প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফরে চীনের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। সোমবার (২০ জানুয়ারি) বিকেলে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেছেন।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর আমন্ত্রণে তার দেশে যাচ্ছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিন দিনের সফর শেষে ২৪ জানুয়ারি পররাষ্ট্র উপদেষ্টার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এই সফরের মধ্যে দিয়ে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রতি বছরই পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে ভারতে যেতেন। প্রতিবেশীর সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্কের কারণে প্রথম সফর হিসেবে ভারতকেই বেছে নিতেন তারা। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে চীনেই যাচ্ছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০ থেকে ২৪ জানুয়ারি চীন সফর করবেন মো.

তৌহিদ হোসেন। সফরকালে ২১ জানুয়ারি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে করবেন তিনি। বেইজিং ছাড়াও সাংহাই সফর করবেন উপদেষ্টা।

এ সফরের বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, “চীন সফরে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক অনেক বিষয়ে আলোচনা হবে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক ইস্যুগুলো। আমাদের অনেক প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ আছে। বিনিয়োগ মূলত ঋণ আকারে। তার মধ্যে কিছু প্রকল্প চলমান। এছাড়া অর্থনৈতিক আলোচনাও আছে, যেমন: আমরা ঋণের শর্তাদি নিয়ে কথা বলব। এর মধ্যে আছে সুদহার কমানো বা ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো।”

উপদেষ্টা বলেন, “এখনো চীন আমাদের অধিকাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে। কিন্তু, এলডিসি থেকে গ্র্যাজুয়েশনের পরে এটা পরিবর্তন হতে পারে। তাই, এটি আমাদের আলোচনার মাধ্যমে আগেই ঠিক করে নিতে হবে। চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। এ উপলক্ষে দুই দেশেই কিছু উৎসব আছে। সেগুলো নিয়েও আমরা কথা বলব।”

সফরসূচি প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, “২১ জানুয়ারি রাজধানী বেইজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। তারপর সাংহাইয়ে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে হবে। এর বাইরে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির (ইভি) কারখানা এবং ফ্রুটস প্রিজারভেশনের দুটি শিল্পকারখানা আমাদের দেখানো হবে। তাদের নতুন এসব টেকনোলজি আমাদের দেশে কাজে আসতে পারে।”

আগামীকাল মঙ্গলবার হবে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক। আলোচনায় গুরুত্ব পাবে অর্থনীতি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ। 

সফরের আগে গতকাল রোববার পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন চীনের রাষ্ট্রদূত। 

চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, “পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চীন সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি। এর মধ্যে দিয়ে ঢাকা-বেইজিং বোঝাপড়া আরো বাড়বে। আমরা খোলা মন নিয়ে বাংলাদেশের সব প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করতে প্রস্তুত।”

বাংলাদেশকে ১৯৭৫ সালের ৩১ আগস্ট স্বীকৃতি দেয় চীন। সে অনুযায়ী চলতি বছর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করা হবে। এ উপলক্ষে উভয় পক্ষই নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের কর্মসূচি নিয়েছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চীন সফরের সময়ে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীন অনেক আগে থেকেই মধ্যস্থতা করে আসছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সঙ্গে চীন দূতিয়ালি করলেও এখনো পর্যন্ত কোনো সমাধান হয়নি। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এ সফরে রোহিঙ্গা ইস্যু প্রাধান্য পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে চীন থেকেই সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে থাকে বাংলাদেশ। চীন থেকে বাংলাদেশ প্রতি বছর গড়ে ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে থাকে। বিপরীতে চীনে বাংলাদেশ রপ্তানি করে থাকে মাত্র ৬৭ কোটি ডলারের পণ্য। চীনা বাজারে বাংলাদেশ ৯৮ শতাংশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে। এরপরও চীনে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি বাড়ছে না। সে কারণে বাণিজ্য ভারসাম্যও রক্ষা করা যাচ্ছে না। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চীন সফরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্য বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা উঠবে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে চীন বিনিয়োগ করেছে, বিশেষ করে অবকাঠামো খাতে। বিভিন্ন প্রকল্পে সুদহার বিভিন্ন রকম। এই হার কমাতে চায় বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা চীন সফরে আলোচনায় সুদহার কমানোর বিষয়টি প্রাধান্য পাবে।  

বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে নদী ও পানি ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। সে সমঝোতা স্মারকের মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সফরে এই সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হবে। এছাড়া, বাংলাদেশের তিস্তা প্রকল্পে সহায়তা দিতে আগ্রহী চীন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সফরে বিষয়টি আলোচনায় উঠতে পারে।

ঢাকা/হাসান/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পরর ষ ট র উপদ ষ ট র র পরর ষ ট রমন ত র র পরর ষ ট র প রকল প চ ন সফর সফর র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

