বাঙালি মেয়েরা কখনও ত্বকের যত্নে হলুদ ব্যবহার করেছেন, আবার মধু-চিনিতে ভরসা রেখেছেন। এখন বিশ্বায়নের যুগ। সৌন্দর্যচর্চা এখন কেবল দেশীয় উপাদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। দেশীয় ও ঘরোয়া উপাদান তো আছেই, সেই সঙ্গে মানুষ বেছে নিচ্ছে ভিন্ন দেশের রূপচর্চার বিভিন্ন পদ্ধতি। কয়েক বছর ধরে তরুণীদের কাছে বেশ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে কোরিয়ান রূপচর্চার পদ্ধতি। শুধু বাঙালির মধ্যেই নয়; এ পদ্ধতি হাইপ তুলেছে বিশ্বজুড়ে। লিখেছেন ফারহানা রুমি
রূপসচেতন নারীর মধ্যে রূপচর্চা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার শেষ নেই। যুগ যুগ ধরে এই চর্চা চলমান। বাঙালি মেয়েরা কখনও ত্বকের যত্নে হলুদ ব্যবহার করেছেন, আবার মধু-চিনিতে ভরসা রেখেছেন। এখন বিশ্বায়নের যুগ। সৌন্দর্যচর্চা এখন কেবল দেশীয় উপাদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। দেশীয় ও ঘরোয়া উপাদান তো আছেই, সেই সঙ্গে মানুষ বেছে নিচ্ছে ভিন্ন দেশের রূপচর্চার বিভিন্ন পদ্ধতি। কয়েক বছর ধরে তরুণীদের কাছে বেশ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে কোরিয়ান রূপচর্চার পদ্ধতি। শুধু বাঙালির মধ্যেই নয়; এ পদ্ধতি হাইপ তুলেছে বিশ্বজুড়ে।
কোরিয়ান বিউটিকে সংক্ষেপে ‘কে-বিউটি’ বলে। জিনগত কারণে বিভিন্ন দেশের মানুষের ত্বকে ভিন্নতা রয়েছে। এ ছাড়া আবহাওয়া একটি বিশাল প্রভাব রাখে। কোরিয়া, জাপান, হংকং, চীনের মানুষের জিনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে এবং জীবনযাত্রায় খাদ্যাভ্যাসের জন্য শারীরিক গঠন এবং ত্বকের টেক্সচার ভিন্ন হয়।
তাদের ত্বকের যত্নও তাই একটু ভিন্ন ধরনের। স্কিন কেয়ারে কোরিয়ান নারীরা প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করেন। এভাবেই সৌন্দর্য ধরে রাখেন বছরের পর বছর।
স্কিন কেয়ারে তারা ডাবল ক্লিনজিং, টোনার, ময়েশ্চারাইজিং, স্কিন রিপেয়ারিং সিরাম ব্যবহার, এসেন্স, আই কেয়ার ক্রিম, সানস্ক্রিন, শিট মাস্ক (সপ্তাহে ২ দিন), রাইস ফেসমাস্ক (সপ্তাহে ২-৩ দিন) ব্যবহার করেন।
কোরিয়ানদের ত্বকচর্চার বিভিন্ন ধাপ
এক্সফোলিয়েশন
ত্বক এক্সফোলিয়েট করার জন্য ঘরে বানানো উপাদান দিয়ে তারা তৈরি করেন প্যাক। চিনি বা কফির সঙ্গে যে কোনো তেল মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করা যায়। বাসায় সুজি থাকলে সেটিও এ কাজে ব্যবহার করা যাবে। মুখে ভালোভাবে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করতে হবে। তারপর স্বাভাবিক পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। মেকআপ ডাস্ট, অতিরিক্ত তেল, মৃত চামড়া, হোয়াইট বা ব্ল্যাক হেডস সবকিছু পরিষ্কার করা যায়। সপ্তাহে দু’বারের এক্সফোলিয়েশন বেশি করা যাবে না।
ডাবল ক্লিনজিং
কোরিয়ান স্কিন কেয়ারে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ আছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো ডাবল ক্লিনজিং। দু’বার করে ত্বক পরিষ্কার করাকে ডাবল ক্লিনজিং বলা হয়। কোরিয়ানরা ন্যাচারাল ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ তেল দিয়ে ম্যাসাজ করে। সেটি অলিভ অয়েল, খাঁটি নারকেল তেল, সরিষার তেল হতে পারে। তেল ম্যাসাজ করতে হবে ‘আপার স্ট্রোকে’ অর্থাৎ নিচে থেকে ওপরে ২-৩ মিনিট। তারপর তুলা হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে ফেস ক্লিন করতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপে ঘরে তৈরি ফেসওয়াশ ব্যবহার করে, মধুর সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এতে সামান্য পরিমাণে হলুদ মিশিয়ে ভালো করে মিশিয়ে সেটি দিয়ে আপার স্ট্রোকে ফেস ম্যাসাজ করে ক্লিন করতে হবে। এরপর স্বাভাবিক পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
