গুম, খুন ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না- এমন বিধান প্রস্তাবে রাখার কথা তুলে ধরেছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেছেন, বিচারিক আদালত বা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তিরাও নির্বাচনের সুযোগ পাবেন।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) টক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

নির্বাচন অঙ্গনকে দুর্নীতিমুক্ত রাখার জন্য এই বিধান করা হচ্ছে জানিয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, প্রস্তাবিত বিধানটি সব রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর জন্য প্রযোজ্য হবে।

আরো পড়ুন:

চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুন: আদালতের রায়ে ক্ষুব্ধ তারকারা

ফ্যাসিস্ট যেন সংসদে ফিরে আসতে না পারে: বদিউল আলম

কোনো দলকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার পক্ষ নয় কমিশন, বরং নির্বাচনে সুষ্ঠু প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিশ্চিত করতে এই প্রস্তাব করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বদিউল আলম। 

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, “গুরুতর মানবতাবিরোধী অপরাধ যারা করেছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড যারা করেছেন, তারা যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারেন, সেই সুপারিশ নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হয়েছে। কাউকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমরা চাই যারা অন্যায় করেছেন, তারা যেন বিচারের আওতায় আসেন।”

একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে যারা কারচুপিতে সহায়তা করেছে তাদের বিচার করার দাবি উত্থাপন করে বদিউল আলম বলেন, “তখনকার কমিশন অন্যায় করলে তাদেরও বিচার হবে। কেউ চায় না, অতীতের জায়গায় ফিরে যাক। অতীতের কারচুপির নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি চাই না। নির্বাচনী অঙ্গনকে দুর্বৃত্তায়ন মুক্ত করতে হবে।”

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন নির্বাচন বিষয়ে আরো কিছু সুপারিশ করেছে। সেসব আগেই কমিশনের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

নির্বাচন এলেই পোস্টারে ছেয়ে যায় দেশ। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের আপত্তি রয়েছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। নির্বাচনে পোস্টার নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে তারা।

নির্বাচনি আইন ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ’ (আরপিও) সংশোধন করে মোট ১৮টি বিষয় সংশোধন এবং মোট ১৫০টি সুপারিশ জমা দিয়েছে সংস্কার কমিশন।

ঢাকা/হাসান/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে পোস্ট দিয়ে শ্রমিকের আত্মহত্

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকায় মন্ট্রিমস লিমিটেড নামে একটি কারখানার শ্রমিক কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে বুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ওই ঘটনার পর থেকে কারখানার ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। 

কারখানার কার্টন সেকশনে কাজ করা ওই শ্রমিকের নাম মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী (২৩)। তিনি স্থানীয় নিশ্চিন্তপুর এলাকায় বসবাস করতেন। তার গ্রামের বাড়ি নীলফামারী জেলায়।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১২ টার দিকে তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বিষাক্ত কেমিক্যাল পান করেন। পরে রাত সাড়ে তিনটার দিকে তার মৃত্যু হয়।

মৃত্যুর আগে ওই শ্রমিক কারখানা কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম নিয়ে একটি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লেখেন, “মন্ডল গ্রুপের মন্টিন্স লিমিটেড এখানে এক বছর যাবত চাকরি করি। কিছু লোক আসার তিন মাস এবং ছয় মাস হচ্ছে তাদেরকে পার্মান করে। আমাকে করেনা কারণ হচ্ছে আমরা মেশিনের লোক। একদিন ছয়টায় গিয়েছিলাম তার জন্য আমাদেরকে বিচার করছি আমি কি অপরাধ করছি। তাদের জন্য আমার জীবন আমি শেষ করে দেব। এর জন্য দাবি আমাদের সেকশনের প্ল্যানিং কামরুল স্যার আর হচ্ছে ম্যানেজার হারুন স্যার ওরা মানুষকে মানুষ মনে করে না। তারা মনে করে ওরা সোনার তৈরি, আমরা মাটির তৈরি। আমি আজকে সুইসাইড করব। ঈদের নিয়মে আমি অনেক কষ্ট পাইছি এই পৃথিবীর মানুষ বড়ই নিষ্ঠুর আপনারা এর বিচার করবেন এই পৃথিবীর মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী।”

কারখানার শ্রমিকরা জানান, তিনি এক বছর ধরে ডেইলি বেসিকে কাজ করতেন। অনেককে পার্মানেন্ট করা হলেও তাকে করা হয়নি। এছাড়াও কর্তৃপক্ষ বকাঝকা করেছে। পরে তিনি কেমিক্যাল খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। প্রথমে তাকে সফিপুর তানহা হাসপাতালে নেওয়া হলে তারা ভর্তি করা নেয়নি। গাজীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। 

তারা আরও জানান, হারুন ও কামরুল ম্যানেজেন্টে যোগ দেওয়ার পর থেকে শ্রমিকদের উপর অত্যাচার শুরু করেছে। তারা মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে। কথায় কথায় চাকরি হতে ছাঁটাই করে। তাদেরকে অবিলম্বে চাকরিচ্যুত করতে হবে। না হলে আরও শ্রমিক মারা যাবে। 

নিহত শ্রমিকের স্ত্রী হাসি আক্তার বলেন, “আমার স্বামী মারা গেছে এখন তাকে নিয়ে সদর হাসপাতালে রয়েছি। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারব না।”

নিহতের বোন জামাই বাবু বলেন, “ও অনেকদিন হলো কাজ করে। ওর সাথের সবাইরে চাকরিতে পার্মানেন্ট করলেও কর্তৃপক্ষ ওকে পার্মানেন্ট করেনি। অসুস্থ থাকার কারণে ৬টায় কারখানায় হতে বের হয়। এজন্য পরের দিন ম্যানেজমেন্ট হারুন ও কামরুল তাকে রুমে বকাঝকা করে। এসব কারণে সে আত্মহত্যা করেছে।”

তানহা হাসপাতালের ম্যানেজার গোলাম মোস্তফা বলেন, “রাত ১২টার দিকে কয়েকজন লোক একজন রোগীকে হাসপাতালে আনে। তিনি কিছু একটা খেয়েছিলেন হয়তো। মুখ দিয়ে লালা বের হচ্ছিল, পরে তাকে আর ভর্তি করিনি।”

মন্ট্রিমস্ লিমিটের কারখানার প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, “একজন শ্রমিক মারা গেছে। আমরা একটু ব্যস্ত আছি, বিষয়টি নিয়ে পরে কথা বলব।”

ঢাকা/রেজাউল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