হাসিনার পতন হওয়ায় চোখ হারিয়েও সাব্বিরের আক্ষেপ নেই
Published: 20th, January 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের ছোড়া গুলিতে একটি চোখ চিরতরে নষ্ট হয়ে গেছে বিএম কলেজের ছাত্র রহমাতউল্লাহ সরদার সাব্বিরের। এখনো চোখের ভেতরে বিঁধে রয়েছে গুলির একটি স্প্রিন্টার। মাঝে-মধ্যে চোখে তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাতে হচ্ছে সাব্বিরকে। এরপরও আক্ষেপ কিংবা অনুশোচনা নেই তার। এক চোখের বিনিময়ে হলেও স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতন দেখতে পেয়েছেন, এটাই তার বড় শান্ত্বনা, বড় সফলতা।
তবে সাব্বির তার পরিবারের অচলাবস্থা দেখে কষ্ট পান। বৃদ্ধ মা ও দুই ভাই নিয়ে চার সদস্যের সংসার তার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন সাব্বিরই। পড়াশোনা সবেমাত্র শেষ করে ভালো চাকরি করে পরিবারের হাল ধরবেন এমন প্রত্যাশা ছিল তার।
বড় ভাই অসুস্থ হওয়ায় তিনি উপার্জন করতে পারেন না। ছোট ভাই এখনো পড়াশুনা করছে। সব মিলিয়ে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি সাব্বিরই এখন পরিবারের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভাব-অনটনের সংসারে চিকিৎসার জন্য ৫ লক্ষাধিক টাকা ঋণ করতে হয়েছে। এ ঋণে তার পরিবার এখন ডুবতে বসেছে।
সাব্বির জানান, সবেমাত্র তিনি বরিশাল সরকারি বিএম কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স পাস করেছেন। মা অনেক কষ্ট করে এবং অন্যের কাছ থেকে ধার-দেনা করে তাকে লেখাপড়া করিয়েছেন। তিনি ভালো চাকরি করে পরিবারের হাল ধরবেন- এমন আশা ছিল বৃদ্ধা মা ও দুই ভাইয়ের। কিন্তু পুলিশের গুলিতে চোখ হারিয়ে সেই আশা এখন ফিকে হয়ে গেছে।
সাব্বির বলেন, ‘‘২৪’র জুলাইয়ের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে আমি ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেই। ৯ জুলাই থেকে প্রতিদিন সরকারি বিএম কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ি। আন্দোলন করতে গিয়ে একাধিকবার পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছি। সরকার পতনের আগের দিন গত ৪ আগস্ট বিকেল ৫টার দিকে বিএম কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনকালে চৌমাথা সিএন্ডবি রোড় এলাকায় পুলিশের এলোপাথারী গুলির মুখে পড়ি। এ সময় ছাত্রদের লক্ষ্য করে পুলিশের ছোড়া তিনটি গুলি আমার চোখে বিদ্ধ হয়। এতে আমি রাস্তায় পড়ে কাতরাতে থাকলে সহযোদ্ধারা আমাকে উদ্ধার করে বরিশাল শেরে-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। আমার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় ওই দিন রাতেই উন্নত চিকিৎসার জন্য আমাকে ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে দুই মাস চিকিৎসা শেষে আমাকে রিলিজ দেওয়া হয়।’’
সাব্বির জানান, তার চোখ থেকে দুটি স্প্রিন্টার বের করা সম্ভব হলেও একটি চোখের মধ্যে রয়ে গেছে, যা কখনো বের করা সম্ভব হবে না বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। একটি চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি চোখ দিয়েও পুরোপুরি দেখতে পারছেন না।
তিনি জানান, দুই মাসে হাসপাতালে থাকা ও চিকিৎসা বাবদ তার পরিবারের ৫ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। আত্মীয়-স্বজনসহ প্রতিবেশীর কাছ থেকে ধারদেনা করে চিকিৎসা করতে হয়েছে। এর মধ্যে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাইন্ডেশন থেকে মাত্র এক লাখ টাকার অনুদান পেয়েছেন।
সাব্বির জানান, শুধু তিনি একা নন, বরিশাল নগরী ও জেলায় ১০২ জন আহত যোদ্ধা রয়েছেন। ২৪’র জুলাই আন্দোলনে বরিশাল বিভাগে ৩ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী আহত হয়েছে। ঢাকায় আন্দোলন করতে গিয়ে নিহত হয়েছে বরিশালের ৩০ জন শিক্ষার্থী। এসব শহীদ ও আহত পরিবারের অবস্থা করুণ। যারা একজন স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন, কিংবা পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, তারা আজ সবার কাছে অবহেলিত ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের শিকার। এটা কাম্য হতে পারে না।
এ বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিএম কলেজের সমন্বয়ক ফুজাইফা রহমান বলেন, ২৪ এর অভ্যুত্থানের সাব্বির ছিলেন সামনের সারির একজন যোদ্ধা। এ কারণে পুলিশের টার্গেটে ছিলেন সাব্বির। পুলিশের ছোড়া এলোপাথারী গুলিতে চোখ হারাতে হয়েছে তাকে।
ঢাকা/পলাশ/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব র র র পতন
এছাড়াও পড়ুন:
ইউক্রেনে জেলেনস্কির বিকল্প নেতা খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র!
ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পদত্যাগ করা লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের একজন নেতা প্রয়োজন, তিনি আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। তিনি শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন এবং এই যুদ্ধ থামাতে পারবেন।’ খবর- সিএনএন
গণমাধ্যমের সামনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডার পর এ কথা বললেন তিনি। বাগবিতণ্ডার এ ঘটনাটি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে বিশ্বজুড়ে। ওই ঘটনার পর ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেটিও বাতিল হয়ে যায়। আর এর পরই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কোন পথে, তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।
এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। শুক্রবারের ওই ঘটনায় সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গড়া ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
যদিও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আবারও এক টেবিলে বসার ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া-দুই পক্ষই আলোচনায় না বসলে যুদ্ধ থামবে না। হোয়াইট হাউসে শুক্রবার ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিতণ্ডার পর থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আর কথা হয়নি। যুদ্ধ থামানোর জন্য রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনতে হবে। তবে তাদের প্রতি বৈরী মনোভাব রাখলে, মস্কোকে আলোচনায় যুক্ত করা সম্ভব হবে না। কোনো চুক্তি করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মনোভাবই দেখিয়ে আসছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, সবকিছু আবার শুরু হতে পারে। আশা করি, তিনি (জেলেনস্কি) এটা বুঝতে পারবেন যে আমরা আসলে আরও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর আগে, তাঁর দেশকে সাহায্যের চেষ্টা করছি।’