তরুণ প্রজন্মের পাঠকনন্দিত কবি হাসনাইন হীরা। তার প্রথম কবিতার বই ‘বাঁক বাচনের বৈঠা' ২০২০ সালে প্রকাশ হয়। প্রথম বইয়ের পাণ্ডুলিপির জন্য হাসনাইন হীরা অর্জন করেছেন জেমকন তরুণ কবিতা পুরস্কার-২০২০। ২০২৫ বইমেলায় প্রকাশ হচ্ছে হাসনাইন হীরার দ্বিতীয় কবিতার বই ‘ব্রাত্যভিটার নকশা’। এই বইয়ের পাণ্ডুলিপির জন্য হাসনাইন হীরা অর্জন করেছেন ‘অনুপ্রাণন তরুণ কবিতা পুরস্কার-২০২৪’।

কী আছে ব্রাত্যভিটার নকশায়? এই প্রশ্নের জবাবে হাসনাইন হীরা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘আমরা যে ভূখণ্ডে বাস করি, সেখানকার যে মানব ইতিহাস, তার যে সবচেয়ে উঁচু ও উজ্জলতম চূড়াটায় আমাদের ওঠার কথা ছিল, তা আমরা পারি নাই। অর্থাৎ ইতিহাসের পরম্পরায় আমাদের সোসাইটি যে জায়গায় পৌঁছানোর কথা ছিল, সেখানে আমরা পৌঁছাতে পারি নাই। বারবারই আমাদের আত্মপরিচয়ের ওপর আঘাত এসেছে। ফলে নানা সংকট এবং বিদ্রোহের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। এখনও সেই পরিসর অতিক্রম করতে পারি নাই। কারণ এখনও আমরা জাতিগত একটা ন্যারেশনের ওপর দাঁড়াতে পারি পারছি না। একটা মীমাংসিত তর্ক অমীমাংসিতে রূপ নেয়। ফলে বারবারই ভয়াবহ জেনোসাইডের মুখোমুখি হতে হয় আমাদের। সংকটটা আসলে কোথায়? মীমাংসিত ঘটনা কিভাবে অমীমাংসায় রূপ নেয়? সেইটা ভাবতে গিয়ে মনে হয়েছে, সাংস্কৃতিকভাবে আমাদের বড় একটা বিপর্যয় ঘটে গেছে। যার ফলে রাজনৈতিক ও দার্শনিকভাবেও আমাদের ব্যর্থতার কমতি নেই। ফলে বিদঘুটে একটা ঘূর্ণিবায়ুর ভেতর দিয়ে আমরা যাচ্ছি। নিজেদের এলাকায় নিজেদেরকে এখন ব্রাত্যজনের মতোই মনে হয়। কিন্তু আমরা ব্রতচারী। আমাদের পরাজিত করা যায় না। ভাঙা-গড়ার ভেতর দিয়ে গড়ে উঠেছে সংগ্রামশীল জীবন। যে কোনো সংকটে সে শক্ত হাতে হালের বৈঠা চালিয়েছে। বিপুল হতাশার মধ্যে আশার মনোভূমি হয়ে যে স্বতন্ত্র আত্মপ্রকাশ তার নাম 'ব্রাত্যভিটার নকশা'। মূলত, এই জনপদ ও মানুষের ইতিহাসের সবুজ কিছু আলো কবি মনে জারিত হওয়ার প্রক্রিয়া। স্বভাবতই এ বইয়ের বহুশব্দ পাওয়া যাবে, যাতে লেগে আছে ফসলের ঘ্রাণ, কৃষকের রক্ত ও ইতিহাসের নানা বুদবুদ.

