ট্রাকচালকের কাছে ‘চা খাওয়ার’ টাকা চেয়ে সাসপেন্ড ২ পুলিশ
Published: 20th, January 2025 GMT
চাঁদাবাজির অভিযোগে ফেনী মডেল থানার দুই পুলিশ সদস্যকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। রোববার রাত দেড়টার দিকে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শুক্কুর, কনস্টেবল জাহিদ ও নীরবকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। আজ সোমবার তাদের জিজ্ঞাসাবাদে চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় উপ-পরিদর্শক (এসআই) শুক্কুর, কনস্টেবল জাহিদকে সাসপেন্ড করা হয়। ফেনী জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ফেনী শহরের পশ্চিম ডাক্তারপাড়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আজিজুর রহমান রিজভী বলেন, সোমবার (আজ) সকালে আমি ঢাকা চলে যাব। তাই রাতে আমরা বন্ধুরা সবাই একসঙ্গে বসে শহরের ট্রাংক রোডস্থ দোয়েল চত্বর এলাকায় চা পান করছিলাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম, একটি বাঁশভর্তি ট্রাক শহীদ মিনার এলাকায় দাঁড়ায়। এসময় সড়কে পুলিশের সঙ্গে থাকা সিএনজিচালিত অটোরিকশার এক চালক ওই ট্রাকচালকের কাছ থেকে কিছু একটা নিয়ে এসেছেন। বিষয়টি সন্দেহ হলে আমি ও আমার বন্ধুরা অটোরিকশাচালককে জিজ্ঞেস করলে প্রথমে তিনি অস্বীকার করেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, পুলিশের কথামতো তিনি ট্রাকচালকের কাছ থেকে চা খাওয়ার কথা বলে ২০০ টাকা এনেছেন। একপর্যায়ে স্থানীয় জনতা শহীদ মিনার এলাকায় পুলিশ সদস্যদের ঘেরাও করেন। পরে তাদের আটকে চাঁদাবাজির বিষয়টি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নোবেল চাকমাকে জানানো হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে ফেনী মডেল থানার ওসি মর্ম সিংহ ত্রিপুরা ঘটনাস্থলে আসেন। পরে বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে রাতেই তাদের থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়।
ফেনী মডেল থানার ওসি বলেন, শহরের শহীদ মিনার এলাকায় চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। অভিযোগটির সত্যতার বিষয়ে তদন্ত চলছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র এল ক য়
এছাড়াও পড়ুন:
মায়ের সেবাযত্ন না করায় স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ ফেলেন সেপটিক ট্যাংকে
আড়াই মাস আগে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে শাহিদা বেগম (৬৫) নামের এক নারীকে হত্যার পর লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলা হয়। ঘটনার পর ওই নারীর স্বামী আবদুল মোমিন (৬৮) প্রচার করেন, স্ত্রীকে ফজরের নামাজ পড়তে বলে তিনি মসজিদে চলে যান। ফিরে এসে স্ত্রীকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। পরে টানাহেঁচড়ার চিহ্ন দেখে সেপটিক ট্যাংকের স্ল্যাব খুলে স্ত্রীর লাশ দেখতে পান।
এ ঘটনায় বৃদ্ধার ছেলে মামলা করার পর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করতে গিয়ে বারবার হোঁচট খায় পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বৃদ্ধার স্বামীকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে তিনি একেকবার একের রকম তথ্য দেন। একপর্যায়ে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলা ভাইয়ের পরিবারকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন। সর্বশেষ তাঁর স্ত্রীকে ‘দুষ্টু জিনে’ মেরেছে বলে জানান।
দীর্ঘ তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদের পর হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন আবদুল মোমিন। গতকাল বুধবার বিকেলে কুমিল্লার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে মোমিন বলেন, পারিবারিক কলহ ও তাঁর বৃদ্ধ মায়ের সেবাযত্ন করতে অনীহা প্রকাশ করায় কথা–কাটাকাটির এক পর্যায়ে তিনি স্ত্রীকে হত্যা করেন। পরে লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেন।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি সকালে চৌদ্দগ্রামের ঘোলপাশা ইউনিয়নের ধনুসাড়া গ্রাম থেকে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার আবদুল মোমিন স্থানীয় একটি মসজিদে দীর্ঘদিন ধরে ইমামতি করতেন। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দীন আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে ওসি বলেন, ঘটনার পর বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে আবদুল মোমিনের ওপর তাঁদের সন্দেহ হয়। এরপর তাঁরা তাঁকে নজরদারিতে রাখেন। একপর্যায়ে গত ২৭ মার্চ তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ২১ এপ্রিল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে কারাগার থেকে চৌদ্দগ্রাম থানায় আনা হয়। এরপর দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তিনি স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। সর্বশেষ গতকাল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘটনার বিস্তারিত প্রকাশ করেন।
জবানবন্দিতে আবদুল মোমিন দাবি করেন, তাঁর মায়ের বয়স ১৩০ বছরের কাছাকাছি। তিনি চলাফেরা করতে পারতেন না, তবে সুস্থ আছেন। তিনি ও তাঁর ভাই পালাক্রমে এক মাস করে মায়ের দায়িত্ব নিয়ে সেবাযত্ন করতেন। মায়ের সেবাযত্ন নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে প্রায়ই তাঁর ঝগড়া হতো। ঘটনার দিন বাড়িতে ফিরে গভীর রাতে মায়ের সঙ্গে খারাপ আচরণের বিষয়ে স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেন। এতে স্ত্রী রাগান্বিত হয়ে তাঁকে (মোমিন) গালমন্দ শুরু করেন। এতে বিরক্ত হয়ে বালিশ দিয়ে স্ত্রীর নাক-মুখ চেপে ধরেন। কিছুক্ষণ পর দেখেন, স্ত্রী আর নড়াচড়া করছেন না।
জবানবন্দিতে মোমিন আরও বলেন, এ ঘটনার পর ভোর সাড়ে চারটার দিকে স্ত্রীর লাশ কাঁধে করে বাড়ির উত্তর পাশে শৌচাগারের সেপটিক ট্যাংকে ফেলে ঢাকনাটি আবার লাগিয়ে দেন। এরপর বাড়ির নলকূপে গোসল করে তিনি মসজিদে চলে যান। মসজিদ থেকে ফিরে ছেলেকে ফোন দিয়ে বলেন, ‘তোমার মাকে পাওয়া যাচ্ছে না।’ পরে ছেলেসহ আশপাশের লোকজন তাঁর স্ত্রীকে খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে সকাল সাড়ে সাতটার দিকে সেপটিক ট্যাংকে লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হেশাম উদ্দিন বলেন, আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে মোমিন একাই পুরো হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। আশা করছেন দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা সম্ভব হবে।