টমেটো-করলা চাষ করে কৃষকের মুখে হাসি
Published: 20th, January 2025 GMT
কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় টমেটোর আবাদ বেড়েছে। অধিক লাভজনক হওয়ায় একই জমিতে টমেটো ও করলা চাষ কৃষকদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। এ পদ্ধতিতে এক বিঘা জমি আবাদ করতে খরচ হয় প্রায় ৭০ হাজার টাকা।
খরচ বাদে মৌসুমে প্রায় ৩ লাখ টাকা আয় করতে পারেন কৃষক।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এক সময় টমেটো শুধু শীতকালীন ফসল ছিল। এখন ফলছে সারাবছর। কৃষিবিজ্ঞানীরা জিন কালচারের মাধ্যমে এখন গ্রীষ্মকালীন টমেটোর জাত উদ্ভাবন করেছেন। গ্রীষ্মকালে টমেটোর জমির পরিমাণ থাকে অনেক কম। এ সময় উৎপাদনও কম হয়।
গত রোববার করিমগঞ্জ উপজেলার জয়কা ইউনিয়নের রামনগর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, বহু কৃষক তাদের জমিতে এবার টমেটো আবাদ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। কোনো কোনো গাছের একটি ছড়াতেই ৩০টি টমেটো ঝুলে আছে। কোনো কোনো চাষি জমিতে টমেটোর সঙ্গে
করলার আবাদ করেছেন। এ কারণে একই জমিতে মাচার ওপর করলা ও নিচে শোভা পাচ্ছে কাঁচা-পাকা টমেটো।
স্থানীয় কৃষক আবু হানিফ তুহিন জানালেন, তাঁর বাবা মারা যাওয়ার পর তিন বছর ধরে তিনি কৃষি কাজে নেমেছেন। এক বিঘা জমিতে ‘সাজ’ জাতের টমেটোর আবাদ করেছেন। দু-তিন দিন পরপর অন্তত ২০ মণ করে টমেটো আহরণ করতে পারেন। পুরো মৌসুমে অন্তত ৫০০ মণ টমেটো বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। বর্তমানে প্রতি কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। মৌসুমের শেষ দিকে দাম কমে যায়। তখন ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হয়।
তুহিন আরও বলেন, টমেটো বাগানের ওপর মাচা তৈরি করে তাতে করলার চারা উঠিয়ে দিয়েছেন। ফসল আহরণ করতে আরও কয়েকদিন লাগবে। টমেটো আর করলা আবাদে ৭০ হাজার টাকা খরচ করেছেন। খরচ বাদ দিয়ে ৩ লাখ টাকা লাভ থাকবে বলে আশা করছেন। অন্য কোনো ফসলে এত লাভ হয় না বলেও জানান তিনি।
একই গ্রামের কৃষক নাঈম মিয়া জানালেন, তিনি এবার ১০ শতাংশ জমিতে টমেটো ও করলার আবাদ করেছেন। ভালো ফলন হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে আবাদ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, কিশোরগঞ্জের ১৩ উপজেলায় এবার টমেটোর আবাদ হয়েছে ৮২০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে করিমগঞ্জে আবাদ হয়েছে ১২০ হেক্টর জমিতে। টমেটো ও করলার আবাদ কৃষকদের জন্য অত্যন্ত লাভজনক।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: করল র
এছাড়াও পড়ুন:
সেতুধস ঠেকাতে এখনই ব্যবস্থা নিন
সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদের তলদেশ থেকে বেপরোয়া ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু আহরণের ফলে সৃষ্ট পরিবেশগত ও অবকাঠামোগত সংকট আজ আর সম্ভাব্যতা মাত্র নয়, বরং এটি এক সুস্পষ্ট ও আসন্ন বিপর্যয়ের সতর্কসংকেত। নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহপথ এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় যে ধলাই নদ ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে, তার অস্তিত্বই আজ সংকটাপন্ন।
স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর লোভনীয় অভিযানে নদের তলদেশে চলমান অবৈধ খনন কার্যক্রম ধলাই সেতুর ভিত্তিমূল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এটি সরাসরি একটি রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো ধ্বংসের সম্ভাবনা নির্দেশ করে।
পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’র (ধরা) পেশ করা স্মারকলিপিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রশাসনিক নির্লিপ্ততা ও রাজনৈতিক প্রশ্রয়ের সুযোগে একটি সংগঠিত বালুখেকো চক্র নদীগ্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে। নদটি এখন কেবল প্রাকৃতিক সংস্থান লুণ্ঠনের ক্ষেত্র নয়, বরং এক বৃহত্তর অর্থে রাষ্ট্রীয় উদাসীনতার প্রতিচ্ছবিতে পরিণত হয়েছে।
নদতল থেকে বালু আহরণের ফলে নদের স্বাভাবিক প্রবাহে বিঘ্ন ঘটছে। এর ফলে নদতীর ভাঙন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস, প্রাণবৈচিত্র্যের বিনাশ, কৃষিজমির ক্ষয় এবং জনবসতিতে ভূপ্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধলাই সেতুর অধস্তনভূমি থেকে বালু উত্তোলনের কারণে কেবল পরিবেশগত ভারসাম্য নয়, বরং সরাসরি সেতুর স্থায়িত্বও হুমকির মুখে পড়েছে। একটি সেতু ধ্বংস হলে সেটিকে কেবল আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির বিষয় হিসেবে নয়; বরং তা মানবিক বিপর্যয়, আর্থসামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রকট নিদর্শন হিসেবেও দেখা উচিত।
এই সংকট নিরসনে অগ্রাধিকারভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। প্রথম ধলাই নদসহ সংশ্লিষ্ট নদীসমূহে সব ধরনের যান্ত্রিক বা অযান্ত্রিক বালু আহরণ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। খনন কার্যক্রমে নিয়োজিত গোষ্ঠীকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
এ ছাড়া অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়ার আগে বাধ্যতামূলকভাবে পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন সম্পাদন এবং তার ভিত্তিতে অনুমোদন প্রদানের বিধান কার্যকর করা উচিত। তদুপরি নদ রক্ষায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে একটি সামাজিক প্রতিরোধ কাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যা সচেতনতা ও স্বার্থরক্ষা—উভয় স্তরে কার্যকর হতে পারে।
ধলাই সেতু যদি ধসে পড়ে, তা কেবল একটি সেতুর পতন হবে না; তা হবে রাষ্ট্রের অবহেলা, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এবং নীতিনির্ধারকদের দায়হীনতার এক প্রামাণ্য দলিল। অতএব পরিবেশ ও অবকাঠামোর সুরক্ষার্থে অবিলম্বে কার্যকর, আন্তরিক ও দূরদর্শী রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ দরকার। অন্যথায় ধলাইয়ের ধারার সঙ্গে দেশের নৈতিক পতনের স্রোতও বেগবান হবে।