..।’

হাসনাইন হীরা মনে করেন, কবিকে মগ্নতায় পাওয়া যায়। যে নিজের সৃজনশীল শক্তির ভেতর দিয়ে পৌঁছাতে চায় পাঠকের হৃদয়ে। প্রান্তরের নিঃসঙ্গ উদ্ভিদের মতো। অকারণে সে বাঁচতে চায় না। আত্মপ্রচারও তার কাম্য নয়। 

একজন কবি কীভাবে নিজের বইয়ের প্রচার করতে পারেন?— এই প্রশ্নের জবাবে হাসনাইন হীরা বলেন, ‘‘বই প্রচারে কার্পণ্য কাম্য নয় বলে মনে করেন হাসনাইন হীরা।  তার মতে, অন্যান্য পণ্যের চেয়ে বইয়ের প্রচার তুলনামূলক বেশি হওয়া উচিত। কেননা,  বই স্বাভাবিক পণ্য নয়। ভালো বইয়ের বিনাশ নেই। নিছক অর্থমূল্যেও তাকে বিবেচনা করা সমীচীন নয়। ভালো বই নিজেই একটা বিজ্ঞাপন। স্বকীয় আলোয় উদ্ভাসিত হয়। সময় ক্ষেপণ হতে পারে, কিন্তু তাকে থামনো যায় না। দূরের মকডালে বসে গান গাওয়া কোকিলের মতো আপন মনে উদযাপন করে বসন্ত। 

কোনো বইয়ের মূল বিষয় বা প্রেক্ষাপট বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর চাওয়ার সঙ্গে মিলে যেতে পারে। কিন্তু যেকোন ভালো বইয়ের পাঠকও নির্দিষ্ট ঘরানা বা নির্দিষ্ট সংখ্যক হয়ে  থাকে। এমনটাই মনে করেন হাসনাইন হীরা। তিনি বলেন, ‘‘ একটি বইয়ের যত বড় বিজ্ঞাপনই হোক, আমার মনে হয় তার অডিয়েন্স নির্দিষ্ট থাকে। কারণ,  একজন লেখক বা সৃজনশীল শিল্পীর চিন্তা সবার চিন্তা হয়ে উঠতে পারে না। কিন্তু সোসাইটির বৃহত্তর অংশ তার চাহিদা বহন করে। ফলে কবিকে নিঃসঙ্গ বৃক্ষের মতো ফুলে ফলে ছড়িয়ে পড়তে হয়। কেননা ভালো টেক্সট ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের নষ্ট জায়গাগুলোতে আঘাত করতে পারে। যা সোসাইটিকে নতুন অভিঘাতের দিকে উস্কে দেয়। লেখককে তাই বৃহত্তর অডিয়েন্সে ঢুকে পড়া দরকার। বিশেষ করে সাংস্কৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলায়। ভালো টেক্সটের তাই প্রচার হওয়া দরকার। এতে প্রকাশক ও মিডিয়ার দায় বেশি। লেখকের দায় লেখার ভেতর দিয়ে একটা ব্রান্ড তৈরি করা। তবে আজকের সময়ে লেখক প্রত্যক্ষভাবেও প্রচারে অংশ নিতে পারে। সেই সুযোগ তার আছে। এতে হীনমন্যতা কিংবা লজ্জার কিছু নাই। কারণ, পাঠকও এখন মিডিয়া নির্ভর। সুতরাং যার মিডিয়া কাভারেজ বেশি তার দিকেই পাঠক হেলে পড়তে থাকে।’’

দেশের বেশিরভাগ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বই প্রচারে সেভাবে দাঁড়াতে পারে নাই বলে মনে করেন হাসনাইন হীরা।  তিনি বলেন, ‘‘ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শিল্পের অংশ। নিছক কোনো দোকানদারি না। প্রচার এবং প্রকাশনায় ব্যাপক যত্নশীল হওয়ার বিকল্প নাই। কিন্তু আমাদের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সেভাবে দাঁড়াতে পারে নাই।বিশেষ করে তরুণ লেখকদের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি একেবারেই বাজে। অথচ বহু প্রকাশনী তরুণদের বই বিক্রি করে মহীরুহ হয়ে উঠেছে। শুধু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কেন! রাষ্ট্রের অবহেলাও চরম পর্যায়ের। না হলে, বছরে ক্যাটাগরি অনুযায়ী মিনিমাম ১০ জন করে মেধাবী তরুণের পাণ্ডুলিপি বাছাই করে তাদের বইয়ের প্রকাশনা ও প্রচারে অংশ নিতে পারতো। সেটা করে না। ফলে অনেক তরুণ লেখকসত্তার মৃত্যু হয়। যা আমাদের গভীরতর সংকটের দিকেই ঠেলে দেয়।’’ 

