চারঘাটে খেয়ালখুশির গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা
Published: 21st, January 2025 GMT
২৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক সময়সূচি অনুযায়ী চলছে না। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা তা মানছেন না। বেশির ভাগ ক্লিনিক সকাল ১০টার পর খোলে, বন্ধ হয় দুপুর ১২টার মধ্যে। ক্লিনিকগুলোতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও পরিদর্শকদের নিয়মিত পরিদর্শনের কথা থাকলেও তারা সে দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করেন না। এভাবে খেয়ালখুশি মতো চলছে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা।
জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে চারঘাটের ছয়টি ইউনিয়নে পাঁচটি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র এবং ২৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। কিন্তু জনবল সংকটসহ নানা অজুহাত দেখিয়ে স্বাস্থ্যসেবায় আশানুরূপ সাড়া জাগাতে পারেনি সরকারের এ উদ্যোগ। তবে সংশ্লিষ্টরা নিয়মিত ওষুধসহ কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার কথা বললেও উল্টো কথা বলছেন সেবাপ্রার্থীরা।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিকে বিনামূল্যে অন্তঃসত্ত্বা, স্বাভাবিক প্রসব, জটিল প্রসব, গর্ভ-উত্তর সেবা, শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা, ভিটামিন এ ক্যাপসুল বিতরণ ও জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল প্রদানসহ ২৭টি সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও বেশির ভাগ থেকে বঞ্চিত রোগীরা। ৩০ রকমের ওষুধ দেওয়ার কথা বলা হলেও জ্বর-সর্দির বাইরে ওষুধ মিলছে না।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা। ভায়ালক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে সেবা নিতে এসেছেন দিনমজুর জিয়াউল হক। পাঁচ দিন ধরে তার সর্দি-জ্বর। জিয়া জানান, গত বুধ ও বৃহস্পতিবারও এসেছিলেন। দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করে খোলা না পেয়ে ফিরে গেছেন। শনিবারও সকাল ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে চলে গেছেন। ওষুধ ও সেবা না পাওয়ার একই অভিযোগের কথা জানালেন আব্দুল কুদ্দুস, মর্জিনা বেওয়াসহ অপেক্ষারত আট-দশজন।
তাদের অভিযোগ, সদরে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আলম হোসেনের ক্লিনিক আছে। সেখানে সময় দেওয়ার কারণে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অনিয়মিত।
আলম হোসেনের দাবি, কয়েক দিন ছুটিতে ছিলেন। তাই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাননি। আয়া, ফার্মাসিস্ট, পিয়নসহ প্রায় সব পদ শূন্য থাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র ঠিকমতো খোলা থাকছে না।
একই চিত্র দেখা গেছে ভাটপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে। দুপুর ১২টার দিকে অপেক্ষারত তসলিমা বেগম বলেন, রোগীদের ৩০ ধরনের ওষুধ সরবরাহের কথা। রোগ যাই হোক, ডাক্তার দুটি প্যারাসিটামল ছাড়া কিছুই দেন না। আজ সেটাও পেলাম না।
এ কেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার হাবিবুর রহমান বলেন, চা খাওয়ার জন্য বাইরে গিয়েছিলাম। এখানে জনবল কম। প্রয়োজনে বাইরে গেলে নিরাপত্তার কারণে হাসপাতাল বন্ধ রাখতে হয়।
একই অবস্থা কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতেও। শনিবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে বাটিকামারী কমিউনিটি ক্লিনিকে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘ক্লিনিক কখন খোলা থাকে, কখন বন্ধ হয়– কেউ জানে না। ভাগ্য ভালো থাকলে মাঝেমধ্যে খোলা পাওয়া যায়।’
এ ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) রবিউল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য সহকারী আসেননি। আমি একা ছিলাম। একটা কাজে বাজারে থাকার কারণে কিছু সময় বন্ধ রাখতে হয়েছিল।
কেজিপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় গিয়ে বন্ধ পাওয়া গেছে। অফিসের কাজে বাইরে ছিলেন জানিয়েছেন সেখানকার সিএইচসিপি জাকিয়া নাসরিন।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র দেখভালের দায়িত্ব থাকা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফয়সাল ফেরদৌস বলেন, জনবল সংকটই আমাদের মূল সমস্যা। তার
পরও যে অভিযোগগুলো উঠেছে খোঁজখবর নিয়ে তা সমাধান করা হবে।
একই কথা বলেন সদ্য যোগদান করা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ব স থ য ও পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
রোগী এলেই সদর হাসপাতালে রেফার
কালাই পৌর শহরের সড়াইল মহল্লার বাসিন্দা আবু বক্কর। তিনি শিশুসন্তানকে নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছিলেন চিকিৎসকের কাছে। এসে দেখেন, শিশুবিশেষজ্ঞ নেই। কর্তব্যরত এক চিকিৎসক তাঁকে জয়পুরহাট আধুনিক হাসপাতালে যেতে পরামর্শ দেন। তাঁর ভাষ্য, এখানে চিকিৎসক থাকলে আমার অর্থ ও সময় সাশ্রয় হতো। এ সময় রাব্বি হোসেন নামে একজন বলেন, ‘একজন রোগীরও চিকিৎসা করায় না। সব রোগীকে জয়পুরহাট সদরে পাঠায় (রেফার)। তাহলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে লাভ কী?’
