৬৪ মিনিট পর্যন্ত ম্যাচের স্কোরলাইন শূন্য। ৬৫ মিনিটে স্পট কিকে ইয়াসিন খান গোল করার পরই ঢাকা আবাহনী ফিরে পায় আত্মবিশ্বাস। ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবের বিপক্ষে ৬ মিনিটের ঝড় দেখায় আবাহনী। এই সময়ের মধ্যে প্রতিপক্ষের জালে তিনবার বল পাঠিয়ে ম্যাচের লাগাম নিজেদের হাতে নিয়ে আসেন একেএম মারুফুল হকের শিষ্যরা।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ফেডারেশন কাপ ফুটবলের গ্রুপ ‘বি’তে ফকিরেরপুলকে ৩-০ গোলে হারিয়ে কোয়ালিফায়ারে নাম লিখিয়েছে আকাশি-নীল জার্সিধারীরা।
বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় একই ব্যবধানে চট্টগ্রাম আবাহনীকে হারানো রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস অ্যান্ড সোসাইটিও নিশ্চিত করেছে প্লে-অফ। তিন ম্যাচে দুই দলের সমান ৯ পয়েন্ট হলেও গোল গড়ে এগিয়ে থাকায় শীর্ষে রহমতগঞ্জ, দুইয়ে আবাহনী। ৪ ফেব্রুয়ারি কিংস অ্যারেনায় গ্রুপ সেরার লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে দু’দল।
মঙ্গলবার কুমিল্লায় প্রথমার্ধে নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি আবাহনী। বিরতির পর স্বরূপে ফেরে তারা। ৬৫ মিনিটে ভাঙে ম্যাচের ডেডলকও। এনামুল গাজী ডান দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে এগিয়ে যাওয়ার সময় ফাউলের শিকার হলে রেফারি বাজান পেনাল্টির বাঁশি।
ইয়াসিন স্পট কিকে প্রতিযোগিতার রেকর্ড ১২ বারের চ্যাম্পিয়নদের এগিয়ে নেন। আবাহনীর ঝড়ের শুরুটাও এখান থেকে। ৩ মিনিট পরই ব্যবধান দ্বিগুণ করেন হাসান মুরাদ। ৭১ মিনিটে মাহাদি ইউসুফের গোলে জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় আবাহনীর।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পোর্টফোলিও ডায়েট কী, কীভাবে এটি হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে
বর্তমান সময়ে হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং হাইপার কোলেস্টেরলেমিয়া রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। তাঁদের রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল ও এলডিএলের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে, যা হার্টের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে। বিভিন্ন ধরনের ডায়েট প্ল্যান রক্তের এলডিএল, কোলেস্টেরল কমাতে পারে, কিন্তু তা মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর ডায়েট প্ল্যান হচ্ছে পোর্টফোলিও ডায়েট। পোর্টফোলিও ডায়েটে ২-৫ সপ্তাহের মধ্যেই ২০-২৫ শতাংশ কোলেস্টেরল ও এলডিএল কমে আসতে পারে।
পোর্টফোলিও ডায়েট কীপোর্টফোলিও ডায়েট রক্তের কোলেস্টেরল ও এলডিএলের পরিমাণ কমাতে একটি বিশেষ খাবার ব্যবস্থাপনা, যেখানে সব প্রাণিজ উৎস থেকে পাওয়া খাবার বাদ দেওয়া হয় এবং উদ্ভিজ্জ খাবারের আধিক্য থাকে। পোর্টফোলিও ডায়েটের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য থাকে।
১. প্রাণিজ খাবার বাদ: প্রাণিজ প্রোটিন, যেমন মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার বন্ধ করতে হবে। এই খাবারগুলো স্বাভাবিকভাবেই কম আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটসমৃদ্ধ হয়। ফলস্বরূপ এই খাবারগুলো রক্তের কোলেস্টেরল, এলডিএল বাড়ায় এবং গুড ফ্যাট এইচডিএল কমায়। যা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে উচ্চ রক্তচাপ ও হার্টের রোগ সৃষ্টি করে।
