বাস ভাড়া নির্ধারণ করে দিল ইবি প্রশাসন
Published: 21st, January 2025 GMT
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) প্রশাসনের সঙ্গে পাবলিক পরিবহন সমিতির এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ক্যাম্পাস থেকে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ পর্যন্ত বাস ভাড়া ২০ টাকা নির্ধারণসহ ছয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে গত বুধবার (১৫ জানুয়ারি) পাবলিক পরিবহনের সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রেক্ষিতে বসা হয়। ইবি প্রশাসনের সঙ্গে এ সভায় কুষ্টিয়া জেলা বাস-মিনিবাস মালিক গ্রুপ, কুষ্টিয়া জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি, ঝিনাইদহ বাস-মিনিবাস মালিক গ্রুপ, ঝিনাইদহ জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি, কুষ্টিয়া জেলা মটর মালিক শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিবৃন্দ, ঝিনাইদহ জেলা মটর ইউনিয়নের প্রতিনিধিবৃন্দ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
ওই সভায় বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসব সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- ক্যাম্পাস থেকে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ বাস ভাড়া ২০ টাকা; অভিযুক্ত ড্রাইভার, সুপারভাইজার দোষ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা, তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিতের ব্যবস্থা; সংঘটিত ঘটনায় গাড়ির চালক, সুপারভাইজার, ও সহকারীদের সাময়িকভাবে চাকরিচ্যুত এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সম্মতি সাপেক্ষে তারা চাকরিতে যোগদান করতে পারবে।
এছাড়া কোন শিক্ষার্থী যেকোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্মুখীন হলে প্রথমে সরবরাহকৃত নাম্বারে যোগাযোগ করতে হবে, তারা ব্যর্থ হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। কোনভাবেই আইন নিজ হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। ১৫ জানুয়ারি সংঘটিত ঘটনার আহত শিক্ষার্থীকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ বাবদ দশ হাজার টাকা প্রদান করা হবে।
গত বুধবার (১৫ জানুয়ারি) গড়াই পরিবহনের চালক ও তার সহকারী এবং শ্রমিক ইউনিয়নের লোকজনের বিরুদ্ধে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক শিক্ষার্থীকে মারধর করার অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় গড়াই ও রূপসা পরিবহনের ছয়টি বাস আটকে রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে আলোচনায় বসে সমাধানের আশ্বাস দিলে আটক বাসগুলো ছেড়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হলেন, পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের আসিফ মাহমুদ।
ঢাকা/তানিম/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঝ ন ইদহ ত ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
স্মৃতি ও শ্রদ্ধার অনন্য আয়োজন
তাঁর শারীরিক উপস্থিতি ছিল না অনুষ্ঠানে। তবে তাঁর উপস্থিতি ছিল আরও ব্যাপক বিপুল বিস্তারে। ‘নতুন করে পাব বলে’ নামে অনুষ্ঠান হলো তাঁকে স্মরণ করে, তাঁরই হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান ছায়ানট মিলনায়তনে। তিনি সন্জীদা খাতুন। বাংলাদেশের সংস্কৃতির অন্যতম বিনির্মাতা, সংগীতজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, সংগঠক সন্জীদা খাতুনকে স্মরণ করে যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ছায়ানট, জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, নালন্দা উচ্চবিদ্যালয়, কণ্ঠশীলন ও ব্রতচারী।
গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল ‘কোন আলোতে প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে’ সম্মেলক কণ্ঠে গানের সঙ্গে সমবেত নৃত্যের পরিবেশনা দিয়ে। মঞ্চ সাজানো হয়েছিল অনাড়ম্বর, কিন্তু শুচিস্নিগ্ধ সজ্জায়। সবুজ গাছ আর ফুল দিয়ে। মঞ্চের নেপথ্যে বড় ডিজিটাল পর্দায় একের পর এক হচ্ছিল পরিস্ফুটিত সন্জীদা খাতুনের তারুণ্যের কাল থেকে বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তের ছবির পর ছবি।
