আটকে রাখা জাহাজ ৪ দিন পর ছাড়ল আরাকান আর্মি
Published: 20th, January 2025 GMT
চার দিন পর মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির হেফাজতে থাকা দুটি পণ্যবাহী জাহাজ কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে ফেরত এসেছে। আরও একটি জাহাজ তাদের হেফাজতে আছে। কীভাবে দুটি জাহাজ ফেরত এসেছে, সে বিষয়ে মুখ খুলছেন না নাবিকরা। আরাকান আর্মির সঙ্গে ‘সমঝোতার’ মাধ্যমে বোটগুলো ফেরত আসতে পেরেছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
গতকাল সোমবার সকাল ১০টার দিকে আটক জাহাজগুলো নাইক্ষ্যংদিয়া থেকে টেকনাফ স্থলবন্দর ঘাটে পৌঁছে। এতে ব্যবসায়ীদের মাঝে স্বস্তি ফিরলেও আতঙ্ক কাটেনি।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে নাফ নদের মোহনায় পণ্যবাহী তিনটি জাহাজ আটক করে আরাকান আর্মি।
টেকনাফ স্থলবন্দর ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্টের ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, যে জাহাজটি এখনও আটকে আছে, সেটিতে সবচেয়ে বেশি মালপত্র রয়েছে।
সোমবার ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ফেরত আসা দুটি জাহাজের নাবিকসহ ২০ জন আরোহীর কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করছে বিভিন্ন সংস্থার লোকজন। এ সময় দোভাষীর সহায়তায় এক নাবিকের সঙ্গে কথা হয়। তাঁর ভাষ্য মতে, ‘মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন থেকে আসার পথে সেন্টমার্টিনের পরে নাফ নদে আরাকান আর্মির দুটি টহল দল রয়েছে। প্রথমে নাইক্ষ্যংদিয়ায় থামিয়ে আমাদের তল্লাশি চালানো হয়। তারা কাগজপত্র দেখে ছেড়ে দেয়। মংডুর খায়ুংখালীতে পৌঁছলে ফের আটকে দেয়।’
এই নাবিক বলেন, ‘সর্বশেষ আজকে (সোমবার) সকালে চলে আসতে বলে। এ সময় মিয়ানমার অংশে নৌ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করার পরও কেন বোট চলাচল করছে, সে জন্য ধমক দেয় আমাদের। তার শাস্তি হিসেবে চার দিন পণ্যবাহী বোট আটক রাখা হয়েছে বলে জানায়।’
জানতে চাইলে টেকনাফ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন,
এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসায়ীরা টেকনাফে ব্যবসা গুটিয়ে নেবেন।
আমদানিকারক কায়েছ এন্টারপ্রাইজের মালিক নুরুল কায়েছ সাদ্দাম বলেন, এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে জন্য সবার এগিয়ে আসা উচিত। আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মংডু টাউনশিপ আরাকান আর্মির দখলে। তাই তারা তাদের জলসীমানায় এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, এ ধরনের ঘটনা বন্ধ করতে আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে সেন্টমার্টিন থেকে জলসীমা ড্রেজিং করা। না হলে এটি বন্ধ করা সম্ভব হবে না। ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে আরও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আর ক ন আর ম র ব যবস য়
এছাড়াও পড়ুন:
টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে দেড় মাস ধরে বন্ধ সীমান্ত
কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরের সঙ্গে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন ও আকিয়াব বন্দরের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রায় দেড় মাস ধরে বন্ধ রেখেছে সে দেশের সরকার। কারণ, ইয়াঙ্গুন ও আকিয়াব বন্দর থেকে টেকনাফে আসার পথে পণ্যবাহী নৌযানগুলো আটকে দেয় দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সদস্যরা।
টেকনাফভিত্তিক আমদানি–রপ্তানিকারকেরা জানান, গত ১৬ জানুয়ারি তিনটি নৌযান আটকের পর ইয়াঙ্গুন ও আকিয়াব বন্দর থেকে আজ শনিবার দুপুর পর্যন্ত কোনো পণ্যবাহী নৌযান টেকনাফে আসেনি। ওই ঘটনার চার দিন পর পণ্যবাহী দুটি নৌযান ছেড়ে দেওয়া হয়। অন্যটি ছাড়ে ১৬ দিন পর। এ ছাড়া গত ১০ ফেব্রুয়ারি শাহপরীর দ্বীপের গোলারচর থেকে স্পিডবোটে ধাওয়া করে কাঠবোঝাই একটি ট্রলার অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। সেটি এখনো ছাড়েনি তারা। তবে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রিত রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের সঙ্গে টেকনাফ স্থলবন্দরের বাণিজ্য সীমিত পরিসরে চালু রয়েছে।
