কষ্টের জয়ে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে আলেকজান্ডার জেভেরেভ। আজ মঙ্গলবার দুপুরে অনুষ্ঠিত তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে তিনি আমেরিকার টমি পলকে হারিয়েছেন ৭-৬ (৭-১), ৭-৬ (৭-০), ২-৬ ও ৬-১ ব্যবধানে। এটা ছিল ২৭ বছর বয়সী জেভেরেভের টানা সপ্তম জয়।
ম্যাচ শেষে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি দুই সেটে পিছিয়ে পড়েছিলাম। কারণ, সে আমার চেয়ে ভালো খেলছিল। আমি ভালো খেলছিলাম না। চতুর্থ সেটটি ছিল আমার খেলা সেরা। আবারও সেমিফাইনালে উঠতে পেরে আমি খুশি।’’
জেভেরেভ এর আগে ২০২০ ও ২০২৪ সালে মেলবোর্ন পার্কে সেমিফাইনালে উঠেছিলেন। এবার ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে তিনি হয় দশবারের চ্যাম্পিয়ন নোভাক জকোভিচ অথবা কার্লোস আলকারাজের মুখোমুখি হবেন। যার কাছে তিনি গেল বছর ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনালে হেরেছিলেন। এই ম্যাচটা হবে জেভেরেভের ক্যারিয়ারের নবম গ্র্যান্ডস্লাম সেমিফাইনাল। যা খেলা চালিয়ে যাওয়া খেলোয়াড়দের মধ্যে সর্বোচ্চ, যারা এখনও কোনো শিরোপা জিততে পারেননি।
আরো পড়ুন:
কোয়ার্টার ফানালেই মুখোমুখি জোকোভিচের-আলকারাজ
ফেদেরারকে পেছনে ফেলার ম্যাচে প্রতিপক্ষকে প্রশংসায় ভাসালেন জোকোভিচ
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
পাইকারিতে দাম কমলেও প্রভাব নেই খুচরা বাজারে
রমজান মাস ঘিরে এবার ভোগ্যপণ্য আমদানির নতুন রেকর্ড হয়েছে। সর্বশেষ চার মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, চিনি, খেজুর, পেঁয়াজসহ ৯ ধরনের পণ্য প্রায় ৩৯ শতাংশ বেশি এসেছে। তবে পাইকারি বাজারে এমন আমদানির সবচেয়ে বেশি প্রভাব খেজুরের দামে। এই পণ্যের যে হারে দাম কমেছে, তা ‘অবিশ্বাস্য’ বলছেন অনেকে। এ ছাড়া প্রতিদিন দাম কমছে ডাল, চিনি, পেঁয়াজেরও। তবে পাইকারি বাজারে যে হারে দাম কমছে, সে হারে খুচরা বাজারে তার প্রভাব পড়েনি। মনিটরিংয়ে দুর্বলতা থাকায় দাম কমার সুফল কিছুটা কম পাচ্ছেন সাধারণ ভোক্তা।
চট্টগ্রামের প্রধান পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের হামিদ উল্লাহ মিয়া মার্কেট সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিছ আলম বলেন, আগের বছরের তুলনায় এবার বেশ কিছু পণ্য বেশি আমদানি হয়েছে। তাই কিছুটা কম দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজসহ মসলা জাতীয় বিভিন্ন পণ্য।
টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতাহার তসলিম বলেন, গত দুই মাসে ডলারের দাম কিছুটা স্থিতিশীল এবং আন্তর্জাতিক বাজারে কিছু পণ্যের দাম নিম্নমুখী থাকায় বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি হয়েছে। বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাবও আছে।
৩০-৪০ শতাংশ কমেছে খেজুরের দাম
