শরীয়তপুরে তরুণদের নিয়ে খাল পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ
Published: 21st, January 2025 GMT
‘তারুণ্যের উৎসব’ উপলক্ষে শরীয়তপুর পৌর এলাকায় পালং খাল পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেছে জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদ। দখল-দূষণে বিপর্যস্ত এ খাল পুনরুদ্ধারে সহযোগিতা করছে স্থানীয় ছাত্র-জনতা। এ উদ্যোগে খুশি খালপাড়ের বাসিন্দারা। খালটি সচল হলে মশা-মাছির উপদ্রব থেকে মুক্তি পাওয়ার পাশাপাশি কৃষি ক্ষেত্রেও সুফল পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
শরীয়তপুর শহরের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা পালং খালের দৈর্ঘ্য অন্তত দুই কিলোমিটার। দীর্ঘ এক যুগ ধরে দখল আর দূষণে অস্তিত্ব হারিয়েছে একসময়ের প্রবাহমান খালটি। খালের বিভিন্ন অংশ ভরাট করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসভবন নির্মাণ এবং ময়লা-আবর্জনা ফেলায় এখন পানিপ্রবাহ বন্ধ আছে। আবর্জনা থেকে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ। মশা-মাছির উৎপাত বাড়ায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পৌরবাসী।
‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’ স্লোগান নিয়ে মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) সকালে পালং খালে পানিপ্রবাহ ফেরানোর কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদ। এ কার্যক্রম চলবে টানা ১০ দিন। এ উদ্যোগের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে কাজে নেমে পড়েছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শরীয়তপুরের আহ্বায়ক ইমরান আল নাজির বলেছেন, “তারুণ্যের উৎসবকে আমরা একটু ভিন্নভাবে উদযাপন করার চেষ্টা করছি। আমাদের জেলা শহরের বিভিন্ন খাল দখল করেছে স্থানীয় একটি মহল। এজন্য কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি এই খালগুলোকে দখল এবং দূষণমুক্ত করে আগের মতো সচল করব।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শরীয়তপুরের সদস্য সচিব সাজ্জাদ হোসেন শোভন বলেছেন, “আমাদের জেলার খালগুলো আজ দখল ও দূষণের কারণে ধ্বংসের পথে। এ খালগুলো শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, বরং আমাদের জীবিকা, পরিবেশ এবং ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, খাল রক্ষার জন্য অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং খালগুলো পুনরুদ্ধার করতে হবে। সবার সচেতনতা ও সহযোগিতাই পারে এ সংকট থেকে মুক্তি দিতে।”
সানজানা খান নামের এক শিক্ষার্থী ও রোভার স্কাউটের সদস্য বলেন, “পালং আমাদের জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ খাল। এ খালের মাধ্যমে এই অঞ্চলের কৃষি কাজ করা হতো। বর্তমানে খালটি ময়লার স্তূপে পরিণত হয়েছে। এর কারণে মশা-মাছির উপদ্রব বেড়েছে। নানা পানিবাহিত রোগ ছড়াচ্ছে। তারুণ্যের উৎসবকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে আমরাও এ খাল পুনরুদ্ধারে অংশ নিয়েছি। আমরা এ খালকে আগের মতো সচল করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।”
নদী পরিব্রাজক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান শিপন বলেছেন,
“দীর্ঘদিন ধরে পালং খাল পুনরুদ্ধারের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছি আমরা। আজ জেলা প্রশাসন তরুণদেরকে নিয়ে খাল পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেছে। তাদের এ মহৎ উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই।”
এ বিষয়ে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন বলেন, “খালের সাথে কৃষি ও মানুষের জীবন-জীবিকার নিবিড় সম্পর্ক আছে। বিষয়টি মাথায় রেখে স্থানীয় যুবসমাজকে নিয়ে খাল পুনরুদ্ধার কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। আগামী ১০ দিন এ কার্যক্রম চলবে।”
ঢাকা/আকাশ/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, বন্ধ মানবিক সহায়তাও
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ঘরবাড়ি ও তাঁবুর মতো আশ্রয়কেন্দ্রও ইসরায়েলি বর্বরতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার দেশটি। পাশাপাশি আট সপ্তাহ ধরে উপত্যকায় খাদ্য, ওষুধ ও ত্রাণসামগ্রী প্রবেশ বন্ধ করে রেখেছে। এ পরিস্থিতিকে জাতিসংঘ সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট হিসেবে বর্ণনা করেছে।
আলজাজিরার সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, বুধবার রাতভর এবং বৃহস্পতিবার ভোরে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মধ্য গাজার নুসেইরাতের কাছে একটি তাঁবুতে তিন শিশু এবং গাজা শহরের একটি বাড়িতে এক নারী ও চার শিশু নিহত হয়েছেন। সাম্প্রতিক এক হামলায় স্থানীয় সাংবাদিক সাঈদ আবু হাসানাইনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে কমপক্ষে ২৩২ সাংবাদিক নিহত হলেন।
গাজার দেইর এল-বালাহ থেকে আলজাজিরার তারেক আবু আযুম বলেন, অবরুদ্ধ উপত্যকা স্পষ্টতই ইসরায়েলি সেনা বৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকটের সাক্ষী হচ্ছে। এখানকার অক্ষত ও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোও গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকারীরাও অসহায় হয়ে পড়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়াদের কাছে পৌঁছানোর জন্য তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
অধিকৃত পশ্চিম তীর পরিচালনাকারী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘ইসরায়েলের আক্রমণের কোনো বিরতি নেই, কোনো করুণা নেই, কোনো মানবতা নেই।’
প্রায় দুই মাস ধরে ইসরায়েল ত্রাণ সহায়তা অবরোধ করে রাখায় গাজার মানবিক সংকট আরও তীব্র হয়েছে। এটিকে জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয় অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ‘ফিলিস্তিনি জীবনের ইচ্ছাকৃত ধ্বংসাবশেষ’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, গাজা উপত্যকা এখন সম্ভবত ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামলা শুরুর পর ১৮ মাসের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অপুষ্টির সম্মুখীন নারী ও শিশুদের বিপজ্জনক ও বিপর্যয়কর ক্ষতির কথা তুলে ধরেছে। তারা অনেকেই পর্যাপ্ত খাবার, পানীয় জল এবং শিশুর খাবারের অভাবের মুখোমুখি হয়েছে। ইসরায়েলের গাজায় সাহায্য পাঠাতে অব্যাহত অস্বীকৃতি ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক আদালতের একটি আদেশকে লঙ্ঘন করে। সেই আদেশে দুর্ভিক্ষ ও অনাহার রোধে জরুরি ভিত্তিতে উপত্যকায় সাহায্য পৌঁছানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে রাখা নিয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে) আগামী সপ্তাহে হেগে অনুষ্ঠিত গণশুনানির একটি সূচি প্রকাশ করেছে। সেখানে গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে জাতিসংঘ, এনজিওর কার্যকলাপকে অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে ইসরায়েলের আইনি বাধ্যবাধকতা নিয়ে আলোচনা করা হবে। আগামী সোমবার শুরু হতে যাওয়া এ শুনানির আগে প্রায় ৪৫টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা লিখিত বিবৃতি জমা দিয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র আলজাজিরাকে জানিয়েছে, বুধবার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত এবং ১০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ১৮ মাসে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫১ হাজার ৩০৫ জন নিহত এবং ১ লাখ ১৭ হাজার ৯৬ জন আহত হয়েছেন।