সাইফ আলি খানের ওপর হামলাকারী নলছিটির শেহজাদ?
Published: 20th, January 2025 GMT
বলিউড অভিনেতা সাইফ আলি খানের ওপর হামলার ঘটনায় আটক হয়েছেন মু. শরিফুল ইসলাম শেহজাদ (৩৮) নামে এক যুবক। তাঁর বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নের রাজাবাড়িয়া গ্রামে। গ্রেপ্তারের পর গণমাধ্যমে আসা ছবি দেখে শেহজাদকে শনাক্ত করেছে পরিবার।
রাজাবাড়িয়া গ্রামের রুহুল আমিন ফকিরের ছেলে তিনি। তাঁর বাবা এক সময় খুলনা জুট মিলে চাকরি করতেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে শেহজাদ দ্বিতীয়।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্র জানায়, বাবার চাকরির সুবাদে পরিবারের সঙ্গে খুলনায় থাকতেন শেহজাদ। সে সময় থেকেই অবৈধপথে তাঁর ভারতে যাতায়াত ছিল। খুলনায় থাকাকালে তিনি মাদক ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েন। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও হয়। এতে বিরক্ত হয়ে তাঁর পরিবার গ্রামের বাড়ি চলে যায়। এলাকায় মাঝেমধ্যে আসা-যাওয়া থাকলেও স্থায়ী হতেন না শেহজাদ। ২০১৭ সালের পর থেকে তাঁকে আর এলাকায় দেখা যায়নি। পরিবারের সঙ্গেও তিনি যোগাযোগ করেননি।
গতকাল সোমবার শেহজাদের ছোট ভাই সালমান ফকির জানান, তাঁর মেজো ভাই শেহজাদ ২০১৭ সালে রফিকুল ইসলাম নামে এক মোটরসাইকেলচালক হত্যা মামলার আসামি হওয়ার পর গ্রেপ্তার এড়াতে ভারতে পালিয়ে যান। এর আগে দেশে থাকা অবস্থায় ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকবার পুলিশের হাতে আটক হন তিনি। ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর তাঁর সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ নেই।
বাবা রুহুল আমিন ফকির বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি শেহজাদ। শুনেছি, সে ভারতের কারাগারে আটক আছে। সে কবে, কীভাবে ভারতে গেছে, সেটা আমাদের জানা নেই।’ নলছিটি থানার ওসি আবদুস ছালাম বলেন, শেহজাদের বিষয়ে কোনো বার্তা আসেনি।
গত বুধবার রাতে মুম্বাইয়ে বাসায় ঢুকে সাইফ আলি খানের ওপর হামলা করে দুষ্কৃতকারী। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের ধারণা, ডাকাতির উদ্দেশ্য নিয়েই সাইফ-কারিনার বাড়িতে ঢুকেছিলেন শেহজাদ। রোববার মহারাষ্ট্রের থানের কাছে একটি জঙ্গল থেকে তাঁকে আটক করে বান্দ্রা কোর্টে পেশ করা হয়। এর পর আদালত তাঁকে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
আইসিজের শুনানিতে গাজার দুর্ভিক্ষ-ধ্বংসযজ্ঞ, ক্ষুব্ধ ইসরায়েল
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের মানবিক বাধ্যবাধকতা নিয়ে হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গতকাল সোমবার শুনানি শুরু হয়েছে। তবে বরাবরের মতোই ইসরায়েল এই বিচার কার্যক্রমের তীব্র সমালোচনা করেছে। দখলদার দেশটি আইসিজের শুনানিতে অংশ নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। তবে তারা লিখিত আপত্তি জমা দিয়েছে। শুনানিতে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি ও নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আম্মার হিজাজি গাজার ধ্বংসযজ্ঞ, মৃত্যু ও দুর্ভিক্ষের চিত্র তুলে ধরেছেন। এতে বলা হয়েছে, ইসরায়েল মানবিক সহায়তাকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সবসময় অবজ্ঞা করে আসছে। গাজায় মানবিক বাধ্যবাধকতা স্বীকার করতে চাইছেন না বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তায় বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে এ নিয়েই শুনানি হচ্ছে, চলবে পাঁচ দিনব্যাপী। এতে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্তত ৪০ দেশ ১৫ জন বিচারকের সামনে তাদের বক্তব্য তুলে ধরবে।
গতকাল ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত আম্মার হিজাজি গাজায় ইসরায়েলের অমানবিক আচরণ তুলে ধরে শুনানিতে বলেন, ইসরায়েল দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় খাদ্য, পানি, ওষুধ, চিকিৎসা সরবরাহ বা জ্বালানি প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। ইসরায়েলি সুপ্রিম কোর্ট এই অমানবিক নীতি সমর্থন করেছেন। ফলে অনাহারে মৃত্যুসহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ইসরায়েল ফিলিস্তিনকে মুছে ফেলার অপচেষ্টায় লিপ্ত। তারা জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করছে।
গতকাল শুনানিতে বক্তব্য দেন জাতিসংঘের আইনবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এলিনর হ্যামারস্কজোল্ড। তিনি বলেন, গাজায় ইসরায়েল দম্ভ দেখাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তাদের ওপর আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা আরোপ জরুরি। এ সময় তিনি জানান, ইসরায়েলি হামলায় গত ১৮ মাসে কমপক্ষে ২৯৫ জন জাতিসংঘের কর্মী নিহত হয়েছেন। গাজায় জাতিসংঘের হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আল জাজিরা জানায়, গত বছর নরওয়ে ও কিছু দেশ মিলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাব তোলে। তাতে বলা হয়, জাতিসংঘ সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে ইসরায়েল ফিলিস্তিনে আন্তর্জাতিক মানবিক বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করছে কিনা, সে বিষয়ে মতামত প্রয়োজন। এই মতামত জানতে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই পদক্ষেপকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টির কৌশলগত সুযোগ হিসেবে দেখছে জাতিসংঘ।
এদিকে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইসিজের শুনানির তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতের শুনানি তাঁর দেশের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। আদালতকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। এই ধরনের কার্যক্রম লজ্জাজনক।
দোহায় বার্ষিক গ্লোবাল সিকিউরিটি ফোরামে রেড ক্রস জানিয়েছে, এক অন্তহীন দুঃস্বপ্নের মুখোমুখি গাজার বাসিন্দা। তারা এখন মৃত্যু, আঘাত, বাস্তুচ্যুতি, অঙ্গচ্ছেদ, বিচ্ছেদ, অন্তর্ধান, অনাহারে জর্জরিত। এর মধ্যেই ইসরায়েল হামলা অব্যাহত রেখেছে। এই ভয়াবহতা তাদের আগামী কয়েক দশক তাড়া করে ফিরবে।
রয়টার্স জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে ৭১ ফিলিস্তিনি। গত ১৮ মাসে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৫২ হাজার ৩১৪ জন নিহত ও ১ লাখ ১৭ হাজার ৭৯২ জন আহত হয়েছে।
অধিকৃত পশ্চিম তীরের বেথলেহেমের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর ছোড়া টিয়ার গ্যাসে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছে। ওয়াফা জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী আল-খাদেরে হামলা চালিয়ে পুরাতন শহরের টাল এলাকায় অবস্থান নেয়। এ সময় তারা সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করলে দমবন্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা মারা যায়।
গতকাল গাজা শহরের উত্তর-পশ্চিমে সাতজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গাজা উপত্যকার উত্তরে হামলায় প্রাণ গেছে ১০ জনের। একটি বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে চারটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। খান ইউনিসের কাছে তাঁবুতে হামলায় একটি মেয়ে ও একটি শিশুও মারা গেছে।