স্থলবন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা বলেন, মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সংঘাতের কারণে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে। এতে টেকনাফের ব্যবসায়ীরা বেকায়দায় ও বিপাকে পড়েছেন।
টেকনাফ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, নাফ নদী ও সাগরে আরাকান আর্মি পণ্যবাহী নৌযান আটেক দেওয়ায় টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে সীমান্ত বাণিজ্য প্রায় দেড় মাস ধরে বন্ধ রেখেছে মিয়ানমার সরকার।
এদিকে সরেজমিনে টেকনাফ স্থলবন্দরে গিয়ে দেখা গেছে, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের কোনো কর্মব্যস্ততা নেই। জেটিতে শুধু চালভর্তি একটি ট্রলার রয়েছে। আরেকটি ট্রলারে সিমেন্ট ও পানির বোতল ভর্তি করে রাখা হয়েছে।
স্থলবন্দরের শ্রমিকনেতা আজগর আলী বলেন, ‘শুধু মংডুর সঙ্গে টেকনাফের বাণিজ্য থেমে থেমে চলছে। গত দুই দিনে মংডু থেকে ৪ হাজার ৩০০ বস্তা চাল নিয়ে দুটি ট্রলার এসেছে। কোনো পণ্য না আসায় বসে থাকতে হচ্ছে। আমাদের আর কোনো আয়-রোজগারও নেই। খুব বেকায়দায় আছি আমরা।’
শুল্ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৪৯ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। এর বিপরীতে ২৯৫ কোটি টাকার রাজস্ব পেয়েছে সরকার। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১১ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানির বিপরীতে ৯১ কোটি টাকার রাজস্ব পায় সরকার। রাখাইনে সংঘাতের কারণে পণ্য আমদানি কম হওয়ায় রাজস্ব আদায় কমে গেছে। অন্যদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় এক কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল দুই কোটি টাকা মূল্যের ১ হাজার ৮২৮ মেট্রিক টন পণ্য।
টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক এনাম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ব্যবসায়ী এনামুল হক বলেন, সীমান্ত বাণিজ্য মূলত ইয়াঙ্গুন ও আকিয়াব বন্দরের সঙ্গে হয়। কিন্তু দুঃখজনভাবে গত দেড় মাস ধরে সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ রেখেছে মিয়ানমার সরকার। তিনি আরও বলেন, ‘দেশটিতে সংঘাতের কারণে উভয় দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি সীমান্ত বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা হতাশ।
মাছ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সুফিয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এম কায়সার জুয়েল বলেন, ‘মিয়ানমারের রুই, কাতলা ও ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশে। বিশেষ করে রমজানে বছরের অন্য সময়ের চেয়ে চাহিদা বৃদ্ধি পায়; কিন্তু এবার কোনো মাছই আসছে না। বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে দুই দেশের সরকারের এগিয়ে আসা উচিত।’
টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট টেকনাফ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গত দেড় মাসে ইয়াঙ্গুন-আকিযাব বন্দর থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে কোনো পণ্যবাহী নৌযান আসেনি। তবে মংডু টাউনশিপ থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রপ্তানি থেমে থেমে হচ্ছে। তা–ও আবার সীমিত পরিসরে।’
স্থলবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা বিএম আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, মিয়ানমার থেকে পণ্য আসা বন্ধ থাকায় দৈনিক ৪ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
মিয়ানমার থেকে সাধারণত ছোলা, পিঁয়াজ, রসুন, জিরা, হিমায়িত মাছ, শুঁটকি, আচার, শুকনা সুপারি ও নারকেলসহ বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়।
জানতে চাইলে টেকনাফর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, মিয়ানমারের জলসীমায় সে দেশের বিদ্রোহী আরাকান আর্মি তল্লাশির নামে পণ্যবাহী জাহাজ আটকে দেয়। এতে টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।