স্কিন টোনিং
স্কিন টোনিং করতে টোনার হিসেবে কোরিয়ান স্কিন কেয়ারে ব্যবহার হয় চাল ধোয়া পানি। প্রথম দু’বার চাল ধোয়ার পর পানি ফেলে দিয়ে তৃতীয় বার চাল কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে যে পানি বের হবে সেই পানি নিতে হবে। চাল ধোয়া পানিতে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, সি, ই ও মিনারেলস। এটি টোনার হিসেবে ভালো কাজ করে। এটি ত্বকের হাইপার পিগমেন্টেশন কমায়, স্কিনকে ময়েশ্চারাইজ করে এবং ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়িয়ে দেয়। একটি কটন প্যাড বা টিস্যুর সাহায্যে এই চালের পানি সোক করে ত্বকে সুন্দর করে লাগাতে হবে। এ ছাড়া শসার রস, গোলাপজল, বেদানার রস, আপেল সাইডার ভিনেগার ব্যবহার করা যায়।
এসেন্স
কোরিয়ান স্কিন কেয়ারে এসেন্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। এসেন্সের প্রধান কাজ– এটি ত্বককে আর্দ্র করে, ভেতর থেকে উজ্জ্বল করে। এক চামচ গোলাপজলের সঙ্গে আধা চামচ মরক্কোর আরগান তেল মিশিয়ে এটি ব্যবহার করতে হবে। গোলাপজল ত্বকের পোরস মিনিমাইজ করবে এবং আরগান তেল সঠিকভাবে হাইড্রেট করে ত্বকে উজ্জ্বলতা আনে। এ কারণে এ তেলকে ‘লিকুইড গোল্ড’ বলা হয়। একটি কটন প্যাডের সাহায্যে এ তরল প্রয়োগ করতে হবে।
আরগান গাছের ফল (বাদামজাতীয়) থেকে পাওয়া যায় এই তেল। বিশেষ পদ্ধতিতে তেল নিষ্কাশন করা হয়, যাতে প্রাকৃতিক গুণাগুণ অক্ষুণ্ন থাকে। আরগান তেলে ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-ই, ওমেগা ৬ ফ্যাটি এসিড, অলিক এসিড এবং লিনোলিক এসিডের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।
রাইস মাস্ক
রাইস মাস্কের জন্য প্রথম দু’বার চাল ধোয়ার পর পানি ফেলে দিতে হবে। তৃতীয় বার চাল ভিজিয়ে রেখে সেই চালের পানিসহ সেদ্ধ করে নিতে হবে। যখন চালের পাতলা মাড় হবে, তখন নামিয়ে নিতে হবে। এরপর ঠান্ডা হলে এক চামচ মধু মিশিয়ে ব্লেন্ড করে আঠালো পেস্ট তৈরি করতে হবে। এটি ফেসপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। সপ্তাহে এক দিন এটি ব্যবহার করা যাবে।
রেডি শিট মাস্ক
ত্বকের আর্দ্রতার জন্য কোরিয়ানদের মধ্যে শিট মাস্কের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। এই শিট মাস্ক স্কিনের ধরন অনুযায়ী ব্যবহার করা যাবে। এটি সময় বাঁচায় এবং বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। শিট মাস্ক ব্যবহারে ত্বক দ্রুত আর্দ্রতা ফিরে পায়। ভালো ফলাফলের জন্য সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ব্যবহার করুন এই শিট মাস্ক।
আই ক্রিম
চোখের নিচের ত্বকের যত্নে অর্থাৎ ডার্ক সার্কেল, ফোলা ভাব কমানোর জন্য আই ক্রিম ব্যবহার করা হয়। কারণ চোখের নিচের ত্বকের অংশ সবচেয়ে শুষ্ক হয়।
