চোর-ডাকাত ঠেকাতে রাত জেগে পাহাড়া
Published: 21st, January 2025 GMT
‘সাড়া বাড়িতে স্প্রে (চেতনানাশক) করিছিল ডাকাতরা। সগলেই (সবাই) বেহুস হয়ে পড়েছিলাম। সেই সুযোগে ডাকাতরা ঘরের তে টাকা, সোনা নিয়ে গেছে। এহন সাঁঝ লাগলি চিন্তায় গাঁ হাত পাও টালা (ঠান্ডা) হয়ে যায়। সহাল সহাল (সকাল) শুয়ে পড়ি। জানের মায়াতো সগলেরই আছে।’ চোখে মুখে হতাশা আর আতঙ্কের ছাপ রেখে সোমবার (২০ জানুয়ারি) বিকেলে কথাগুলো বলছিলেন লতিকা রাণী বিশ্বাস (৫৫)।
তিনি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কয়া ঘোষপাড়া এলাকার বিমল ঘোষের স্ত্রী। গত ১৫ জানুয়ারি রাতে তাদের বাড়িতে চেতনানাশক স্প্রে প্রয়োগ করে প্রায় এক লাখ নগদ টাকা ও চার ভরি স্বর্ণালংকার ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। লতিকা রাণীর ভাষ্য, ৫ আগস্ট্রের পর পুলিশের তৎপরতা নেই। সেজন্য এলাকায় প্রায় দিনই চুরি-ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। এতে আতঙ্কিত এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী জানায়, ৫ আগস্ট্রের পরে পুলিশের তৎপরতা কমে গেছে। সেজন্য প্রায় দিনই এলাকায় চুরি ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। সেজন্য নিজের জান ও মালের নিরাপত্তার স্বার্থে রাতে পাহাড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাত থেকে প্রতি রাতে ১৬ জন করে পাহাড়া দিচ্ছেন তারা। সবাই সতর্ক করতে পাহাড়ার ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ফেসবুকে।
জানা গেছে, ১৫ জানুয়ারি রাতে একই এলাকার বিএনপি নেতা শরিফুল ইসলাম রিপনের বাড়িতে দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঢুকেছিল ৮-১০ জনের একদল ডাকাত। তাদের উপস্থিতি স্থানীয়রা টের পেলে তারা দ্রুত চলে যায়। রিপন কয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক।
রিপনের ছেলে তানভির আহমেদ বলেন, “জানালা খুলে ঘুমাচ্ছিলাম। সেসময় বাড়ির ভেতর থেকে জানালায় শব্দ হচ্ছিল। সেসময় জানালার কাছে আসলে একজন ডাকাত বাইরে থেকে হাত ধরে ফেলে। উঠানে আরো ৮-৯ জন ছিল। তাদের হাতে পিস্তল, চাইনিস কুড়াল ছিল। তখন রাত ২টা বাজে। ডাকাতরা প্রায় এক ঘণ্টা হাত চেপে ধরে রাখে। অনেক চেষ্টার পর হাত ছাড়িয়ে আশপাশের কয়েকজনকে ফোন দিলে সবাই বাড়িতে আলো জ্বালায়। তারপরে ডাকাতরা গেট খুলে চলে যায়।”
কয়া স্কুলপাড়ার আব্দুল মজিদের স্ত্রী রাফেজা খাতুন বলেন, “২৭ ডিসেম্বর আমার বাড়ির দরজা ভেঙে অস্ত্রহাতে ৪-৫ জন ডাকাত ঢুকেছিল। তারা প্রথমে বড় ছেলেকে মারধর করে ভয়ভীতি দেখায়। পরে সবাইকে জিম্মি করে ৪৫ হাজার টাকা এবং সাত থেকে আট ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।”
লতিকা রাণীর ছেলে কাজল ঘোষ বলেন, “ডাকাতদের স্প্রের কারণে বাড়ির সকলেই অচেতন হয়েছিল। ঘটনার পরদিন কেউ হাসপাতালে কেউ বাড়িতে চিকিৎসা নিয়েছে। এখনো সবার ঝিমধরা কাটেনি।”
কয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা মো.
নরসুন্দরের বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “১৫ বছর পরে ফের গ্রাম পাহাড়া চালু হয়েছে। শনিবার রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত পাহাড়া দিয়েছি।”
কয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শরিফুল ইসলাম রিপন বলেন, “ডাকাত ও চোরের উপদ্রব ঠেকাতে নিজেরাই রাত জেগে পাহারার ব্যবস্থা করেছি। প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।”
কয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলী হোসেন বলেন, “আইনশৃঙ্খলা একদম ভেঙে পড়েছে। মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছি।”
এদিকে গ্রামবাসীর অভিযোগ অস্বীকার করে কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ বলেন, “মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় কাজ করছে পুলিশ। খবর পাওয়া মাত্র ছুটে যাচ্ছে পুলিশ। পুলিশের তৎপরতা আরো জোড়দার করা হবে। অপরাধ নির্মূলে সকলের সহযোগীতা দরকার।”
ঢাকা/কাঞ্চন/ইমন
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে এসি বাসের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ ও ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) বাসভাড়া ৭০ থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকার প্রতিবাদ জানিয়েছে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির (আরটিসি) সভাপতি জেলা প্রশাসকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। আজ শুক্রবার বিকেলে সংগঠনের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জে গণপরিবহন নিয়ে স্থানীয় অসাধু একটি চক্র প্রতিনিয়ত তৎপর রয়েছে। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের শাসনামলে সরকার ও প্রশাসনের সহায়তায় শামীম ওসমানের মাফিয়া বাহিনী নারায়ণগঞ্জের জনগণকে জিম্মি করে নির্বিঘ্নে গণবিরোধী তৎপরতা চালিয়েছে। তারা গণপরিবহনকে চাঁদা আদায়ের অন্যতম খাত বানিয়েছিল।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার বদলের পর নারায়ণগঞ্জের চাঁদাবাজ চক্র পালিয়ে যায়। পরে গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের জনতার আন্দোলনের মুখে নন-এসি বাসের ভাড়া কিছুটা কমে আসে। কিন্তু আমরা লক্ষ করছি, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) বাসের নৈরাজ্য অব্যাহত আছে। যখন ইচ্ছা তখন বিভিন্ন নামে এখানে বাস নামছে। যা ইচ্ছা ভাড়া আদায় করছে। এসব বাসের রুট পারমিট আছে কি নেই, তা নজরদারির যেমন কোনো উদ্যোগ নেই, ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রেও কোনো প্রশাসনিক তৎপরতা নেই। ফলে এসি বাস নিয়ে এখনো এখানে গণপরিবহন চক্র যা ইচ্ছা তাই করে যাচ্ছে। কার সঙ্গে যোগসাজশে, কাকে ম্যানেজ করে এসব অরাজকতা নারায়ণগঞ্জে চলছে, তা জনগণের বোধগম্য নয়।’
সরকার বদলের পর থেকে এত দিন ৭০ টাকায় বিভিন্ন নামে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে এসি বাস চলেছে জানিয়ে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তিন দিন আগে হঠাৎ ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ নামে একটি কোম্পানি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে এসি বাস চালু করে ৮০ টাকা ভাড়া আদায় করছে। যাত্রীরা প্রতিবাদ করলে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। আরটিসির (রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট করপোরেশন) চেয়ারম্যান হিসেবে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে এসি বাসের ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রী ভোগান্তি অবসানের জন্য নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসককে অতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানানো হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।