হাসনাইন হীরার কবিতাভাবনা এমন— সাহিত্যে বাস্তব বলে কিছু নয়, আবার অবাস্তব বলেও কিছু নয়। বাস্তব এবং অবাস্তবের মাঝখানে যে জগত, তাই মূলত সাহিত্যের জগত।কবিতা আরো বেশি ধূসর ও নির্জনতম পথের অভিযাত্রী। অনেক বেশি অবাস্তবের বাস্তব কুহক। তাকে ধরা যায় না, লেখাও যায় না। কেবল লিখবো বলেই লিখে যেতে হয় সারাটা জীবন। ফলে বাস্তব অর্থে আমার কাছে কবিতা হলো মানুষের না বলা কথার দীর্ঘ ইতিহাস। এবং তার অস্তিত্বের লড়াই। লিখিত এবং অলিখিত দুই অবস্থাতেই কোথাও না কোথাও কবিতা বিরাজমান।  

ব্রাত্যভিটার নকশা বইয়ে মোট কবিতার সংখ্যা ৫০ টি। এই বই কারো কাছে মনে হতে পারে অনার্যের অমীমাংসিত চিঠি। কারো কাছে মনে হতে পারে বাঙালিকে পুনঃআবিস্কার কিংবা শেকড়ের সন্ধান করা। কারো কাছে মনে হতে পারে বাঙালির নতুন জাগরণ। কবির চাওয়া, বাঙালি তার নিজের কাছে ফিরুক।

হাসনাইন হীরার জন্ম ১৮ ই নভেম্বর-১৯৮৫,  সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার বাঙ্গালা গ্রামে। সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর শেষে একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপক হিসাবে কর্মরত আছেন। 

ঢাকা/লিপি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বইয় র প

এছাড়াও পড়ুন:

ধানের সরকারি দামে কৃষকের শঙ্কার মেঘ কাটছে না

‘এবার সেচের পানি, সার, বীজ, কীটনাশক ও ধান কাটার খরচ ৩০ শতাংশ বেড়েছে। বর্গা চাষ করলে এক কেজি ধানের উৎপাদন খরচ পড়েছে সাড়ে ৩৫ টাকার বেশি। সরকার বলছে, আগের বছরের চেয়ে দাম বাড়িয়ে ৩৬ টাকায় কিনবে তারা। এই দরে বেচলেও তো আমাদের লোকসান হবে।’–এই দুঃখ মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার ধূল্যা গ্রামের চাষি রহমান আলীর। 

শুধু রহমান আলী নন, এবারও ধান-চালের ভালো দাম পাওয়া নিয়ে কৃষকের মনে জমা শঙ্কার মেঘ কাটছে না। কৃষি উপকরণের খরচ বেড়ে যাওয়ায় ধানের দাম বাড়ার পরও কৃষক লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন। এবারের বোরো মৌসুমে খাদ্য মন্ত্রণালয় ধান সংগ্রহের যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে, তা নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছে বিশিষ্টজনসহ বিভিন্ন কৃষক সংগঠন। গত বছর ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ লাখ টন। এবার তা সাড়ে ৩ লাখ টন। তবে সরকার ধান-চালের দাম গতবারের চেয়ে কেজিতে ৪ টাকা বাড়িয়েছে। 

এর সমালোচনায় বলা হচ্ছে, এই দাম বৃদ্ধি কৃষককে বঞ্চিতই রাখবে, যথারীতি সুবিধা পাবেন মিলাররা। 

অবশ্য সরকার বলছে, ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা কমলেও দাম বেড়েছে। এতে লাভবান হবেন কৃষক। আজ বৃহস্পতিবার থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে এই ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান। 

প্রান্তিক চাষিরা বলছেন, দাম বাড়ালেও নানা শর্তের কারণে সরকারি গুদামে ধান দেওয়া যায় না। আর্দ্রতা পরীক্ষা, ব্যাংক হিসাব খোলা, গুদামে ধান দিয়ে আসাসহ নানা বিড়ম্বনার কারণে কৃষক মহাজনের কাছে ধান বিক্রি করেন। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন।