এক চামচ অ্যালোভেরা জেল, এক চামচ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল বা নারকেল তেল, হাফ চামচ গ্লিসারিন, একটি ভিটামিন-ই সিরাম ভালো করে মিশিয়ে বানিয়ে নেওয়া যাবে ঘরোয়া আই ক্রিম। এটি ব্যবহার করার সময় আইবেল দুই আঙুল দিয়ে হালকা করে ম্যাসাজ করে নিতে হবে। এতে চোখে আরাম অনুভব হবে।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য শসার রস, লেবুর রস খুব ভালো কাজ করে। ত্বকে ব্রণ বা র্যাশ দেখা দিলে নিমপাতার রস, হলুদের রস, গোলাপজল ব্যবহার করুন। শুষ্ক ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা জেল নিয়ম মেনে লাগাতে পারেন। বলিরেখার সমস্যা থেকে রেহাই পেতে শসার রস, বেদানার রস, ভিটামিন-ই ক্যাপসুল ব্যবহার করুন।
সানস্ক্রিন
স্কিন কেয়ারের সর্বশেষ ধাপ হলো সানস্ক্রিন ব্যবহার। সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষার জন্য সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি। সানস্ক্রিন ব্যবহারে ত্বক রোদে পুড়ে যায় না। বিশেষ করে ঘর থেকে বাইরে গেলে সানস্ক্রিন লাগাতে হবে।
ফেসমাস্কের জন্য
মধু ও গ্রিন টির ফেসপ্যাক
গ্লাসের মতো চকচকে ত্বক পাওয়ার জন্য কোরিয়ানরা ফেসমাস্ক ব্যবহার করেন। বিশেষ করে মধু ও গ্রিন টির ফেসপ্যাক জনপ্রিয়। এক টেবিল চামচ মধুর সঙ্গে এক টেবিল চামচ ঠান্ডা সবুজ চা নিন। এটি চোখ বাদে পুরো মুখে লাগান। ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে একবার বা দুইবার ব্যবহার করুন।
অ্যালোভেরা ও শসার মাস্ক
দুই টেবিল চামচ তাজা অ্যালোভেরার জেলের সঙ্গে দুই টেবিল চামচ শসার রস মেশান। এই মিশ্রণে একটি শিট মাস্ক ডুবিয়ে সেটি পুরো মুখে লাগান। ২০-৩০ মিনিট পর তা তুলে ফেলুন। v
লেখক: রূপবিশেষজ্ঞ
মডেল :: অন্তরা; মেকওভার :: জারা’স বিউটি লাউঞ্জ
ছবি :: ফয়সাল সিদ্দিক কাব্য
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম য স জ কর ন ব যবহ র এস ন স র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
লেনিন কেন এখনও জরুরি
আজ ২২ এপ্রিল, ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের জন্মদিন। ১৯১৭ সালে সংঘটিত রুশ বিপ্লবের অগ্রনায়ক লেনিন ছিলেন মার্ক্সের সফল উত্তরাধিকারী। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ইতিহাসের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। একটি পশ্চাৎপদ পুঁজিবাদী দেশে বিপ্লব সংঘটনের পথ বের করেন তিনি। চিন্তা ও প্রয়োগের মেলবন্ধন ঘটানোর দক্ষতাই ছিল তাঁর সাফল্যের অন্যতম কারণ। মার্ক্স সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের কথা বলেন। কিন্তু রাশিয়ার মতো দেশে যেখানে পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটেনি, সেখানে শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক বিপ্লব করে নতুন পথ দেখালেন। লেনিনের এই গণতান্ত্রিক বিপ্লবের পথ ধরেই চীনসহ পিছিয়ে পড়া পুঁজিবাদী দেশে বিপ্লব হয়েছে। ইতিহাসের কোনো পর্বকেই লাফ দিয়ে ডিঙিয়ে যাওয়া যায় না। বিপ্লবকে ইতিহাসের ভেতর দিয়েই যেতে হয়– এটি ছিল লেনিনের শিক্ষা।
লেনিন দেখিয়েছেন রাষ্ট্রযন্ত্র কোন প্রক্রিয়ায় বল প্রয়োগ করে টিকে থাকে এবং শাসক শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করে। তাঁর রাষ্ট্রচিন্তা পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের ফ্যাসিস্ট রূপ বুঝতে সহায়তা করে। তিনি বল প্রয়োগের মাধ্যমে বুর্জোয়া রাষ্ট্রযন্ত্র উচ্ছেদের কথা বলেন। গ্রামসি বলেন, শুধু বল প্রয়োগ নয়; শাসক শ্রেণি সাংস্কৃতিক ও মতাদর্শিক আধিপত্য বজায় রাখার মধ্য দিয়েও টিকে থাকে। ব্যবস্থার পক্ষে সম্মতি উৎপাদন করে। ফুকোর মতে, ক্ষমতা শুধু রাষ্ট্রে কেন্দ্রীভূত নয়; সমাজের পরতে পরতে ছড়িয়ে থাকে। আধুনিক সমাজ শুধু বল প্রয়োগের মাধ্যমে শাসন করে না; তা মানুষের জীবন ও কর্তাসত্তার মনোজগৎ গঠনেরও নিয়ন্ত্রণ নেয়। ফুকো এর নাম দিয়েছেন বায়োপলিটিকস– জীবন ও মগজ দখল- নিয়ন্ত্রণের রাজনীতি। ফুকো ক্ষমতা কী করে কাজ করে তার বর্ণনা দিলেও ক্ষমতাকে কীভাবে প্রতিরোধ ও উচ্ছেদ করতে হয়, তা দেখাননি। সেটা দেখিয়েছেন লেনিন। তার মানে এই নয়, আমাদের বলশেভিক মডেলই অনুসরণ করতে হবে।
