চার দিন পর মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির হেফাজতে থাকা দুটি পণ্যবাহী জাহাজ কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে ফেরত এসেছে। আরও একটি জাহাজ তাদের হেফাজতে আছে। কীভাবে দুটি জাহাজ ফেরত এসেছে, সে বিষয়ে মুখ খুলছেন না নাবিকরা। আরাকান আর্মির সঙ্গে ‘সমঝোতার’ মাধ্যমে বোটগুলো ফেরত আসতে পেরেছে বলে সূত্র জানিয়েছে।   
গতকাল সোমবার সকাল ১০টার দিকে আটক জাহাজগুলো নাইক্ষ্যংদিয়া থেকে টেকনাফ স্থলবন্দর ঘাটে পৌঁছে। এতে ব্যবসায়ীদের মাঝে স্বস্তি ফিরলেও আতঙ্ক কাটেনি।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে নাফ নদের মোহনায় পণ্যবাহী তিনটি জাহাজ আটক করে আরাকান আর্মি।  
টেকনাফ স্থলবন্দর ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্টের ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, যে জাহাজটি এখনও আটকে আছে, সেটিতে সবচেয়ে বেশি মালপত্র রয়েছে। 
সোমবার ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ফেরত আসা দুটি জাহাজের নাবিকসহ ২০ জন আরোহীর কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করছে বিভিন্ন সংস্থার লোকজন। এ সময় দোভাষীর সহায়তায় এক নাবিকের সঙ্গে কথা হয়। তাঁর ভাষ্য মতে, ‘মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন থেকে আসার পথে সেন্টমার্টিনের পরে নাফ নদে আরাকান আর্মির দুটি টহল দল রয়েছে। প্রথমে নাইক্ষ্যংদিয়ায় থামিয়ে আমাদের তল্লাশি চালানো হয়। তারা কাগজপত্র দেখে ছেড়ে দেয়। মংডুর খায়ুংখালীতে পৌঁছলে ফের আটকে দেয়।’
এই নাবিক বলেন, ‘সর্বশেষ আজকে (সোমবার) সকালে চলে আসতে বলে। এ সময় মিয়ানমার অংশে নৌ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করার পরও কেন বোট চলাচল করছে, সে জন্য ধমক দেয় আমাদের। তার শাস্তি হিসেবে চার দিন পণ্যবাহী বোট আটক রাখা হয়েছে বলে জানায়।’
জানতে চাইলে টেকনাফ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, 
এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসায়ীরা টেকনাফে ব্যবসা গুটিয়ে নেবেন।
আমদানিকারক কায়েছ এন্টারপ্রাইজের মালিক নুরুল কায়েছ সাদ্দাম বলেন, এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে জন্য সবার এগিয়ে আসা উচিত। আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মংডু টাউনশিপ আরাকান আর্মির দখলে। তাই তারা তাদের জলসীমানায় এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। 
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, এ ধরনের ঘটনা বন্ধ করতে আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে সেন্টমার্টিন থেকে জলসীমা ড্রেজিং করা। না হলে এটি বন্ধ করা সম্ভব হবে না। ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে আরও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আর ক ন আর ম র ব যবস য়

এছাড়াও পড়ুন:

