পুলিশ, র‌্যাব ও আনসারের নতুন পোশাকের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তিন বাহিনীর ইউনিফর্ম বদল নিয়ে সরকারের যুক্তি– বাহিনীগুলোকে ঢেলে সাজাতে প্রতীকী অর্থে এই পরিবর্তন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেছেন, বাহিনীর সদস্যদের মন-মানসিকতা পরিবর্তন করা জরুরি। সে লক্ষ্যে পোশাক পরিবর্তন করা হচ্ছে। শুধু পোশাক নয়; বাহিনীকে জনবান্ধব করতে হলে প্রশিক্ষণেও পরিবর্তন আনতে চায় সরকার। পুলিশের নতুন পোশাক হবে আয়রন বা লোহার রঙের; র‍্যাবের হবে অলিভ বা জলপাই আর আনসারের পোশাক হবে গোল্ডেন হুইট বা সোনালি গমের রঙের।

বলাবাহুল্য, এই তিনটি বাহিনীর মধ্যে জনতার সবচেয়ে কাছাকাছি থাকে পুলিশ। পুলিশের পোশাক পরিবর্তন নিয়ে দাবি ওঠে মূলত জুলাই-আগস্টে বাহিনীটির বিতর্কিত ভূমিকা নিয়ে। ওই আন্দোলনে দুই হাজারের বেশি ছাত্র-জনতা শহীদ হয়। আহত হয় ২০ হাজারের বেশি মানুষ। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী গোষ্ঠীর সঙ্গে ছাত্র-জনতার এই লড়াইয়ে স্বাভাবিকভাবেই সরকারের পক্ষ নিতে হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন বাহিনী পুলিশকে। ফলে লড়াইয়ে জয়ী ছাত্র-জনতা পুলিশকে পরাজিত শক্তির দোসর হিসেবেই ভাবতে শুরু করে। ফলস্বরূপ ৫ আগস্টের পর প্রায় এক সপ্তাহ কোনো পুলিশ সদস্যকে মাঠে দেখা যায়নি। থানাগুলোয় ঘুঘু চরেছে। কিন্তু এই এক সপ্তাহে জনগণও ভাবতে বাধ্য হয়েছে– একটি পুলিশবিহীন রাষ্ট্র কতটা অনিরাপদ। তা ছাড়া একটি বাহিনীর সব সদস্য তো আর খারাপ হতে পারে না। ফলে জনগণ ফ্যাসিস্ট আমলের চিহ্নিত সুবিধাভোগী অফিসার ছাড়া অন্যদের বিষয়ে সহজ করে ভাবতে থাকে। সরকারের পক্ষ থেকেও পুলিশ বাহিনীকে কাজে ফেরানোর চেষ্টা শুরু করে পুলিশ। তখন বাহিনীর ভেতর থেকেই অনেকে আপত্তি জানায়– ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত পোশাকে কাজ করতে তারা চান না। বিষয়টি সরকার ও জনগণ প্রতীকী পরিবর্তন হিসেবে নিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের তৎকালীন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.

) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছিলেন, পুলিশের মনোবল ফেরাতে তাদের পোশাক ও লোগো পরিবর্তন করা হবে।

সেই সময় তিনি বলেন, ‘অনেকের মন ভেঙে গেছে। এই ইউনিফর্ম পরে পুলিশ আর কাজ করতে চাইছে না। খুব দ্রুতই তা পরিবর্তন করা হবে। এসব বিষয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পুলিশ কমিশন হওয়া উচিত। সেই কমিশনের অধীনে পুলিশ পরিচালিত হবে। তারা কোনো রাজনৈতিক দলের অধীনে থাকবে না। পুলিশকে যেন রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার না করা হয়– সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’

অবশেষে সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো। নতুন পোশাক নিয়ে ফ্যাশন সচেতন বা সৌন্দর্সপিপাসুদের নানা অভিমত থাকতে পারে। কিন্তু সচেতন নাগরিকের দৃষ্টি অন্যখানে। তারা মনে করে, পোশাকের রং বা ডিজাইন যা-ই হোক, বাহিনীর গুণগত পরিবর্তন যেন নিশ্চিত হয়। বিগত সময়ের বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয়। 

রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় গেলে পুলিশকে লাঠিয়াল বাহিনী ভাবতে শুরু করে। বিরোধী দলে থাকলে প্রতিপক্ষ ভাবে। এই দুই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। পুলিশকে রাষ্ট্রের জননিরাপত্তায় কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে জনগণের উচিত সঠিক তথ্য দিয়ে এবং আইনশৃঙ্খলা নীতি মেনে পুলিশকে দায়িত্ব পালন ও তদন্তে সহায়তা করা।
পুলিশে অতিউৎসাহী কিছু সদস্য থাকে। তারা বিভিন্ন সময় আন্দোলন দমাতে কমান্ডের বাইরে গিয়ে অপেশাদার আচরণ করে। এসব সদস্যকে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশ রাষ্ট্রের বাহিনী। তারা কোনো ব্যক্তির শিষ্য বা দলের কর্মী নয়– এটি তাদের মাথায় রেখে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ঔপনিবেশিক খাজনা আদায়ের লাঠিয়াল বাহিনী থেকে আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্রের সেবকের ভূমিকায় পুলিশকে সামনে থেকে কাজ করতে হবে। পুলিশে এখন উচ্চশিক্ষিত ছেলেমেয়ে যোগ দিচ্ছে। এসব তরুণ নিজেরাও পরিবর্তনের সারথি। নতুন একটি পুলিশ বাহিনী গড়তে এই তরুণ তুর্কিরা বড় শক্তি হতে পারে।

ফ্যাসিবাদের পতনের পর দেশে অন্তত এক সপ্তাহ পুলিশ ছিল না। আমরা তখন টের পেয়েছি, নগরবাসীর একটি নিশ্চিন্ত মাথায় এক পশলা ঘুমের জন্য পুলিশ কত কাজ করে! সঙ্গে সঙ্গে এটিও প্রমাণিত– ওই সময়ের মধ্যে আমরা যা কল্পনা করেছিলাম, তার চেয়ে অনেক কম দুর্ঘটনা ঘটেছে। ফলে এই বাংলাদেশ নিয়ে হতাশাবাদীরা যতই হতাশা প্রকাশ করুক, আমরা এখনও আশা ছাড়তে চাই না। বাংলাদেশ জিতবেই। সে জয়ে জনগণের সবচেয়ে কাছের বাহিনী হিসেবে পুলিশ সম্মুখসারির যোদ্ধারূপে ভূমিকা রাখবে। তাই বলতে চাই– পোশাকের রং যেমন হোক, কর্ম হোক ভালো। একই কথা আমরা বলতে চাই র‌্যাব ও আনসার বাহিনীর ক্ষেত্রেও।
 
অনি আতিকুর রহমান: সহসম্পাদক, সমকাল
    atikbanglaiu@gmail.com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আইন ছ ত র জনত সরক র র ক জ কর মন ত র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

৫২ জন ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে ওসমান ও তার দোসররা : সাখাওয়াত

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেছেন, আপনারা সকলে বর্তমানে ভালো আছেন। বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও আমাদের দলের পক্ষে সবাইকে জানাই অগ্রিম ঈদ মোবারক।

আজকে সাবেক কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু মাধ্যমে আপনাদের মাধ্যমে চারদিনের কর্মসূচী পালনে উদ্বোধন করা হচ্ছে। আপনারা যেন সুন্দর ভাবে ঈদ পালন করতে পারেন, সেটা জন্য তিনি এত কিছু আপনাদের দিচ্ছেন। আমরা চেয়েছিলাম আপনাদের নিয়ন্ত্রণ দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হোক। সেটা করতে পেরেছি বর্তমানে সময়ে।

বিগত আওয়ামীলীগ সরকার জনগণের টাকা লুট করে বিদেশে লক্ষ লক্ষ ডলার পাচার করেছে। এই যে ৫ আগষ্ট ছাত্র আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জের ৫২ জন ছাত্র-জনতাকে শামীম ওসমান ও তার দোসররা হত্যা করেছে। শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান তাদের ছেলে ভাতিজারা টাকা লুট করে পালিয়েছে। তারেক রহমান বলেছেন, জনগণের পাশে বিএনপি সকল নেতা-কর্মীদের থাকতে নিদের্শনা দিয়েছেন।

