আওয়ামী লীগের খোলস পাল্টে মাদক সম্রাট লিখন এখন যুবদল কর্মী
Published: 20th, January 2025 GMT
২০০৯ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে দীর্ঘ ১৬ বছর কুতুবপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগের অনেক নেতার ছত্রছায়ায় কুতুবপুরে ত্রাসের রাজত্ব গড়ে তুলেছিলেন বর্তমানে বিএনপি ও যুবদলের পরিচয়দানকারী লিখন ওরফে মাদক ব্যবসায়ী লিখন।
কুতুবপুরে আওয়ামী লীগের অনেক সন্ত্রাসের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে এলাকায় সাধারণ মানুষের জমি দখল, চাঁদাবাজি, লুটপাট এমনকি কুতুবপুর ইউনিয়নে মাদকের সম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন এই লিখন। নিজের নাম সন্ত্রাসী খাতায় লেখাতে এবং মাদকের গডফাদার হিসেবে পরিচিতি বাড়াতে ততকালীন আওয়ামী লীগের অনেক বড় বড় নেতাদের সাথে সম্পর্ক এবং ছত্রছায়ায় থাকতে তাদের বাসায় বসবাস করতেন এই লিখন।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কুতুবপুর ইউনিয়নের অনেক বিএনপি নেতারা বলেন লিখন আসলে কবে বিএনপি করেছে সেটা আমাদের মনে নেই। বিগত ১৭ বছরে বিএনপির কোনো রাজনৈতিক সভা সমাবেশে বা মিছিল মিটিংয়ে কোনো প্রকার ভুমিকা বা উপস্থিতি কিছুই ছিলো না এই লিখনের।
কুতুবপুরে হত্যা, মাদক নিয়ে মারামারি, কিশোর গ্যাং বাহিনীর আধিপত্য বিস্তার এর মূলহোতা ছিল লিখনের ভাগিনা আবির সহ তার ভাইয়েরা। লিখনের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায়, কদমতলী এবং তার আশপাশের থানা গুলোতে রয়েছে হত্যা, চাঁদাবাজি, অস্ত্রসহ মাদকের একাধিক মামলা।
সর্বশেষ ২০১৮ সালে কুতুবপুর ইউনিয়নের আদর্শ নগর, শহীদ নগর, মুন্সিবাগ, শরীফবাগ, নিশ্চিন্তপুর, নুরবাগ সহ আশপাশের এলাকায় লিখন যেন এক আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সাধারণ মানুষ বাহির থেকে এসে এলাকায় জমি ক্রয় করলে সেখানে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করতেন এই লিখন।
তার সাথে জড়িত ছিল কুতুবপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেকের ভাই আব্দুল মালেক মুন্সী। সব মিলিয়ে খালেক ও মালেকের পরে তৃতীয় স্থানে শহীদ নগর ও আশপাশের এলাকাগুলোর ত্রাস ও সন্ত্রাস এবং মাদকের রাজ্য পরিণত করে ছিলো লিখন।
একের পর এক অভিযোগ, মামলা, হামলার পর প্রশাসনের টনক নাড়তে শুরু করে। এছাড়া অনেক সাধারন মানুষ লিখনের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার ও র্যাবের কাছে অভিযোগ করেন। প্রশাসনের কাছে সন্ত্রাসী ও মাদকের গডফাদার লিখনকে গ্রেফতারের দাবি জানালে প্রশাসন সাধারণ মানুষের শান্তির জন্য সন্ত্রাস নির্মূলে কুতুবপুরে সাড়াশি অভিযান চালায়।
ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে মুন্সিবাগে কুতুবপুর ইউনিয়নের পাগলা বাজার এলাকার নিশ্চিন্তপুর ০৫ নং ওয়াড এর কবিরাজ বাড়ীর সামনে বালুর মাঠে সংঙ্গবদ্ধ মাদক ব্যাবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা কালে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাথারি গুলি ছোড়ে।
এসময় পুলিশ নিজেদের জানমাল রক্ষার্থে পুলিশও গুলি ছুড়লে মাদক ব্যবসায়ী লিখন গুলি বিদ্ধ হয়।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৪০০ পিচ ইয়াবা সহ বিদেশি পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করে। উক্ত ঘটনায় মামলা হলে শীর্ষ মাদক ব্যাবসায়ী লিখনকে বিঞ্জ আদালত ১০ বৎসরের সাজা প্রদান করেন।
সেখানে মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ডিবি পুলিশ। খবর পেয়ে লিখনের বাহিনী নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপরে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় তাৎক্ষণিক পুলিশ পাল্টা হামলা করে একপর্যায়ে লিখন পায়ে একটি গুলিবিদ্ধ হয়। পরবর্তীতে লিখন কে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাঁ কেটে ফেলতে হবে বলে জানান চিকিৎসক।
এই ঘটনাকে পুঁজি করে ৫ ই আগস্টের পর ছাত্র জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নিজেকে বিএনপি ও যুবদলের কর্মী পরিচয় দিয়ে কুতুবপুরের একসময়ে ত্রাস, মাদক ও সন্ত্রাসের গডফাদার লিখন এখন পুলিশের বিরুদ্ধেই অভিযোগ তুলেছেন তিনি নাকি দরবেশ ছিলেন।
