একবিংশ শতাব্দী হলো জ্ঞান, উদ্ভাবন ও কৌশলগত দক্ষতার যুগ। একটি রাষ্ট্রীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এই তিনটি ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে সমৃদ্ধ করে, যা উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’ থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী হতে পারে। একটি ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’ মূলত অভিজ্ঞতামূলক গভীর গবেষণা, নীতিগত বিশ্লেষণ ও উদ্ভাবনী চিন্তাধারার মাধ্যমে রাষ্ট্রের নীতি প্রণয়ন এবং উন্নয়ন কার্যক্রম সমৃদ্ধ করতে সহায়তা করে। বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তি, অর্থনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক রাজনীতির পরিবর্তনশীল বাস্তবতা দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য গভীর ও সুসংগঠিত বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়ে তুলেছে। বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতির ক্ষেত্রে এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য কৌশলগত রূপরেখা প্রণয়ন করতে পারে। 
রাষ্ট্রীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ক তরুণ প্রজন্মের মেধাবীদের গবেষণা ও উদ্ভাবনে অনুপ্রাণিত করতে পারে, যা ভবিষ্যতে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখবে। এটি দেশের নীতিনির্ধারকদের তথ্যভিত্তিক এবং বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ করে দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিত করবে। সুতরাং বাংলাদেশের মতো দ্রুত পরিবর্তনশীল ও প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে রাষ্ট্রীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ক একটি অপরিহার্য সংযোজন হতে পারে। এটি উন্নয়ন অগ্রাধিকার নির্ধারণে সহায়ক হতে পারে, যেখানে দেশের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ যেমন দারিদ্র্য দূরীকরণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবেশ সংরক্ষণকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এটি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে, নীতি বাস্তবায়নে একটি সুসংগঠিত দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করতে পারে। একই সঙ্গে একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে গবেষণা ও পরামর্শ প্রদান করবে, যা আন্তর্জাতিক চুক্তি ও অংশীদারিত্বে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় সহায়ক হবে।

রাষ্ট্রীয় ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’ না থাকলে একটি রাষ্ট্র বহুমুখী ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে। প্রথমত, নীতি প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় গভীর বিশ্লেষণ এবং দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গির অভাব দেখা দিতে পারে, যা রাষ্ট্রের উন্নয়ন কার্যক্রম অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং অকার্যকর করে তুলতে পারে। দ্বিতীয়ত, বৈশ্বিক পরিবর্তন ও প্রযুক্তিগত বিপ্লবের যুগে, তথ্য ও গবেষণাভিত্তিক নীতি না থাকলে রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাষ্ট্রের কূটনৈতিক অবস্থান দুর্বল হতে পারে। কারণ গবেষণা ও বিশ্লেষণের অভাবে কৌশলগত অংশীদারিত্ব এবং চুক্তি করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র নিজের স্বার্থ সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হতে পারে। 

রাষ্ট্রীয় ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’-এ এমন ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত যারা নীতি প্রণয়ন, গবেষণা এবং বাস্তবভিত্তিক সমাধান প্রদানে গভীর অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানসম্পন্ন। প্রথমত, একাডেমিক গবেষক ও শিক্ষাবিদ যারা অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজবিজ্ঞান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও পরিবেশবিজ্ঞান নিয়ে কাজ করেছেন, তারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। তাদের তাত্ত্বিক জ্ঞান ও গবেষণা দক্ষতা থিঙ্ক ট্যাঙ্ককে তথ্যনির্ভর নীতি প্রণয়নে সহায়তা করবে। দ্বিতীয়ত, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ, সরকারি নীতিনির্ধারক ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের থাকা জরুরি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অভিজ্ঞ কূটনীতিক ও আইন বিশেষজ্ঞরাও থিঙ্ক ট্যাঙ্কে কার্যকর অবদান রাখতে পারেন। কারণ তারা বৈশ্বিক রাজনীতি, আন্তর্জাতিক চুক্তি ও কৌশলগত অংশীদারিত্ব নিয়ে কাজ করেছেন। সবশেষে তরুণ উদ্ভাবক ও উদ্যোক্তাদের অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। সমন্বিতভাবে এ ধরনের ব্যক্তি থিঙ্ক ট্যাঙ্ককে গবেষণা ও নীতিতে বৈচিত্র্য, গভীরতা এবং বাস্তবসম্মত সমাধান প্রদানে সমর্থ করে তুলতে পারেন।

ড.

মোহাম্মাদ আনিসুর রহমান: ডিন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ,  
বশেমুরবিপ্রবি, গোপালগঞ্জ 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক শলগত প রণয়ন

এছাড়াও পড়ুন:

রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা প্রয়োগে নীতিমালা কেন প্রণয়ন করা হবে না: হাইকোর্ট

সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের অধিকার সম্পর্কে বলা রয়েছে। উল্লেখিত ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে নীতিমালা (গাইডলাইন) কেন প্রণয়ন করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ রুল দেন। উল্লেখিত ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়নে নিষ্ক্রিয়তা সংবিধানের ৭, ২৭, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হিসেবে কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে, কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের দেওয়া যেকোনো দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির রয়েছে। এই ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা নেই উল্লেখ করে এ বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে গত ২০ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান রিটটি করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী ইশরাত হাসান নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যটার্নি জেনারেল মোহাম্মদ মহসিন কবির।

পরে আইনজীবী ইশরাত হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিবসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।’

রিট আবেদনকারী আইনজীবীর ভাষ্য, সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতি সাজাপ্রাপ্ত কাউকে ক্ষমা করতে পারেন। এই ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে ইতিমধ্যে অনেক সাজাপ্রাপ্ত আসামি ক্ষমা পেয়েছেন, এর বেশির ভাগ হত্যা মামলার আসামি। ক্ষমা করার এই ক্ষমতা প্রয়োগে কোনো নীতিমালা নেই। অর্থাৎ কিসের ভিত্তিতে ও কোন কোন দিক বিবেচনায় ক্ষমা করা হয়—এ–সংক্রান্ত কোনো নীতিমালা নেই। এ ছাড়া বিভিন্ন ঘটনাদৃষ্টে সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের অপব্যবহার হয়, যেখানে রাজনৈতিক আদর্শ বিবেচনায় দণ্ডিতকে ক্ষমা করতেও দেখা যায়। যা সংবিধানের ৭, ২৭, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সে জন্য ক্ষমা করার এই ক্ষমতা প্রয়োগে নীতিমালা প্রণয়ন আবশ্যক। তাই জনস্বার্থে রিট করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা প্রয়োগে নীতিমালা কেন প্রণয়ন করা হবে না: হাইকোর্ট