ঢাকা ক্যাপিটালসের অন্যরকম একদিন
Published: 21st, January 2025 GMT
চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের আজকের সকালটা অন্য দশদিনের মতো ছিল না। সাজানো গোছানো পরিপাটি ক্যাম্পাস হয়ে উঠল আরও রঙিন। কারণ, বিপিএলের দল ঢাকা ক্যাপিটালস আজ সকালে হাজির হয়েছিল নয়নাভিরাম ক্যাম্পাসে। খোলা মাঠে ঢাকা ক্যাপিটালসের ক্রিকেটাররা ফুটবল নিয়ে মেতে উঠলেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। ছবি তোলা হলো, সেলফি হলো, অটোগ্রাফ দেওয়া হলো। হলো পুরস্কার বিতরণ। সব মিলিয়ে মোস্তাফিজ, সাব্বির, মুগ্ধদের কাছে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে ছিলেন শিক্ষার্থীরা।
‘‘আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ইতিবাচক, পরিবর্তনে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’’ – এমন স্লোগানকে সামনে রেখে বিপিএলের দল ঢাকা ক্যাপিটালস মঙ্গলবার সকালে মাদক ও মোবাইল ফোন আসক্তি নিয়ে সচেতনতা কার্যক্রম চালায় চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজে। নিজেদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে ঢাকা ক্যাপিটালস লিখেছে, ‘‘ঢাকা ক্যাপিটালস-এর বিশেষ উদ্যোগে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজে অনুষ্ঠিত হলো মাদক ও মোবাইল ফোন আসক্তি নিয়ে সচেতনতা কার্যক্রম। ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে আমাদের ক্রিকেটারদের দারুণ মিষ্টি মুহূর্ত, অনুপ্রেরণাদায়ক আলোচনা এবং জমজমাট ফুটবল ম্যাচে ভরে উঠেছিল এই দিনটি।’’
আরো পড়ুন:
অধিনায়ক বদলের পর একশও করতে পারেনি রাজশাহী
প্লে’অফের আশা ছাড়ছে না ঢাকা
ফাঁকা দিনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে দারুণ খুশি মোস্তাফিজ, ‘‘আমি সব সময় পিচ্চিদের (সঙ্গ) ইনজয় করি। ওদের সঙ্গে ক্রিকেট ফুটবল দুইটাই কঠিন। খেললাম তো। অনেকগুলো বল পেয়েছিলাম।’’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে মোস্তাফিজের বার্তা, ‘‘ওরা স্পোর্টসে আসুক। মন দিয়ে পড়াশোনা করুক। তারাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।’’ সাব্বির রহমান খুব প্রাণবন্ত সময় কাটিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের ডাম্বেল পিটি মোবাইলে ভিডিও করতে দেখা যায় তাকে। সাব্বির বলেছেন, ‘‘ছোটবেলায় ফিরে ভালো লাগছে। ছোটবেলায় আব্বু-আম্মু মানত না। স্কুল ফাঁকি দিয়ে খেলতে যেতাম। এখনকার বাচ্চারা তো লাকি যে বাবা-মায়েরা খেলার জন্য নিয়ে যায়। ওরা চমৎকার খেলেছে।’’
ঢাকার ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার বলেছেন, ‘‘ফিলিং নস্টালজিক। ছোটবেলায় আমাদেরও এমন ক্রেজ ছিল। স্কুল লাইফে ফিরে গিয়েছিলাম। একটাই বার্তা, মোবাইল ব্যবহার করতে হবে কিন্তু এটার মিসইউজ যেন না হয়। ড্রাগ অ্যাডিকশন থেকে যেন দূরে থাকি।’’
আরেক ওপেনার হাবিবুর রহমান সোহানও একই কথা বললেন, ‘‘পুরোটা সময় উপভোগ করেছি। মনে হয়েছিল শৈশবে ফিরে গিয়েছি। ক্রিকেট খেলতে এসে বিপিএলের মাঝে এমন একটা সময় পাবো ভাবিনি। খুব ভালো লাগছে।’’
চট্টগ্রাম/ইয়াসিন/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব প এল য প ট লস
এছাড়াও পড়ুন:
মধ্যরাতে শুরু খোকসার ঐতিহ্যবাহী কালীপূজা
কুষ্টিয়ার খোকসায় মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) দিবাগত মধ্যরাতে মহিষ ও পাঠা বলির মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ঐহিত্যবাহী কালীপূজা ও মেলা। জেলার খোকসা উপজেলার জানিপুর গড়াই নদীর তীরে খোকসা কালী পূজা মন্দির প্রাঙ্গণে প্রতিবছর এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৬শ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা এ পূজা ও মেলাকে ঘিরে হিন্দু সম্প্রদায় এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে অন্যরকম এক আমেজের সৃষ্টি হয়েছে। ১৫ দিনব্যাপী মেলা থাকবে।