দেশে খেজুরের বার্ষিক চাহিদা ৬০ থেকে ৯০ হাজার টন। শুধু রমজান মাসেই ৪০ হাজার টন খেজুর প্রয়োজন হয়। খেজুর মূলত সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তিউনিসিয়া, মিসর, জর্ডান, ইরাক, ইরান ও পাকিস্তান থেকে আমদানি হয়। গত কয়েক বছর ধরে রমজান শুরুর আগেই আগুন লাগত খেজুরের দামে। এবার সে চিত্র একেবারে বিপরীত। ১০ শতাংশ শুল্কহার কমার প্রভাবে কেজিতে খেজুরে দাম কমেছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। গতবারের তুলনায় এবার মানভেদে কোনো কোনো খেজুরের দাম ১০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে।
চট্টগ্রাম নগরের ফলমন্ডী ও রিয়াজউদ্দিন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বহু জাতের খেজুরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে ইরাকি জায়েদি খেজুরের। গত বছরের তুলনায় এবার জায়েদি খেজুর ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা কমে ৩৫০ থেকে ৩৭০, আজোয়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কমে ৬০০ থেকে ৮০০, মেডজল ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা কমে ৯০০ থেকে ৯৫০ এবং মাবরুম খেজুর ৪০০ টাকা কমে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী হারুনুর রশিদ জানান, পাইকারিতে জায়েদি খেজুর ১০ কেজির কার্টন ১ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বস্তার খেজুর ১২৫ টাকা থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খেজুরের দাম আরও কমে আসতে পারে।
পণ্য বেশি এলেও প্রভাব কম খুচরা বাজারে
রমজানে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ৯টি পণ্য। এসব পণ্যের রমজান-পূর্ববর্তী চার মাসের ঋণপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এবার গড়ে ৩৯ শতাংশ পণ্য বেশি এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত চার মাসে আমদানির জন্য ব্যবসায়ীরা চিনি চার লাখ ৫৪ হাজার, ডাল জাতীয় পণ্য ১ লাখ ৫৭ হাজার, সয়াবিন তেল ৫ লাখ ৯৮ হাজার, ছোলা ৫৭ হাজার ৫৫৫, মটর ডাল ২ লাখ ২ হাজার ৮৪৫, পেঁয়াজ ২ লাখ ৮০ হাজার, রসুন ৬১ হাজার ৩৮১, আদা ৫২ হাজার ৫১৫ ও খেজুর ১৪ হাজার ৪২০ টন আনার ঋণপত্র নিষ্পত্তি করেছেন।
অথচ গত রমজানের একই সময়ে (২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি) ব্যবসায়ীরা চিনির জন্য ৩ লাখ ৭৮ হাজার, ডাল জাতীয় পণ্য ১ লাখ ৯ হাজার, সয়াবিন তেল ৪ লাখ ৪৭ হাজার, ছোলা ৫৯ হাজার ৩২৯, মটর ডাল ১ লাখ ৯ হাজার, পেঁয়াজ ২ লাখ ৭৫ হাজার, রসুন ৫০ হাজার ৯৯৫, আদা ৩৩ হাজার ৫৭৩ ও খেজুর ১১ হাজার ৭১৪ টন পণ্য আনতে ঋণপত্র নিষ্পত্তি করেছিলেন। এই হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার চিনিতে ২০ শতাংশ, ডাল জাতীয় পণ্যে ৪৪, সয়াবিন তেলে ৩৪, ছোলায় ৬৪, মটর ডালে ৮৫, পেঁয়াজে ২, রসুনে ২০, আদায় ৫৬ ও খেজুরের আমদানি বেড়েছে ২৩ শতাংশ। এটির প্রভাবে এবার পাইকারি বাজারে কিছু পণ্যের দাম কমেছে। তবে সেই হারে খুচরা বাজারে দাম কমেনি।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ভোগ্যপণ্য যে হারে আমদানি হয়েছে, দাম আরও কমার কথা। ছোলার দাম কিছুদিন কম থাকলেও এখন আবার বেড়েছে। অবশ্য খেজুরের দাম এখনও কম। মনিটরিংয়ে দুর্বলতা থাকায় খুচরা বাজারে ভোক্তারা দাম কমার সুফল সেভাবে পাচ্ছেন না। প্রশাসনের নজরদারি আরও জোরদার করা দরকার।