কেরানীগঞ্জে সবজির দাম না পেয়ে হতাশ কৃষক
Published: 21st, January 2025 GMT
ঢাকার পাশে কেরানীগঞ্জে সবজি এখন গলার কাটা। কদিন আগেও প্রতি পিস ফুলকপি, বাঁধাকপি বিক্রি হতো ৩০/৪০ টাকা। সে কপি এখন বিক্রি হচ্ছে ৫/৭ টাকায়। প্রতি কেজি মুলা বিক্রি হচ্ছে ২ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫ টাকা। একই ভাবে সিমের কেজি ১০ টাকা, শাকের আটি ২ থেকে ৫ টাকা।
সোমবার ( ২০ জানুয়ারি ) কেরানীগঞ্জের বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কষ্টে রোপণ করা শাকসবজি বিক্রি করতে না পেরে জমিতেই নষ্ট হচ্ছে অনেক কৃষকের। কেউ নতুন করে আবাদ করতে শাক-সবজি তুলে ফেলে দিচ্ছেন, কেউবা নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে পরিস্কার করছেন জমি।
এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, কৃষিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। তাদের অভিযোগ সার বীজের উর্ধ্বগতি এবং বাজারের সঠিক তদারকি না থাকার কারণেই কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
হযরতপুর গ্রামের কৃষক আহসান বলেন, “খুচরা বাজারে মুলার কেজি ৩০ টাকা, ফুলকপির পিস ৩০/৪০ টাকা, সিমের কেজি ৪০ টাকা, শাকের আটি সর্বনিম্ন ১০/২০ টাকা অথচ আমরা এসব বিক্রি করতে পারছি না। প্রতি মণ মুলা তোলা এবং পরিবহন খরচ ১০০ টাকার উপর অথচ বিক্রি হয় ১৫০ টাকায়। আবার অনেক সময় বিক্রিও হয় না। ফুল কপি ৫ টাকা পিস, কপি বিক্রি করে পরিবহন খরচও হয় না, তাই এসব বাজারে না নিয়ে ফেলে দিচ্ছি।”
সিম চাষি জামিলা খাতুন বলেন, “প্রতিবছর সিম বিক্রি করে গরু কিনি, সংসার চালাই, টাকা ব্যাংকেও রাখি কিন্তু এবার ২ লাখ টাকা খরচাও উঠবে না। এতো সুন্দর সিম বিক্রি করতে গেলে ১০ টাকার বেশি বিক্রি করা যায় না। অথচ এক কেজি সিম উঠাতেই ১০ টাকা খরচ।”
কলাতিয়ার কৃষক রুহুল মিয়া বলেন, “বাঁধাকপি কয়েক সপ্তাহ রাখা গেলেও ফুলকপি বিক্রির উপযোগী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি করতে হয়। না হলে ফুল ফুটে গেলে বিক্রির অনুপযোগী হয়ে পড়ে। আমার এক বিঘা জমির ফুলকপির বিক্রি করতে না পারায় জমিতে নষ্ট হচ্ছে।”
কৃষক নুরু বলেন, “সবজির দামে ক্রেতা খুশি হলেও আমরা খরচের টাকা তুলতে না পেরে পথে বসতে চলেছি। আমরা যারা ফসল ফলাই, তারা সব সময়ই কম দাম পাই। এখন বাজারে সবজি বিক্রি করে পরিবহন ও শ্রমিক খরচের টাকাও উঠছে না। ক্রেতা কম থাকায় বেশিরভাগ সবজিই নষ্ট হচ্ছে জমিতে।”
কেরানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহুয়া শারমিন মুনমুন বলেন, “আগাম চাষ করা সবজিতে কৃষকেরা বিপুল অর্থ পেয়েছে কিন্তু বর্তমান সময়ে সবজির ভরপুর মৌসুম হওয়ায় বাজারে সবজিতে পরিপূর্ণ আর মানুষেরও চাহিদা কমেছে, তাই সবজির দাম কম। গত বছর ভালো দাম পেয়ে কৃষক উচ্চমূল্যে বীজ ক্রয় করে অতিরিক্ত ফসল ফলিয়েছে। এ বছর সবজির বাম্পার ফলন হওয়ায় সবজির দাম কমে গেছে। কৃষকরা কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ করে আবাদ করলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসবে।”