পুরো বন্ধের পথে টেকনাফ স্থলবন্দরের কার্যক্রম

টেকনাফ স্থলবন্দরে জেটি ঘাটে বৃহস্পতিবার দুপুরে নোঙর করা দুটি বোট থেকে বালু নামাচ্ছিলেন শ্রমিকেরা। দুটি বোটের যাওয়ার কথা ছিল মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরে। ওই রাজ্যটি দখলে নেওয়া আরাকান আর্মি বোট দুটিকে ওই শহরে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। বাধ্য হয়ে রপ্তানিকারকেরা শ্রমিক দিয়ে বোট দুটি থেকে আলুভর্তি বস্তা নামিয়ে ফেলেন। 
আলু ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ১২ দিন টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এখানে আলু পড়ে আছে ২ হাজার ৭০০ বস্তা। প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি করে মোট আলু সেখানে আটকা পড়েছে ১৩৫ টন। এর মধ্যে ২ হাজার ১০০ বস্তা সবুজ অ্যান্ড ব্রাদার্সের নূরুল কায়েস সাদ্দামের ও ৬০০ বস্তা এক্সপ্রেস এজেন্সির ওমর ফারুকের। এ ছাড়া গুদামে পড়ে আছে ২২ হাজার বস্তা সিমেন্ট। এ ছাড়া পানি, চিপস, চানাচুর, বিস্কুট, পানি ও প্লাস্টিকজাত পণ্যও গুদামে পড়ে আছে। সব মিলিয়ে এসব পণ্যের দাম পাঁচ কোটি টাকার ওপর। 
বন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্য দখলের পর তিন মাস ধরে টেকনাফ থেকে সীমান্তবাণিজ্য থমকে যায়। গত মার্চে ওই রাজ্য থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে ৬৭৫ দশমিক ৪৩ টন পণ্য আমদানি হয়। এতে সরকারের রাজস্ব আদায় হয় ৭ কোটি ৯৬ লাখ ৫ হাজার ২৬৫ টাকা। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রায় তিন লাখ ৩৪ হাজার ৫২৪ দশমিক ৫২ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। টনের হিসাবে যা তিন হাজার ৪৫৫ দশমিক ৯৮৪ টন। রপ্তানিপণ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আলু, বিস্কুট, পানি ও প্লাস্টিকজাত পণ্য।
সর্বশেষ ১২ এপ্রিল রাখাইন থেকে ১৩৮ পিসের একটি কাঠবাহী বোট এসেছিল। এরপর থেকে কোনো পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়নি। এসব কারণে শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বলে জানান বন্দরের শ্রমিক নেতা মনির আহমেদ। তিনি বলেন, বেকার শ্রমিকেরা দুর্দিনে পড়েছেন। রপ্তানির উদ্দেশ্যে আনা আলুসহ বিভিন্ন পণ্যে পচন ধরেছে। 
ব্যবসায়ী নুরুল কায়েছ সাদ্দাম বলেন, তাঁর অর্ধকোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করতে না পেরে গুদামে রেখেছেন। এর মধ্যে আলুসহ অনেক পণ্যে পচন ধরেছে। রাখাইনেও তাঁর কাঠ, ডাল, শুঁটকিসহ বিপুল পরিমাণ পণ্য মজুত আছে। 

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এক্সপ্রেস এজেন্সির প্রতিনিধি মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ১০-১২ দিন ধরে মালপত্র আমদানি-রপ্তানি বন্ধ। আরাকান আর্মির অনুমতি না পাওয়ায় এখান থেকে পণ্য যাচ্ছে না, সেখান থেকেও কোনো পণ্য আসছে না। রপ্তানির জন্য আনা তাদের দুই হাজারের বেশি বস্তা আলু, ১০ হাজার বস্তা সিমেন্ট পড়ে আছে। পচনশীল হওয়ায় আলু নষ্ট হওয়ার পথে। এতে ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়ছেন।
ইয়াঙ্গুন থেকে তিন মাস আগে পণ্য আনা-নেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এবার আরাকান আর্মির দখলে থাকা রাখাইন থেকেও আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে জানিয়ে টেকনাফ স্থলবন্দর রাজস্ব কর্মকর্তা মো. সোহেল উদ্দিন বলেন, মূলত ওপারে সমস্যার কারণে কোনো পণ্য যাচ্ছে না। এখান থেকে পণ্য যেতে কোনো বাধা নেই। স্থলবন্দরের কার্যক্রম প্রায় শূন্যের কোঠায়। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জানা গেছে, এই বন্দরে সর্বশেষ আনুষ্ঠানিক আমদানি হয় ১২ এপ্রিল। সেদিন রাখাইন থেকে কাঠবোঝাই বোট এসেছিল। এরপর ১৬ এপ্রিল রাখাইন থেকে আসার পথে একটি কাঠবাহী বোট হেফাজতে নেয় বিজিবি। সেটিতে কোনো লোকজন ছিল না। মালিকবিহীন বোটটি আছে স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের হেফাজতে। এ প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, টেকনাফ-মংডু সীমান্তবাণিজ্য এখন পুরোদমে বন্ধ। আরাকান আর্মির সবুজসংকেত না পাওয়ায় আপাতত ব্যবসায়ীরা কোনো পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে পারছেন না। ফলে গুদামে বিপুল পরিমাণ পণ্য মজুত রাখতে হচ্ছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুরো বন্ধের পথে টেকনাফ স্থলবন্দরের কার্যক্রম