বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে আবাসিক সংকট প্রকট হলেও প্রতিষ্ঠানটির ছাত্রাবাস বন্ধ প্রায় ১৪ বছর। পাঁচ বছর আগে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন আরেকটি ছাত্রাবাস তৈরি করা হলেও এখনও তা চালু করা হয়নি। শিক্ষার্থীরা বলছেন, সিট ভাগাভাগি নিয়ে সহিংসতার আশঙ্কা, হলে বসবাসের পরিবেশ নেই, এমন নানা ছুতোয় ছাত্রাবাসগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সমস্যা নিয়ে কথা বলার জন্য যে ছাত্র সংসদ, তারও নির্বাচন হয় না ২৮ বছর। 

২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বর ছাত্রাবাসে সিট দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর জেরে কলেজের শহীদ আখতার আলী মুন হল, শহীদ তিতুমীর হল এবং শের-ই-বাংলা হলে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়। ফলে তিনটি ছাত্রাবাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কলেজ প্রশাসন। ছেলেদের জন্য তৈরি আখতার আলী মুন হলে ৯৬, শহীদ তিতুমীর হলে ৮০ এবং শের-ই-বাংলা হলে ৪০টি আসন। তবে তিনটি ছাত্রাবাস চালু হলে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থীর আবাসিক সংকট নিরসন হতো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 
জানা গেছে, দুই বছর বন্ধ থাকার পর শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে ২০১১ সালে কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রাবাস তিনটি খুলে দিতে ১ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজ সম্পন্ন করে। অচিরেই ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেওয়া হচ্ছে, এমন আশ্বাসে পার হয়ে গেছে আরও ১২ বছর। এর মধ্যেই ছাত্রীদের জন্য তৈরি রোকেয়া হলের পাশাপাশি ২৪৫ শিক্ষার্থীর জন্য ৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালে আরেকটি ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হয়। সেটিও চালু করা হচ্ছে না। নতুন ছাত্রাবাসটি খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, সেখানেও কিছু সংস্কার কাজ করতে হবে। কবে নাগাদ এসব সংস্কার কাজ শুরু হবে, কলেজ প্রশাসন বলতে পারছে না।

কলেজ প্রশাসন-সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় ২৯ হাজার ছাত্রছাত্রীর এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদের সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯৬ সালে। তখন ভিপি-জিএসসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব পদে নিরঙ্কুশ জয় পায় ছাত্রদল ও শিবির সমর্থিত প্যানেল। ১৯৯৮ সালে তপশিল ঘোষণার পর স্থগিত করা নির্বাচন ২৮ বছরেও আর হয়নি। 
ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেওয়ার পাশাপাশি ছাত্র সংসদ সচল রাখার পক্ষে ছাত্রনেতারা। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কলেজ শাখার সদস্য সচিব নিয়তি সরকার নিতু বলেন, অনেক শিক্ষার্থী আছেন যারা টিউশনি করে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা হলে থাকার সুবিধা পেলে আর্থিক দৈন্যদশা কিছুটা হলেও লাঘব হতো। ছাত্র সংসদ না থাকায় কলেজে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। দুর্নীতি করার সুযোগ পায় কলেজ প্রশাসন। ছাত্র সংসদ থাকলে এ সুযোগ পেত না। 

ছাত্র ইউনিয়ন কলেজ শাখার সভাপতি মো.

আকাশ বলেন, আমরা ছাত্র সংসদ নির্বাচন ও হল খুলে দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছি। এ দুটি দাবি পূরণ হলে শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা কিছুটা হলেও সমাধান এবং ছাত্র রাজনীতি আরও বিকশিত হবে।
কলেজ ছাত্রদলের নেতা আতিকুল ইসলাম বিপ্লব বলেন, ছাত্র সংসদের কার্যক্রম বন্ধ ও ছাত্র রাজনীতি চর্চার পথ বন্ধ রাখলে উপযুক্ত নেতা তৈরি হবে না। তিনি দ্রুত ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, কোটি কোটি টাকা খরচে হল তৈরি করে যদি শিক্ষার্থীদের উপকারে না আসে, তাহলে এসব অর্থ অপচয়ের শামিল। 
এ বিষয়ে কলেজের নবাগত অধ্যক্ষ অধ্যাপক শওকত আলম মীর বলেন, আমি চাচ্ছি যত দ্রুত সম্ভব ছাত্রাবাসগুলো খুলে দিতে। এ জন্য কিছু সংস্কার কাজ করতে হবে। সেগুলো করে ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেব। ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেশের অন্যান্য কলেজে শুরু হলে এখানেও হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ন্যায্য নগর গঠনে ভূমিকা রাখবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি: ডিএনসিসি প্রশাসক

