চার দেশ ও স্থানীয় বাজার থেকে ৭৫৬ কোটি টাকার সার কিনবে সরকার
Published: 21st, January 2025 GMT
সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার ও চীনের প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টন সার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার টন ইউরিয়া সার এবং ৩০ হাজার টন ফসফরিক এসিড রয়েছে।
এই সার কিনতে ৭৫৬ কোটি ৬৩ লাখ ২৬ হাজার ৪০০ টাকা ব্যয়ের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। মঙ্গলাবর (২১ জানুয়ারি) সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড.
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফার্টিগ্লোব ডিসট্রিবিউশন লিমিটেড থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্কা গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদ দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১৩২ কোটি ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৮০০ টাকা।
আরো পড়ুন:
ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানায় শতভাগ উৎপাদন শুরু
যমুনা সার কারখানায় উৎপাদন বন্ধ
জানা গেছে, গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি সভার অনুমোদনের ভিত্তিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আরব আমিরাতের ফার্টিগ্লোব ডিসট্রিবিউশন থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে ৩ লাখ ৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার আমদানির চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
এই চুক্তি অনুযায়ী সারের মূল্য নির্ধারণ করে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার সর্বমোট ১ কোটি ৮ লাখ ২৪ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলারে আমদানির প্রত্যাশামূলক অনুমোদনের প্রস্তাব দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১৩২ কোটি ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৮০০ টাকা। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে অনুমোদন দিয়েছে।
শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে আর এক প্রস্তাবে সৌদি আরবের সাবিক এগ্রো-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে ৩০ হজাার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার (অপশনাল) ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন চাওয়া হয়। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এই প্রস্তাবটিও অনুমোদন দিয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ১৩২ কোটি ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৮০০ টাকা।
জানা গেছে, গত বছরের ১১ জুন অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের ভিত্তিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সৌদি আরবের সাবিক এগ্রো-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে ৫ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
এই চুক্তি অনুসারে সারের মূল্য নির্ধারণ করে ১৫তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার (অপশনাল) ইউরিয়া সার প্রতি মেট্রিক টন ৩৬০.৮৩ মার্কিন ডলার হিসেবে সর্বমোট ১ কোটি ৮ লাখ ২৪ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলারে আমদানির প্রত্যাশামূলক অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব উপস্থাপন করা। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১৩২ কোটি ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৮০০ টাকা। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে অনুমোদন দিয়েছে।
বৈঠকে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে কাতার এনার্জি মার্কেটিং থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ১৩৮ কোটি ৬৫ লাখ ১৭ হাজার ৮০০ টাকায় আমদানির আর একটি প্রস্তাব নিয়ে আসে শিল্প মন্ত্রণালয়। এ প্রস্তাবটিও অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১১ জুন অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভার অনুমোদনের ভিত্তিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কাতার এনার্জি মার্কেটিং থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে ৫ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
কাতার এনার্জি মার্কেটিংয়ের সাথে চুক্তি অনুযায়ী সারের মূল্য নির্ধারণ করে প্রতি মেট্রিক টন ৩৭৮.৮৩ মার্কিন ডলার হিসেবে ৯ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ১ কোটি ১৩ লাখ ৬৪ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলারে আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১৩৮ কোটি ৬৫ লাখ ১৭ হাজার ৮০০ টাকা।
বৈঠকে দেশীয় প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশ থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের আর একটি প্রস্তাব নিয়ে আসে শিল্প মন্ত্রণালয়। এটিও অনুমোদন দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এই সার কিনতে মোট ব্যয় হবে ১২৯ কোটি ৪৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাফকো, বাংলাদেশ হতে ৫ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার ক্রয়ের সংশোধিত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর প্রেক্ষিতে ১১তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের জন্য প্রাইস অফার প্রেরণের অনুরোধ করা হলে কাফকো, বাংলাদেশ প্র্রাইস অফার প্রেরণ করে।
