গোপালগঞ্জে দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (২০ জানুয়ারি) সকালে গোপালগঞ্জ সরকারি শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকরি মহিলা কলেজে অনুষ্ঠিত এই উৎসবে বাহারি পিঠার সমাহার ঘটে। আগামীতেও এমন আয়োজন কারার কথা জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

সরকরি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসের ২০টি স্টলে শতাধিক বাহারি পিঠার সমাহার ঘটে। চিতই, ভাপা, পুলি, তক্তি, নকশি পিঠা, ডিমের পুডিং, পাটি সাপটা, ঝাল চন্দ্রকোনা, চন্দনকুলি, দুধ খেঁজুর, নারকেলের চিড়া, রসপান, হৃদয়হরণ, গোকুলসহ হরেক রকমের পিঠা নিয়ে উৎসবে অংশ নেন কলেজটির শিক্ষার্থীর। তাদের তৈরি পিঠার স্বাদ নিতে ও কিনতে কলেজ ক্যাম্পাসে আসেন শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। 

মেলায় পিঠার স্টল দেওয়া শিক্ষার্থী তনিমা মাহমুদ বলেন, “মা ও দাদির কাছ থেকে তালিম নিয়ে অন্তত ২৫ রকমের পিঠা হাতে বানিয়ে স্টলে প্রদর্শন করেছি। পিঠার স্বাদ নিয়ে ভোজন রসিকরা ব্যাপক প্রসংশা করেছেন। পিঠা বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করে সফল হওয়া সম্ভব।”

আরো পড়ুন:

নলেন গুড়ের প্যাড়া সন্দেশ যাচ্ছে বিদেশে

শতবর্ষী মাছের মেলা, কোটি টাকা বিক্রির আশা

শিক্ষার্থী উম্মে কুলসুম চৈতি বলেন, “বিভিন্ন ধরনের পিঠা এসেছে। অনেক পিঠার নাম আগে জানতাম না। কয়েকটি স্টল ঘুরে পিঠা খেয়েছি। খুব ভালো লেগেছে এই পিঠা উৎসবে আসতে পেরে। আমি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি এমন আয়োজন করার জন্য।”

গোপালগঞ্জ সরকারি শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকরি মহিলা কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোসা.

পারভীন সুলতানা বলেন, “মাত্র এক দিনের প্রস্তুতিতে শিক্ষার্থীরা অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে। তারা চিতই, পুলি, ভাপা, পাটিসাপটা, রসবড়া, জামাই পিঠা, দুধ পুলি, ভিজানো পিঠা, নকশা পিঠা, পাকন পিঠা, বকুল পিঠা, খির লুচি, নারিকেলের পিঠা, ডিম পিঠা, গোলাপ পিঠা, খির চমচম, নারু, চকলেট পিঠা, তেলে ভাজা পিঠা, খেজুর পিঠা, তাল পিঠা, সন্দেস পিঠা, পালপোয়া, ছানার পিঠা, মালাই পিঠা, বরফী পিঠাসহ শতাধিক রকমের পিঠার সমাহার ঘটিয়েছেন পিঠা উৎসবে। এ উৎসবে অংশ নিয়ে উৎসব মুখর পরিবেশে সবাই পিঠার স্বাদ নিয়েছেন।” 

বাংলা বিভাগের সহকরী অধ্যাপক মনীন্দ্র নাথ বাড়ৈ মণি বলেন, “পিঠা উৎসব সবার প্রাণের উৎসব। সবার অংশ গ্রহণে উৎসবটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।”

কলেজের অধ্যক্ষ সেখ বেনজীর আহমেদ বলেন, “বাঙালি সংস্কৃতি ধরে রাখতে আমরা পিঠা উৎসবের আয়োজন করেছি। শিক্ষার্থীরা শতাধিক রকমের পিঠা তৈরি করে স্টলগুলোতে পসরা নিয়ে বসেন। এখান থেকে পিঠা প্রেমিরা পছন্দের পিঠা খেয়েছেন। পিঠা উৎসব পাঠ্য কারিকুলামেরই একটি অংশ। উৎসবের আমেজে এতে অংশ নিয়ে অনেক শিক্ষার্থী উদ্যাক্তা হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বাহারি পিঠা তৈরি করে অনেকেই কর্মসংস্থানের পথ খুঁজে পাবেন
এমটা প্রত্যাশা করছি।”

ঢাকা/বাদল/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উৎসব রকম র প ঠ গ প লগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যতিক্রমী চলচ্চিত্র নির্মাতা 

সৃজনশীল মানুষের প্রস্থান এক ধরনের শূন্যতা তৈরি করে। এই তালিকায়  যুক্ত হলো জাহিদুর রহিম অঞ্জনের নাম। তিনি ছিলেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা, স্ক্রিপ্ট রাইটার, বড় পর্দার চলচ্চিত্র পরিচালক ও সংগঠক। অসামান্য প্রতিভার অধিকারী জাহিদুর রহিম অঞ্জনের স্বপ্ন চিন্তা, সৃষ্টি, অনন্য পরিকল্পনা তাঁর সমসাময়িক নির্মাতাদের থেকে পৃথক করে রাখবে। তাঁর বর্ণাঢ্য জীবন ছিল আনন্দ-বেদনায় ভরপুর। তিনি আধুনিক ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের অগ্রগামীদের অন্যতম। আজিজ মার্কেট, পাবলিক লাইব্রেরি, চারুকলা অনুষদ ও জাতীয় জাদুঘরে তাঁর সরব উপস্থিতি ছিল নজর-কাড়া। আড্ডা, হইহুল্লোড় ও প্রাণখোলা হাসি, পোশাক, অলংকার ধারণ ছিল  নিজস্বতা প্রকাশের বাহক। তিনি সবার মনোযোগের কেন্দ্রে এসেছিলেন। ছিলেন আড্ডার মধ্যমণি। তাঁর আনন্দ-বেদনার কত কাহিনি আজও অজানা থেকে গেল! 