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেছেন, “ন্যায্য নগর গঠনে ভূমিকা রাখবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি।”

শুধু সরকার বা সিটি কর্পোরেশন নয়, নাগরিকদের সঙ্গে নিয়ে ন্যায্য নগর প্রতিষ্ঠা করতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) গুলশানের নগর ভবনে অনুষ্ঠিত ডিএনসিসি এবং বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর যৌথ আয়োজনে ‘ন্যায্য নগর গঠনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভূমিকা’ শীর্ষক একটি পলিসি ডায়ালগে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রশাসক।

আরো পড়ুন:

ডিএনসিসি প্রশাসকের সঙ্গে চীনা রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ 

যত্রতত্র ময়লা না ফেলার আহ্বান ডিএনসিসি প্রশাসকের

স্টেট ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকীর সভাপতিত্বে পলিসি ডায়ালগে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, “ঢাকা শহরের বেশ কিছু পরিকল্পিত এলাকা আছে যেখানে বিল্ডিংগুলোর উচ্চতা কাছাকাছি, ফলে সেই বিল্ডিংগুলোর সোলার ক্লিয়ারেন্স অনেক বেশি। সেই এলাকাগুলোতে পরিকল্পিতভাবে সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে নিজস্ব বিদ্যুতের চাহিদা মিটিয়ে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব। পাশাপাশি ঢাকার আশপাশের উদ্ধারকৃত নদীর পাড়কে কাজে লাগিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন সম্ভব।”

তিনি জানান, রুফটপ সোলার প্যানেল ব্যবহারকারীদের হোল্ডিং ট্যাক্স এর ওপর ৫ শতাংশ কর রেয়াত দেওয়ার কথা ভাবছে সিটি কর্পোরেশন।

পলিসি ডায়ালগের মূল প্রবন্ধে ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, “জীবনের মান সূচকে ঢাকা শহর শেষ দিক থেকে ৪র্থ, বিশ্বের সবচেয়ে ধীর গতির শহর, বায়ু দূষণের তালিকায় শীর্ষে, দূষিত শহরের তালিকায় ৬ষ্ঠ, বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকার ১ম সারিতে, বিশ্বে যানজটের সূচকে ৫ নম্বরে, পৃথিবীর ৪র্থ ঘনবসতিপূর্ণ শহর, শব্দ দূষণেও শীর্ষে ঢাকা এবং স্বাস্থ্য সেবার সূচকে শেষের দিকে। আর এই দূষণগুলো থেকে পরিত্রাণের অন্যতম উপায় হতে পারে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি।”

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) এর প্রেসিডেন্ট পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, “নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, পরিবহন ও শিল্প খাতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে আমরা একটি সুস্থ ও সবুজ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি।”

ডায়ালগে আরো অংশ নেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক এবং চেয়ারম্যান ড. এম. শহীদুল ইসলাম, বিআইপি এর উপদেষ্টা বোর্ডের আহ্বায়ক মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন, বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির সাবেক ডিন ড. ইজাজ হোসে, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ গবেষণা কেন্দ্রের (সিথ্রিইআর) সমন্বয়ক (অপারেশনস) মিসেস রৌফা খানম, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট, (ডব্লিউবিবিটি) এর পরিচালক গাউস পিয়ারী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাশেদুজ্জামান মজুমদার, ব্যারিস্টার নেওয়াজ মোরশেদ, ইয়ুথনেট গ্লোবাল এর সমন্বয়ক সোহানুর রহমান, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর রিসার্চ লিড ইঞ্জিনিয়ার মারজিয়াত রহমান, ব্রাইটার্সের চেয়ার ফারিহা সুলতানা অমি, ইকো-নেটওয়ার্ক গ্লোবালের নির্বাহী পরিচালক শামীম আহমেদ মৃধা, ন্যাকমের পরিচালক রাশিদুজ্জামান আহমেদ, পিওর আর্থ বাংলাদেশের কনসালটেন্ট আহমেদ শামীম আল রাজি, সাসটেইনেবল রিসার্চ অ্যান্ড কনসালটেন্সি লিমিটেডের (এসআরসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু জুবায়ের, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের গবেষণা ও বাস্তবায়ন প্রধান মো. ইকবাল ফারুক, ও. ক্রিডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহাদাত হোসেন, সচেতন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, বারসিকের প্রজেক্ট ম্যানেজার কামরুজ্জামান সাগর, ইকিউএমএস কনসাল্টিংয়ের টেকনিক্যাল ম্যানেজার (টেস্টিং) আহমেদ জুবায়ের, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সহ-সভাপতি মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক, অ্যাকশন এইডের প্রোগ্রাম অফিসার হামিদুল ইসলাম এবং মিশন গ্রিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান রনি।

ঢাকা/আসাদ/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