অবসর কাটাতে রেল স্টেশনে মিনি লাইব্রেরি
Published: 20th, January 2025 GMT
রেলস্টেশনে এসে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ধৈর্যচ্যুতি হয় অনেকের। এই সমস্য সমাধানের জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মোবারকগঞ্জ রেল স্টেশনে চালু করা হয়েছে একটি মিনি লাইব্রেরি। স্টেশনে অপেক্ষারত মানুষরা যাতে অবসর সময় কাটাতে পারেন এমন কথা চিন্তা থেকে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কালীগঞ্জ আঞ্চলিক ভাষা গ্রুপের এডমিন হলুদ সাগর।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) সকালে মিনি লাইব্রেরিটি উদ্বোধন করা হয় মোবারকগঞ্জ রেল স্টেশনে। এসময় উপস্থিত ছিলেন- সিনিয়র সাংবাদিক সাবজাল হোসেন, কালীগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আহসান কবির, সাংগঠনিক সম্পাদক মিশন আলী, কালীগঞ্জ আঞ্চলিক ভাষা গ্রুপের এডমিন শাহরিয়ার আলম সোহাগ, হলুদ সাগর, মডারেটর তৌহিদুল ইসলাম।
সংগঠনটির এডমিন হলুদ সাগর বলেন, “কালীগঞ্জ আঞ্চলিক ভাষা গ্রুপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক গ্রুপ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কাজ করে যাচ্ছে এই গ্রুপ। এরই ধারাবাহিকতায় জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মিনি লাইব্রেরি স্থাপন করা হচ্ছে। রেল স্টেশনে অনেক মানুষের সমাগম ঘটে। ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা যাতে বই পড়ে অবসর সময় কাটাতে পারেন সেজন্য এই মিনি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।”
আরো পড়ুন:
ঘন কুয়াশায় দুর্ঘটনা এড়াতে রেলওয়ের নির্দেশনা
প্রথমবার রেলসেবায় যুক্ত হচ্ছে নড়াইল
তিনি আরো বলেন, “কালীগঞ্জ উপজেলার আরো দুইটি স্থানে মিনি লাইব্রেরি স্থাপন করা হবে। এই লাইব্রেরিতে যে কেউ বই দিতে পারবেন।”
মোবারকগঞ্জ রেল স্টেশনের মাস্টার শাহজাহান আলী বলেন, “কালীগঞ্জ আঞ্চলিক ভাষা গ্রুপের সদস্যরা অনুমতি নিয়েই এখানে (রেল স্টেশন) মিনি লাইব্রেরি স্থাপন করেছে। এটি একটি ভালো উদ্যোগ। ট্রেনের জন্য অপেক্ষারত যাত্রীরা অবসরে বই পড়ে সময় কাটাতে পারবেন। দেশের সব স্থানে এমন উদ্যোগ নেওয়া উচিত।”
ঢাকা/শাহরিয়ার/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা
মুরাদনগরে বৈশাখী মেলা ঘিরে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মৃৎশিল্পীরা। সারা বছর এই কাজের কদর না থাকলেও বৈশাখ রাঙাতে এই সময়টাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় আগের মতো চাহিদা নেই মৃৎশিল্পের। এই পেশায় নেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। তাই প্রায় সারাবছরই অধিকাংশ নারী মৃৎশিল্পীকে অবসর সময় কাটাতে হয়। পুরুষ মৃৎশিল্পীদের অধিকাংশ চলে গেছেন অন্য পেশায়। তবে নববর্ষের আগে সব কাজ ফেলে তারা ছুটে আসেন পুরোনো এই পেশায়। মৃৎশিল্প থেকে সারা বছর কারিগররা আয়ের মুখ না দেখলেও বৈশাখী মেলা ঘিরে থাকে বাড়তি উপার্জনের সম্ভাবনা। এবারও মাসজুড়ে প্রতিটি কুমারপাড়ায় ছিল ব্যস্ততা।
