লার তিতাসে আসমানিয়া বাজারের কাছে গোমতী নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুর পাশের অস্থায়ী সেতুটি বন্যার সময় ভেঙে যায়। গত পাঁচ মাসেও পুনর্নির্মাণ হয়নি সেতুটি। এ কারণে ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন ৪৫টি গ্রামের প্রায় দেড় লাখ মানুষ। বাধ্য হয়ে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে ও নৌকায় যাতায়াত করছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি উপজেলার রায়পুর বাসস্টেশন থেকে তিতাসের বাতাকান্দি বাজার পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এ সড়কের সংস্কারকাজ চলছে। সড়কের আসমানিয়া বাজারের কাছে গোমতী নদীর ওপর ১০ কোটি ৭৭ লাখ ২৪ হাজার ৬৯৯ টাকা ব্যয়ে ৭৫ মিটার একটি সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। দুই পারের মানুষের চলাচলের জন্য নির্মাণাধীন সেতুর দক্ষিণ পাশে ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮০ মিটারের একটি অস্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হয়, যা গত ২৯ মে বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় ভেঙে যায়। পরে বাল্কহেডের মালিকদের সহযোগিতায় পুনরায় অস্থায়ী সেতুটি নির্মাণ করা হয়, সেটি ২১ আগস্ট বন্যার সময় স্রোতে দ্বিতীয়বারের মতো ভেঙে যায়। গোমতী নদীর পূর্ব পাশে আসমানিয়া বাজার। প্রতিদিন পশ্চিম পারের প্রায় ২৫ গ্রামের লোকজন ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজে বাজারে যাতায়াত করেন। অন্যদিকে পূর্ব পারের প্রায় ২০ গ্রামের লোকজন উপজেলা সদরে যাতায়াতের জন্য সেতু ব্যবহার করতেন। ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট নতুন সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে, যা শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি। কাজটি বাস্তবায়ন করছে এসএবিএনএমই নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিন দেখা গেছে, সেতুর দক্ষিণ পাশে অস্থায়ী সেতুটি নদীতে ভেঙে পড়েছে। শুধু একটি পিলার দাঁড়িয়ে আছে। সেতুর উত্তর পাশে ইঞ্জিনচালিত চারটি নৌকা যাত্রী পারাপার করছে। অস্থায়ী ঘাট নির্মাণ করে নৌকা চলাচল করছে। দুই-তিন মিনিট পরপর এপার থেকে ওপারে নৌকা যাচ্ছে। প্রতিদিন এখান দিয়ে বিভিন্ন গ্রামের মানুষ আসমানিয়া বাজারে যায়। এখানে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। রয়েছে একাধিক এজেন্ট ব্যাংক। তিতাস উপজেলার ৫টি, দাউদকান্দির ২টি ও মুরাদনগর উপজেলার ১টি ইউনিয়নের ৪৫টি গ্রামের লোকজন এই সেতু এলাকা হয়ে যাতায়াত করে।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রুবায়েত রাতুল বলেছে, ‘ট্রলার দিয়ে আমাদের যাতায়াত করতে নানা রকম সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে সময়মতো স্কুলে পৌঁছাতে পারি না। অনেক সময় ওঠানামা করতে গিয়ে পড়ে আহত হচ্ছি। অস্থায়ী সেতুতে যাতায়াত করার সময় আমরা সময়মতো স্কুলে আসতে পারতাম।’
সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদেকা ইসলাম জুই জানায়, নদী পার হয়ে স্কুলে যাতায়াত করতে ভয় লাগে। এ কারণে অনেকে স্কুল আসতে চায় না। বিশেষ করে কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীরা অনেকেই স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।
এক স্কুল শিক্ষক বলেন, আসমানিয়া বাজারে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ ১০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিদিন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী এসব প্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া করে। নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতে শিক্ষার্থীদের নানা রকম সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। পাঁচ মাস আগে সেতুটি ভেঙে পড়লেও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
