সময় বাড়িয়েও ভবনের কাজে অগ্রগতি নেই
Published: 20th, January 2025 GMT
বিদ্যালয় ভবন জরাজীর্ণ হওয়ায় নতুন ভবনের জন্য বরাদ্দ পাওয়া যায়। কথা ছিল দুই বছরের মধ্যে কাজ শেষ হবে। পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও নতুন ভবনে ক্লাস করতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। পুরোনো ভবনেই ঝুঁকি নিয়ে চলছে লেখাপড়া। এ অবস্থায় তাড়াশের কুন্দাশন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নে ১৯৭১ সালে কুন্দাশন উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত এ বিদ্যালয়ে ২৫০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। পাঠদান
করা হয় জরাজীর্ণ আধাপাকা ভবনে। রয়েছে শ্রেণিকক্ষের সংকট। শিক্ষক-কর্মচারীদের অফিস, ওয়াশ রুম, শিক্ষার্থীদের কমন রুম নেই। সুপেয় পানির অভাবও প্রকট। সব দিক বিবেচনা করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০১৯ সালে এ বিদ্যালয়ের জন্য চারতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণকাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করে।
২ কোটি ৭৩ লাখ ৯০ হাজার ৬৫০ টাকায় কাজটি পায় পাবনা জেলার আতাইকুলার ‘সাদ এন্টারপ্রাইজ’। একই বছরের ১৪ জুলাই কার্যাদেশ পায় প্রতিষ্ঠানটি। দুই বছরের মধ্যে শেষ করার শর্ত দেওয়া হলেও পেরিয়ে গেছে পাঁচ বছর। এখনও কাজ শেষ হয়নি। শিক্ষক-কর্মচারী ও শত শত শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়ে জরাজীর্ণ ভবনে পাঠদান কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে। যে কোনো সময় ভবন ধসে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু করেনি। থেমে থেমে কাজ ধরায় নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারছে না। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ। এগারো মাস ধরে ঠিকাদার বিদ্যালয়ে আসেন না। কাজ নিয়ে এদের গাফিলতির শেষ নেই।
প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশীদ সরকার জানান, দুই বছরের কাজ চার বছরেও শেষ হয়নি। দফায় দফায় সময় বাড়ানোর পরও কাজের ২৫ থেকে ৩০ ভাগ কাজ বাকি আছে। প্রায় ১১ মাস ধরে ঠিকাদার কাজের স্থানে আসেন না। কোনো খবর রাখেন না। বারবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হলেও দ্রুত কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দায় সারা হচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে সাদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সোহেল রানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, করোনাকালে কাজ শুরু হয়। ওই সময় লোকবলের অভাবে কাজ ধরতে কিছুটা বিলম্ব হয়। বর্তমানে পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে কিছুদিন কাজ বন্ধ রাখা হয়। এভাবে থেমে থেমে কাজ চললেও একবারে বন্ধ রাখা হয়নি।
তাড়াশ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী আমিরুল ইসলাম জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সাতবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তারা শেষবারের মতো সময় নিয়েছে। এর পরও নির্ধারিত সময়ে কাজ না করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ই বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
ইউজিসির নজরদারি সংস্থার অধীনে যাচ্ছে সাত কলেজ
রাজধানীর আলোচিত সাত কলেজ নিয়ে নতুন সিদ্ধান্তে এসেছে সরকার। এ জন্য আপাতত একটি ‘নজরদারি সংস্থা’ গঠন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একজন সদস্য এ সংস্থার নেতৃত্ব দেবেন। সাত অধ্যক্ষের যে কোনো একজন সংস্থাটির পরিচালকের দায়িত্ব পালন করবেন। নজরদারি সংস্থার কার্যালয় হবে সাত কলেজের যে কোনোটির ক্যাম্পাসে।
এ ছাড়া সাত কলেজের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নতুন ভর্তি কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ভর্তি ও রেজিস্ট্রার দপ্তর এবং হিসাব বিভাগের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি সাময়িক কাঠামো থাকবে, যা ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে সাত কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের যাবতীয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এসব কাজের জন্য সাত কলেজের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি পৃথক ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনা করবে। বিশ্ববিদ্যালয় মর্যাদার স্বতন্ত্র কাঠামো চূড়ান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই নজরদারি সংস্থার অধীনে সাত কলেজ পরিচালিত হবে।