কামাল্লা ও রামচন্দ্রপুর গ্রামের পালপাড়ায় দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। জরাজীর্ণ আবাসগুলোতে কেউ মাটি ঘুটছেন, কেউ সেই মাটি ছাঁচে দিয়ে তৈজসপত্র তৈরি করছেন। কেউবা খেলনা শুকানোর পর রংতুলির আঁচড় দিচ্ছেন। বিশেষ করে শিশুদের চাহিদা মাথায় রেখে তৈরি করা হচ্ছে ছোট ছোট মাটির হাঁড়িপাতিল, মাটির চুলা, শিলপাটা, কড়াই, কলস, কুলা, পুতুল, হাতি, ঘোড়া, নৌকা, টিয়া, সিংহ, দোয়েল, কচ্ছপ, মাছ, হাঁসসহ নানা রকম ফল, ফুল আর বাহারি মাটির ব্যাংক, প্লেট, মগ, গ্লাস, চায়ের কাপ। এ ছাড়া রয়েছে মাটির তৈরি গৃহস্থালি জিনিসপত্র।
কামাল্লা গ্রামের সন্ধ্যা রানী পাল ও শিখা রানী পাল জানান, এখন মাটির জিনিসের তেমন কদর না থাকায় সারাবছর টানাপোড়েনের মধ্যে চলে তাদের সংসার। পূর্বপুরুষের পেশা হওয়ায় ইচ্ছা হলেও ছাড়তে পারছেন না। সারাবছর অবসর সময় পার করলেও বৈশাখী মেলায় মাটির তৈরি খেলনা ও জিনিসপত্রের চাহিদা থাকায় এই সময়ে ব্যস্ততা থাকে তাদের।
কথা হয় মৃৎশিল্পী হরি ভূষণ পালের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, বছরের এই একটি উৎসব ঘিরে তাদের অনেক আশা থাকে। বৈশাখ মাস এলে মেলায় মাটির খেলনা সামগ্রীর চাহিদা বাড়ে। তাই এ সময় কিছু আয় হয়। তিনি হতাশার সুরে বলেন, ‘সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করত, তাহলে ব্যবসাটা ভালোভাবে করতে পারতাম।’
মৃৎশিল্পী কানন বালা জানান, পহেলা বৈশাখে বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে। এই মেলা থেকে শখের বসে অনেকে মাটির সামগ্রী, বিশেষ করে মাটির খেলনা কেনেন। তাই এই সময়ে কর্মব্যস্ততা বাড়ে তাদের।
রামচন্দ্রপুর গ্রামের খুশি পাল বলেন, ‘আমার বয়স ৫০ ছুঁই ছুঁই। বিয়ের পর থেকেই এই পেশার সঙ্গে জড়িত। আগে মাটির সামগ্রীর প্রচুর চাহিদা থাকলেও এখন আর তেমন নেই। এই শিল্পের সঙ্গে আমাদের জীবনজীবিকা নির্ভরশীল।’
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুর রহমানের ভাষ্য, আধুনিকতার ছোঁয়ায় মৃৎশিল্প যে হারিয়ে গেছে, বিষয়টি তা নয়। বরং আধুনিকতার ছোঁয়ায় শিল্পকারখানার মাধ্যমে তৈরি হওয়া মাটির তৈজসপত্রর চাহিদা এখন প্রচুর। মুরাদনগরে যদি বেসরকারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এসব মৃৎশিল্পীকে কাজে লাগানো যায়, তাহলে অবশ্যই এই শিল্প থেকে ভালো সুফল পাওয়া সম্ভব। পাশাপাশি মৃৎশিল্প বাঁচিয়ে রাখতে বিআরডিবি ও সমবায় কার্যালয় থেকে যেন সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়। যেহেতু মুরাদনগরে কোনো মৃৎশিল্পের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নেই, তাই মৃৎশিল্পীদের এই পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে সহজে সরকারি সহায়তা দিতে উপজেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।