নয়াকান্দি গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, এই বাজার অনেক পুরোনো। এখানে নিয়মিত বাজার করেন তারা। সেতুটি ভেঙে পড়ায় বাজারে যাতায়াতে কষ্ট হচ্ছে। কারণ বাজার করে নৌকা, নৌকা থেকে আবার গাড়িতে উঠতে হচ্ছে।
নারান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও বাজারের ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেনের ভাষ্য, আসমানিয়া তিতাসের বড় একটি বাজার। এই বাজারে শুধু তিতাস উপজেলার নয়, মুরাদনগর, দাউদকান্দির লোকজনও আসে। সেতুটি ভেঙে পড়ায় অনেকে অন্য জায়গা থেকে বাজার করছেন। এখানে আসছে না যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে। তিনি বলেন, ‘আগে যেখানে আমার দোকানে প্রতিদিন ২০ বস্তা চাল বিক্রি করতাম, এখন সপ্তাহে বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ বস্তা। আমার মতো বাজারে সব ব্যবসায়ীর খারাপ অবস্থা চলছে।’ দ্রুত সেতুটি নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
তিতাস উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, নির্মাণাধীন সেতুর পাশে অস্থায়ী একটি সেতু করা হয়েছিল, কিন্তু গত বন্যায় সেটি ভেঙে যায়। পরে অস্থায়ী সেতুটি পুনর্নির্মাণের জন্য চাহিদা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দ না আসায় পুনর্নির্মাণ করা যাচ্ছে না।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র ম ণ কর য ত য় ত কর আসম ন য় উপজ ল র ব যবস সড়ক র
এছাড়াও পড়ুন:
দেবীগঞ্জে দেয়ালে দেয়ালে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে লেখা হয়েছে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল থেকে পৌরসভার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে এই লেখা সাধারণ মানুষের নজরে আসে। তবে, কারা এই স্লোগান লিখেছেন, তা কেউ দেখেননি।
পৌরসভার শহীদ আব্দুল মান্নান সড়ক সংলগ্ন উপজেলা পরিষদ চত্বর, নৃপেন্দ্র নারায়ণ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের দেয়ালে লাল, কালো ও নীল রঙের কালি দিয়ে ‘জয় বাংলা’, ‘জয় শেখ হাসিনা’ এবং ‘শেখ হাসিনা তুমি আস্থা’- এমন স্লোগান লেখা হয়েছে।
এদিকে, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের অফিসিয়াল পেজ থেকে আজ দুপুর ১টায় দেবীগঞ্জের বিভিন্ন দেয়ালে লেখা স্লোগানের ছবি ও ভিডিও শেয়ার করা হয়। এ বিষয়ে জানতে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
দেবীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান সুমন বলেন, ‘নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রশাসনকে জানানো হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রাতের আঁধারে দেয়ালে দেয়ালে ‘জয় বাংলা’ লিখছে তারা। উপজেলা ছাত্রদলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সজাগ রয়েছে।"
প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পঞ্চগড় জেলা সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী বলেন, “গত ৫ আগস্টের পর শুধু দেবীগঞ্জ নয়, পুরো পঞ্চগড়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। দেবীগঞ্জ, বোদা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে এসব দেওয়াল লিখন লক্ষ্য করা গেলেও প্রশাসনের তেমন কোনো তৎপরতা নেই। এসব লেখা ’২৪ বিপ্লবের চেতনাকে ম্লান করার চেষ্টা করছে। যা রুখতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। প্রশাসনের প্রতি আহ্বান- তাদের (ছাত্রলীগ নেতাকর্মী) দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক। তাদের অপতৎপরতা রুখে দিতে পঞ্চগড় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।”
দেবীগঞ্জ থানার ওসি সোয়েল রানা মোবাইলে বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে আসছে। এখনি কোনো মন্তব্য করতে পারছি না। বিষয়টি দেখছি আমরা।”
ঢাকা/নাঈম/মাসুদ