শুক্রবার (২৮ মার্চ) পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নাসিক ১২নং ওয়ার্ড সাবেক কাউন্সিলর কার্যালয়ে বিত্তবানদের সহযোগিতায় কর্মহারা ও অস্বচ্ছল পরিবারের মাঝে ঈদ খাদ্য সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১২নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের পরিচালক হানিফ সরদার, মহানগর বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার হোসেন আনু, আহবায়ক কমিটির সদস্য মাসুদ রানা, ফারুক আহম্মেদ রিপন, মাহবুব উল্লাহ তপন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবকদলের আহবায়ক শাখাওয়াত ইসলাম রানা, যুবদল নেতা সরকার হুমায়ূণ ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর কৃষকদলের সভাপতি এনামুল হক স্বপন প্রমুখ।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেছেন, আগামী দুইদিন পবিত্র ঈদ। আপনাদের সকলকে জানাই অগ্রিম ঈদ মোবারাক। সাবেক কাউন্সিলর শকুর মাধ্যমে আপনাদের ঈদ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগের দোসররা পালিয়ে গিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জের ফ্যাসি গডফাদার সেলিম, শামীম, আজমির ও অয়ন ওসমানের সাথে আতাঁত করা যাবে না। পবিত্র মাহে রমজানে বলছি, যেই আতাঁত করবে নারায়ণগঞ্জে আবারো তাদেরকে স্টাফলিষ্ট করার চেষ্টা করবেন, আল্লাহ তাদের যেন ধ্বংস করে দিবে। ওসমান পরিবারকে কোন ছাড় দেয়া যাবে না। বিশ্বের কাছে নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাস পরিচয় করেছে সেই ওসমানদের কোন ক্ষমা করা যাবে না।

আগামী দিনে এমপি মেয়র ও কাউন্সিলর কে হবেন- মহান আল্লাহ ও তারেক রহমান ছাড়া বলতে পারবে না। জনগণ যাকে দিয়ে উপকৃত হয় তাদেরকে জনপ্রতিনিধি করা হবে। আপোষহীণ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জন্য সকলের দোয়া চাই। তিনি আপনাদের সেবা করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। এদিকে বাংলাদেশ এসে আপনাদের রায় নিয়ে জনগণের মুখে হাসি ফোটানো জন্য ছটফট করছেন তারেক রহমান।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১২নং ওয়ার্ড সাবেক কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু বলেছেন, ঈদের খাদ্য সামগ্রী বিতরন করে যাচ্ছি ২২ বছর যাবৎ। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চারদিন ব্যাপী প্রায় ৫ হাজার অসহায় ও অস্বচ্ছল পরিবারকে খাদ্য বিতরণ করা হবে। এরপর শাড়ী লুঙ্গি ও কাপড় বিতরণ করা হবে বিত্তবানদের সহযোগিতায়। আজকে আমি অনেক খুশি।

দেশ আবার নতুন স্বাধীনতা পাওয়ার প্রথম ঈদ পালন করতে যাচ্ছে। এর আগে ৮ হাজার পরিবারের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরন করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন আমাকে খুশি করার আগে মানুষকে খুশি করাও। আমার ওয়ার্ডের ডাটাবেজ করা আছে প্রায় ১১ হাজার মানুষ অস্বচ্ছল রয়েছে। তাদের মধ্যে দিতে পারলে আমি মহান আল্লাহ দরবারে কাছে খুশি হবো।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঈদের দিন ঐক্যের ডাক দিলেন ইস্তাম্বুলের মেয়র
  • ফ্যাসিবাদী শাসন আর ফিরিয়ে আনতে পারবে না কেউ: মজিবুর রহমান মঞ্জু
  • অনির্দিষ্টকালের জন্য সংস্কার চায় না জনগণ: মির্জা ফখরুল
  • ‘রাষ্ট্রশক্তি দিয়ে জনগণের শক্তি দমন করা যায় না’
  • রাজনীতিতে উত্তাপ: নতুন দল, সুইং ভোটার ও মাইনাস ফর্মুলা
  • ঈদে নিরাপত্তা হুমকি নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করছে অন্তর্বর্তী সরকার, বললেন রিজভী
  • ৫২ জন ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে ওসমান ও তার দোসররা : সাখাওয়াত
  • ইউক্রেনে জাতিসংঘের নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রস্তাব পুতিনের
  • নির্বাচন সুষ্ঠু করেনি বলেই তো আন্দোলন হয়েছে: রিজভী