শীতের দিনগুলোয় বাহারি ধরনের পিঠা না খেলে অতৃপ্তি থেকে যায়। আজকাল বাজারে বিভিন্ন ধরনের পিঠা পাওয়া যায়। সেগুলো খুব সাধারণ ও বৈচিত্র্যহীন। আবার মানসম্মতও নয়। তাই ঘরেই বানিয়ে নিন পছন্দের পিঠা। রেসিপি দিয়েছেন কোহিনুর বেগম।
ননাশ পিঠা
উপকরণ: চালের গুঁড়া ৫০০ গ্রাম, আদা-রসুন বাটা এক চা চামচ, হলুদের গুঁড়া এক চা চামচ, কাঁচামরিচ বাটা এক চা চামচ, তেজপাতা-এলাচ-দারচিনি ২টি করে, তেল পরিমাণমতো।
প্রস্তুত প্রণালি: প্রথমে পাত্রে পরিমাণমতো পানি দিন। পানি ফুটলে এর মধ্যে হলুদ, আদা-রসুন-কাঁচামরিচ বাটা, তেজপাতা, এলাচ, দারচিনি দিন। ভালো করে ফুটলে চালের গুঁড়া দিয়ে মৃদু আঁচে ১০ মিনিট ঢেকে রাখুন। ঢাকনা খুলে কাঠের কাঠি দিয়ে নাড়ুন। এরপর খামির ভালো করে মাখাতে হবে। এবার বড় রুটি তৈরি করতে হবে। রুটি বেশি পাতলাও হবে না, আবার মোটাও হবে না। একটি গ্লাস দিয়ে ছোট ছোট লুচির আকার তৈরি করে নিন। চুলায় একটি পাত্রে তেল দিয়ে পিঠাগুলো ভেজে নিন। এই পিঠা মাংস ও ভর্তা দিয়ে খেতে সুস্বাদু।
মুগ পাকন পিঠা
উপকরণ: মুগ ডাল ২৫০ গ্রাম, চালের গুঁড়া ৪০০ গ্রাম, তেজপাতা-এলাচ-দারচিনি ৪টি করে, চিনি ৫০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল ৫০০ গ্রাম, ডিজাইন করার জন্য সুই অথবা খেজুরের কাঁটা, পানি পরিমাণমতো।
প্রস্তুত প্রণালি: প্রথমে চিনির সিরা তৈরি করতে হবে। এ জন্য পাত্রে ৫০০ গ্রাম চিনি ও পানি নিয়ে জ্বাল দিন। এতে দুটো করে তেজপাতা, এলাচ ও দারচিনি দিন। সিরা আঠালো হলে নামিয়ে ঠান্ডা করুন। এবার প্রথমে মুগ ডাল ধুয়ে সেদ্ধ করুন। তাতে দুটো করে দারচিনি, এলাচ ও তেজপাতা দিন। মুগ ডালগুলো ডাল ঘুঁটনি দিয়ে ঘুঁটে নিন। এবার চালের গুঁড়া দিয়ে ১০ মিনিট মৃদু আঁচে ঢেকে রাখুন। চালের গুঁড়া আর ডাল ভালো করে মিশিয়ে খামির তৈরি করুন। বেলুন-পিঁড়িতে অল্প তেল মাখিয়ে তাতে মোটা করে রুটি বেলে নিন। এবার পছন্দের আকারে অর্থাৎ পাতা, ফুল কিংবা অন্যান্য নকশার আকারে কেটে নিন। সুই অথবা খেজুর কাঁটা দিয়ে ডিজাইন করুন। পাত্রে তেল গরম করে পিঠাগুলো লাল লাল করে ভেজে নিন। ভাজা পিঠাগুলো সিরার মধ্যে ডুবিয়ে মিনিট খানেক রেখে তুলে নিন।
নারকেলের চমচম পিঠা
উপকরণ: কোড়ানো নারকেল ১টি, চালের গুঁড়া ৪০০ গ্রাম, চিনি ৫০০ গ্রাম, তেজপাতা-এলাচ-দারচিনি ৪টি করে, তেল পরিমাণমতো।
প্রস্তুত প্রণালি: প্রথমে সিরা তৈরি করুন। এ জন্য পাত্রে চিনি ও পানি সমপরিমাণে নিয়ে তাতে দুটি করে তেজপাতা, এলাচ ও দারচিনি দিয়ে জ্বাল দিন। সিরা ঘন ও আঠা আঠা ভাব হলে চুলা থেকে নামিয়ে নিন। এবার একটি পাত্রে ৪ কাপ পানি, নারকেল, দুটি করে তেজপাতা, এলাচ ও দারচিনি দিয়ে ভালো করে ফোটাতে হবে। চালের গুঁড়া দিয়ে মৃদু আঁচে ১০ মিনিট ঢেকে রাখুন। চালের গুঁড়া ও নারকেল ভালো করে মেখে খামির তৈরি করুন। খামির মাখিয়ে ছাঁচের মধ্যে দিয়ে পিঠার আকার তৈরি করতে হবে। এবার কড়াইয়ে তেল গরম করে পিঠাগুলো লাল লাল করে ভেজে নিন। ভাজা হলে চিনির সিরায় দিয়ে ১০ মিনিট পর উঠিয়ে নিন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ৫০০ গ র ম ১০ ম ন ট এল চ ও প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে পবিত্র রমজান মাসেও চলছে ডাকাত সালাদ্দিনের চাঁদাবাজি
পবিত্র রমজান মাসেও চলছে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি এলাকার আলোচিত চাঁদাবাজ ডাকাত সালাউদ্দিন এবং তার বাহিনীর চাঁদাবাজি। সাধারণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা রীতিমত তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। ইফতারীর দোকান থেকে শুরু করে ফলের দোকান, কাঁচাবাজরের ব্যবসায়ি তার চাঁদাবাজি থেকে রক্ষা পাচ্ছে না।
