সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার নীতিমালায় ভুল রয়েছে। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সংশোধিত মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হয়েছে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায়। গত রোববার পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর বিষয়টি নজরে আসে। এ নিয়ে শুরু হয় সমালোচনা। ভর্তি পরীক্ষায় কোটা বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভও করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে কোটা বিষয়ে ভুলের দায় নিচ্ছে না চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)।
বিএমডিসির ২০২৪ সালের নীতিমালায় মেডিকেল ভর্তিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ২ শতাংশ ছিল। তবে এবার ৫ শতাংশ উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২৫ সালের পরীক্ষার জন্য গত ২১ ডিসেম্বর বিএমডিসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নীতিমালার ৯.
সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে গত জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে আন্দোলন শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে এই আন্দোলন অভ্যুত্থানে রূপ নিয়ে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতন ঘটায়। ২১ জুলাই আপিল বিভাগ রায় দেন, সরকারি চাকরিতে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকবে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য ২ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করা হয়। দেখা গেছে, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার কোটার বিধি আর মেডিকেল ভর্তিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিধি এক। আদতে চাকরির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কোটার এই প্রজ্ঞাপনের সঙ্গে মেডিকেলে ভর্তির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
নতুন নীতিমালায় বিএমডিসির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ডা. মো. লিয়াকত আলীর সই রয়েছে। তবে তিনিও এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানাতে পারেননি। নতুন বিধিমালায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৫ শতাংশ কেন করা হলো– জানতে চাইলে লিয়াকত আলী সমকালকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বিএমডিসির প্রতিনিধিদের নিয়ে একাধিক মিটিং করে নতুন বিধিমালা করা হয়েছে। কোটা ৫ শতাংশ কেন করা হলো, সে বিষয়ে এখন বলতে পারব না। কারণ সেই মিটিংয়ে আমি ছিলাম না।’
কোটা বাতিল ও ফল পুনঃপ্রকাশের দাবি
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় থাকা কোটা বাতিল এবং রোববার প্রকাশিত ফল বাতিল করে আবারও প্রকাশের দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ কয়েকটি মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন করেন। সকাল ৯টা থেকে সর্বস্তরের মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থী, চিকিৎসকবৃন্দ এবং সর্বস্তরের শিক্ষার্থীবৃন্দ ব্যানারে তাদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। দুপুরেও তারা সেখানে ছিলেন। তাদের দাবি, কোটা থাকায় অনেক যোগ্য শিক্ষার্থী মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাননি। অবিলম্বে কোটা বাতিল করতে হবে।
এদিকে চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল পুনর্বিবেচনা করে ফের প্রকাশের দাবিতে গতকাল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৬৮৬ আবেদন
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এবার সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় ১ লাখ ৩১ হাজার ৭২৯ প্রার্থী অংশ নেন। তাদের মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য ৫ হাজার ৩৭২ জন প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। মেধায় আবেদন করেন ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৭৪ জন। তাদের মধ্যে পাস করেছেন ৫৯ হাজার ৫৫৪ জন। এবার ৩০৮টি কোটার আসনের বিপরীতে আবেদন করেন ১ হাজার ৮৮৭ জন। তাদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের নির্ধারিত ২৬৯টি আসনে এবার আবেদন পড়ে ৬৮৬টি। পাস করেছেন ১৯৩ জন। সেই হিসাবে মুক্তিযোদ্ধার ২৮ শতাংশ আসন এখনও ফাঁকা। এগুলো মেধা তালিকা থেকে পূরণ হবে।
কোটায় উত্তীর্ণদের ভর্তি সনদ বাছাইয়ের পর