ভারতের পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে চলচ্চিত্র বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের শ্রুতিচিত্রণ কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। তাঁর পূর্বসূরি ছিলেন মিশুক মুনীর। মিশুক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন, আর জাহিদুর রহিম অঞ্জন লিভারের জটিলতায় ২৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের বেঙ্গালুরুতে চিরঅনন্তের উদ্দেশে যাত্রা করেন।
জাহিদুর রহিম অঞ্জন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া অ্যান্ড স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষক হিসেবেও সংযুক্ত হন। ফিল্ম তৈরির নেশায় জড়িয়ে পড়েন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ফিল্ম তৈরিতে তাঁর সৃজন ও দক্ষতার পরিচয় রেখে গেছেন।

তিনি শর্টফিল্ম ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। তিন দশক শর্টফিল্ম নির্মাণে তাঁর অসামান্য অবদান স্মরণীয়। ২০০৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ শর্টফিল্ম ফোরামের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে।

অঞ্জন ১৯৯০ সালে আন্তন চেকভের গল্প অবলম্বনে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মর্নিং’ পরিচালনা করে পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র হলেও তা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। পরে তিনি বিশিষ্ট চিন্তক অতীশ দীপংকরের জীবনীকে চলচ্চিত্রে রূপ দেন ‘শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপংকর’ নির্মাণ করে।
তিনি আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘রেইনকোট’ অবলম্বনে পরিচালনা করেন ‘মেঘমল্লার’। পটভূমি ১৯৭১। কলেজ শিক্ষক নুরুল হুদার জীবনের ঘটনা, মনোস্তত্ত্ব ও সমাজ-বাস্তবতা নিয়ে চলচ্চিত্রের আখ্যানভাগ নির্মিত। মূল চরিত্রে শহীদুজ্জামান সেলিম অসাধারণ অভিনয় দক্ষতায় দর্শকদের মুগ্ধ করেন। ‘মেঘমল্লার’ ২০১৫ মালের ১৫ সেপ্টেম্বর কানাডার টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ও ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলা চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। ২০১৬ সালে ৩৯তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ  পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা সম্মানে ভূষিত হন তিনি।
জাহিদুর রহিম অঞ্জন প্রথাবিরোধী চলচ্চিত্র নির্মাতা ছিলেন। সরকারি অনুদানে তাঁর নির্মিত ‘চাঁদের অমাবস্যা’ একটি অসাধারণ সৃষ্টি। দেশের সার্বিক অবস্থা ও নিজের অসুস্থতার কারণে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়নি। তাঁর বন্ধু, স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা চলচ্চিত্রটির নির্মাণ কুশলতা ও কারিগরি দিক পর্যবেক্ষণ করেছেন। ‘চাঁদের অমাবস্যা’ মুক্তির অপেক্ষায়।
জাহিদুর রহিম অঞ্জন ৬১ বছর এই পৃথিবীর সৌন্দর্য, আনন্দ-বেদনাকে স্পর্শ করেছেন। তাঁর প্রতিটি সময় ছিল সৃজনমুখর। শুধু চলচ্চিত্র নির্মাতা নন, একজন ভালো মানুষ হিসেবে তিনি তাঁর পরিমণ্ডল ছেড়ে পরিচিত মানুষের প্রিয় ও গ্রহণযোগ্য ছিলেন; বেঁচে থাকবেন স্মরণে, স্মৃতিতে। প্রকাশক, গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে জাহিদুর রহিম অঞ্জনের রচনাসমগ্র প্রকাশের অনুরোধ জানাচ্ছি। তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে নির্মাণ করা হোক বিশেষ ডকুমেন্টারি।

জাহিদুর রহিম অঞ্জন অসংখ্য নির্মাতার পথপ্রদর্শক। তাঁর জীবনসংগ্রাম, সৃষ্টির ইতিহাস নিয়ে ‘স্মারকগ্রন্থ’ প্রকাশিত হবে। তিনি আর থাকবেন না বাস্তবে; অবচেতনে তাঁর অবস্থান অমোচনীয়। জাহিদুর রহমান অঞ্জনকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে স্মরণ করছি।

সাইফুজ্জামান: প্রাবন্ধিক; জাতীয় জাদুঘরের কর্মকর্তা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অস্কার: সেরা সিনেমা ‘আনোরা’
  • সেরা সিনেমা ‘আনোরা’
  • টিএসসিতে সংগীত উৎসব
  • রমজানে গাজায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি নিয়ে মার্কিন প্রস্তাবে রাজি ইসরায়েল
  • মুনীর চৌধুরী জাতীয় নাট্য উৎসবের মঞ্চে ‘ইংগিত’
  • ব্যতিক্রমী চলচ্চিত্র নির্মাতা 
  • ফরিদপুরে ‘পালাবদলের ছড়া’ গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন