মিয়ানমারের রাখাইনভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির হস্তে বাংলাদেশমুখী চারিটি পণ্যবাহী জাহাজ আটক হইবার ঘটনা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। সোমবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, ইয়াংগুন হইতে পণ্য লইয়া টেকনাফে বাংলাদেশ জলসীমায় প্রবেশের পূর্বেই আরাকান আর্মির সদস্যরা নাবিকগণকে জিম্মি করিয়া জাহাজগুলি বৃহস্পতি ও শুক্রবার মংডুতে লইয়া যায়। যদিও উভয় পক্ষের ‘সমঝোতায়’ জাহাজগুলি পরবর্তী সময়ে টেকনাফ বন্দরে ভিড়িয়াছে; ঘটনাকে সীমান্ত বাণিজ্যের প্রশ্নে সতর্ক সংকেত বলিয়া আমরা মনে করি।
আমরা জানি, ইতোমধ্যে রাখাইনের সিংহভাগ এলাকা আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে আসায় রাজ্যটি কার্যত মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তচ্যুত হইয়াছে। বাংলাদেশের সহিত মিয়ানমারের প্রায় সম্পূর্ণ সীমান্তই সাম্প্রতিক সময়ে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। রাখাইনে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পরপরই তাহারা নাফ নদের মিয়ানমার অংশে নৌ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করিলে উহার প্রভাব টেকনাফকেন্দ্রিক সীমান্ত বাণিজ্যেও পড়িয়াছে। প্রতিবেদন অনুসারে, গত ৮ ডিসেম্বর সশস্ত্র গোষ্ঠীটির মংডু টাউনশিপ দখলের পর এই প্রথম কোনো জাহাজ মিয়ানমার হইতে পণ্য লইয়া বাংলাদেশে আসিতেছিল। সমস্যাটির স্থায়ী সমাধান না হইলে এই পথে বাংলাদেশের বাণিজ্য অনিশ্চিত ও ব্যয়সাপেক্ষ হইয়া দাঁড়াইবে। স্থায়ী সমাধান নিঃসন্দেহে সহজ নহে।
আমরা মনে করি, এই নিকটতম প্রতিবেশীর সহিত ব্যবসা-বাণিজ্যকে গুরুত্ব দিলে হয়তো ইহার উদ্ভবই হইত না। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মতে, টেকনাফের জলসীমানা দিয়া পণ্য পরিবহনের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট মাশুল আদায় করে, যাহা নদী খনন বা ব্যবস্থাপনাকার্যে ব্যয় করিবার কথা। তবে টেকনাফ বন্দর চালু হইবার পর অদ্যাবধি নাফ নদের বাংলাদেশ অংশ খনন করা হয় নাই। খনন করা হইলে নাফ নদের মিয়ানমার অংশ হইয়া জাহাজ ও ট্রলার চলাচল করিতে হইত না। আরাকান আর্মিও তখন জাহাজ আটকের সুযোগ পাইত না। উপরন্তু রাখাইন রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামরিক পরিস্থিতিতে যখন পরিবর্তন ঘটিতেছিল, তখনই আমরা অত্র সম্পাদকীয় স্তম্ভে পরামর্শ দিয়াছিলাম, মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি আরাকান আর্মির সহিত যোগাযোগ রক্ষা করা উচিত। বিশ্বে এমন নজির বিরল নহে, রাষ্ট্রের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রবহির্ভূত শক্তির সহিতও অনানুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্কের চর্চা চলিয়া থাকে। খোদ রাখাইনেই আরাকান আর্মির সহিত মিয়ানমারের অপর প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির এইরূপ উদ্যোগ বিদ্যমান।
দুর্ভাগ্যবশত, বিগত সরকারের ন্যায় বর্তমান সরকারও এই বিষয়ে কর্ণপাত করে নাই। যদি অন্যথা হইত, তাহা হইলে আলোচ্য সমস্যার হয়তো সৃষ্টিই হইত না। হইলেও সমাধান সহজ হইত। এই প্রশ্নও তোলা যায়, বিকল্প ব্যবস্থার অনুপস্থিতিতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত না করিয়া মিয়ানমার হইতে পণ্য আমদানিরই বা হেতু কী? নিদেনপক্ষে আরাকান আর্মির পক্ষ হইতে যে কোনো প্রকার ‘অনাপত্তি’ তো গ্রহণ করা যাইত। এই দিক হইতে সমস্যার জন্য যদি পণ্য আমদানির অনুমতি দানকারী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ঔদাসীন্যকে দায়ী করা হয়, তাহা হইলে নিশ্চয় বাড়াবাড়ি হইবে না।
স্বীকার্য, টাকার অঙ্কে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ বিশাল নহে। কিন্তু অপর দিক হইতে আসে বিভিন্ন প্রকার কাষ্ঠ, হিমায়িত মৎস্য, শুষ্ক সুপারি, পেঁয়াজ, আদা, শুঁটকি, নারিকেলসহ প্রয়োজনীয় পণ্য, যাহার আমদানি ব্যয়ও অপেক্ষাকৃত কম। বাংলাদেশও আলু, প্লাস্টিক পণ্য, সিমেন্ট, তৈরি পোশাকসহ বহু পণ্য মিয়ানমারে রপ্তানি করিয়া থাকে। অতএব, ভবিষ্যৎ আন্তঃদেশীয় মসৃণ বাণিজ্যের স্বার্থে অবিলম্বে নাফ নদের খনন যদ্রূপ শুরু করা জরুরি, তদ্রূপ আরাকান আর্মির সহিত দ্রুত সম্পর্ক স্থাপনও সময়ের দাবি। পরিস্থিতি বলিতেছে, রাখাইনের উপর আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণের শীঘ্রই অবসান হইবে না; বরং বৃদ্ধি পাইতে পারে। আমাদের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত সুরক্ষিত রাখিতে হইলেও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ‘বাইফোকাল ডিপ্লোমেসি’ তথা নিকট ও দূরবর্তী পক্ষগুলির সহিত আলোচনা ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আর ক ন আর ম র সরক র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
গৃহকর নিয়ে প্রশাসকের সঙ্গে বাসিন্দাদের হট্টগোল
গৃহকর (হোল্ডিং ট্যাক্স) ধার্যের বিষয়টি নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের সঙ্গে হট্টগোল করেছেন অঞ্চল-৭-এর আওতাধীন বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরে উত্তরা কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত গণশুনানির শেষের দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গণশুনানি শেষ করে ওই অঞ্চলের চারটি ওয়ার্ডের প্রতিনিধিদের নিয়ে অঞ্চল-৭-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষে আলোচনায় বসেন প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। সেখানে গৃহকর কীভাবে আদায় হবে, কী ছাড় পাওয়া যাবে—এসব বিষয়ে বাসিন্দাদের বুঝিয়ে বলা হয়। হট্টগোলকারীরা বিষয়টি বুঝতে পেরে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য প্রশাসকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।
গণশুনানিতে দেখা যায়, নাগরিক সেবা নিয়ে চারটি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা বিভিন্ন সংকট, সমস্যা ও অভিযোগ জানান। তাঁদের দাবি, তাঁরা ২০১৮ সাল থেকে নয়, ২০২৪ সাল থেকে গৃহকর পরিশোধ করবেন। প্রশাসক তাঁর বক্তব্যে বাসিন্দাদের বলা অভিযোগগুলোর সমাধান, পদক্ষেপ ও করপোরেশনের উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেন। বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে তিনি হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় নিয়ে বাসিন্দাদের দাবিদাওয়ার বিষয়ে কথা বলছিলেন।
প্রশাসকের বক্তব্য ছিল, আইন অনুযায়ী ২০১৮ সাল থেকেই গৃহকর পরিশোধ করতে হবে। তবে গৃহকরের সঙ্গে পরিচ্ছন্নতা ও সড়ক বাতি বাবদ যে কর আদায় করা হয়, সেই ৫ শতাংশ কর আপাতত আদায় বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া বিধিমালা অনুযায়ী গৃহকরে একজন গ্রাহক যেসব ছাড় পান, সেসব ছাড়ের ব্যবস্থাও করা হবে বলেও জানান। সেই হিসেবে ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে যে টাকা কর আসবে, ২০১৮ থেকে একই পরিমাণ কর দিতে হবে।
কিন্তু প্রশাসকের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত হননি শুনানিতে অংশ নেওয়া বাসিন্দারা। তাঁরা চিৎকার-চেঁচামেচি করে এর প্রতিবাদ করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে সামনের সারিতে বসা কিছু ব্যক্তি উত্তেজিত হয়ে মঞ্চে থাকা প্রশাসকের সামনে গিয়ে বলতে থাকেন, তাঁরা এই সিদ্ধান্ত মানেন না। তাঁরা ২০২৪ সাল থেকেই কর দেবেন।
মিনিট পাঁচেক এমন হট্টগোল আর চেঁচামেচি চলে। ঢাকা উত্তর সিটির ওই অঞ্চলের কর্মকর্তা ও স্থানীয় বিএনপির নেতারা উত্তেজিত হওয়া ব্যক্তিদের শান্ত করেন।
ঢাকা উত্তর সিটির ওই অঞ্চলের কর্মকর্তা ও স্থানীয় বিএনপির নেতারা উত্তেজিত ব্যক্তিদের শান্ত করার চেষ্টা করেন