২. উদ্ভিদ প্রোটিন খেতে হবে: আমাদের শরীরের প্রতিদিনের প্রোটিনের চাহিদা পূরণে শুধু উদ্ভিজ্জ প্রোটিন খেতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে মটরশুঁটি, মসুর ডাল, মুগডালসহ সব ধরনের ডাল, শিমের বিচি, কাঁঠালের বিচি, সব ধরনের বাদাম এবং সয়াবিন থেকে তৈরি খাবার। একটি গবেষণা থেকে দেখা যায়, প্রতিদিন কমপক্ষে ২৫ গ্রাম সয়া প্রোটিন গ্রহণ করলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কম হতে পারে। সয়া প্রোটিন সয়া মিট, সয়া দুধ, সয়া দই—বিভিন্নভাবে বাজারে পাওয়া যায়। এ ছাড়া টকজাতীয় দেশি ফল খাবারের তালিকায় রাখা যাবে।
৩. দ্রবণীয় ফাইবার (সলিবল ফাইবার): দ্রবণীয় ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এই দ্রবণীয় ফাইবারসমৃদ্ধ খাবারগুলো আমাদের অন্ত্রে জেলির মতো গঠন তৈরি করে। অন্ত্রে, দ্রবণীয় ফাইবার পিত্ত অ্যাসিডের সঙ্গে আবদ্ধ হয়, যা ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে চর্বিজাতীয় খাবারকে বৃহদান্ত্রের মাধ্যমে মলত্যাগের জন্য বহন করে। এটি লিভারকে আরও পিত্ত অ্যাসিড তৈরি করতে উৎসাহিত করে। এ প্রক্রিয়ার অন্যতম কাঁচামাল হচ্ছে কোলেস্টেরল। যদি লিভারে পর্যাপ্ত কোলেস্টেরল না থাকে, তখন রক্তে ভাসমান কোলেস্টেরল ও এলডিএলকে ব্যবহার করে। ফলে রক্তের কোলেস্টেরল ও এলডিএলের পরিমাণ কমে।
ওট, বার্লির মতো শস্য, বেগুন, ঢ্যাঁড়স, আপেল, কমলা, বেরিজাতীয় ফল দ্রবণীয় ফাইবারের খুব ভালো উৎস। ইসবগুলের ভুসি ও সব ধরনের শাকসবজিতেও দ্রবণীয় ফাইবার পাওয়া যায়।
৪. ফাইটোস্টেরল: ফাইটোস্টেরল উদ্ভিদের জৈবিক ঝিল্লির কাঠামোগত উপাদান, যা স্টেরল ও স্ট্যানলের সমন্বয়ে গঠিত। যদি কেউ প্রতিদিন ১ দশমিক ৫ থেকে ২ দশমিক ৪ গ্রাম উদ্ভিদ স্টেরল ও স্ট্যানল গ্রহণ করেন, তাহলে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে ৭ থেকে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ কমানো সম্ভব। অলিভ অয়েল, সানফ্লাওয়ার অয়েল, নারকেল তেল, বাদাম, সয়াবিন, মটর ও ক্যানোলা তেলে প্রাকৃতিকভাবে বিদ্যমান।
৫. মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট: স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিবর্তে মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ব্যবহার করতে হবে। এই চর্বি কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। তাই রান্নায় জলপাই তেল, সূর্যমুখীর তেল ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়া অ্যাভোকাডোতেও পর্যাপ্ত পরিমাণে মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে।
গবেষণা বলছে, পোর্টফোলিও ডায়েট ১৪ শতাংশ পর্যন্ত হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে পারে। যদিও শুধু ডায়েট মেনে চলাই যথেষ্ট নয়।
● ধূমপানের অভ্যাস থাকলে তা বন্ধ করতে হবে।
● নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করতে হবে।
● উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
● ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
● ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
● প্রয়োজনে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে।
মো. ইকবাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল