এয়ার পিউরিফায়ার আমদানিতে বিদ্যমান কাস্টমস শুল্ক হ্রাস এবং রেগুলেটরি শুল্ক ও আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। জনস্বার্থে এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

বর্তমানে বিশ্বে বায়ুদূষণের শীর্ষে থাকা শহরের তালিকায় ঢাকা ও বাংলাদেশের অন্যান্য শহরের নাম আছে। বায়ুদূষণের ফলে জনস্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতিসহ জনগণের প্রভূত আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর হ্রাস করার মাধ্যমে এয়ার পিউরিফায়ারের মতো কার্যকর বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের সরঞ্জাম সহজলভ্য করতে আমদানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান কাস্টমস শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ এবং ৩ শতাংশ রেগুলেটরি শুল্ক ও ৫ শতাংশ আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে, এয়ার পিউরিফায়ার আমদানিতে বিদ্যমান মোট কর ৫৮.

৬০ শতাশ থেকে কমে ৩১.৫০ শতাংশ হয়েছে। 

শুল্ক-কর কমানো ও প্রত্যাহারের ফলে প্রতিটি এয়ার পিউরিফায়ারের আমদানি খরচ প্রকারভেদে ১ হাজার ৫০০ টাকা হতে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত কমবে। আমদানি ব্যয় কমায় এয়ার পিউরিফায়ার জনগণের কাছে সহজলভ্য হবে। এয়ার পিউরিফায়ারের বহুল ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের ওপর বায়ুদূষণের বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রতিরোধে কিছুটা হলেও সহায়ক হবে বলে মনে করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।

ঢাকা/এনএফ/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

মিয়ানমারে যে কারণে চীনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বাড়ছে

মিয়ানমারে গত মাসের ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের মধ্যে একটি মান্দালয়। ২ এপ্রিল মান্দালয় অভিমুখে যাওয়া চীনের রেডক্রসের ত্রাণবোঝাই গাড়িবহরে গুলি চালায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) দাবি করে, গাড়িবহরটিতে ভারী মেশিনগান দিয়ে গুলি করা হয়েছে। কিন্তু সেনাবাহিনী দাবি করেছে, রেডক্রসের গাড়িবহর যে যাবে, সেটা আগে থেকে তাদের জানানো হয়নি আর সংকেত দেওয়ার পরও সেগুলো থামেনি।

যদিও কিছু সূত্র জানিয়েছে, এটা অনিচ্ছাকৃত ঘটনা, কিন্তু প্রকৃত কারণ এখনো পরিষ্কার নয়। যে বিষয়টি অস্বীকার করা যাবে না, সেটা হলো মিয়ানমারে চীনা স্বার্থগুলো অব্যাহতভাবে আক্রমণের শিকার হচ্ছে। মিয়ানমারের গৃহবিবাদে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে চীন। সামরিক জান্তা ও প্রতিরোধী গোষ্ঠী—দুইয়ের সঙ্গেই সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে চীন, যেটা উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

গত ২১ মার্চ উত্তর শান রাজ্যের রাজধানী লাশিওতে চীনের বিরুদ্ধে মৌন প্রতিবাদ হয়েছে। সামরিক জান্তা ও মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মির (এমএনডিএএ) মধ্যকার সংঘাতে বাস্তুচ্যুতরা দুই পক্ষের শান্তি আলোচনায় চীনের মধ্যস্থতার বিরোধিতা করেছেন। প্রতিবাদকারীরা চীনকে মিয়ানমারের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের দাবি জানান। জান্তা সরকারের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহারের দাবি জানান তাঁরা।

জনগণের হতাশা

মিয়ানমারে চীনবিরোধী মনোভাব যে বাড়ছে, এই প্রতিবাদ সে প্রবণতারই অংশ। সামরিক জান্তার প্রতি সমর্থন, বিতর্কিত প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থনৈতিক শোষণ ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো—এই তিন কারণে গত কয়েক বছরে মিয়ানমারের জনগণের মধ্যে চীনের প্রতি হতাশা বেড়েছে।

২০২৪ সালের ১৮ অক্টোবর মান্দালয়ে চীনের দূতাবাসে বোমা হামলা হয়। চীনের পররাস্ট্র মন্ত্রণালয় এ হামলার তিন দিন পর বিবৃতিতে ‘গভীর শোক’ প্রকাশ করে এবং জোরালো নিন্দা জানায়।

চীন মিয়ানমারের সেনা সরকারের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। তা সত্ত্বেও চীন দেশটির জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। এ বাস্তবতা অঞ্চলটিতে জটিল এক পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

