‘বাহে হামার এট্টি জারতে নিন না আসে ঘরত, তোমরা হামাক কম্বল দিলেন, রাইতত নিন পারবের পামো এল্যা। আল্লাহই তোমার ভালো করুক’– কম্বল পেয়ে কথাগুলো বলছিলেন রাজারহাটের দেবীচরণ গ্রামের বিধবা শিউলি রানী। তাঁর মতো হাজারো মানুষ খুশি সমকাল সুহৃদ সমাবেশের উপহার পেয়ে।
১৮ ও ১৯ জানুয়ারি কুড়িগ্রাম সুহৃদ সমাবেশের আয়োজনে ও রাজারহাট প্রেস ক্লাবের সহযোগিতায় উপজেলার ১ হাজার ১০০ ভিক্ষুক ও এতিমদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করেন সুহৃদরা। দু’দিনব্যাপী এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.
এ সময় রাজারহাট প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও সমকালের রাজারহাট প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান আসাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন– রাজারহাট থানার অফিসার ইনচার্জ আশরাফুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক চিন্ময় রায় পলাশ, রাজারহাট মহিলা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোকলেছুর রহমান বিপ্লব, সমকালের জেলা প্রতিনিধি সুজন মোহন্ত, প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ, প্রেস ক্লাব সভাপতি সরকার অরুণ যদু, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আরিফুল ইসলাম, সুহৃদ বাদশা মিয়া, অমিত পাল, রাশেদুল ইসলাম, র্যাবেন, আতাউর রহমান, মিতু আক্তার প্রমুখ।
কম্বল পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন ৭০ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘এই কম্বলের জন্যে কত জায়গায় গেইছং কাইঁয়ো মোক একখ্যান কম্বল দেয় নাই। তোমার সমকাল হামাক ডাকে আনি কম্বল দিলেন তোমার ভালো হউক।’
উপজেলার চাকিরপশার ইউনিয়নের জলুটারী গ্রামের ৮৫ বছর বয়সী মোস্তফা বলেন, ‘কোনো মেম্বার-চেয়ারম্যান হামাক কম্বল দেয় নাই, তোমার হামাক কম্বল দেইল, এল্যা এইখ্যান গাত দিয়ে রাইতত ঘুম পারবের পাইমো।’
প্রধান অতিথি আল ইমরান জানান, এ আয়োজনের মতো সমাজের অন্য শ্রেণি-পেশার মানুষেরও এগিয়ে আসা উচিত। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ডে অবদান রাখার বিষয়টি সত্যিই আনন্দদায়ক।
রাজারহাট প্রেস ক্লাবের সভাপতি সরকার অরুণ যদু বলেন, ‘ভিক্ষুক-এতিমসহ ছিন্নমূল মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে ভালো লাগছে; আগামীতেও এমন ভালো কাজের সঙ্গে থাকতে চাই।’ v
সমন্বয়ক সুহৃদ সমাবেশ, কুড়িগ্রাম
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সমক ল
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭% শুল্ক আরোপ করল যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছেন, যাকে ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করছে অনেক দেশ। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়েছে। এতদিন দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ করে শুল্ক ছিল।
বাংলাদেশের প্রধান দুই রপ্তানি বাজারের একটি যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের একটি বড় অংশ রপ্তানি হয় দেশটিতে। যুক্তরাষ্ট্রে বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি হয় প্রায় ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন (৮৪০ কোটি) ডলার, যা প্রধানত তৈরি পোশাক। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তান ৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন (৭৩৪ কোটি) ডলারে।
নতুন করে উচ্চ মাত্রায় এই শুল্ক আরোপে বাংলাদেশের রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা।
ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বুধবার বিকেল ৪টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার দিবাগত রাত ২টা) হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন করে শুল্ক ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে উপস্থিত সাংবাদিকসহ সমবেতদের উদ্দেশে বক্তব্যের শুরুতেই ট্রাম্প বলেন, ‘আজ খুব ভালো খবর’ থাকবে। এ সময় দর্শক সারি থেকে করতালি দিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানানো হয়।
এই দিনকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিবস’ অভিহিত করেন ট্রাম্প। নতুন শুল্ক আরোপকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হিসেবে উল্লেখ করেন। ট্রাম্প বলেন, এই দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ দিন ধরে অপেক্ষা করছে।
ট্রাম্পের পাল্টা এই শুল্ক আরোপে ভারতের পণ্যের ওপর ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। পাকিস্তানের পণ্যের ওপর ২৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে ৩৪ শতাংশ।
এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ, ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার পণ্যে ৪৪ শতাংশ, তাইওয়ানের পণ্যে ৩২ শতাংশ, জাপানের পণ্যে ২৪ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যে ২৫ শতাংশ, থাইল্যান্ডের পণ্যে ৩৬ শতাংশ, সুইজারল্যান্ডের পণ্যে ৩১ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ৩২ শতাংশ, মালয়েশিয়ার পণ্যে ২৪ শতাংশ, কম্বোডিয়ার পণ্যে ৪৯ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের পণ্যে ১০ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার পণ্যে ৩০ শতাংশ, ব্রাজিলের পণ্যে ১০ শতাংশ, সিঙ্গাপুরের পণ্যে ১০ শতাংশ, ইসরায়েলের পণ্যে ১৭ শতাংশ, ফিলিপাইনের পণ্যে ১৭ শতাংশ, চিলির পণ্যে ১০ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ, তুরস্কের পণ্যে ১০ শতাংশ, কলম্বিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ আরোপ করা হয়েছে।
অন্যান্য যেসব দেশের পণ্যের ওপর বেশি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে মিয়ানমারের পণ্যে ৪৪ শতাংশ, লাওসের পণ্যে ৪৮ শতাংশ এবং মাদাগাস্কারের পণ্যের ওপর ৪৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
পাল্টা এই শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে থাকা ট্রাম্প বলেছেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কখনো কখনো ‘বন্ধু শত্রুর চেয়ে খারাপ হয়’।
যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের বিদেশি গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় যেসব গাড়ি উৎপাদন করা হয় তার ৮০ শতাংশের বেশি সেদেশে বিক্রি হয়। আর জাপানে যেসব গাড়ি বিক্রি হয় সেগুলোর ৯০ শতাংশের বেশি সেদেশে তৈরি হয়। এসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি বিক্রি হয় খুব সামান্য।
মার্কিন কোম্পানি ফোর্ড অন্যান্য দেশে খুব কম গাড়ি বিক্রি করে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, অন্য যে কোনো দেশে তৈরি মোটরযানের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে এবং এটা আজ মধ্যরাত থেকেই কার্যকর হবে।
শুল্ক আরোপের ঘোষণাকে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রতিফলন উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, আজকের দিনকে আমেরিকান শিল্পের ‘পুনর্জন্ম’ এবং আমেরিকাকে ‘আবার সম্পদশালী’ করার দিন হিসেবে স্মরণ করা হবে।
এই সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বাধার মুখে রয়েছে।
অন্যান্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে অশুল্ক বাধা আরও খারাপ অবস্থা তৈরি করেছে।
বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের মেধাসত্ত চুরিসহ অন্যান্য বিধিনিষেধ আরোপের অভিযোগ করেছেন তিনি।