বাংলাদেশের রাষ্ট্র নিবর্তনমূলক ও দুর্নীতিবাজ। গণতন্ত্রের লোভ দেখানো নির্বাচন, উন্নয়ন, ধর্মরাষ্ট্র, স্বর্গ– এসব ফ্যান্টাসি তৈরি করে রেখেছে। এসব ফ্যান্টাসি ভাঙতে হবে। আমাদের মুক্তির বিকল্প বয়ান তৈরি করতে হবে। মানুষের কাছে সেটা তুলে ধরতে পারলে বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব। বুর্জোয়া রাষ্ট্রের খোলনলচে না বদলে শুধু কিছু সংস্কার দিয়ে বিদ্যমান সংকটের সমাধান সম্ভব হবে না।
লেনিনের শিক্ষার একটা বড় দিক হলো, অসংগঠিত স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন দিয়ে ব্যবস্থার অবসান ঘটানো যায় না। এ জন্য চাই বিপ্লবী মতাদর্শ ও সুসংগঠিত রাজনৈতিক সংগঠন। যাকে তিনি বলেছেন বিপ্লবী পার্টি। লড়াইকে তিনি স্বতঃস্ফূর্ততার ওপর ছেড়ে না দিয়ে সচেতন সংগঠিত রাজনৈতিক লড়াই চালানোর কথা বলেন। শুধু জীবনদান আর অভ্যুত্থান করলেই হবে না; সেই অভ্যুত্থানের রাজনীতি ও শ্রেণি প্রশ্নটি পরিষ্কার থাকতে হবে। অভ্যুত্থান-উত্তর পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে অভ্যুত্থানকারী শক্তির সংগঠন থাকতে হয়। চব্বিশের অভ্যুত্থানে এর কোনোটাই নেই। নেই কোনো সুনির্দিষ্ট রাজনীতি ও শক্তিশালী সংগঠন। এ ধরনের ভয়ানক দুর্বলতার পরিণতিতে পর্বতের মূষিক প্রসব ঘটতে পারে।
স্বৈরতান্ত্রিক জারের ভয়ানক নির্যাতনে লেনিনের জীবন কখনোই স্থির ছিল না। বন্দি ও পলাতক জীবন এবং নির্বাসনের মধ্যে স্ত্রী ক্রুপস্কায়াকে নিয়ে কেটেছে তাঁর জীবন। তবুও এক অমিত শক্তি নিয়ে তিনি অব্যাহত রেখেছেন বিপ্লবী কর্মযজ্ঞ। লিখেছেন অবিরাম ৫৫ খণ্ড। বিতর্কে লিপ্ত থাকতে হয়েছে তাঁকে সারাক্ষণ দলের ভেতর ও বাইরে। অব্যাহতভাবে প্রকাশ করেছেন ইস্ক্রা পত্রিকা। এভাবে একদিন নতুন সূর্যের ভোর আসে ১৯১৭ সালে; অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে।
রুশ বিপ্লবের পরে বেশি দিন বাঁচেননি লেনিন। ১৯১৮ সালে আততায়ীর গুলিতে আহত হন। এরপর কখনোই পুরোপুরি সুস্থ হননি। ১৯২৪ সালে লেনিন মস্কো থেকে দূরে তাঁর নিজ গ্রাম গোর্কিতে মারা যান।
১৯৪৮ সালে কার্ল মার্ক্স বলেছিলেন, ‘ইউরোপ ভূত দেখেছে; কমিউনিজমের ভূত।’ বিশ শতকজুড়ে ইউরোপ ও আমেরিকাকে কমিউনিজমের এ ভূত তাড়িয়ে বেড়িয়েছে। সমাজতন্ত্র ধ্বংস করতে তারা চালিয়েছে কখনও সরাসরি যুদ্ধ, কখনও স্নায়ুযুদ্ধ।
বামপন্থিদের ও সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সে যুদ্ধ এখনও জারি আছে। এ যুদ্ধে সমাজতান্ত্রিক শিবিরের আপাত পরাজয় হলেও তা নতুন এক অনিরুদ্ধ শক্তি নিয়ে আবারও ইতিহাসে আবির্ভূত হবে। পুঁজির শোষণ ও শাসনমুক্ত একটি সভ্য মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন মার্ক্স ও লেনিন। সেটা এখনও আরাধ্য। তা অর্জনে লুটেরা পুঁজিতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কোনো বিকল্প নেই। এ সংগ্রামে লেনিন শুধু প্রাসঙ্গিক নন, জরুরিও বটে। লেনিনের জন্মদিনে তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
ড. আখতার সোবহান মাসরুর: লেখক ও নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম ছাত্রনেতা