র্যাম্পেও ঝলমলে রুনা খান, রইল ১০ ছবি
Published: 21st, January 2025 GMT
মঞ্চ ও টেলিভিশনের গণ্ডি পেরিয়ে সিনেমা-ওটিটিতেও এখন সরব অভিনেত্রী রুনা খান। কাজ দিয়ে সব শ্রেণির দর্শকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি। তবে এসবের বাইরেও তিনি একজন মডেল। যার ঝলক মাঝেমাঝেই দেখা যায়। এই যেমন মডেল হিসেবে আবারও র্যাম্পে হাঁটলেন তিনি।
আলোকিতে ১৬-১৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল আর্কা ফ্যাশন উইক। এর শেষদিন অর্থাৎ ১৯ জানুয়ারি দেশের স্বনামধন্য কোরিওগ্রাফার আজরা মাহমুদের পরিচালনায় র্যাম্পে আলো ছড়ালেন রুনা। ছবি: ফেসবুক
ডিজাইনার তানহা শেখের (তান) শো-স্টপার হিসেবে র্যাম্পে অংশ নেন এই অভিনেত্রী ও মডেল। ছবি: ফেসবুক
মেকওভারের দায়িত্বে ছিল সামিনা সারার অ্যালিগেন্ট মেকওভার, ফটোগ্রাফারের দায়িত্বে ছিলেন আবুল কালাম আজাদ ও অনিক মজুমদার। ছবি: ফেসবুক
বিষয়টি নিয়ে রুনা খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তান একজন তরুণ ডিজাইনার। তার ডিজাইন আমি খুবই পছন্দ করি। তরুণ প্রজন্মের কাছ থেকে কোনও কাজের অফার আসলে আমি খুবই আনন্দের সঙ্গে, ভালোবেসে সেই কাজের সঙ্গে যুক্ত হই। তানহা শেখকে আন্তরিক ধন্যবাদ আমাকে যুক্ত করার জন্য।’ ছবি: ফেসবুক
তার কথায়, ‘আমি র্যাম্পে হাঁটা খুবই উপভোগ করি। এমনকি র্যাম্পে অন্যদের হাঁটা দেখতেও ভীষণ পছন্দ করি। এর আগে এই আলোকিতেই মাহিন খানের শো-স্টপার হিসেবে খাদি উৎসবে র্যাম্পে হাঁটি। সেবারও ভীষণ উপভোগ করেছিলাম, এবারও তাই।’ ছবি: ফেসবুক
তিনি আরও বলেন, ‘আমার অভিনয়ের শুরুই নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের সঙ্গে মঞ্চে অভিনয়ের মাধ্যমে। তাই আমি জানি, দর্শকের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ হওয়ার বিষয়টি দারুণ রোমাঞ্চকর। সেটা হোক নাগরিকের হয়ে মঞ্চ নাটক ‘দেওয়ান গাজী’, ‘নাম গোত্রহীন’ বা হোক শো-স্টপার হিসেবে র্যাম্পে হাঁটা। দু’টোই আমার কাছে সমান রোমাঞ্চকর এবং এটি আমি খুবই উপভোগ করি ‘ ছবি: ফেসবুক
অভিনয় বা মডেলিং, দু’টিই তার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ এবং দু’টিকে আলাদাভাবে দেখেন না তিনি। ছবি: ফেসবুক
সম্প্রতি ২৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে (ডিআইএফএফ) বাংলাদেশ প্যানারোমা বিভাগের মাধ্যমে প্রিমিয়ার হয়েছে রুনা খানের পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘নীলপদ্ম’। ছবি: ফেসবুক
১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় জাদুঘরে প্রথম প্রদর্শিত হয় সিনেমাটি। এখানে তিনি একজন যৌনকর্মীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ছবি: ফেসবুক
সিনেমায় রুনা খানের অভিনয় দারুণ প্রসংশিত হয়েছে। ছবি: ফেসবুক
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফ সব ক
এছাড়াও পড়ুন:
ভেড়াডহর গ্রামে উরিগানের আসরে
এক পক্ষে প্রায় ৫০০ মানুষ। আরেক পক্ষে অন্তত ৭০০। চলছে পাল্টাপাল্টি গানের লড়াই। তা দেখতে জড়ো হয়েছেন আরও হাজারো নারী-পুরুষ। মধ্যচৈত্রের চামড়াপোড়া গরমে শিল্পী-দর্শনার্থী সবাই দরদর করে ঘামছেন। কিন্তু বিরামহীনভাবে দুই পক্ষই পাল্লা দিয়ে গান গাইছে। কোনো পক্ষই অন্য পক্ষকে ‘বিনা যুদ্ধে’ ‘সূচ্যগ্র মেদিনী’ ছাড় দিতে নারাজ!
ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এমন গানের লড়াই চলে সুনামগঞ্জের হাওর-অধ্যুষিত শাল্লা উপজেলার ভেড়াডহর গ্রামের নতুন হাটিতে। সেদিন ছিল ১৪৩১ বঙ্গাব্দের ১৪ চৈত্র। খ্রিষ্টাব্দের হিসাবে ২৮ মার্চ ২০২৫। খুব সকালে সিলেট থেকে রওনা দিই। সঙ্গী ছিলেন বন্ধু প্রদীপ রঞ্জন বৈষ্ণব ও সংবাদকর্মী দীপ্ত বৈষ্ণব। প্রদীপের গ্রামের বাড়ি মুছাপুর। তাদের গ্রামের পাশেই ভেড়াডহর। মূলত প্রদীপের আমন্ত্রণেই সেখানে উরিগান দেখতে যাওয়া।
হিন্দুধর্মীয় উৎসব দোলযাত্রাকে উপলক্ষ করে বসন্তকালে গাওয়া হয় উরিগান। এসব গান ‘হোরিগান’ বা ‘দোলের গান’ নামেও পরিচিত। বিশেষত সুনামগঞ্জের শাল্লা, দিরাই ও জগন্নাথপুর, হবিগঞ্জের বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইন আর নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলায় উরিগানের প্রচলন বেশি। এর বাইরেও হাওরাঞ্চলের নানা গ্রামে দোল উৎসবে উরিগান গাওয়া হয়। তবে বৈষ্ণব ও কৈবর্ত সম্প্রদায়ভুক্তদের মধ্যে এ গানের চর্চা তুলনামূলকভাবে বেশি।
কবিগান কিংবা মালজোড়া গানের মতোই উরিগান হলো প্রতিযোগিতামূলক গান। পার্থক্য কেবল এটাই, কবিগান ও মালজোড়াগানের আসর বসে গ্রামীণ মানুষের চিত্তবিনোদনের জন্য, অন্যদিকে উরিগান পরিবেশিত হয় অনেকটা হিন্দুধর্মীয় আচার-রীতির অংশ হিসেবে। অবশ্য আরেকটু পার্থক্য রয়েছে, কবিগান ও মালজোড়া গানে মাত্র দুজন প্রতিদ্বন্দ্বী শিল্পী পাল্টাপাল্টি গান-কথায় বাহাস জমান, বিপরীতে উরিগানে একেকটি পক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কমসে কম কয়েক শ শিল্পী থাকেন! এমন বর্ণিল আর প্রাণবন্ত গানের ধারা সংগীত-সংস্কৃতিতে কমই আছে।
উরিগানকে সংগীতের একটি পরিচ্ছন্ন ধারা বলে মনে করা হয়ে থাকে। এ গানের চারটা পর্ব রয়েছে—ঝুমুরগান, লাসগান, চাইলগান ও চলতিগান। এসব মূলত নারীবর্জিত গানের ধারা। পুরুষেরাই নৃত্যসংবলিত এ গানের শিল্পী। বাড়ির উঠানে কিংবা মাঠে সমবেতভাবে কয়েক শ শিল্পী একই সঙ্গে এ গান পরিবেশন করেন। এক পক্ষের পরিবেশনার পর অপর পক্ষ একই আঙ্গিকের পাল্টা গান পরিবেশন করেন। এভাবেই দিনভর গান শেষে উপস্থিত দর্শনার্থীদের বেশির ভাগের মতামতের ভিত্তিতে একটি পক্ষকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নারীরা উরিগানে অংশ না নিলেও শ্রোতা হিসেবে তাঁদের অংশগ্রহণ ঠিকই থাকে।
২.
ভেড়াডহর গ্রামে পৌঁছাতে পৌঁছাতে আমাদের দুপুর হয়ে গিয়েছিল। অবশ্য গ্রামটিতে পৌঁছার আগেই প্রদীপের সুবাদে প্রাথমিক অনেক তথ্য জানা হয়ে যায়। যেমন ভেড়াডহর গ্রামবাসীর আমন্ত্রণে পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার কবিরপুর গ্রামের বাসিন্দারা উরিগান গাইতে ভেড়াডহরে এসেছেন। রীতি অনুযায়ী এক গ্রামের মানুষ আরেক গ্রামের মানুষকে উরিগান গাইতে আমন্ত্রণ জানান। সে আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে নির্দিষ্ট ওই গ্রামের পুরুষদের প্রায় সবাই সাতসকালে গাইতে আসেন।
পরম্পরা অনুযায়ী কবিরপুর গ্রামের মানুষেরাও সেদিন সাতসকালে ঝুমুরগান গাইতে গাইতে নিজেদের গ্রাম থেকে ভেড়াডহর গ্রামে প্রবেশ করেন। ভেড়াডহর গ্রামে ঢুকে ঝুমুরগান গেয়ে তাঁরা মূলত নিজেদের উপস্থিতি জানান দেন। দুপুরে পৌঁছার কারণে সে আনুষ্ঠানিকতা আমাদের দেখা হয়নি, তবে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন মানুষের আলাপ থেকে তা ঠিকই জেনে যাই। আমরা যখন গ্রামটিতে পা রাখি, ততক্ষণে লাসগানের পরিবেশনা শুরু হয়েছে।
হিন্দি-বাংলামিশ্রিত লাসগান মগ্ন হয়ে গাইছেন কবিরপুর গ্রামের শিল্পীরা। লাসগান শেষ করেই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ঘুরে ঘুরে কয়েক শ মানুষ সমবেত কণ্ঠে চাইলগান পরিবেশন করেন। চাইলগানে নৃত্যসংবলিত শারীরিক কসরতের পাশাপাশি শিল্পীরা দুই হাত ওপরে তুলে হর্ষধ্বনিসহযোগে লাফানোর মতো করে অনবদ্য এক দৃশ্যের জন্ম দেন। তাঁদের পরিবেশনার পর একই রকমভাবে ভেড়াডহরের গ্রামবাসীও গানে গানে কবিরপুরবাসীকে পাল্টা জবাব দেন।
শিল্পীরা জানান, ভেড়াডহরের লোকেরা উরিগানের আয়োজক হওয়ায় রীতি অনুযায়ী তাঁরা রাইপক্ষ, আর কবিরপুরের মানুষ আমন্ত্রিত দল হওয়ায় তাঁরা শ্যামপক্ষ। সে ধারা মোতাবেকই গান পরিবেশিত হয়।
উরিগান উপলক্ষে এভাবেই সাজানো হয়েছিল দোলবেদি