Samakal:
2025-04-24@01:17:01 GMT

অনেক দিনের কাশি

Published: 20th, January 2025 GMT

অনেক দিনের কাশি

 শ্লেষ্মা, বাইরের বস্তু, জীবাণু, মিউকাস নিষ্ক্রান্ত হয়ে শ্বাসনালি ও  ফুসফুসকে পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখে। সুতরাং কাশি প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধের একটি প্রয়োজনীয় ক্রিয়া। এটি একটি রিফ্লেক্স ক্রিয়া; যার রিসেপ্টর থাকে শ্বাসনালিতে। অন্যদিকে, অতিরিক্ত কাশি বিভিন্ন রোগের লক্ষণ হিসেবে ;বিবেচিত হতে পারে


ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় দু’ভাবেই আমরা কাশি দিয়ে থাকি। হঠাৎ ও সজোরে ফুসফুসের বাতাস সশব্দে বের হয় কাশির মাধ্যমে। শ্লেষ্মা, বাইরের বস্তু, জীবাণু ,মিউকাস নিষ্ক্রান্ত হয়ে শ্বাসনালি ও ফুসফুসকে পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখে। সুতরাং কাশি প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধের একটি প্রয়োজনীয় ক্রিয়া। এটি একটি রিফ্লেক্স ক্রিয়া; যার রিসেপ্টর থাকে শ্বাসনালিতে। অন্যদিকে, অতিরিক্ত কাশি বিভিন্ন রোগের লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। 
কাশির প্রকারভেদ
স্বল্পমেয়াদি কাশি: সাধারণত ভাইরাস সংক্রমণ, জীবাণু সংক্রমণ-পরবর্তী কাশি, নিউমোনিয়ার কারণে হয়ে থাকে। সেটি মোটামুটি তিন থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। 
ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী কাশি: যদি প্রাপ্তবয়স্কদের আট সপ্তাহের বেশি আর শিশুদের চার সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়, তাকে দীর্ঘস্থায়ী কাশি বলে। অনেক দিনের কাশি একটি বিরক্তিকর সমস্যা, এটি ঘুমের ব্যাঘাত করে ও ক্লান্তি ভাব তৈরি করে। বুক ব্যথা, মাথা ঘোরা, প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা, হার্নিয়া ও বুকের  পাঁজরের হাড় ভেঙে যাওয়ার মতো সমস্যা করতে পারে। দীর্ঘদিনের কাশি হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন কারণ, দীর্ঘস্থায়ী কাশির নানা কারণ রয়েছে। তার মধ্যে কিছু জটিল রোগ যেমন– যক্ষ্মা, ফুসফুসে ক্যান্সার ও ফুসফুস ফাইব্রোসিস হতে পারে।
যেসব কারণে দীর্ঘস্থায়ী কাশি হয় তার মধ্যে
অ্যাজমা: মূলত বংশগত কারণ। দূষিত বাতাস, বিভিন্ন প্রকার অ্যালার্জেন, ভাইরাসজনিত সংক্রমণ এ রোগের কারণ। অ্যাজমার কারণে শ্বাসনালি সংকুচিত হয় ও বাতাস প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়; যার ফলে রোগীর কাশি, শ্বাসকষ্ট হয়, বুকে শব্দ হয় ও চাপ অনুভূত হয়। সাধারণত এ ধরনের কাশি রাতে ও সকালে বাড়ে। কফ ভেরিয়েন্ট অ্যাজমা,  শুধু রাতে কাশি হবে কিন্তু অ্যাজমার অন্য লক্ষণগুলো থাকবে না।
গ্যাস্ট্রো ইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ: এ অবস্থায় পাকস্থলী ও খাদ্যনালির রিং (স্ফিঙ্কটার)  ঢিলা হওয়ার কারণে এসিড খাদ্যনালিতে ফিরে আসে ও দীর্ঘস্থায়ী কাশি হতে পারে। সাধারণত অন্য লক্ষণগুলো মুখে টক ও বুক জ্বালাপোড়া, বুকে এসিড উদগিরণের অনুভূতি থাকে।
ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি): ধূমপায়ীদের ক্রনিক ব্রংকাইটিস পরপর দু’বছর তিন মাসের বেশি সময় কফযুক্ত কাশি হয়। ফুসফুসের বায়ু প্রবাহে বাধাগ্রস্ত হতে পারে এবং বুকে আওয়াজ হতে পারে। অল্প পরিশ্রমে শ্বাসকষ্ট হয় এবং ফুসফুসের বায়ু থলি (এলভিউলাই) ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফুসফুস থেকে রক্তে অক্সিজেন প্রবাহে ব্যাঘাত হয় এবং অল্পতে হাঁপিয়ে ওঠে।
ওষুধ: প্রেশার কমানোর ওষুধ এসিই (ACE) ইনহিবিটার যেমন– রেমিপ্রিল, এসিপ্রিল ও বিটা ব্লকারের কারণে শুকনা কাশি হতে পারে। সেজন্য দীর্ঘদিনের কাশির রোগীর কাছে প্রথমে ওষুধ সেবনের ইতিহাস নিতে হবে, কোনো বড় ইনভেস্টিগেশনের আগে।
হার্ট ফেইলুর: দীর্ঘস্থায়ী কাশি শরীরে পানি জমা, দুর্বলতা, সামান্য পরিশ্রমে ক্লান্তি ভাব থাকতে পারে। রাত্রে শোয়ার সময় কাশি বেড়ে যায়, শ্বাসকষ্ট হয়।
ফুসফুসে সংক্রমণ: যক্ষ্মার কারণে দীর্ঘস্থায়ী কাশি হতে পারে। যদিও দুই সপ্তাহের বেশি কাশি হলে যক্ষ্মা পরীক্ষা করানো জরুরি। যেহেতু আমাদের দেশে যক্ষ্মা রোগের প্রকোপ বেশি, সেজন্য প্রথমে আমাদের এই রোগের কথা মনে রাখতে হবে। এ রোগের অন্যান্য লক্ষণ– বিকেলে জ্বর, ওজন কমে যাওয়া, খাওয়ায় অরুচি এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে কফের সঙ্গে রক্ত আসা।
ফুসফুসের ফাইব্রোসিস (ডিপিএলডি) হলে কাশি ও শ্বাসকষ্ট হবে। 
ফুসফুসে ক্যান্সার: ধূমপায়ী, যারা প্রতিদিন ২০টি সিগারেট ২০ বছরের বেশি টেনেছেন, তাদের দীর্ঘস্থায়ী কাশি লেগেই থাকে। তাদের নতুন কাশি কিংবা কাশির ধরন পাল্টেছে, গলার স্বর পরিবর্তন হয়েছে, ক্লান্তি ভাব জেগেছে, ওজন কমে যাচ্ছে এবং কখনও কখনও কফের সঙ্গে  রক্ত যাওয়া এ রোগের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ । 
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন 
lকাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া।
l কফের সঙ্গে রক্ত আসা। 
l যে কাশি ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে। 
l কাশির সঙ্গে বুক ব্যথা, জ্বর, ক্ষুধামন্দা, ওজন কমে যাওয়া।
 l যে কোনো দীর্ঘদিনের কাশি যেটিতে আপনি কষ্ট পান। 
l বুকের এক্স-রেতে পরিবর্তন লক্ষ্য করা ।
চিকিৎসকের পরামর্শ 
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগের বর্ণনা ও রোগীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর রোগ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা হয়। তার পর কিছু কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। যেমন– l রক্তের সিবিসি পরীক্ষা; 
l শ্লেষ্মা বা কফ পরীক্ষা, ইউসিনোফিল কাউন্ট, যক্ষ্মার জীবাণু; l বুকের এক্স-রে; l বুকের সিটি স্ক্যান;
l স্পাইরোমেট্রি ও 
lব্রঙ্কোসকপিও করতে হতে পারে । 
চিকিৎসা 
l রোগ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে ।
l ধূমপান পরিহার করতে হবে। 
l ধুলাবালি ও ঠান্ডা পরিহার করতে হবে।
l বাইরে গেলে মাস্ক পরুন।
l ঠান্ডার সময়ে হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন। 

[অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ  
ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা ও কনসালট্যান্ট, আলোক হেলথকেয়ার লিমিটেড]

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

৭০ জনের আয়কর নথি চেয়ে এনবিআরে চিঠি দুদকের

অর্থ পাচার করে দুবাইয়ে সম্পত্তি করা ৭০ প্রবাসীর আয়কর নথিসহ অন্যান্য তথ্য চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ১৬ এপ্রিল দুদকের উপপরিচালক রামপ্রসাদ মণ্ডলের সই করা চিঠিটি পাঠানো হয়। তবে চিঠির তথ্য জানাজানি হয় গতকাল বুধবার। 

দুদকের চিঠিতে বলা হয়, মোট ৪৫৯ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ সুইস ব্যাংকসহ বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে পাচার করে পরে তা দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের গোল্ডেন ভিসা সুবিধায় ৯৭২টি প্রপার্টি কেনার অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। এসব সম্পদের মূল্য প্রায় ৩১৫ মিলিয়ন ডলার।
এসব ব্যক্তির মধ্যে ৭০ জনের তথ্য ২৯ এপ্রিলের মধ্যে এনবিআরকে পাঠাতে বলেছে দুদক। চিঠিতে নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে এসব ব্যক্তির টিআইএন সনদের বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, তাদের ‘সকল তথ্য সংক্রান্ত সব রেকর্ডপত্র সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন’।

এর আগে ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরি জানিয়েছিল, ৪৫৯ বাংলাদেশি নাগরিক বাংলাদেশে তাদের তথ্য গোপন করে দুবাইয়ে সম্পত্তি কিনেছেন। ২০২০ সাল পর্যন্ত তাদের মালিকানায় সেখানে মোট ৯৭২টি সম্পত্তি কেনার তথ্য পাওয়া গেছে। এগুলোর মূল্য সাড়ে ৩১ কোটি ডলার।

দুদকের কর্মকর্তারা জানান, ২০২৩ সালে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় অনুসন্ধানে নেমেছে কমিশন। এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করতে তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করেছে সংস্থাটি।

যাদের তথ্য চেয়েছে দুদক

সংস্থাটি ৭০ জনের তালিকা দিলেও, তাতে মোট ৭৪ জনের নাম রয়েছে। তারা হলেন– আহসানুল করীম, আনজুমান আরা শহীদ, হেফজুল বারী মোহাম্মদ ইকবাল, হুমায়রা সেলিম, জুরান চন্দ্র ভৌমিক, মো. রাব্বী খান, মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, মোহাম্মদ অলিউর রহমান, এস এ খান ইখতেখারুজ্জামান, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সৈয়দ ফাহিম আহমেদ, সৈয়দ হাসনাইন, সৈয়দ মাহমুদুল হক, সৈয়দ রুহুল হক, গোলাম মোহাম্মদ ভূঁইয়া, হাজি মোস্তফা ভূঁইয়া, মনোজ কান্তি পাল, মো. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, মো. মাহবুবুল হক সরকার, মো. সেলিম রেজা, মোহাম্মদ ইলিয়াস বজলুর রহমান, এস ইউ আহমেদ, শেহতাজ মুন্সী খান, এ কে এম ফজলুর রহমান, আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ, চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, গুলজার আলম চৌধুরী, হাসান আশিক তাইমুর ইসলাম, হাসান রেজা মহিদুল ইসলাম, খালেদ মাহমুদ, এম সাজ্জাদ আলম, মোহাম্মদ ইয়াসিন আলী, মোস্তফা আমির ফয়সাল, রিফাত আলী ভূঁইয়া, সালিমুল হক ঈসা/হাকিম মোহাম্মদ ঈসা, সৈয়দ এ কে আনোয়ারুজ্জামান/সৈয়দ কামরুজ্জামান, সৈয়দ সালমান মাসুদ, সৈয়দ সাইমুল হক, আবদুল হাই সরকার, আহমেদ সামীর পাশা, ফাহমিদা শবনম চৈতী, মো. আবুল কালাম, ফাতেমা বেগম কামাল, মোহাম্মদ আল রুমান খান, মায়নুল হক সিদ্দিকী, মুনিয়া আওয়ান, সাদিক হোসেন মো. শাকিল, আবদুল্লাহ মামুন মারুফ, মোহাম্মদ আরমান হোসেন, মোহাম্মদ শওকত হোসেন সিদ্দিকী, মোস্তফা জামাল নাসের, আহমেদ ইমরান চৌধুরী, বিল্লাল হোসেন, এম এ হাশেম, মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন চৌধুরী, নাতাশা নূর মুমু, সৈয়দ মিজান মোহাম্মদ আবু হানিফ সিদ্দিকী, সায়েদা দুররাক সিনদা জারা, আহমেদ ইফজাল চৌধুরী, ফারহানা মোনেম, ফারজানা আনজুম খান, কে এইচ মশিউর রহমান, এম এ সালাম, মো. আলী হোসেন, মোহাম্মদ ইমদাদুল হক ভরসা, মোহাম্মদ ইমরান, মোহাম্মদ রোহেন কবীর, মনজিলা মোর্শেদ, মোহাম্মদ সানাউল্যাহ চৌধুরী, মোহাম্মদ সরফুল ইসলাম, সৈয়দ রফিকুল আলম ও আনিসুজ্জামান চৌধুরী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