সংগীতজ্ঞের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজনে গান তো থাকবেই। সেই সঙ্গে আরও ছিল তাঁর না থাকার শূন্যতার বোধ, তিনি যে চেতনার আলো জ্বালিয়ে গেলেন, তা প্রাণে প্রাণে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয়। তাঁর জীবনী আলোচনা, তাঁর নিজের লেখা থেকে পাঠ, তাঁর নিজের গাওয়া গান, স্মৃতিচারণা, কবিতা আবৃত্তি, গীতি-আলেখ্যর সমন্বয়ে সাজানো টানা তিন ঘণ্টার অনুপম পরিবেশনা। সন্জীদা খাতুন তাঁর জীবিতকালে ছায়ানটের অনুষ্ঠানগুলো বরাবরই ত্রুটিহীন ও আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করার রীতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতা থাকল তাঁর অনুপস্থিতিতেও। অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা থেকে পরিবেশনা অবধি, যাঁরাই যে কাজে ছিলেন সবাই যেন নিজেদের উজাড় করে দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন এই অনুষ্ঠানে।
প্রথম পরিবেশনার পর ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ডা. সারওয়ার আলী বললেন, ‘আমরা যেন এক মহিরুহের ছায়া থেকে বঞ্চিত হয়েছি। সংস্কৃতির মধ্যমে সর্বজনের মধ্যে বাঙালি জাতিসত্তার জাগরণের অক্লান্ত চেষ্টা চালিয়ে গেছেন তিনি। সেই কাজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে।’ সব বাধা প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে সবাইকে হাতে হাত মিলিয়ে সন্জীদা খাতুনের দেখিয়ে যাওয়া পথে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানালেন তিনি।
এরপর সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশিত হলো ‘পান্থ তুমি পান্থ জনের সখা হে’। সন্জীদা খাতুনের জীবনী তুলে ধরেন জয়ন্ত রায়। এরপর মঞ্চ আঁধার করে নেপথ্যে সন্জীদা খাতুনের ছবি রেখে পরিবেশন করা হলো তাঁর রেকর্ড করা গান ‘এখনো গেল না আঁধার’। ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় পড়ে শোনালেন রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের স্মৃতিচারণা করে সন্জীদা খাতুনের লেখা ‘একুশ আমাকে ভাষা দিয়েছে’।
ছায়ানটের উপদেষ্টা মফিদুল হক আলোচনা করলেন সন্জীদা খাতুনের বহুমাত্রিক জীবন ও কর্ম নিয়ে। তিনি বললেন, শিক্ষা, গবেষণা, সংগঠন পরিচালনাসহ বহুবিধ কাজে সন্জীদা খাতুন আত্মনিয়োগ করলেও গান নিয়েই মূলত তিনি পথ চলেছেন। গানের ভেতর দিয়েই সংস্কৃতিকে উপলব্ধি করেছেন। মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন মঙ্গলের চেতনা। ষাটের দশকে আইয়ুব খানের কঠিন সামরিক শাসনের ভয়ভীতি উপেক্ষা করে রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন করেছেন তিন দিনের অনুষ্ঠান করে। সেই সূত্রে ছায়ানট ও পরে রমনার বটমূলে পয়লা বৈশাখে নববর্ষের অনুষ্ঠান। বাঙালি সংস্কৃতির জাগরণে তাঁর ভূমিকা অম্লান থেকে যাবে।
আলোচনার পর তানিয়া মান্নান গেয়েছেন ‘মালা হতে খসে পড়া’। কণ্ঠশীলনের জহিরুল হক আবৃত্তি করেন ‘পুরস্কার’ কবিতার অংশবিশেষ। এভাবেই একক ও সম্মেলক গান, ব্রতচারীর গান, আবৃত্তি পাঠ, স্মৃতিচারণার পরিবেশনা দিয়ে এগিয়েছে অনুষ্ঠান।
নালন্দার শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করেছে সন্জীদা খাতুনের প্রবন্ধ অবলম্বে গীতি-আলেখ্য ‘সবারে বাস রে ভালো’। ত্রপা মজুমদার পড়েছেন মুক্তিযুদ্ধকালের স্মৃতিচারণা করে সন্জীদা খাতুনের লেখা, তাঁর সংস্কৃতি ভাবনা নিয়ে প্রবন্ধ পড়েছেন সুমনা বিশ্বাস। স্মৃতিচারণা ও গান করেছেন লিলি ইসলাম। একক গান পরিবেশন করেছেন রোকাইয়া হাসিনা নীলি, মহিউজ্জামান চৌধুরী, খায়রুল আনাম শাকিল, ইফফাত আরা দেওয়ান, শারমিন সাথী ইসলাম, প্রমীলা ভট্টাচার্য, এ টি এম জাহাঙ্গীর, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, বুলবুল ইসলাম ও লাইসা আহমদ লিসা।
সম্মেলক কণ্ঠে ‘শেষ নাহি যে শেষ কথা কে বলবে’ গানটির পর জাতীয় সংগীত দিয়ে শেষ হয়েছিল স্মৃতি ও শ্রদ্ধার এই অনন্য আয়োজন।