পানামা খাল দখলসহ আরো যা করার ঘোষণা দিলেন ট্রাম্প
Published: 21st, January 2025 GMT
আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাংলাদেশ সময় সোমবার (২০ জানুয়ারি) রাত ১১টায় শপথ নেন তিনি। শপথ গ্রহণ শেষে দীর্ঘ বক্তব্য দেন তিনি। সেখানে আবারো পানামা খাল দখলসহ কয়েকটি নির্বাহী আদেশ জারির ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প।
অভিষেক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প দাবি করেন, “পানামা সরকার পানামা খালের কার্যক্রমে নিরপেক্ষতার জন্য প্রয়োজনীয় চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।”
তিনি বলেন, “পানামা খালে আমেরিকান জাহাজের কাছ থেকে বেশি অর্থ নেওয়া হচ্ছে এবং আমাদের জাহাজকে ভালো সেবা দেওয়া হচ্ছে না। মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজও এর মধ্যে রয়েছে। সর্বোপরি, চীন পানামা খাল পরিচালনা করছে এবং আমরা এটি চীনকে দেইনি। আমরা এটি পানামাকে দিয়েছি। এবং আমরা এটি ফিরিয়ে নিচ্ছি।”
আরো পড়ুন:
মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা ট্রাম্পের
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি মার্কিন সমর্থন অব্যাহত থাকবে: চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স
এদিকে, পানামার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পানামা খাল দখলের অঙ্গীকার প্রত্যাখ্যান করেছেন।
পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো এক বিবৃতিতে বলেছেন, “পানামা খাল ও এর-সংলগ্ন এলাকার প্রতি বর্গমিটার পানামার স্বত্বাধীন। আর তা পানামার স্বত্বাধীনই থাকবে।”
মুলিনো ট্রাম্পের এই দাবিও প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, চীন ক্যারিবিয়ান সাগরকে প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গে সংযুক্তকারী খালটি পরিচালনা’ করছে।
মুলিনো সরাসরি চীনের নাম উল্লেখ না করে বলেছেন, “আমাদের প্রশাসনে হস্তক্ষেপকারী কোনো দেশের উপস্থিতি নেই।”
মুলিনো পানামার অধিকার, সার্বভৌমত্ব ও খালের মালিকানা ক্ষুণ্ন না করে উল্লেখিত বিষয়গুলো স্পষ্ট করার জন্য এই বিষয়ে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর, পানামা খাল দখল ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণাও দিয়েছেন ট্রাম্প। এর অংশ হিসেবে ওই সীমান্তে সেনা পাঠাবেন তিনি। যারা অবৈধ অভিবাসীর আগমন ঠেকাবে। এছাড়া অবৈধ অভিবাসীদের ও হাজার হাজার অপরাধীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি তার ‘মেক্সিকোতে থাকুন’ নীতি আবারো পুনর্বহাল করবেন। অর্থাৎ যারা যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী হিসেবে আসতে যান বা আশ্রয় নিতে চান; তাদের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত মেক্সিকোতে অবস্থান করতে হবে।
এছাড়া মেক্সিকান মাদক গ্যাংগুলোকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবেও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। যেসব বিদেশী গ্যাং যুক্তরাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে তাদের বিনাশ করা হবে বলেও জানান ট্রাম্প। নতুন করে দায়িত্ব নেওয়া ট্রাম্প আরো জানিয়েছেন, মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন করে তিনি এটির নাম আমেরিকান উপসাগর করবেন।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার আগেই মেক্সিকোর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রোজা আইসেলা রদ্রিগেজ ‘মেক্সিকো আলিঙ্গন তোমাকে’ নামে একটি প্রকল্প ঘোষণা করেছেন। এই প্রকল্প ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্বাসিত হতে পারে এমন মেক্সিকান নাগরিকদের সহায়তা প্রদান করবে।
সোমবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে রদ্রিগেজ বলেন, “যারা তাদের নিজ দেশে পুনর্গঠন করার জন্য প্রত্যাবাসিত হয়েছেন তাদের প্রতিরক্ষা, যত্ন এবং গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই মেক্সিকো করবে।”
মেক্সিকোর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “মেক্সিকো আলিঙ্গন তোমাকে’ পরিকল্পনার মাধ্যমে, দেশের জাতীয় অভিবাসন ইনস্টিটিউট বিদেশ থেকে আসা মেক্সিকানদের গ্রহণ, তাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকরণ এবং তাদের জন্মস্থানে স্থানান্তরে সহায়তা করার দায়িত্বে থাকবে।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, “ট্রাম্প গণহারে বহিষ্কারের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর থেকে সরকার এই পরিকল্পনাটি নিয়ে কাজ করছে এবং উন্নয়ন করছে।”
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার এবং ইউনিসেফসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে এই পরিকল্পনাটি তৈরি করা হয়েছে।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাউম বলেছেন, ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানের পরে তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী মেক্সিকান নাগরিকদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
