Samakal:
2025-03-03@17:03:48 GMT

প্রয়োজন ‘বাইফোকাল ডিপ্লোমেসি’

Published: 20th, January 2025 GMT

প্রয়োজন ‘বাইফোকাল ডিপ্লোমেসি’

মিয়ানমারের রাখাইনভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির হস্তে বাংলাদেশমুখী চারিটি পণ্যবাহী জাহাজ আটক হইবার ঘটনা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। সোমবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, ইয়াংগুন হইতে পণ্য লইয়া টেকনাফে বাংলাদেশ জলসীমায় প্রবেশের পূর্বেই আরাকান আর্মির সদস্যরা নাবিকগণকে জিম্মি করিয়া জাহাজগুলি বৃহস্পতি ও শুক্রবার মংডুতে লইয়া যায়। যদিও উভয় পক্ষের ‘সমঝোতায়’ জাহাজগুলি পরবর্তী সময়ে টেকনাফ বন্দরে ভিড়িয়াছে; ঘটনাকে সীমান্ত বাণিজ্যের প্রশ্নে সতর্ক সংকেত বলিয়া আমরা মনে করি। 

আমরা জানি, ইতোমধ্যে রাখাইনের সিংহভাগ এলাকা আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে আসায় রাজ্যটি কার্যত মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তচ্যুত হইয়াছে। বাংলাদেশের সহিত মিয়ানমারের প্রায় সম্পূর্ণ সীমান্তই সাম্প্রতিক সময়ে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। রাখাইনে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পরপরই তাহারা নাফ নদের মিয়ানমার অংশে নৌ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করিলে উহার প্রভাব টেকনাফকেন্দ্রিক সীমান্ত বাণিজ্যেও পড়িয়াছে। প্রতিবেদন অনুসারে, গত ৮ ডিসেম্বর সশস্ত্র গোষ্ঠীটির মংডু টাউনশিপ দখলের পর এই প্রথম কোনো জাহাজ মিয়ানমার হইতে পণ্য লইয়া বাংলাদেশে আসিতেছিল। সমস্যাটির স্থায়ী সমাধান না হইলে এই পথে বাংলাদেশের বাণিজ্য অনিশ্চিত ও ব্যয়সাপেক্ষ হইয়া দাঁড়াইবে। স্থায়ী সমাধান নিঃসন্দেহে সহজ নহে। 

আমরা মনে করি, এই নিকটতম প্রতিবেশীর সহিত ব্যবসা-বাণিজ্যকে গুরুত্ব দিলে হয়তো ইহার উদ্ভবই হইত না। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মতে, টেকনাফের জলসীমানা দিয়া পণ্য পরিবহনের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট মাশুল আদায় করে, যাহা নদী খনন বা ব্যবস্থাপনাকার্যে ব্যয় করিবার কথা। তবে টেকনাফ বন্দর চালু হইবার পর অদ্যাবধি নাফ নদের বাংলাদেশ অংশ খনন করা হয় নাই। খনন করা হইলে নাফ নদের মিয়ানমার অংশ হইয়া জাহাজ ও ট্রলার চলাচল করিতে হইত না। আরাকান আর্মিও তখন জাহাজ আটকের সুযোগ পাইত না। উপরন্তু রাখাইন রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামরিক পরিস্থিতিতে যখন পরিবর্তন ঘটিতেছিল, তখনই আমরা অত্র সম্পাদকীয় স্তম্ভে পরামর্শ দিয়াছিলাম, মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি আরাকান আর্মির সহিত যোগাযোগ রক্ষা করা উচিত। বিশ্বে এমন নজির বিরল নহে, রাষ্ট্রের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রবহির্ভূত শক্তির সহিতও অনানুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্কের চর্চা চলিয়া থাকে। খোদ রাখাইনেই আরাকান আর্মির সহিত মিয়ানমারের অপর প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির এইরূপ উদ্যোগ বিদ্যমান। 

