ভূমি, পোস্ট অফিসসহ অধিকাংশ জরুরি সরকারি পরিষেবা নেই। একমাত্র পাকা সড়কটিও জরাজীর্ণ। চিকিৎসার জন্য একটি ইউপি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকলেও নেই জনবল। ন্যূনতম নাগরিক সেবা না থাকায় ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর চরসাদিপুর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। 
পদ্মা নদীর তীরঘেঁষে ১৯৯৮ সালে গঠিত চরসাদিপুর ইউনিয়ন। সেখানে ৯টি গ্রামে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। তাদের জন্য রয়েছে একটি ইউপি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ছয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চারটি মাদ্রাসা, একটি এতিমখানা ও চারটি বেসরকারি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এটি উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১৭ এবং জেলা শহর থেকে ২৯ কিলোমিটার দূরে। উত্তর ও পশ্চিমে রয়েছে পাবনার হেমায়েতপুর ও দৌগাছি ইউনিয়ন। 
পদ্মানদী পাড়ি দিয়ে জেলা ও উপজেলা শহরে চলাচল করেন চরসাদিপুরের বাসিন্দারা। নদীর কারণে নেই উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। বর্ষা মৌসুমে যাতায়াতের একমাত্র বাহন ইঞ্জিনচালিত নৌকা। আর শুষ্ক মৌসুমে নদীর অধিকাংশ জুড়ে চর জাগে। তখন ইজিবাইক, মোটরসাইকেল এবং হেঁটে যাতায়াত করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এক যুগ ধরে সংস্কারের অভাবে চলাচলের একমাত্র পাকা সড়কটিও খানাখন্দে ভরা। লেনদেন ও সঞ্চয়ের জন্য অন্যান্য ইউনিয়নে সরকারি- বেসরকারি একাধিক ব্যাংক থাকলেও চরসাদিপুরে নেই একটিও। দুর্গম এলাকা হলেও নেই পুলিশ ক্যাম্প। 
গত রোববার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ছয় কিলোমিটার প্রশস্ত পদ্মা নদীর চার কিলোমিটারজুড়ে চর জেগেছে। মানুষ দুই কিলোমিটার নদী নৌকায় এবং চরে ইজিবাইক, মোটরসাইকেল ও হেঁটে চলাচল করছেন। ফসলের মাঠে গড়ে উঠেছে অংসখ্য ইটভাটা। ভাটায় আইন ভেঙে পোড়ানে হচ্ছে কাঠ। কৃষিজমি ও নদীর তীর থেকে কাটা হচ্ছে মাটি ও বালু। ইউনিয়নে যোগাযোগের একমাত্র পাকা সড়কটিও খানাখন্দে ভরা। এতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে মানুষ। 
৩৫ বছর ধরে নদীতে মাঝির কাজ করেন আলাই শেখ। তিনি বলেন, চরসাদিপুরের 
মানুষ বর্ষা মৌসুমে শুধু নৌকা এবং শুষ্ক মৌসুমে নৌকা ও বিভিন্ন যানবাহনে নদী পার হয়ে চলাচল করে। এতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়।
‘শুনি সরকার কতকিছু বরাদ্দ দেয়, কিছুই চরবাসী পায় না। সব থাকে যায় নদীর ওপারে। কোনো সেবাই পার হয় না নদী। ৩০ হাজার মানুষের ভোগান্তি বাড়িয়েছে এক পদ্মা।’ আক্ষেপ করে বলছিলেন সাদিপুর বাজারের পল্লি চিকিৎসক শহিদুল আলম। 
ইজিবাইক চালক কোমল হোসেন জানান, সাদিপুরের একমাত্র পাকা সড়কটি ইটভাটার গাড়ির দখলে। খানাখন্দে ভরা সড়কে প্রায়ই গাড়ি উল্টে যায়। সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান তিনি। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র নদীর ওপারে হওয়ায় সময়মতো কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারে না শিক্ষার্থীরা। ভাড়া বাসায় থেকে পরীক্ষা দেওয়া ব্যয়বহুল। সে জন্য অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে অনেক শিক্ষার্থী পাবনার স্কুলে চলে যায়।
চরসাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.