জানা যায়, হিন্দু সম্প্রদায়সহ ধর্ম বর্ণ বৈষম্যহীন এলাকাবাসীর সনাতনী ভক্তির স্থান ও ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্র খোকসার কালী পূজা মন্দির। বার্ষিক পূজা ও মেলাকে ঘিরে স্থানীয় সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অন্যরকম এক আমেজের সৃষ্টি হয়। মাঘের আমাবস্যা থেকে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এ পূজা উপলক্ষে সাড়ে সাত হাত লম্বা বিশাল দেহের দৃষ্টি নন্দন কালী প্রতিমা তৈরি করা হয়।
বংশ পরাক্রমে স্থানীয় প্রতিমা শিল্পী সুকুমার বিশ্বাস, নিমাই বিশ্বাস ও তাদের তিন সহযোগী প্রতিমা তৈরির কাজ করে আসছে। কালী পূজা উপলক্ষে মন্দির প্রাঙ্গণে পক্ষকাল ব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়। এ মেলায় দেশ বিদেশ থেকে আসা প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষের সমাগম ঘটে।
কালী পূজার ইতিহাস সম্পর্কে জানা গেছে, খোকসার ঐতিহ্যবাহী কালীপূজা কোন সুদূর অতীতে শুরু হয়েছে তার সঠিক ইতিহাস নেই।
তবে বর্তমানে পূজারী শ্রী প্রবোধ কুমার ভট্টাচার্যের সপ্তদশ ঊর্ধ্বতন পুরুষ রামাদেব তর্কলংকার এ পূজার প্রথম পূজারী ছিলেন। আর এ থেকে অনুমান করা হয় খোকসার কালীপূজার বয়স ৬শ বছরের বেশি। আত্মপ্রচার বিমুখ তান্ত্রিক সাধু গড়াই নদীর তীরে খোকসা নামক এক জাতীয় গাছে বেষ্টিত জন মনুষ্যহীন জঙ্গলাকীর্ণ স্থানে এ কালীপূজা আরম্ভ করেন বলে লোক মুখে শোনা যায়।
কালের সাক্ষী খোকসার কালীবাড়ী বিষয়ে আরো জানা গেছে, বিশাল এক জোড়া বট ও পাকুড় গাছ বেষ্টিত প্রাত্যহিক পূজা মন্দির। এখানে রাখা আছে নলডাঙ্গার রাজা ইন্দু ভূষণ দেব রায় কর্তৃক গড়াই নদী থেকে প্রাপ্ত কৃষ্ণবর্ণের প্রস্তর খন্ড। এটি বৌদ্ধ আমলের নিদর্শন। এ প্রস্তর খন্ডের গঠন অনেকটা চৌকির মতো। কৃষ্ণবর্ণের প্রস্তর খন্ডটিকে সারা বছরই পূজা করা হয়। ২৭ ইঞ্চি লম্বা, ৪ ফুট চওড়া পিতলের পাত দিয়ে তৈরি শিব ঠাকুর পূজার পাট আসন উল্লেখযোগ্য। আগের পূজা মন্দিরটি প্রমত্তা গড়াই নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়া ১৩৪১ বাংলা সালে পূজা মন্দিরটি বর্তমান স্থানে সরিয়ে আনা হয়।
বার্ষিক পূজা মন্দিরে প্রতি বছর মাঘী আমাবস্যার তিথিতে সাড়ে সাত হাত লম্বা কালী মূর্তিসহ সাড়ে বার হাত দীর্ঘ মাটি ও খড় দিয়ে তৈরি কালীমূর্তি পূজান্তে বিসর্জন দেওয়া হয়। এখানে নির্মাণ করা হয় নাট মন্দির। বার্ষিক পূজা ও মেলায় আগত পূজার্থী এবং দর্শনার্থীদের সাময়িক বিশ্রামাগার ও পূজা কমিটির কার্যালয়। মন্দিরের সম্মুখ ভাগে রাস্তা এবং পশ্চিমে গড়াই নদী পর্যন্ত বিস্তৃত মাঠ। এটাই মেলাঙ্গন। প্রতি বছর একই তিথিতে প্রচলিত নিয়মে এ পূজা হয়ে আসছে। মাঘী আমাবস্যার এক মাস আগে কদম কাঠের কাঠামো তৈরি করা হয়। এ কাঠামোই খড় ও মাটি দিয়ে তৈরি মূর্তিতে বার্ষিক পূজা হয়ে থাকে। জমিদার আমলে এখানে এক মাসেরও অধিক সময় মেলা চলতো।
মহিষ ও পাঠা বলির সূচনা বিষয়ে জানা গেছে, কালীপূজা শুরুতেই ক্রোধের প্রতীক মহিষ ও পাঠা বলির প্রথা চালু হয়। প্রথম দিকে পাঠা বলির সংখ্যা ছিল অনির্ধারিত। বার্ষিক পূজার দিনে প্রথম প্রহরে চন্ডি পাঠান্তে একটি পাঠা বলি দেওয়া হতো। দিনের শেষ প্রহরে দেবীকে আসনে তোলার পর নড়াইলের জমিদার রতন বাবুদের পাঁচ শরিকের জন্য পাঁচটা পাঠা বলি অতঃপর নলডাঙ্গার রাজা প্রেরিত মহিষ বলি হত। এরপর শিলাইদহের জমিদারী ষ্ট্রেট এর সন্মানে জোড়া পাঠা বলি হত। মাঘী সপ্তমীর পূজা ও মেলা পর্যন্ত চলতো ভক্তদের মানসার জন্য আনা পাঠা বলি। ক্রোধের পথিক মহিষ ও পাঠা বলীর এ প্রথা সেই রাজা জমিদারী আমল থেকে আজও প্রচলিত রয়েছে।
ঐতিহ্যমন্ডিত খোকসা কালীপূজা মন্দির ও ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্রটি সম্পর্কে আজও কোনো ইতিহাস রচনা করা হয়নি। তবে খোকসার কালী পূজা মন্দির ও ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্রটি সুষ্ঠু সংরক্ষণ ও প্রসার বৃদ্ধি সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
ঢাকা/কাঞ্চন/ইমন