দুর্ভাগ্যবশত, বিগত সরকারের ন্যায় বর্তমান সরকারও এই বিষয়ে কর্ণপাত করে নাই। যদি অন্যথা হইত, তাহা হইলে আলোচ্য সমস্যার হয়তো সৃষ্টিই হইত না। হইলেও সমাধান সহজ হইত। এই প্রশ্নও তোলা যায়, বিকল্প ব্যবস্থার অনুপস্থিতিতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত না করিয়া মিয়ানমার হইতে পণ্য আমদানিরই বা হেতু কী? নিদেনপক্ষে আরাকান আর্মির পক্ষ হইতে যে কোনো প্রকার ‘অনাপত্তি’ তো গ্রহণ করা যাইত। এই দিক হইতে সমস্যার জন্য যদি পণ্য আমদানির অনুমতি দানকারী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ঔদাসীন্যকে দায়ী করা হয়, তাহা হইলে নিশ্চয় বাড়াবাড়ি হইবে না।
স্বীকার্য, টাকার অঙ্কে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ বিশাল নহে। কিন্তু অপর দিক হইতে আসে বিভিন্ন প্রকার কাষ্ঠ, হিমায়িত মৎস্য, শুষ্ক সুপারি, পেঁয়াজ, আদা, শুঁটকি, নারিকেলসহ প্রয়োজনীয় পণ্য, যাহার আমদানি ব্যয়ও অপেক্ষাকৃত কম। বাংলাদেশও আলু, প্লাস্টিক পণ্য, সিমেন্ট, তৈরি পোশাকসহ বহু পণ্য মিয়ানমারে রপ্তানি করিয়া থাকে। অতএব, ভবিষ্যৎ আন্তঃদেশীয় মসৃণ বাণিজ্যের স্বার্থে অবিলম্বে নাফ নদের খনন যদ্রূপ শুরু করা জরুরি, তদ্রূপ আরাকান আর্মির সহিত দ্রুত সম্পর্ক স্থাপনও সময়ের দাবি। পরিস্থিতি বলিতেছে, রাখাইনের উপর আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণের শীঘ্রই অবসান হইবে না; বরং বৃদ্ধি পাইতে পারে। আমাদের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত সুরক্ষিত রাখিতে হইলেও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ‘বাইফোকাল ডিপ্লোমেসি’ তথা নিকট ও দূরবর্তী পক্ষগুলির সহিত আলোচনা ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখা গুরুত্বপূর্ণ। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আর ক ন আর ম র সরক র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ায় নারী হাজতখানায় পরিবারের সঙ্গে পুরুষ আসামির সাক্ষাৎ

বগুড়ায় আলোচিত ১৭ মামলার আসামি তুফান সরকারকে আদালতের নারী হাজতখানায় পরিবারের পাঁচ সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে আদালত পুলিশের ২ সদস্যকে প্রত্যাহার ও ৫ সাক্ষাত প্রার্থীকে ৫৪ ধারায় চালান দেওয়া হয়েছে।

সোমবার বিকেলে বগুড়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যাহার করা পুলিশের ২ সদস্য হলেন- সহকারী টাউন উপ-পরিদর্শক (এটিএসআই) জয়নাল আবেদিন ও নারী কনস্টেবল ইকসানা খাতুন।

জানা যায়, তুফান সরকার বগুড়া শহর যুব শ্রমিকলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তিনি বগুড়া শহরের চকসুত্রাপুর এলাকার মজিবর সরকারের ছেলে। তিনি হত্যা, মাদক, ধর্ষণ, ছিনতাইসহ ১৭ মামলার আসামি।

জানা যায়, সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দ্বিতীয় তলায় নারী হাজতখানার দরজা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। ভেতরে তুফান সরকার, তার স্ত্রী, ছোট বোন, শাশুড়ি, স্ত্রীর বড় বোন এবং একজন আইনজীবীর সহকারী মিলে গল্প করছিলেন। পরে নারী হাজতখানায় পুরুষ আসামি ঢুকার বিষয়টি জানাজানি হলে আদালত চত্বরে হৈ চৈ পড়ে যায়। পরে দ্রুত তুফান সরকারকে প্রিজন ভ্যানে কারাগারে পাঠানো হয়।

এসময় তুফান সরকারের সঙ্গে দেখা করতে আসা নারী হাজত খানা থেকে ওই ৫ জন সরে যান। পরে তাদের আদালত চত্বর থেকে আটক করে ৫৪ ধারায় চালান দেওয়া হয়।

আটক ৫ জন হলেন, তুফানের শাশুড়ি তাসলিমা বেগম, তুফান সরকারের স্ত্রী আশা বেগম, শ্যালিকা ফেরদৌসি বেগম, শ্যালক নয়ন, তুফানের আইনজীবীর সহকারী হারুনুর রশিদ।

বগুড়া আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, সকালে তুফান সরকারকে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত একটি মামলায় আদালতে হাজিরার জন্য কারাগার থেকে আনা হয়। কারাগার থেকে আনা অন্য সব হাজতিকে দুপুরের মধ্যেই প্রিজন ভ্যানে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু বাদ পড়ে তুফান সরকার। হাজতখানার চাবি এটিএসআই জয়নাল আবেদিনের কাছে থাকে। তুফান সরকারকে কারাগারে না পাঠিয়ে তাকে নারী হাজতখানায় পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাত করার সুযোগ করে দেয় জয়নাল আবেদিন। আদালতের সবার অগোচরে ঘটনাটি ঘটে।

বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা বলেন, পুরুষ আসামিকে নারী হাজত খানায় পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগে এটিএসআই জয়নাল আবেদিন ও এক নারী কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।  পুলিশের আরও যাদের গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে এক কলেজ ছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে তুফান সরকারের বিরুদ্ধে। পরে শালিস ডেকে ভুক্তভোগী নারী ও তার মা'কে দোষী উল্লেখ করে মারধর করে এবং মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে দেয় তুফান সরকার। সেই ঘটনায় দেশ জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হলে তুফান সরকার গ্রেপ্তার হয়। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