প্রায় দুই লাখ মানুষের বসবাস কালাই উপজেলায়। এলাকার বাসিন্দাদের জন্য একমাত্র সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। চিকিৎসক, নার্স ও আধুনিক যন্ত্রপাতির সংকটে দরিদ্র ও অসহায় মানুষ কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর বাড়তি চাপ থাকায় চিকিৎসকরা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৪ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ছয়জন। গুরুত্বপূর্ণ অধিকাংশ বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। সার্জারি, শিশুস্বাস্থ্য, চক্ষু, কার্ডিওলজি, নাক-কান-গলা, অর্থোপেডিকস এবং ডেন্টাল সার্জনের দুটি পদের মধ্যে একটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। এসব পদ পূরণে কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে।
সরেজমিন গেলে সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিদিন গড়ে ২৫০-৩০০ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন। ৫০টি শয্যা থাকলেও ৮০ থেকে ১০০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। এতে অনেক রোগীর বারান্দা, সিঁড়ি এবং মেঝেতে থাকতে হয়। চিকিৎসক সংকটে তাদের সময়মতো সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক রোগীকে বাড়তি অর্থ খরচ করে অন্যত্র সেবা নিতে হচ্ছে।
শুধু চিকিৎসক নয়, হাসপাতালের তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ১৯৪ পদের মধ্যে ৯৩টি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। নার্স, স্বাস্থ্য সহকারী, স্বাস্থ্য পরিদর্শক, মিডওয়াইফ, চালক থেকে শুরু করে পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ প্রতিটি বিভাগে জনবল সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। আলট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র দীর্ঘদিন ধরে অকেজো। সার্জারি বিভাগে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই। বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটর থাকার পরও চলে না। ফলে রাতে অন্ধকারে থাকতে হয় রোগীদের।
ওয়ার্ডগুলোয় পানির সংকট ও টয়লেটের নোংরা অবস্থা রোগীদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে। জরুরি বিভাগের বেশির ভাগ পরীক্ষা বেসরকারি ক্লিনিক থেকে করাতে হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার বিনইল গ্রামের যমুনা বিবি বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে আমি খুবই অসুস্থ থাকায় চিকিৎসা নিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েছিলাম। গাইনি ডাক্তার না পাওয়ায় একজন দালালের সঙ্গে গিয়ে ক্লিনিকে চিকিৎসা নিই। এতে আমার অনেক টাকা খরচ হয়েছে।’
অভিযোগ উঠেছে, চিকিৎসক সংকটের সুযোগ নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট নিজেদের ‘ডাক্তার’ পরিচয় দিয়ে রোগী দেখছেন। আইন অনুযায়ী, এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া কেউ চিকিৎসক পরিচয় ব্যবহার করতে পারেন না। অন্যথায় রোগী ভুল চিকিৎসার শিকার হতে পারেন। দালাল চক্র এ সুযোগে রোগীদের ভুল বুঝিয়ে ক্লিনিকে নিয়ে যাচ্ছে। সানজিদা নামে এক রোগী অভিযোগ করে বলেন, ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঠিকমতো ওষুধ দেয় না। নার্স ও অন্য কর্মচারীরা টিকিট কেটে আগে ওযুধ নিয়ে নেয়। সাধারণ রোগীরা ওষুধ পায় না।’
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মাহবুব উল আলম বলেন, সীমিত জনবল এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দিয়ে যতটুকু সম্ভব সেবা দেওয়া হচ্ছে। শূন্যপদের বিপরীতে জনবল এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ ছাড়া মানসম্মত সেবা দেওয়া সম্ভব নয়।