মেছের আলী বলেন, জনস্বার্থে তাঁর ইউনিয়নে ব্যাংক, ক্যাম্প, পোস্ট ও ভূমি অফিসের জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে একাধিকবার জানিয়েছি। কোনো ফল পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি। 
চরসাদিপুরবাসীর দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে ইউএনও এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, পদ্মার দুর্গম চরে অবস্থিত ইউনিয়নটি। নানামুখী সুবিধা থেকে বঞ্চিত সেখানকার মানুষ। জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি লিখিতভাবে জানালে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: একম ত র প ক র একম ত র র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ, কয়েক কিলোমিটার জুড়ে যানজট

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নের গোলড়া গ্রামের শত শত বাসিন্দারা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। দীর্ঘদিনের পুরোনো একটি সড়ক পুনরুদ্ধারের দাবিতে তারা এ কর্মসূচি পালন করছেন। এতে মহাসড়কের দুই পাশে যানচলাচল বন্ধ হয়ে কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে আটকে পড়া যানবাহন গুলো দীর্ঘ সময় বসে থাকার পর বিকল্প সড়ক গোলড়া হয়ে সাটুরিয়া দিয়ে চলাচল করলে সাটুরিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সৃষ্টি হয় যানজটের। এতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন বাসের যাত্রী ও সাধারণ মানুষ। তবে দফায় দফায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে প্রশাসনের লোকজন বসলেও তারা সড়ক চালুর দাবিতে অনড় রয়েছেন।

বুধবার সকাল ১১টার দিকে গোলড়া গ্রামের মানুষ মহাসড়কে অবস্থান নেন এবং পরে অবরোধ গড়ে তোলেন। তাদের অভিযোগ, সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নের গোলড়া গ্রামের একটি শতবর্ষী সড়ক স্থানীয় দুটি শিল্প প্রতিষ্ঠান তারাসিমা অ্যাপারেলস লিমিটেড ও পেয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড বন্ধ করে দেয়। ফলে তাদের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘদিনের সমস্যা নিয়ে দুই শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললেও তারা কর্ণপাত করেনি বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীয়দের দাবি, সড়কটি পাকা দেওয়াল দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ায় গোড়লা গ্রামের স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা কয়েক কিলোমিটার ঘুরে স্কুল কলেজে যেতে হয়। এছাড়া কৃষকের উৎপাদিত ফসল বেচাকেনায় অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হয়। শতবর্ষী সড়কটি দখল করে দুই শিল্প প্রতিষ্ঠান তাদের স্বার্থে বন্ধ করে দিয়ে এলাকার মানুষের চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

অবরোধকারীদের দাবি, আওয়ামী সরকারের সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের যোগসাজশে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কোম্পানি দুটি রাতারাতি মানুষের চলাচল সড়কে পাকা দেওয়াল গড়ে তুলে। ফলে গ্রামবাসী তাদের ন্যায্য পথচলার অধিকার হারিয়েছে। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, যতক্ষণ না বন্ধ হওয়া সড়কটি পুনরায় খুলে দেওয়া হবে, ততক্ষণ তারা সড়ক ছাড়বেন না। 

এদিকে, অবরোধের কারণে মহাসড়কে আটকে পড়েছে দূরপাল্লার বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। 

সাটুরিয়া থানার ওসি শাহিনুল ইসলাম জানান, গ্রামবাসীরা সকাল ১১টা থেকে মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছে, যার ফলে দুইপাশে যানবাহনের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়েছে। তবে প্রশাসন, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ও গ্রামবাসীদের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা চলছে। তিনি আশা করছেন, দ্রুত একটি সমাধান বেরিয়ে আসবে।

এ বিষয়ে দুই শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ, কয়েক কিলোমিটার জুড়ে যানজট