কৃষি অফিস কৃষকদের আগাম এবং বিভিন্ন রকমের সবজি আবাদেরও পরামর্শ দিচ্ছে, জানান তিনি।
ঢাকা/শিপন/টিপু
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সবজ র দ ম ফ লকপ
এছাড়াও পড়ুন:
দেড় ঘণ্টায় শেষ সুলভ মূল্যের ডিম-দুধ, পাননি অনেকেই
নির্ধারিত এলাকায় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের গাড়ি পৌঁছায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। এরপর শুরু হয় সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও গরুর মাংস বিক্রি। দুপুর ১২টার কিছুক্ষণ পরেই দেখা গেল গাড়িতে ডিম ও দুধ নেই। কেবল ১৬ কেজি গরুর মাংস অবশিষ্ট রয়েছে। অর্থাৎ মাত্র দেড় ঘণ্টায় শেষ হয়ে গেছে সুলভ মূল্যে বিক্রির জন্য আনা দুধ ও ডিম।
আজ সোমবার চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী ওয়্যারলেস এলাকায় দেখা গেছে এমন চিত্র। এদিন নগরের ওয়্যারলেস ও টেক্সটাইল এলাকায় এ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর। এই কর্মসূচির আওতায় পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে গরুর মাংসের দাম প্রতি কেজি ৭০০ টাকা, দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকা ও ডিম প্রতি ডজন ১১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আজ প্রতিটি গাড়িতে ২০০ লিটার দুধ, ১ হাজার ৫০০ পিস ডিম ও ৭৫ কেজি করে মাংস ছিল। সে হিসেবে মাত্র দেড় ঘণ্টায় ২০০ লিটার দুধ ও ১২৫ ডজন ডিম বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। তবে দুপুর ১২টার দিকে তেমন ভিড় দেখা যায়নি সেখানে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, তাঁরা অনেকে আগে এসেও পণ্য পাননি।
এদিন অন্তত ১০ ক্রেতা দুধ-ডিম না পেয়ে ফেরত গেছেন। ডিম কিনতে আসা ক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, ‘আমি দুপুর ১২টার দিকে এসে ডিম পাই নাই। বাসা থেকে আসতে আসতেই দেখি সব শেষ। তাঁরা নাকি দেড় হাজার ডিম আনছে। তাহলে আমরা পাই নাই কেন?’
গাড়ি থেকে এসব পণ্য কেনার জন্য প্রথমে টাকা দিয়ে স্লিপ নিতে হয়। কর্মকর্তারা জানান, একজন সর্বোচ্চ এক ডজন ডিম, এক বা দুই লিটার দুধ ও এক কেজি মাংস কিনতে পারেন। কেউ চাইলে শুধু ডিম, দুধ অথবা মাংস কিনতে পারবেন। তবে মাংসের চাহিদা তুলনামূলক কম।
দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়া নিয়ে কর্মকর্তারা বলেন, ঢাকায় ফ্রিজার ট্রাক রয়েছে। ফলে তারা দীর্ঘ সময়ের জন্য পণ্য নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু চট্টগ্রামে সে সুযোগ নেই। তাই পরিমাণ কম। আবার দ্রুত ক্রেতাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে দায়িত্বে থাকা বোয়ালখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রুমন তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা এসেছেন, তাঁদের সবাইকে পণ্য দেওয়া হয়েছে। মাংসের চাহিদা কম থাকায় কিছু মাংস থেকে গেছে। ডিমের চাহিদা বেশি ছিল। দেড় থেকে দুই ঘণ্টায় শেষ হয়ে গেছে।