বেতন বৃদ্ধিসহ ৯ দফা দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভ
Published: 20th, January 2025 GMT
ঢাকার ধামরাইয়ে বেতন বৃদ্ধিসহ ৯ দফা দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে একটি সিরামিক কারখানার শ্রমিকরা।
গতকাল সোমবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধামরাইয়ের ডাউটিয়া এলাকার প্রতীক সিরামিক কারখানার শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠকে বসায়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও কারখানার শ্রমিকরা জানান, কারখানাটিতে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক রয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দীর্ঘদিন ধরে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা বেতন দিয়ে আসছে। হাজিরা বোনাসও দেয় না। কথায় কথায় শ্রমিক ছাঁটাই ও নির্যাতন করা হয়।
শ্রমিকরা তাদের ন্যূনতম বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা, হাজিরা বোনাস, কারখানার এজিএম আকরাম হোসেনসহ তিন কর্মকর্তার পদত্যাগ, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধসহ ৯ দফা দাবিতে সোমবার দুপুর ২টার দিকে কারখানা-সংলগ্ন ডাউটিয়া এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় সড়কের উভয় পাশে প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়।
শ্রমিক বিলকিস আক্তার বলেন, ‘আমাগো ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা বেতন দেয়। এই টাকা দিয়া ঘর ভাড়া, খাবার, বাচ্চার লেখাপড়া কোনো কিছুই ঠিকমতো করতে পারি না। কষ্ট কইরা চলতাছি। আমাদের বেতন বাড়াইতে হবে।’
বেতন বাড়াতে শ্রমিকরা একাধিকবার কারখানার মহাব্যবস্থাপককে অনুরোধ করলেও কাজ না হওয়ায় রাস্তায় নেমেছেন জানিয়ে শ্রমিক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য সবার জন্যই বাড়ছে। তাহলে ওদের বেতন বাড়ছে, আমাদের বাড়াবে না কেন? বেতন সবার জন্য সমান হতে হবে।’
সেনাবাহিনী ও পুলিশ শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠকে বসায়। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করে বেতন বৃদ্ধির আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা চলে যান।
প্রতীক সিরামিক কারখানার এজিএম আকরাম হোসেনের ভাষ্য, জুন মাস থেকে শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি ও হাজিরা বোনাসের দাবি পূরণ করা হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, বন্ধ মানবিক সহায়তাও
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ঘরবাড়ি ও তাঁবুর মতো আশ্রয়কেন্দ্রও ইসরায়েলি বর্বরতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার দেশটি। পাশাপাশি আট সপ্তাহ ধরে উপত্যকায় খাদ্য, ওষুধ ও ত্রাণসামগ্রী প্রবেশ বন্ধ করে রেখেছে। এ পরিস্থিতিকে জাতিসংঘ সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট হিসেবে বর্ণনা করেছে।
আলজাজিরার সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, বুধবার রাতভর এবং বৃহস্পতিবার ভোরে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মধ্য গাজার নুসেইরাতের কাছে একটি তাঁবুতে তিন শিশু এবং গাজা শহরের একটি বাড়িতে এক নারী ও চার শিশু নিহত হয়েছেন। সাম্প্রতিক এক হামলায় স্থানীয় সাংবাদিক সাঈদ আবু হাসানাইনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে কমপক্ষে ২৩২ সাংবাদিক নিহত হলেন।
গাজার দেইর এল-বালাহ থেকে আলজাজিরার তারেক আবু আযুম বলেন, অবরুদ্ধ উপত্যকা স্পষ্টতই ইসরায়েলি সেনা বৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকটের সাক্ষী হচ্ছে। এখানকার অক্ষত ও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোও গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকারীরাও অসহায় হয়ে পড়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়াদের কাছে পৌঁছানোর জন্য তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
অধিকৃত পশ্চিম তীর পরিচালনাকারী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘ইসরায়েলের আক্রমণের কোনো বিরতি নেই, কোনো করুণা নেই, কোনো মানবতা নেই।’
প্রায় দুই মাস ধরে ইসরায়েল ত্রাণ সহায়তা অবরোধ করে রাখায় গাজার মানবিক সংকট আরও তীব্র হয়েছে। এটিকে জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয় অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ‘ফিলিস্তিনি জীবনের ইচ্ছাকৃত ধ্বংসাবশেষ’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, গাজা উপত্যকা এখন সম্ভবত ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামলা শুরুর পর ১৮ মাসের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অপুষ্টির সম্মুখীন নারী ও শিশুদের বিপজ্জনক ও বিপর্যয়কর ক্ষতির কথা তুলে ধরেছে। তারা অনেকেই পর্যাপ্ত খাবার, পানীয় জল এবং শিশুর খাবারের অভাবের মুখোমুখি হয়েছে। ইসরায়েলের গাজায় সাহায্য পাঠাতে অব্যাহত অস্বীকৃতি ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক আদালতের একটি আদেশকে লঙ্ঘন করে। সেই আদেশে দুর্ভিক্ষ ও অনাহার রোধে জরুরি ভিত্তিতে উপত্যকায় সাহায্য পৌঁছানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে রাখা নিয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে) আগামী সপ্তাহে হেগে অনুষ্ঠিত গণশুনানির একটি সূচি প্রকাশ করেছে। সেখানে গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে জাতিসংঘ, এনজিওর কার্যকলাপকে অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে ইসরায়েলের আইনি বাধ্যবাধকতা নিয়ে আলোচনা করা হবে। আগামী সোমবার শুরু হতে যাওয়া এ শুনানির আগে প্রায় ৪৫টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা লিখিত বিবৃতি জমা দিয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র আলজাজিরাকে জানিয়েছে, বুধবার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত এবং ১০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ১৮ মাসে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫১ হাজার ৩০৫ জন নিহত এবং ১ লাখ ১৭ হাজার ৯৬ জন আহত হয়েছেন।