শাস্তির মুখে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ১৬ নেতাকর্মী
Published: 21st, January 2025 GMT
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যক্রম ও সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ১৬ নেতাকর্মীর সনদ বাতিল, স্থায়ী বহিষ্কারসহ বিভিন্ন শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে এ বিষয়টি জানানো হয়।
রেজিস্ট্রার দপ্তর সুত্রে জানা গেছে, আবাসিক হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ও সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় চারজনের সনদ বাতিল, একজনকে স্থায়ী বহিষ্কার, দুইজনের সনদ এক বছরের জন্য স্থগিত এবং নয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এসব নেতাকর্মীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আবু নাঈম আব্দুল্লাহ ওরফে যাযাবর নাঈমকে (ফোকলোর বিভাগ,২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ) স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে।
এছাড়া সাবেক উপ-কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক জয় মোড়লের (আইন ও বিচার বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতক, সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক লোবন মোখলেছের (ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ,২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতকোত্তর, ছাত্রলীগ নেতা তানভীর আহমেদ তুহিনের (লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগ,২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতক, ছাত্রলীগ কর্মী মোস্তফা ফাহিম সিরাজির (অর্থনীতি বিভাগ,২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতকোত্তর সনদ বাতিল করা হয়েছে।
বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার হওয়া নেতাকর্মীদের মধ্যে বর্তমান কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সামিউল হক হিমেলকে (টিপিএস বিভাগ, স্নাতকোত্তর ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) ১ বছর, সাবেক উপশিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক মাছুম বিল্লাহকে (নৃবিজ্ঞান বিভাগ,২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) ১ বছর, ছাত্রলীগ কর্মী রেজওয়ানুল কবীর রাব্বিকে (ইইই বিভাগ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) ৩ বছর, আবু রায়হানকে (লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগ, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) ৩ বছর, গালিব ফয়সাল নির্ঝরকে ( ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) ২ বছর, সৌমিক জাহানকে (চারুকলা বিভাগ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) ৩ বছর, নাঈমুল ইসলাম অনিককে (আইন ও বিচার বিভাগ, স্নাতকোত্তর ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ) ১ বছর, পবিত্র মণ্ডলকে (পপুলেশন সায়েন্স, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ) ১ বছর এবং আব্দুল্লাহ আল শাহরিয়ারকে (চারুকলা ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) ১ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
এছাড়া ছাত্রলীগ কর্মী হাবিবুল্লাহ (আইন ও বিচার বিভাগ, স্নাতকোত্তর ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতকোত্তর সনদ ও নয়ন হাসানের (ইএসই ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতক সনদ ১ বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড.
হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে গত বছর ৫ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ নেতা আবু নাঈম আব্দুল্লাহ ও আরেক ছাত্রলীগ নেতা মাহফুজুর রাজ্জাক অনিকের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও আজকের পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ফাহাদ বিন সাঈদ এবং বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও যায়যায়দিনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আহসান হাবীবের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে কয়েক দফায় মারধর করেন আবু নাঈম আব্দুল্লাহর অনুসারীরা।
এ ঘটনায় সেদিনই তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ মাসুম হাওলাদারকে সভাপতি ও তৎকালীন প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জিকে সদস্য সচিব করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ঢাকা/তৈয়ব/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন ত কর ম র সনদ ১ বছর
এছাড়াও পড়ুন:
কাশ্মীরে হামলা: ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ সম্পর্কে যা জানা গেল
ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে গত মঙ্গলবার যে প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলা সংঘটিত হয়েছে তার দায় স্বীকার করে আলোচনায় এসেছে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)।
এই হামলায় কমপক্ষে ২৬ পর্যটক নিহত হন এবং আরও একাধিক ব্যক্তি আহত হন। হামলার খবর যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও টেলিভিশনের পর্দায় ছড়িয়ে পড়েছে, তখন টেলিগ্রাম বার্তায় হামলার দায় স্বীকার করেছে সশস্ত্রগোষ্ঠী দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)। সুত্র: আল-জাজিরা।
২০১৯ সালে কাশ্মীর অঞ্চলে স্বল্প-পরিচিতি সশস্ত্র গোষ্ঠী দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামের একটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। ভারত থেকে কাশ্মীরকে আলাদা করতে লড়াই করা সশস্ত্র বিদ্রোহীরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্যটকদের ওপর তেমন কোনো হামলা চালায়নি।
হামলার প্রেক্ষাপট
মঙ্গলবার বিকেলে পেহেলগামের বৈসরণে ঘুরতে আসা পর্যটকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বন্দুকধারীরা পার্শ্ববর্তী জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে পর্যটকদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। নিহতদের সকলেই পুরুষ এবং বহিরাগত পর্যটক ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ওই দিনই শ্রীনগরে পৌঁছান এবং গোটা অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীরা শোকবার্তা জানান এবং এই হামলার তীব্র নিন্দা জানান।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, এই জঘন্য হামলার পেছনে যারা আছে, তাদের কাউকেই ছেড়ে দেওয়া হবে না, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
তবে দায় স্বীকার করা সশস্ত্র গোষ্ঠী টিআরএফ এর হামলাকারীরা পলাতক রয়েছে।
টিআরএফ: একটি উত্থানশীল সশস্ত্র সংগঠন
‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) মূলত নতুন প্রজন্মের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি সংগঠন। ২০১৯ সালে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বা ৩৭০ ধারা বিলুপ্তির পর এই জঙ্গি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় থেকে গোষ্ঠীটি নিজেদের পরিচিতি গড়ে তোলে।
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, টিআরএফ আসলে পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যা পাকিস্তান ভিত্তিক লস্কর-ই-তইবা ও হিজবুল মুজাহিদিনের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠেছে। টিআরএফ তাদেরই ছদ্মবেশী রূপ, যা কাশ্মীরি জাতীয়তাবাদের নামে ভারতে সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে।
টিআরএফের মূল দাবি
এদের মূল দাবি, কাশ্মীরকে ভারতের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসনিক কাঠামোকে দুর্বল করতে তৎপর এই গোষ্ঠী। টিআরএফ এক বার্তায় জানিয়েছে, তারা বহিরাগতদের কাশ্মীরে স্থায়ী আবাসন অনুমোদনের বিরোধিতা করে।
যদিও মঙ্গলবারের নিহতরা কেউ কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন না।
পূর্ববর্তী কার্যক্রম ও নিরাপত্তা হুমকি
২০২০ সাল থেকে টিআরএফ নিয়মিতভাবে টার্গেট কিলিং এবং নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে হত্যার মতো হামলার দায় স্বীকার করে আসছে। এদের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে রাজনৈতিক কর্মী, অবসরপ্রাপ্ত নিরাপত্তা সদস্য এবং ভারত সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা ব্যক্তিরাই নিহত হয়েছে।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে টিআরএফকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করে।
২০২৪ সালের জুনে টিআরএফ জম্মুর রেয়াসি এলাকায় হিন্দু তীর্থযাত্রী বহনকারী একটি বাসে হামলার দায় স্বীকার করে। সেই হামলায় অন্তত ৯ জন নিহত এবং ৩৩ জন আহত হন। হামলার পর বাসটি খাদে পড়ে যায়।
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, সংগঠনটি বর্তমানে পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে গোপন আস্তানায় অবস্থান করছে এবং ছোট অস্ত্র ব্যবহার করে আশেপাশের এলাকায় হামলা চালানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
পেহেলগামের এই হামলা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকারের কাশ্মীর নীতির ওপর নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। ২০১৯ সালের পর থেকে সরকার বারবার কাশ্মীরে ‘স্বাভাবিক পরিস্থিতি’ ফিরে আসার দাবি করে আসছিল, যার অংশ হিসেবে পর্যটন উৎসাহিত করার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। হামলার পরদিন থেকেই পর্যটনখাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিপুল সংখ্যক পর্যটক তাদের বুকিং বাতিল করেন এবং এলাকাছাড়া করার জন্য ভিড় করেন। শ্রীনগর বিমানবন্দরের পথে যানজট সৃষ্টি হয় এবং বিমানের ভাড়া তিনগুণেরও বেশি বেড়ে যায়।