কাফকোর সাথে চুক্তি অনুযায়ী সারের মূল্য নির্ধারণ করে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার প্রতি মেট্রিক টন ৩৫৩.৭৫ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ১ কোটি ৬ লাখ ১২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলারে কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১২৯ কোটি ৪৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
এদিকে, বৈঠকে চট্টগ্রামের টিএসপিসিএলএর জন্য আরব আমিরাতের মেসার্স মেসার্স জেনট্রেড এফজেডই’র কাছ থেকে ১০ হাজার মেট্রিক টন ফসফরিক এসিড আমদানির প্রস্তাব নিয়ে আসে শিল্প মন্ত্রণালয়। এই প্রস্তাবটিও অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এতে ব্যয় হবে ৭৫ কোটি ৩৭ লাখ ২০ হাজার টাকা।
জানা গেছে, টিএসপি সার উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল ফসফরিক এসিড ও রক ফসেফট বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১০ হাজার মেট্রিক টন ফসফরিক এসিড আমদানির জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৩টি দরপত্র জমা পড়ে। ৩টি প্রস্তাবই কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়।
দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশে রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স জেনট্রেড এফজেডই’র কাছ থেকে ১০ হাজার মেট্রিক টন ফসফরিক এসিড মোট ৭৫ কোটি ৩৭ লাখ ২০ হাজার টাকায় কেনার সিদ্ধান্ত নেয় শিল্প মন্ত্রণালয়।
বৈঠকে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে আর এক প্রস্তাবে চট্টগ্রামের ডিএপিএফসিএল-এর জন্য ২০ হাজার মেট্রিক টন ফসফরিক এসিড চীনের মেসার্স গুয়াংজি পেঙ্গুয়ে ইকো-টেকনোলজি কোং লিমিটেড থেকে ১৪৯ কোটি ৮৮ হাজার টাকায় আমদানির অনুমোদন চাওয়া হয়। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এই প্রস্তাবটিও অনুমোদন দিয়েছে।
জানা গেছে, ডিএপি সার উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল ফসফরিক এসিড বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২০ হাজার মেট্রিক টন ফসফরিক এসিড আমদানির জন্য আন্তর্জাতিক উম্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে মাত্র ১টি দরপত্র জমা পড়ে। প্রস্তাবটি কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়।
দরপত্রের সকল প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশে রেসপনসিভ একমাত্র দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স সান ইন্টারন্যাশনাল এফজেডই, ইউএই (প্রস্তুতকারক: মেসার্স গুয়াংজি পেঙ্গুয়ে ইকো-টেকনোলজি কোং লিমিটেড, চীন) থেকে ২০ হাজার মেট্রিক টন ফসফরিক এসিড মোট ১৪৯ কোটি ৮৮ হাজার টাকায় ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয় শিল্প মন্ত্রণালয়।
ঢাকা/হাসনাত/হাসান/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ম ট র ক টন ব ল ক গ র য ন ল র গ র য ন ল র ইউর য় স র আমদ ন র ২০ হ জ র হ জ র টন ন র জন য উপদ ষ ট দরপত র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
এস আলমের ১১ একর সম্পদ নিলামে বিক্রি করতে বিজ্ঞপ্তি
প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা পাওনা আদায়ে বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের কারখানা-গুদামসহ প্রায় ১১ একর সম্পত্তি নিলামে বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি। আজ রোববার চট্টগ্রামের স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ব্যাংকটির খাতুনগঞ্জ কর্পোরেট শাখা এস আলমের এসব সম্পদ নিলামে কিনতে আগ্রহীদের দরপত্রে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি খাতুনগঞ্জ কর্পোরেট শাখার বিনিয়োগ গ্রাহক এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল্লাহ হাছান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলমের কাছ থেকে ২০২৫ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত লভ্যাংশসহ ব্যাংকের খেলাপি বিনিয়োগ বাবদ ৯ হাজার ৯৪৮ কোটি ৪২ লাখ ৭০ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। আদায়কাল পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ ও অন্যান্য খরচ আদায়ের নিমিত্তে অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩ এর ১২(৩) ধারা মোতাবেক বন্ধকী সম্পত্তি নিলামে বিক্রির জন্য আগ্রহী ক্রেতাদের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়।
ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাখা প্রধানের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়- তিনটি রেজিস্টার্ড মর্টগেজ চুক্তি অনুসারে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগর মৌজায় ১০ দশমিক ৯৩ একর জায়গা এবং এসব জায়গায় কারখানা-গুদাম ও ভবনসহ পুরো স্থাপনা নিলামে তোলার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এরমধ্যে ২০১৪ সালের ১৩ ও ১৬ মার্চের ৩৭৪৬ নম্বর, ২০১৩ সালের ২৮ ও ২৯ মের ৮০৫৭ নম্বর এবং ২০১৩ সালের ১৪ ও ১৫ জুলাইয়ের ৩৩২৭ নম্বর রেজিস্টার্ড মর্টগেজ চুক্তিবদ্ধ সম্পদ রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ইসলামী ব্যাংক ‘দখলে’ নিয়েছিল এস আলম গ্রুপ। ব্যাংকটির সিংহভাগ মালিকানায় তাদের নিয়ন্ত্রিত ছিল। এস আলমের বিরুদ্ধে ইসলামী ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করে পাচারের অভিযোগও আছে।