ট্রাম্পের বড় ঘোষণার আরেকটি হলো ‘জাতীয় জ্বালানি শক্তি জরুরি অবস্থা জারি’ করা। এরমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় জ্বালানি ও অন্যান্য মূল্যবান পদার্থের উদ্দেশ্যে খনন কাজ চালানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে, জলবায়ু সংস্থাগুলোখনন, জীবাশ্ম জ্বালানি ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের উপর ট্রাম্পের নির্বাহী পদক্ষেপগুলোকে চ্যালেঞ্জ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল ডাইভার্সিটির নির্বাহী পরিচালক কিয়েরান সাকলিং বলেছেন, “আমরা ট্রাম্পের প্রতিটি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে লড়াই করব।”
পরিবেশ সংস্থাগুলো ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের সময় জীবাশ্ম জ্বালানি উন্নয়ন সম্প্রসারণের ট্রাম্প প্রশাসনের বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সফল মামলা করেছে। সংস্থাগুলো বলেছে, তারা তাদের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করবে।
ওয়েস্টার্ন এনভায়রনমেন্টাল ল সেন্টারের জলবায়ু ও শক্তি প্রোগ্রাম পরিচালক কাইল টিসডেল এক বিবৃতিতে বলেছেন, “প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনের সময় জলবায়ুর উপর গুরুত্বপূর্ণ আইনি নজির স্থাপন করার ক্ষেত্রে আমাদের দুর্দান্ত সাফল্য ছিল। আগামী চার বছর ধরে আমাদের পথে যাই আসুক না কেন, আমরা জলবায়ু ন্যায়বিচার এবং একটি বাসযোগ্য গ্রহের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।”
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য জলব য গ রহণ অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি ছাড়া সব পদেই আ.লীগের জয়জয়কার
মাদারীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ১৫টি পদের মধ্যে আওয়ামীপন্থিরা ১৪টিতে জয় পেয়েছেন। সভাপতি পদ ছাড়া অন্য সব পদে তারা জয়ী হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে আইনজীবী সমিতি কার্যালয়ে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
সভাপতি পদে জয়ী হয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর অনুসারী এমদাদুল হক খান। তিনি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাফর আলী মিয়াকে ৭৭ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন।
এদিকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিমকে ১৫৬ ভোটে পরাজিত করে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন সদর উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক মাহাবুব হোসেন (শাকিল)। সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে আনোয়ার হোসেন পেয়েছেন ১৩০ ভোট ও জালালুর রহমান পেয়েছেন ১৩০ ভোট। তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সেলিম মিয়া পেয়েছেন ২৯ ভোট (নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিদ্বন্দ্বী দুজন প্রার্থীর ভোট সমান হওয়ায় পুনরায় গণনা অথবা লটারি করে বিজয়ী প্রার্থী নির্বাচন করা হবে)। সহ-সভাপতি পদে মাহবুব হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক-১ পদে শাকিলা পারভীন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক-২ পদে মশিউর রহমান পারভেজ, কোষাধ্যক্ষ পদে সুজন ভৌমিক, সম্পাদক (লাইব্রেরি) পদে মুনীর হাসান, সম্পাদক (মহরার) পদে এ কে এম আজিজুল হক মুকুল নির্বাচিত হয়েছেন।
কার্যনির্বাহী ৫টি পদে ৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বিজয়ী ৫ জন হলেন সৈয়দা তাহমিনা খানম, এনামুল হক, আবদুস সালাম, ইকবাল হোসেন ও আবু সুফিয়ান। এ ছাড়া সম্পাদক (অ্যাপায়ন ও বিনোদন) পদে বদরুন নাহার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক গোলাম মাওলা আকন্দ মুঠোফোনে জানিয়েছেন, মাদারীপুর আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ১৫টি পদের মধ্যে সভাপতি ছাড়া ১৪টি পদেই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী কিংবা সমর্থক বিজয়ী হয়েছেন। তবে এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে সরাসরি আওয়ামী লীগের পদে থাকা কোনো নেতা অংশগ্রহণ করেননি। আওয়ামী লীগের কোনো আইনজীবী নেতা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তিনিও অন্য সবার মতন বিজয়ী হতেন বলে আমি মনে করি। যারা নির্বাচিত হয়েছেন সবাইকে অভিনন্দন।
তবে এমদাদুল হক খান সভাপতি পদে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের সমর্থন নিয়েই বিজয়ী হয়েছেন বলে দাবি করেছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ। তিনি বলেন, সভাপতি পদে আওয়ামী লীগের কেউ প্রার্থী না হওয়ায় তাদের সমর্থক আইনজীবীরা নির্বাচনে মূলত এমদাদুল হক খানকেই ভোট দিয়েছেন। সেকারণেই জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাফর আলী মিয়া পরাজিত হয়েছেন।
মাদারীপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মোখলেছুর রহমান বলেন, এমদাদুল হক খানকে নির্বাচিত করায় সব আইনজীবীদের ধন্যবাদ। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তার বিজয়ে আমরা আনন্দিত।
মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য মাদারীপুর আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। তবে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট ফরহাদ হোসেন জানান, সুন্দরভাবে ভোটগ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। দুজন সমান ভোট পাওয়ায় তাদের ছয়মাস করে দায়িত্ব পালনের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।