ধান-চাল সংগ্রহ কম, আমদানি বেশি

দেশের অভ্যন্তরীণ খাদ্য নিরাপত্তা অটুট রেখে মজুত বাড়াতে প্রতিবছর স্থানীয় বাজার থেকে সরকার ধান-চাল সংগ্রহ করে। এই সংগ্রহ অভিযানের উদ্দেশ্য সরাসরি কৃষকের পাশে দাঁড়ানো এবং ভোক্তাকে স্বস্তি দেওয়া। এই বোরো মৌসুমে ৩৬ টাকা কেজি দরে সাড়ে ৩ লাখ টন ধান কেনা হবে।  আর ৪৯ টাকা কেজি দরে সেদ্ধ চাল কেনা হবে ১৪ লাখ টন। গেল বোরো মৌসুমে ১১ লাখ টন সেদ্ধ চাল, ১ লাখ টন আতপ চাল এবং ৫ লাখ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার। ওই সময় প্রতি কেজি ধান ৩২ টাকা ও সেদ্ধ চাল ৪৫ টাকা ছিল।

এবার আমন মৌসুমে সরকার ৫.৫০ লাখ টন সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। সংগ্রহ হয়েছে ৪.৩৫ লাখ টন। আতপ চাল সংগ্রহ হয়েছে ৮৪ হাজার ৬১ টন। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ টন। চাল মূলত মিলাররা দেন। 

ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩.৫০ লাখ টন। সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ২৬ হাজার ৭১৪ টন। বাজারদরের চেয়ে সরকার নির্ধারিত সংগ্রহ মূল্য কম হওয়ায় আমন মৌসুমে খাদ্য অধিদপ্তর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান সংগ্রহ করতে পারেনি। ফলে অভ্যন্তরীণ ঘাটতি পূরণে সরকার চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। 

২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকার ৮ লাখ টন চাল আমদানির লক্ষ্য ঠিক করেছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ৫.১৮ লাখ টন চাল আমদানির দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে, যার বেশির ভাগ এরই মধ্যে দেশে পৌঁছেছে।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) এক গবেষণায় বলা হয়, দেশে বছরে চাহিদার চেয়ে প্রায় ৪২ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকে। উদ্বৃত্ত থাকার পরও চাল আমদানির কারণ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সরকারের ধান-চাল সংগ্রহে ব্যর্থতা, পর্যাপ্ত মজুত নিশ্চিত করা এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাল আমদানি করতে হয়। 

ব্রির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে শুধু শতভাগ ধান-চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে সরকার। এ ছাড়া ২০১৯ সালে ২১ শতাংশ, ২০২০ সালে ৩৩ ও ২০২১ সালে ৫৪ শতাংশ ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়।

সরকারকে ধান দিতে কৃষকের অনীহা 

সেচ যন্ত্রের জ্বালানি ডিজেল ও বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি বেড়েছে সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি। এতে বোরো ধান চাষে খরচও বাড়ছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) হিসাবে, বোরো ধানের উৎপাদন খরচ ১০ শতাংশ বেড়েছে। ফলে কৃষকের ধান ও চালের ভালো দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা আছে। 

গাইবান্ধা সদর উপজেলার কৃষক আবদুর রহমান বলেন, এবার বোরো ধান চাষে প্রতি বিঘা জমিতে বাড়তি প্রায় ৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গত বোরো মৌসুমে এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে বোরো উৎপাদনে খরচ ছিল প্রায় ১২ হাজার ৫০০ টাকা। এ বছর তা দাঁড়াবে ১৮ হাজারেরও বেশি। 

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার কৃষক মাহফুজুল হক বলেন, ‘হিসাব অত সোজা না। এই ধরেন, যদি আমি নিজের জমি চাষ করি, তা হইলে হিসাব এক রকম। আর যদি অন্যের জমি বর্গা নিই, তা হইলে খরচ আরও বেশি।’

ধান সংগ্রহে এখনকার পদ্ধতিতে কিছু অসংগতির কারণে কৃষক ভোগান্তিতে পড়ছেন। গুদামে ধান বিক্রি করতে গিয়ে পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়। তবে ব্যবসায়ীর কাছে ধান বিক্রিতে তেমন বেগ পেতে হয় না। সরকারি গুদামে ধান দিতে গেলে অনেক সময় ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তাতে দুই দফা পরিবহন খরচ হয়।

নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরবাটা ইউনিয়নের ভূঁইয়ার হাটের কৃষক দুলাল চন্দ্র দাস বলেন, ‘সরকারের কাছে অ্যাপস ও ব্যাংকের মাধ্যমে ধান বেচতে গিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়। আর্দ্রতা পরীক্ষার নামে হয়রানি তো আছেই।’

চাল ও ধান ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকারের নীতিমালা আছে। এতে ১৫টি শর্ত দেওয়া আছে মিলার ও কৃষকদের জন্য। কুষ্টিয়ার আলামপুর এলাকার কৃষক এনামুল হক বলেন, গুদামে ধান নিয়ে গেলে আর্দ্রতা মাপা হয়। ভেজা হলে সেই ধান আবার শুকাতে হয়। এর পর ওজনে কম হলে আবার বাড়ি থেকে বাড়তি ধান এনে সেটা পূরণ করতে হয়। গাড়ি ভাড়া নিজের পকেট থেকে দিতে হয়। আবার চেক নিয়ে ব্যাংকে যেতে হয়। সরকার যদি প্রতি ইউনিয়ন থেকে ধান কেনে, তাহলে ভালো হয়।

কুষ্টিয়ার বিত্তিপাড়া এলাকার কৃষক রহিম মণ্ডল ও আবেদ আলী বলেন, মৌসুমের শুরুতেই প্রান্তিক কৃষক টাকার জন্য কম দামে ধান বিক্রি করেন। সেই ধান ফড়িয়া ও ছোট ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে মিল মালিকদের কাছে চলে যায়। কৃষকদের ঘরে যখন কোনো ধান থাকে না, তখন দাম বাড়তে থাকে। হাওরে এখন ধানের মণ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে। এখন বড় বড় মিল মালিকরা কম দামের এসব ধান কিনে গুদাম বোঝাই করতে শুরু করেছেন। 

কারা কী বলছেন

সাবেক খাদ্য সচিব মো. আবদুল লতিফ মণ্ডল বলেন, চাল উৎপাদনে বোরোর অবস্থান শীর্ষে। অথচ এই মৌসুমে গত বছরের চেয়ে দেড় লাখ টন কম ধান সংগ্রহ করা হবে। এতে কৃষক সরকারের কাছে ধান বিক্রি না করে খোলাবাজারে বেশি দামে বিক্রি করতে আগ্রহী হবে। চালকল মালিকরা ধান কিনতে বাজারে আসার আগেই সরকার ব্যবস্থা না নিলে আগের মতো এবারও ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। 

গত ১২ এপ্রিল দেশের ৪৩ বিশিষ্ট নাগরিক এক বিবৃতিতে বলেছেন, কৃষককে বঞ্চিত করে মিলারদের সুবিধা দিতে ধান সংগ্রহের পরিমাণ কমানো হয়েছে। ১৩ এপ্রিল সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট এক বিবৃতিতে বলেছে, ধান-চাল কেনার এই সিদ্ধান্তে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারও যে অতীতের সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিতেই পরিচালিত হচ্ছে, তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

তবে খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, ধানের উৎপাদন খরচের ভিত্তিতে ধান-চাল সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করে সরকার। কৃষি মন্ত্রণালয় সেই খরচ নিরূপণ করে। এবার চাল আমদানি হয়েছে পর্যাপ্ত। ধান কিনলে সেটা ভাঙানো ও মজুত সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে খাদ্য অধিদপ্তরের। ধানের দাম এবার ৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়ানোর বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে বলে জানান তিনি।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন কুষ্টিয়া প্রতিনিধি সাজ্জাদ রানা]

সম্পর্কিত নিবন্ধ