আরও পড়ুনমিয়ানমারের ভূমিকম্প কি সেনাশাসকের পতন ঘটাবে০৬ এপ্রিল ২০২৫

স্বাধীন বিশ্লেষক ডেভিড স্কট ম্যাথিউসন মনে করেন, ‘দূতাবাসে বোমা হামলার পেছনে যারাই থাকুক না কেন, এ ঘটনা এই বার্তা দেয় যে চীনবিরোধী ক্ষোভের কয়েকটি ধারা আছে। সামরিক জান্তা সরকারের প্রতি চীনের সমর্থনের বিরুদ্ধে এবং চীনের সমর্থনে কোয়াং আর্মির লাশিও দখলে নেওয়ার বিরুদ্ধে রয়েছেন অনেকে। ভয়েস অব আমেরিকাকে ম্যাথিউসন বলেন, ‘মিয়ানমারের জনগণের এই ক্রমবর্ধমান ক্ষোভকে চীনকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। এই ক্ষোভ শহরাঞ্চলে সহিংসতায় রূপ নিতে পারে এবং চীনা নাগরিক, চীনা সম্পদ এবং এমনকি মিয়ানমারের চীনা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দিতে পারে।’

এর আগে ২০২৩ সালের মে মাসে সাগায়িং অঞ্চলে চীনবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছিল। বিক্ষোভকারীরা চীনের পতাকা ও চীনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ছবি পুড়িয়েছিলেন। একই ধরনের বিক্ষোভ ইয়াঙ্গুন, মান্দালয়সহ অন্যত্র হয়েছিল। বিক্ষোভকারীরা মিয়ানমারের জনগণের কণ্ঠস্বরের প্রতি চীন যেন শ্রদ্ধা দেখায়, সে দাবি জানিয়েছিলেন।

চীনের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের জনগণের অভিযোগ যে গভীর, সাম্প্রতিক বিক্ষোভগুলো তারই প্রতিফলন। তারা মনে করে, স্থানীয় জনগণের কল্যাণের চেয়ে চীন তার কৌশলগত স্বার্থকেই গুরুত্ব দেয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘৃণা-বক্তব্য

চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তিতিয়াওয়ের গবেষণা সেল এবং ইনসিকিউরিটি ইনসাইট যৌথভাবে ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মিয়ানমারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চীন ও চীনের লোকদের লক্ষ্য করে ঘৃণা-বক্তব্য নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে।

এই সমীক্ষায় গভীর চীনবিরোধী মনোভাব বেরিয়ে এসেছে। অমানবিক ভাষার ব্যবহার, বলির পাঁঠা বানানো থেকে শুরু করে মিয়ানমারের নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ডাক পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে।

নেটিজেনরা অর্থনৈতিক ব্যাপার নিয়ে চীনের প্রতি উদ্বিগ্ন। চীনা পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা, বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা এবং অবকাঠামো খাতে আধিপত্য নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন।

আরও পড়ুনচীন মিয়ানমারে কী করছে১১ অক্টোবর ২০২৪

২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে দ্য ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসি মিয়ানমারের (আইএসপি-মিয়ানমার) একটি সমীক্ষায় বেরিয়ে এসেছে, প্রধান অংশীজনদের মধ্যে ৫৪ শতাংশই প্রতিবেশী হিসেবে চীনের অবস্থানের প্রতি বিরূপ মনোভাব দেখিয়েছেন। সিভিল সোসাইটি সংস্থাগুলোর মধ্যে এই মনোভাব আরও জোরালো। এখানে ৭২ শতাংশই মনে করছে, চীন ‘আদৌ ভালো নয়’ অথবা ‘ভালো প্রতিবেশী নয়’। জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ৬০ শতাংশ এবং ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের সশস্ত্র সংগঠন পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেসের মধ্যে ৫৪ শতাংশ চীনের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করেছে।

চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চীন ও চীনের লোকদের লক্ষ্য করে ঘৃণা-বক্তব্য মিয়ানমারে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা যে বাড়ছে, তারই প্রতিফলন।

এই বৈরী পরিবেশ মিয়ানমারে চীনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, দাতা সংস্থা ও কূটনৈতিক মিশনগুলোর ওপর ঝুঁকি বাড়ছে। সেগুলো জনক্রোধের সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠছে।

বৈশালী বসু শর্মা কৌশলগত ও অর্থনৈতিক বিষয়ক বিশ্লেষক

দ্য ইরাবতী থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কাতারে ড. ইউনূস: পৃথিবীর জন্য আশার বাতিঘর হতে চায় বাংলাদেশ
  • পৃথিবীর জন্য আশার বাতিঘর হতে চায় বাংলাদেশ: প্রধান উপদেষ্টা
  • ২ কিলোমিটার সড়ক, ২০ হাজার শ্রমিকের দুর্ভোগ 
  • আমরা পৃথিবীর জন্য আশার এক বাতিঘর হিসেবে দাঁড়াতে চাই: ড. ইউনূস
  • শেষ ভাষণে ফিলিস্তিনিদের নিয়ে যা বলেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস
  • রন হক সিকদারের ১০০ একর জমি জব্দের আদেশ 
  • রন হক সিকদারের নামে থাকা ১০০ একর জমি জব্দের আদেশ
  • আমরা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী: ধর্ম উপদেষ্টা
  • মিয়ানমারে যে কারণে চীনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বাড়ছে
  • ক্যাস্ট্রলের আফটারমার্কেট ডিস্ট্রিবিউটর রক এনার্জি