সম্প্রতি চাঁদাবাজির সময় হাতে নাতে সালাউদ্দিনের ভাই কামালকে শিক্ষার্থীরা আটক করে গণধোলাই দিয়ে সেনা ক্যাম্পে হস্তান্তর করলেও সালাউদ্দিনের চাঁদাবাজি বন্ধ হচ্ছে না। এনিয়ে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে।
তাদের অভিযোগ, আইনশৃংখলাবাহিনীর নিস্ক্রীয়তায় দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে ডাকাত সালাউদ্দিন ও তার বাহিনী। তারা আরও বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ পুল থেকে এক কিলোমিটার দুরুত্বে সেনা ক্যাম্প, র্যাব-১১ এর সদর দপ্তর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কার্যালয়। অথচ সেই সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকায় প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করছে ডাকাত সালাউদ্দিন।
ক্ষতিগ্রস্থ অসহায় ব্যবসায়িরা ভয়ে কেউ প্রতিবাদ তো দুরের কথা মুখ খুলতে সাহস করছে তার বিরুদ্ধে। আইনশৃংখলাবাহিনীর গোয়েন্দা টিম দিয়ে নজরদারী করলেই ডাকাত সালাউদ্দিনের চাঁদাবাজির চিত্র ও তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের অনেকেই।
স্থানীয়রা জানায়, সালাউদ্দিন সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পাগলাবাড়ি এলাকার মৃত আমির হোসেনের ছেলে। তার দুই ভাই কামাল এবং বাবুলও অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের তিন ভাইয়ের নানা অপকর্ম এবং অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকার ব্যবসায়ি ও এলাকাবাসী। সালাউদ্দিনের একটি বাহিনী রয়েছে।
এই বাহিনীর মাধ্যমে ভুমিদস্যুতা, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, জবর দখলসহ এমন কোনো অপকর্ম নাই যা করে না ডাকাত সালাউদ্দিন। বিশেষ করে ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর বেপরোয়া হয়ে উঠে সালাউদ্দিন বাহিনী। আওয়ামীলীগের আমলে তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হওয়া লোকজন এখন বলতে শুরু করেছে সালাউদ্দিন আগেও জালাইছে এখনো জালাচ্ছে। আমরা কি মুক্তি পাবো না?
৫ আগস্টের পর সালাউদ্দিনের ভাই কামাল সিদ্ধিরগঞ্জ পুলের ফুটপাতের দোকানীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক ব্যাপক চাঁদাবাজি শুরু করে। এক পর্যায়ে ৬ সেপ্টেম্বর রাতে সিদ্ধিরগঞ্জপুলস্থ বাজারের দোকান থেকে চাঁদা আদায়কালে কামালকে হাতে নাতে ধরে শিক্ষার্থীরা। পরে চাঁদাবাজ কামালকে গনধোলাই দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার হাউজে অবস্থিত সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে সোপর্দ করে।
আওয়ামীলীগের পতনের পর সিদ্ধিরগঞ্জ পুলের বেশ কয়েকটি অস্থায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে সালাউদ্দিনসহ তার সহযোগীরা। শুধু সেখানেই নয় তার বাড়ির আশপাশের বাসিন্দাদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আবু সুফিয়ান নামে এক যুবককে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করেছে। ব্যবসায়ীদের থেকে জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জ পুলস্থ ফল ব্যবসায়ী আনোয়ারসহ প্রায় ১০টি দোকানে হামলা চালিয়ে ভেঙে দিয়েছে সালাউদ্দিন বাহিনী। সালাউদ্দিনের দাবি প্রতি মাসে তাকে চাঁদা দিতে হবে।
ডাকাত সালাউদ্দিনের একটি চাউলের দোকান রয়েছে। সেই দোকানে বসেই দিনরাত চলে নানা অপকর্মের শলাপরামর্শ।
সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকায় খাজা কাঁচাবাজার ও আবু তালেব মার্কেটের দোকানীদের বাধ্য করছে তার কাছ থেকে চাল ও আলু কিনতে। ব্যবসায়িরা ঢাকার কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ি, চিটাগাং রোড, আদমজী বাজার থেকে পাইকারীভাবে চাল ও আলু কিনলে কিছুটা কম দামে পায়।
কিন্তু ওই ব্যবসায়িদের কোথাও থেকে চাল ও আলু আনতে দিচ্ছে না সালাউদ্দিন। সে তার লোকজন দিয়ে সকালে দোকান খোলার আগেই দোকানের সামনে আলু ও চালের বস্তা রেখে আসে। যাতে দোকানীরা বাধ্য হয় বেশি দামে তার চাল ও আলু কিনতে।
বাজারের দোকানীরা জানায়, মানিক নামে এক নিরিহ ক্ষুদ্র দোকানদার কয়েকদিন আগে যাত্রাবাড়ি থেকে ৭ বস্তা আলু আনেন পাইকারী দামে। এই কথা জানতে পেরে চাঁদাবাজ সালাউদ্দিন আলুর বস্তাগুলো নিয়ে যায়। তখন মানিক বিভিন্ন লোকজনের কাছে ধর্ণা দিয়েও সহযোগিতা পায়নি।
পরে নিরুপায় হয়ে সন্ধ্যার দিকে সালাউদ্দিনের কাছে গিয়ে জানায়, সে আর অন্য কোথাও থেকে আলু আনবে না। তখন সালাউদ্দিন মুছলেকা নিয়ে আলু ফেরত দেয়। এছাড়া ফুটপাতে ভ্যানগাড়ি দিয়ে আলু সহ বিভিন্ন সবজি বিক্রিতাকেও শান্তি দিচ্ছে না সালাউদ্দিন ও তার লোকজন।
সালাউদ্দিনের কাছ থেকে বেশি দামে পণ্য কেনার কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের লোভের গুড় পিঁপড়ায় খাচ্ছে। ভয়ে সালাউদ্দিন ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস করছে না। মুখ বুঝে সব অত্যাচার জুলুম সহ্য করছে তারা। জয়নাল নামে এক ব্যক্তির বৈদ্যুতিক সংযোগ জোর করে দখল করে বিভিন্ন দোকানে ভাড়া দিয়ে টাকা উঠায় সালাউদ্দিনের ভাই কামাল।
স্থানীয়রা জানায়, রমজান শুরু হওয়ায় ইফতারীর দোকান এবং ফলের দোকান থেকেও ডাকাত সালাউদ্দিন ও তার বাহিনীর চাঁদাবাজি চলছে। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে প্রাণনাশের হুমকি দেয় সালাউদ্দিন। আইনের আশ্রয় নিতে চাইলে ক্ষতিগ্রস্থ দোকানীকে হত্যার হুমকি দেয় ডাকাত সালাউদ্দিন ও তার বাহিণীর সদস্যরা।
এলাকাবাসী জানায়, আওয়ামীলীগের আমলে সিদ্ধিরগঞ্জ পুলস্থ ফুটপাতে চাঁদাবাজির ঘটনায় সালাউদ্দিনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরবর্তীতে থানা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের তদবিরে ছাড়া পায় চাঁদাবাজ সালাউদ্দিন। আওয়ামী দোসর হিসেবে পরিচিত এই ডাকাত সালাউদ্দিন এখন নিজেকে বিএনপির লোক পরিচয় দিচ্ছে।
তারা আরও জানায়, সালাউদ্দিন ১৯৯৮ সালে একটি ট্রাক বোঝাই ভারতীয় কাপড়ের চালান ডাকাতি করে সিদ্ধিরগঞ্জের সিআই খোলা এলাকায় রাখেন। পরবর্তীতে রাজধানী ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থা ডিবি পুলিশ সালাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে মালামাল উদ্ধার করেন।
কাপড় উদ্ধার করলেও তার বেশ কিছুদিন পর কাপড় বহনকারী ওই ট্রাকটি জয়দেবপুর থেকে উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে এখনো সেই ডাকাতি মামলা আদালতে চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে। ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর ছয় মাসের সাজা হয় সালাউদ্দিনের। ৬ মাস কারাভোগের পর জামিনে বেরিয়ে আগের মতোই অপকর্ম চালিয়ে যায়।
সিদ্ধিরগঞ্জের ১নং ওয়ার্ডের মিজমিজি পুর্বপাড়া, দক্ষিণ মজিববাগ, আলামিন নগর এবং সিদ্ধিরগঞ্জপুল এলাকার খাজা কাচাবাজার, আবু তালেব মার্কেটসহ ব্যবসায়ী ও ফুটপাতের দোকানীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে চাঁদাবাজ সালাউদ্দিন বাহিনীর কাছে। সালাউদ্দিন ও তার বাহিনীকে আইনের আওতায় আনার জন্য তারা আইনশৃংখলাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।