তবে কুতুবপুরের সাধারণ মানুষ দীর্ঘ ১৬ বছর আওয়ামী লীগের আমলে সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী লিখন কাছে সাধারন মানুষ নির্যাতিত হয়েছিল সেভাবে আওয়ামী লীগের পেটুয়া বাহিনীর সাথে লিখন মিলে সাধারণ মানুষকে যেভাবে নির্যাতন করেছিল।
সেভাবেই নির্যাতন করতে এলাকায় নিজের আধিপত্য বিস্তার ফিরে পেতে আবারো মরিয়া হয়ে প্রশাসনকে হুমকির মুখে ফেলতে চাচ্ছেন এই সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী লিখন।
তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ যারা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে বিএনপির যে নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করে এলাকায় রাজত্ব করেছেন তারা কখনোই দলে ফিরতে পারবেন না।
এরই ধারাবাহিকতায় ৫ আগস্টের পরেও তারেক রহমান হুংকার দিয়ে একই কথা বলেছিলেন। যারা দলের বদনাম করে লুটপাট সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, মাদকের সাথে জড়িত তাদেরকে ধরে হাত-পা ভেঙে প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য।
কুতুবপুরের ত্রাস সন্ত্রাসী মীর হোসেন মিরু ও কুতুবপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক এর অন্যতম সহযোগী হিসেবে কুতুবপুরে ত্রাসের রাজত্ব গড়ে তুলেছিলেন লিখন। এছাড়াও নুরবাগ এলাকার তোতা মিয়ার ছেলে লিখনের আরো চার ভাই রয়েছে।
মঞ্জু, বাবু, লিমন, লিখুন তার এই চার ভাই ভাগিনা আবিরকে নিয়ে বিগত দিনে আওয়ামী লীগের স্বয়ংক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।
এখন নতুন করে ভাগিনা এবং ভাই সহ এলাকার অধিকাংশ মাদক ব্যবসায়ীকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন মাদকের স্বর্গরাজ্য। কুতুবপুরে নিশ্চিন্তপুর, শহীদ নগর মুন্সিবাগ, আদর্শ নগরের মানুষ এখন আবার এই সন্ত্রাসী ও মাদকের গডফাদার লিখনের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন।
এলাকাবাসীর দাবি, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন এলাকায় তদন্ত করে এই সন্ত্রাসের ত্রাসের রাজত্ব থেকে কুতুবপুর ইউনিয়নকে মুক্ত করতে এবং মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে এদেরকে আবারও পুনরায় গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছেন কুতুবপুরের সাধারণ মানুষ।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: য বদল ন র য়ণগঞ জ আওয় ম ল গ এল ক য় ব এনপ আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
ফতুল্লায় আবাসিক এলাকায় শিল্পকারখানা বন্ধের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার দেলপাড়ায় আবাসিক এলাকায় অবৈধ ভাবে গড়ে ওঠা পরিবেশ দুষণকারী এম আলী টেক্সটাইল মিলটি দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে। এসময় অনুলিপি হিসাবে পরিবেশ অধিদপ্তরে অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে ফতুল্লার পূর্ব দেলপাড়া এলাকাবাসীর পক্ষে হাজী মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ'র স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ফতুল্লার পূর্ব দেলপাড়া খেলার মাঠ এলাকাটি আবাসিক এলাকা হিসেবে পরিচিত। একটি আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে এম আলী টেক্সটাইল মিল নামে একটা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে।
কারখানার মেশিনের বিকট শব্দ, বায়ু দুষন সহ নানা ধরনের সমস্যার কারণে সাধারণ মানুষের জনজীবন বিপন্ন করে তুলেছে। প্রতিনিয়ত কারখানা অগ্নিকান্ড সহ নানা ধরনের দূর্ঘটনা ঘটে। এতে করে ঐ এলাকায় বসবাসকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
কারখানার শব্দ দূষণ ও ভাইব্রেশনে এলাকা জুড়ে কাঁপতে থাকে। এতে করে এলাকার ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা ঠিকমতো লেখাপড়া করতে যেমন বিঘ্ন সৃষ্টি হয় তেমনি এই এলাকার বাসিন্দারা মনে আতঙ্ক নিয়ে রাতে ঘুমাতে হয়।
এভাবে মানুষের জীবন চলতে পারে না। তাই এই অবৈধ এম আলী টেক্সটাইল উচ্ছেদ করা অতি জরুরি হয়ে পড়েছে যা এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি।
অভিযোগ দায়েরের পর নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) জাহিদুল ইসলাম দেলপাড়ার লোকদের আশ্বস্ত করে বলেন, ঘটনার তদন্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে হাজী মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ এমনটাই জানিয়েছেন।