হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে হঠাৎ তদন্তে গতি
Published: 21st, January 2025 GMT
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা শ্রমিক লীগের সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আব্দুল মোতালেবের বাড়িতে ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর বিস্ফোরণে একটি চরমপন্থি দলের সদস্য ফজলু হক নিহতের ঘটনায় সংশ্লিষ্টরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। কথিত আছে, ওই ঘটনার মূল হোতা সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি আব্দুল মমিন মণ্ডল ও তাঁর নির্বাচনী সমন্বয়ক আমিনুল ইসলাম ওরফে ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল। কিন্তু শুরু থেকেই রহস্যজনক কারণে পুলিশের সন্দেহের বাইরে ছিলেন তারা। বিস্ফোরণের ঘটনাটি শুরু থেকেই আড়ালের চেষ্টা করেন বেলকুচি থানার সাবেক ওসি আনিছুর রহমান ও সহকারী পুলিশ সুপার জন রানা। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের কয়েক দিন আগে জন রানা চাকরি ছেড়ে সস্ত্রীক কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন।
তবে বিস্ফোরণের ঘটনার ১৩ মাস পর ওই মামলার তদন্তে হঠাৎ গতি ফিরেছে। যদিও ঘটনার মূল অভিযুক্তরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন বেলকুচির থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো.
এদিকে স্থানীয়দের সহায়তায় গত ৫ জানুয়ারি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন শ্রমিক লীগের সাবেক নেতা মোতালেব। এর পর মূল হোতাদের ইন্ধনে মোতালেব ও তালেবকে অভিযুক্ত দেখিয়ে আদালতে মামলার চার্জশিট দাখিলের পরিকল্পনা করেন এসআই নাজমুল। অভিযোগ রয়েছে, বিষয়টি জেনে গণমাধ্যমকর্মীরা তৎপর হলে এসআই নাজমুলের কাছ থেকে নথিপত্র জব্দ করেন জেলা ডিবির নতুন ওসি একরামুল হক। এরই মধ্যে তিনি তদন্ত শুরু করেছেন। ওসি একরামুল গত সোমবার বেলকুচিতে তদন্তে যান। কিন্তু পলাতক ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ও সাবেক এমপি মমিন মণ্ডলকে খুঁজে পাননি তিনি। ২০২৩ সালের ওই ঘটনায় মোতালেবের বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণে মারা যান একটি চরমপন্থি দলের সদস্য কুষ্টিয়া জেলা সদরের মিলপাড়ার বাসিন্দা ফজলু হক। অভিযোগ আছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সাবেক এমপি আব্দুল মমিন মণ্ডলের প্রতিপক্ষ আরেক সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসকে ঘায়েলে নৈরাজ্য সৃষ্টির পরিকল্পনায় আওয়ামী লীগের লোকজন কুষ্টিয়া থেকে বোমা তৈরির কারিগর ফজলুকে ভাড়া করে বেলকুচিতে আনে। কিন্তু বোমা তৈরির সময় হঠাৎ বিস্ফোরণে মারা যান ফজলু। নিহতের ভাই বিপুল হক মামলা করেন।
গত সোমবার বেলকুচিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা একরামুল হক বলেন, ‘যেহেতু খুব শিগগিরই চার্জশিট দাখিল করা হবে, তাই আসামিদের ভূমিকার বিষয়ে জানতে নিজেই সরেজমিন তদন্ত শুরু করেছি। সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নাজমুল ইসলাম বলেন, বাদীর এজাহারে সাবেক এমপি মমিন মণ্ডল ও ইঞ্জিনিয়ার আমিনুলের নাম নেই।
সিরাজগঞ্জ সিআইডির সাবেক ইন্সপেক্টর ছায়া-তদন্ত কর্মকর্তা মোহাইমিনুল ইসলাম বলেন, বোমা বিস্ফোরণকে প্রেশার কুকার বিস্ফোরণ উল্লেখ করে মামলার আগেই আলামত নষ্ট করে ফেলে আসামি মোতালেব ও তার স্বজন। বেলকুচি থানা পুলিশের গড়িমসির কারণে ঘটনার আলামত বাড়ির পাশে খালে ফেলা হয়। এমনকি বোমার আগুনে ঝলসে যাওয়া ঘরের দেয়াল রঙ করা এবং ভাঙা টাইলসও পরিবর্তন করা হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ব ক এমপ ল ইসল ম ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
গ্রিসে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার দুই বছর পূর্তিতে বিক্ষোভ, ধরপাকড়
গ্রিসে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার এথেন্সে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়েছে। রাজধানী এথেন্স ও দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর থেসালোনিকিসহ দেশজুড়ে হাজারো বিক্ষোভকারী সড়কে নেমে আসেন। একপর্যায়ে বিক্ষোভ সহিংস রূপ নেয়। কিছু জায়গায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষও হয়। কর্তৃপক্ষ জানায়, এথেন্স থেকে ৮০ জনের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আহত হয়েছেন পাঁচজন।
২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি, একটি যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে মালবাহী ট্রেনের সংঘর্ষে ৫৭ জন নিহত হন। বেশির ভাগই ছিলেন শিক্ষার্থী। দুর্ঘটনা কয়েক দশক আগে দেশটিতে বিদ্যমান যে অব্যবস্থাপনা ছিল, তার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
ধর্মঘটে সাড়া দিয়ে গ্রিসের বিভিন্ন শহরে গতকাল হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। গত কয়েক বছরে দেশটিতে এত বেশি মানুষকে রাস্তায় নামতে দেখা যায়নি। এত বেশি মানুষ রাস্তায় নামায় সরকারি-বেসরকারি অফিস ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান প্রায় অচল হয়ে পড়েছিল।
বিক্ষোভকারীরা সরকারকে উদ্দেশ্য করে ‘খুনি’ বলে স্লোগান দেন। এথেন্সে বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী ৫৭ বছর বয়সী ক্রিস্টোস মেইন বলেন, ‘ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকার কিছুই করেনি। এটা কোনো দুর্ঘটনা ছিল না, এটা ছিল হত্যাকাণ্ড।’
গতকাল এথেন্সের পার্লামেন্টের সামনের সিনট্যাগমা চত্বরে মানুষের ঢল নেমেছিল। স্প্রে দিয়ে চত্বরের মাঠে তাঁরা নিহত ব্যক্তিদের নাম লাল রং দিয়ে লিখে দেন। বিক্ষোভকারীদের ‘আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না’ বলেও স্লোগান দিতে দেখা যায়। ২০২৩ সালের ট্রেন দুর্ঘটনার শিকার এক নারী জরুরি বিভাগকে কল দিয়ে এই কথা বলেছিলেন। এটাই ছিল তাঁর শেষ বাক্য।
এথেন্সের বিক্ষোভ একটা সময় পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ছিল। কিন্তু হুড পরা তরুণদের একটি দল পুলিশকে লক্ষ্য করে পেট্রলবোমা ছুড়তে শুরু করলে বিক্ষোভ সহিংস হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবনে সামনের ব্যারিকেড ভাঙতে চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দাঙ্গা পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও জলকামান ব্যবহার করে। তখন বিক্ষোভকারীরা আশপাশ এলাকায় ছড়িয়ে যান। বিক্ষোভকারী ও দাঙ্গা পুলিশের মধ্যে ইঁদুর-বিড়াল খেলা চলতে থাকে।
এথেন্সের পাশাপাশি দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর থেসালোনিকিতেও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘাত হয়। সেখানে বিক্ষোভকারীরা ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে আকাশে কালো বেলুন ওড়ান।