সরকারের এসব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। যুগ্ম সচিব শারমিনা নাসরীনের সই করা চিঠিতে এই সুপারিশমালা বাস্তবায়নে উপাচার্যকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ এই উচ্চ পর্যায়ে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক।
ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) কমিটির সদস্য।
এ কমিটি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে একাধিক সভায় মিলিত হয়ে সরকারের কাছে যে সুপারিশমালা পেশ করেছে, তা সরকার গ্রহণ করেছে।
কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ জাপান সফরে থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এর আগে তিনি সমকালকে বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সমমর্যাদার স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হওয়ার আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সময়ে সাত কলেজ কীভাবে চলবে, সে বিষয়ে আমরা সরকারকে একটি সুপারিশমালা দিয়েছি।
গতকাল ঢাবি উপাচার্যকে দেওয়া চিঠিতে জানানো হয়, ইউজিসি এবং অধিভুক্ত কলেজের একজন অধ্যক্ষের নেতৃত্বে সাত কলেজের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এতে ঢাবি প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধি থাকবেন। দ্রুত ঢাবির সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলে বিষয়টি চূড়ান্ত করার জন্য উপাচার্যকে অনুরোধ জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সাত কলেজ হলো– ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারি কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন থাকা রাজধানীর এই বড় সাতটি কলেজকে ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করা হয়েছিল। প্রায় ৮ বছর ঢাবির অধীনে চলে সাতটি কলেজ। গত ২৭ জানুয়ারি অধিভুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয় ঢাবি। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে এখন সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর প্রক্রিয়া শুরু করেছে অর্ন্তবর্তী সরকার। তার আগ পর্যন্ত এই নজরদারি সংস্থার অধীনে চলবে সাত কলেজ।
কেমন হবে নজরদারি সংস্থার কাঠামো
নজরদারি সংস্থার প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাবির রেজিস্ট্রার দপ্তর মনোনীত কর্মকর্তা, পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর মনোনীত কর্মকর্তা, অর্থ ও হিসাব সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট শাখা মনোনীত প্রতিনিধি দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া সাত কলেজের অনলাইন ভর্তি কমিটির মাধ্যমে আবেদন সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালিত হবে। কলেজগুলোর শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে এই কাঠামো।
সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রশাসনিক জটিলতা ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নানা অসুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান শিক্ষা কার্যক্রমের অধীনে রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্বশীলতার সঙ্গে বর্তমান ব্যবস্থা চালু রাখবে।’
আরও বলা হয়েছে, ‘প্রস্তাবিত ব্যবস্থাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাযথ পর্ষদে (একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট) জরুরি ভিত্তিতে অনুমোদিত হতে হবে।’
উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সুপারিশ অনুসারে, ‘সাত কলেজের ভর্তি, পরীক্ষা ও অন্যান্য কার্যক্রম সংক্রান্ত তথ্য আদান প্রদানের জন্য স্ব স্ব কলেজের অধ্যক্ষের নিয়ন্ত্রণে একটি করে হেল্প ডেস্ক থাকবে; নিয়োগপ্রাপ্তির পরেই প্রস্তাবিত সাময়িক কাঠামোর পরিচালক জনবলের প্রস্তাবসহ কাঠামোর কার্যক্রমের অপারেশন ম্যানুয়েল প্রণয়ন করে সিন্ডিকেটে অনুমোদনের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দাখিল করবেন। কমিশন সমন্বিত কাঠামোর সার্বিক তত্ত্বাবধানসহ সময়ে সময়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে।’