ফাইলচাপা কার্যালয় নির্মাণের প্রকল্প
Published: 21st, January 2025 GMT
সুনামগঞ্জ জেলায় বিআরটিএ অফিস কাম মোটর ড্রাইভিং টেস্টিং অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের (বিএমডিটিটিসি) কার্যক্রম থমকে আছে। শান্তিগঞ্জের পঞ্চাশহাল মৌজায় জমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদন না দেওয়ায় প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। এ নিয়ে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয়দের মাঝে।
বিআরটিএ কর্তৃপক্ষই এই প্রকল্পটি ফাইলচাপা দিয়ে রেখেছে বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা। তারা বিএমডিটিটিসি’র কার্যালয়ের স্থান পরিবর্তন করে দ্রুত কার্যক্রম শুরু করার দাবি জানিয়েছেন।
জানা যায়, চার বছর আগে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সুনামগঞ্জ জেলায় বিআরটিএ অফিস কাম মোটর ড্রাইভিং টেস্টিং অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার করার সিদ্ধান্ত নেয়। স্থানীয়দের বিশেষ করে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠান নির্মাণে জমি নির্ধারণ করা হয় জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার পঞ্চাশহালে। জেলা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে শান্তিগঞ্জ উপজেলা পার হয়ে উপজেলার ডুংরিয়া গ্রামমুখী সড়কের পাশে পঞ্চাশহালে ৪ দশমিক ০৮ একর জমি নির্ধারণ হয় এই প্রকল্পের জন্য।
ওই বছরের ৬ এপ্রিল বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবের কাছে বিএমডিটিটিসি’র কার্যালয়ের জমি নির্ধারণ চূড়ান্ত হয়েছে জানিয়ে প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য চিঠি পাঠান। প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় জেলা শহরের আশপাশে না হয়ে শান্তিগঞ্জে হচ্ছে জেনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়। তারা বিষয়টি স্থানীয় বিশিষ্টজনদের জানান। পরে জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে বিএমডিটিটিসি’র কার্যালয়ের স্থান সুনামগঞ্জ জেলা সদরের কাছাকাছি করার দাবি জানান। বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ পঞ্চাশহাল মৌজার স্থান পরিবর্তন করে অন্য কোনো স্থানে
জমি নির্ধারণ করেননি। এ কারণে এ প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি।
বিআরটিএ’র সুনামগঞ্জ অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, ওই সময় সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীর পছন্দের স্থান ছিল পঞ্চাশহাল মৌজায়। সেটি নির্ধারণ করে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান
সংশ্লিষ্ট সচিবকে প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য চিঠি পাঠান। পরে স্থানীয় বিশিষ্টজনেরা এই বিষয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখানোয় প্রকল্পটি ফাইলচাপা পড়ে যায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সুনামগঞ্জের জেলা আহ্বায়ক ইমনদ্দোজা জানান, জেলা সদরের সঙ্গে সারা জেলার মানুষের যোগাযোগ রয়েছে। এখানেই জেলার গুরুত্বপূর্ণ অফিস হওয়া উচিত, যারা আগে শান্তিগঞ্জে এই অফিস করার চিন্তা করছিলেন তারা একপেশে ভাবনা থেকে এটি করেছিলেন। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এ ধরনের বৈষম্য মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই।
সুনামগঞ্জ জেলা বাস, মিনিবাস ও মাইক্রোবাস মালিক পক্ষের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মিয়া জানান, জেলা সদরে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়। আদালতের সব কার্যক্রম জেলা সদরে হয়। ব্যক্তিগত পরিবহন থেকে গণপরিবহনের সব অফিসও জেলা শহরে। পরিবহন শ্রমিকদের জেলা কার্যালয়ও সুনামগঞ্জ শহরে। এই অবস্থায় বিএমডিটিটিসি’র কার্যালয় শান্তিগঞ্জে করার সিদ্ধান্ত আপত্তিকর। বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ এমন একটা সিদ্ধান্ত কেনই বা নিল, আবার এখন প্রকল্পটি ফাইলবন্দি করে রেখেছে।
জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মুনাজ্জির হোসেন সুজন জানান, এ ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ মানা যায় না। সুনামগঞ্জবাসী জেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের স্থান পরিবর্তন করে জেলা সদরের কাছাকাছি করার দাবি তুলেছেন। একই সঙ্গে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ অফিসও জেলা সদরের কাছাকাছি করার দাবি জানান তিনি।
জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম নুরুল জানান, জেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে হবে বিএমডিটিটিসি বা বিআরটিএ’র কার্যালয়। বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্ত দ্রুত পরিবর্তন করে জেলা সদরের পাশে নতুন ভূমি নির্ধারণ করে, কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া জরুরি।
সে সময় জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা আখতারুজ্জামান সেলিম জানান, বিআরটিএ অফিস জেলা সদর থেকে শান্তিগঞ্জ চলে যাচ্ছে শুনে বারের নেতারা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। জমি নির্ধারণের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার দাবি জানিয়েছিলেন তারা। জেলা প্রশাসক তাৎক্ষণিক বলেছিলেন, সিদ্ধান্তটি ওপর থেকে এসেছে, তার কিছু করার নেই।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেরেনূর আলী জানান, প্রকল্পটি ফাইলচাপা দিয়ে রেখেও অন্যায় করছেন সংশ্লিষ্টরা। এখন এ প্রকল্পের কার্যক্রম দ্রুত শুরু করতে হবে। না হয় সংশ্লিষ্টরা এজন্য দায়ী থাকবেন।
বিআরটিএ’র সিলেট বিভাগের উপপরিচালক (প্রকৌশল) মো.
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ছাব্বির আহমদ আকুঞ্জি জানান, তিনি দায়িত্ব পালনের সময়ে এই প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এ-সংক্রান্ত কোনো চিঠিও তাদের কাছে আসেনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প স ন মগঞ জ জ ল ব এমড ট ট স ব আরট এ র কর র দ ব প রকল প র জন য সদর র
এছাড়াও পড়ুন:
ইফতার করতে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচবিবিতে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নিহত
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব গোলাম নাছির (বিপ্লব) সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। আজ সোমবার বিকেলে ইফতার করতে মোটরসাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার ফিচকারঘাট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পাঁচবিবি থানার ওসি মইনুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। নিহত গোলাম নাছির পাঁচবিবি উপজেলার মধ্য মালঞ্চ গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা গোলাম নাছির পারিবারিক কাজে সোমবার পাঁচবিবি উপজেলা সদরে এসেছিলেন। তিনি ইফতার করতে মোটরসাইকেল চালিয়ে বাড়িতে যাচ্ছিলেন। ইফতারের আগে ফিচকার ঘাট এলাকায় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা সড়কে ঘোরানোর সময় মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে গোলাম নাছির মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে সড়কের ওপর পড়ে গুরুতর আহত হন। স্থানীয় লোকজন ও ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় তাঁকে জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মইনুল ইসলাম সোমবার রাত সোয়া দশটায় প্রথম আলোকে বলেন, ইফতার করতে বাড়িতে যাওয়ার সময় পাঁচবিবি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে ওসি জানিয়েছেন।