সরস্বতি পূজা উপলক্ষে গোপালগঞ্জে জমজমাট প্রতিমার হাট

আগামী ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা। এ উপলক্ষে গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্নস্থানে বসেছে প্রতিমার হাট। এখন চলছে প্রতিমার বেচাকেনা। এবার প্রতিমার দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রীয়া থাকলেও কারিগররা বলছেন, জিনিস পত্রের দাম বাড়ায় প্রতিমার দামও কিছুটা বাড়তি।

পঞ্জিকা মতে মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে আশীর্বাদ লাভের আশায় বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা করে থাকেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। শুধু বাড়িতেই নয় বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। দেবীর পায়ে অঞ্জলী দিয়ে অনেক শিশুর শিক্ষাজীবন শুরু হবে।

এ পূজার প্রধান অনুসঙ্গ হলো প্রতিমা। ফলে জেলা শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ী, সদর উপজেলার সাতপাড়, বৌলতলী, কোটালীপাড়া উপজেলার রাধাগঞ্জ, ভাঙ্গারহাট, ঘাঘর বাজারসহ অনেক স্থানে বসেছে প্রতিমার হাট। এসব হাটে আনা এক একটি প্রতিমা প্রকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে। 

আরো পড়ুন:

লক্ষ্মীপুরে রাসপূর্ণিমা উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু

পুটিয়ার কৃষ্ণপুরে চলছে কাত্যায়নী পূজা

এ বছর ক্রেতাদের মধ্যে প্রতিমার দাম নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ক্রেতাদের অনেকেই বলছেন, দাম সাধ্যের মধ্যে আবার কেউবা বলছেন দাম আগের চেয়ে বেশি নিচ্ছেন বিক্রেতারা। তবে, এর মধ্যেও বিভিন্ন বয়সের মানুষ এসব হাট থেকে কিনে নিচ্ছেন পছন্দমতো প্রতিমা। হাটে শুধু প্রতিমাই নয় বিক্রি হচ্ছে ফুল, মালা, মিষ্টিসহ পূজার অন্যান্য উপকরণও। 

রীতি অনুযায়ী বিদ্যার দেবী সরস্বতি পূজার পাশাপশি বসন্ত পঞ্চমীতে গণেশ, লক্ষ্মী, নবগ্রহ, বই, খাতা, কলম ও বাদ্যযন্ত্রের পূজা করার রীতি প্রচলিত রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে শীত ঋতুর অবসান হয়ে বসন্ত ঋতুর আগমন বার্তা ঘটবে।

প্রতিমা কিনতে আসা উত্তম সাহা বলেন, “শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ীতে সরস্বতী প্রতিমার হাট বসেছে। এবার বাড়িতে পূজা করাব। ছেলেকে নিয়ে হাটে প্রতিমা কিনতে এসেছি। ঘুরে ফিরে পছন্দমত প্রতিমা কিনেছি। আমি মনে করি, পূজা নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হবে।”

অপর ক্রেতা নারু গোপাল বলেন, “প্রতিবছর এখানে প্রতিমার হাট বসে। এবে এবার প্রতিমার আমদানি একটু কম। তারপরেও দেখে বুঝে দরদাম করে একটি প্রতিমা কিনেছি। এবার আমাদের বাড়িতে সরস্বতী পূজা হবে।”

অপর ক্রেতা পরিমল চন্দ্র ঢালী বলেন, “এক একটি প্রতিমা ২০০ তেকে ১০ হাজার টাকা পযর্ন্ত বিক্রি হচ্ছে। হাটে এসে প্রতিমা দেখছি। পছন্দ হলে কিনে নিয়ে যাব। গত বছরের তুলনায় এবার প্রতিমার দাম একটু বেশি।”

গোপালগঞ্জ শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ীর হাটে প্রতিমা বিক্রি করতে আসা উত্তম পাল বলেন, “এবার ২০টি প্রতিমা নিয়ে এসেছি। ইতোমধ্যে ১০টি বিক্রি করা হয়েছে। তবে এবার ক্রেতার সংখ্যা একটু কম। আশা করি, বাকি দুই দিনও বেচাকেনা হবে।”

কার্ত্তিক পাল বলেন, “কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ গ্রাম থেকে ৩০টি প্রতিমা নিয়ে এসেছি বিক্রির জন্য। চার থেকে পাঁচটি প্রতিমা বিক্রি করেছি। ক্রেতারা যে দাম বলছেন, তাতে প্রতিমা বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ প্রতিমা তৈরির অনুসঙ্গের যে দাম তাতে খরচও উঠছে না।”

স্বপন পাল নামে এক বিক্রেতা বলেন, “প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত ছোন, রংসহ বিভিন্ন সরঞ্জামের দাম প্রতিবছর বেড়েই চলছে। ক্রেতারা যে দাম বলছেন, সেই দামে বিক্রি করলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে। তারপরেও বাব-দাদার পেশা আমরা ধরে রেখেছি।”

ঢাকা/বাদল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