বিএমডিসি প্রণীত ভর্তি নীতিমালার ৯.৩ নম্বর অনুচ্ছেদে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তান এবং পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর কোটার আসনে নির্বাচিত প্রার্থীদের তালিকা কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটি যাচাই-বাছাইপূর্বক অনুমোদনক্রমে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করার কথা উল্লেখ রয়েছে। সে অনুযায়ী যাচাই-বাছাইয়ের জন্য কোটায় উত্তীর্ণদের ২৭, ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি কাগজপত্র নিয়ে ডাকা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক রুবীনা ইয়াসমীন।
তিনি বলেছেন, স্বাধীনতার এত বছর পর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার কথা নয়। যারা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পাস করেছেন, তাদের তথ্য বিশেষভাবে যাচাই-বাছাই করা ছাড়া কিছু বলা যাবে না। সে জন্য এসব শিক্ষার্থীকে অধিদপ্তরে সরাসরি আসতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের অনলাইনে আপলোড করতে বলা হয়েছে কাগজপত্র।
গতকাল বিকেলে এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষাও প্রচলিত আইন ও বিধি অনুযায়ী হয়েছে। তার পরও এটা তদন্ত করা হবে। সেখানে যদি কোনো ত্রুটি ধরা পড়ে, তাহলে সেটা দেখা হবে। এমবিবিএস পরীক্ষায় মূল কোটা থাকবে কিনা, সেই নীতিগত সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নয়, রাষ্ট্রের।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম ড ক ল কল জ ব এমড স র ক ট র আসন পর ক ষ য় পর ক ষ র কর ছ ন র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
২০২৪ সালে দেড় লাখেরও বেশি মানুষের বীমা দাবি নিষ্পত্তি করেছে গার্ডিয়ান লাইফ
২০২৪ সালে সবমিলিয়ে প্রায় দেড় লাখের বেশি মানুষের বীমা দাবি নিষ্পত্তি করেছে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। এর ৯৫ শতাংশ দাবিই মাত্র ৩ কর্মদিবসের ভেতর পরিশোধ করে গ্রাহকের আস্থা অর্জন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে ৩৬ হাজার গ্রাহকের মৃত্যু দাবি ২৪১ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য বীমা দাবি ১০৯ কোটি টাকা এবং পলিসি পূর্ণ হওয়া সহ অন্যান্য দাবি বাবদ ৮৯ কোটি টাকার বেশি পরিশোধ করা হয়। গতবছর সবমিলিয়ে ৪৩৯ কোটি টাকার বেশি বীমা দাবি নিষ্পত্তি করে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।
এ বিষয়ে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) শেখ রকিবুল করিম, এফসিএ বলেন, ‘সবার জন্য বীমা’ এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা কাজ করছি। ইতিমধ্যে দেশের ১ কোটি ২৬ লাখেরও বেশি মানুষকে বীমার আওতায় এনেছি, এবং এই সংখ্যা আরও বাড়ানোর জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বীমা খাতের পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি হলো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে গ্রাহকের বিশ্বাস অর্জন করা। এই বিশ্বাসকে অটুট রাখতে আমাদের ‘জিরো টলারেন্স’নীতি অনুসরণ করা হয়। দ্রুত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বীমা দাবি পরিশোধ করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। বর্তমানে বেশিরভাগ দাবি ৩ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করা হলেও আমরা আরও কম সময়ে বীমা দাবি পরিশোধ নিশ্চিত করতে প্রযুক্তি ও প্রক্রিয়াগত উন্নয়নের ওপর কাজ করছি। বীমা খাতে মানুষের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পারলেই সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে পুরো ইন্ডাস্ট্রির জন্যই ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
উল্লেখ্য, বীমা খাতকে দেশের সকল মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে মাইক্রো-ইন্স্যুরেন্স, ডিজিটাল এবং অল্টারনেটিভ ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল, ব্যাংকাস্যুরেন্স সহ অন্যান্য উদ্ভাবনী বীমার ধারণা নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে গার্ডিয়ান লাইফ। একইসাথে, তারা ৪৫০-টিরও বেশি দেশী ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জন্য বীমা সেবা নিশ্চিত করছে। পাশাপাশি, দেশজুড়ে সাড়ে ৪ শ’রও বেশি পার্টনার হাসপাতাল থেকে গার্ডিয়ান লাইফের গ্রাহকরা পাচ্ছেন নিরবিচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবা। ক্যাশলেস ফেসিলিটিস এর মাধ্যমে গ্রাহকরা গার্ডিয়ান লাইফ অ্যাপ এবং ২৪/৭ হেল্পলাইনের (১৬৬২২) মাধ্যমে পার্টনার হাসপাতাল থেকে নিতে পারছে নির্বিঘ্ন স্বাস্থ্য সেবা, কোন পেমেন্ট ছাড়াই। এছাড়াও গ্রাহকের প্রয়োজনের কথা ভেবে গার্ডিয়ান লাইফ নিয়ে এসেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাটবট ও টেলিমেডিসিন সেবা।
এএ