মৃত্যু নিশ্চিত করতে ছুরিকাঘাতে ফুসফুস ক্ষতবিক্ষত করে ডাকাতরা
Published: 20th, January 2025 GMT
অভিযানকালে ডাকাতদলের তিন সদস্য সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার ওরফে নির্জনকে প্রথমে ছুরিকাঘাত করে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে ডাকাতরা সেনা কর্মকর্তার গলার ডান পাশে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে গুরুতম জখম করে। এতে তাঁর ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতবিক্ষত হয়। তখন বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরা ছিলেন ওই সেনা কর্মকর্তা, কিন্তু এতেও তিনি রক্ষা পাননি। কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় অভিযানের সময় সেনা কর্মকর্তা তানজিম ছারোয়ারকে এভাবে হত্যা করে ডাকাতরা। ছুরিকাঘাতে হত্যা করা তিন ডাকাত হলো- নুরুল আমিন, নাছির ও মোর্শেদ।
গতকাল রোববার চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পুলিশের দাখিল করা অভিযোগপত্রে এ তথ্য উঠে আসে।
জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত পৌনে তিনটার দিকে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়ায় ডাকাতি প্রতিরোধ অভিযানে গিয়ে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে নিহত হন সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার (২৩)।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়ায় মাছ ব্যবসায়ী রেজাউল করিমের বাড়িতে ডাকাতি প্রস্তুতির গোপন সংবাদ পেয়ে রাত পৌনে তিনটার দিকে মেজর উজ্জ্বল মিয়ার নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী অভিযান চালায়। এ সময় ডাকাত দলের সদস্যরা যৌথ বাহিনী সদস্যদের দেখে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তখন লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার এগিয়ে গিয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে তাদের দাঁড়ানোর জন্য বলেন এবং একটি ফাঁকা গুলি ছোড়েন। এ সময় অস্ত্রধারী ডাকাতদলের হেলাল উদ্দিন, নুরুল আমিন, আবদুল করিম, মোর্শেদ আলম, নাছির উদ্দিন ও মিনহাজ উদ্দিন গুলি করতে করতে পালিয়ে যান। তখন তানজিম ছারোয়ার তাদের ধাওয়া করেন। কিছু দূর গিয়ে একটি বাড়ির উঠানে তারের বেড়ায় বেধে ডাকাত মোর্শেদ আলম পড়ে গেলে তাকে ধরে ফেলেন সেনা কর্মকর্তা।
এ সময় ডাকাত নুরুল আমিন ও নাছির উদ্দিন ধরা পড়া মোর্শেদ আলম সেনা কর্মকর্তা তানজিমের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। নুরুল আমিন, নাছির ও মোর্শেদ ছুরি দিয়ে তাঁর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করতে থাকেন। মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলার ডান পাশে ছুরি চালিয়ে দেওয়া হয়। এতে তানজিমের ফুসফুস পর্যন্ত ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। গায়ে বুলেটপ্রুফ পোশাক থাকলেও তিনজনের ছুরিকাঘাতে রক্ষা পাননি তিনি। তখন ঘটনাস্থলের আশপাশ থেকে স্থানীয় লোকজন ও অভিযানকারী দলের সদস্যদের আসতে দেখে গুরুতর জখম অবস্থায় তানজিম ছারোয়ারকে ফেলে ডাকাতরা বেড়া টপকে পালিয়ে যায়। পরে মারাত্মক জখম অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ডুলাহাজারা মালুমঘাট খ্রিষ্টান মেমোরিয়াল হাসপাতাল এবং সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে রামু ক্যান্টনমেন্টের সিএমএইচে নেওয়া হয়। চিকিৎসক তাঁকে ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ঘটনার অন্তত তিন–চার দিন আগে থেকে আসামি জালাল উদ্দিন, হেলাল উদ্দিন, মোহাম্মদ আরিফ উল্লাহ, আনোয়ার হাকিম, জিয়াবুল করিম, মো.
এ ঘটনায় ২০২৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার আবদুল্লাহ আল হারুনুর রশিদ বাদী হয়ে ১৭ জনের বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্তুতিসহ চকরিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন। চকরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে একই আসামিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা করেন। মামলা দুটি তদন্তের দায়িত্ব পান চকরিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অরূপ কুমার চৌধুরী। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দীর্ঘ চার মাসের তদন্ত শেষে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকায় এজাহারনামীয় ছয়জন আসামিকে বাদ দেন এবং নতুন করে সাতজনকে যুক্ত করে দুটি মামলায় মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও চকরিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অরূপ কুমার চৌধুরী বলেন, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, আসামিদের কললিস্ট পর্যালোচনা, গ্রেপ্তার আসামিদের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এবং গোপন তদন্তে লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার হত্যাকাণ্ডে ১৮ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। আদালতে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করলে তা গ্রহণ করা হয়। এছাড়া পলাতক ছয় আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও মালামাল ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। অভিযোগপত্রভুক্ত বাকি ১২ আসামি বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম র শ দ আলম ল কর ম চকর য় সদস য ত করত এ সময় তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
ঘোড়ার গাড়িতে ইমামের রাজকীয় বিদায়, পেনশন পেলেন ৯ লাখ টাকা
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে নতুন কহেলা জামে মসজিদের ইমাম ও খতীবকে তিন যুগ ইমামতি শেষে রাজকীয় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, ইমামকে এককালীন পেনশন হিসেবে দেওয়া হয়েছে ৯ লাখ টাকা।
মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার উয়ার্শী ইউনিয়নের নতুন কহেলা এলাকায় গ্রামবাসীর উদ্যোগে এ সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।
জানা গেছে, ১৯৯১ সালে মাওলানা মোহাম্মদ শাজাহান খান নতুন কহেলা জামে মসজিদে ইমাম ও খতিব হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর থেকে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দীর্ঘ ৩৪ বছর ইমামতি করেন তিনি। গ্রামের প্রতিটি মানুষের সাথে তার রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থীকে তিনি কুরআন শিখিয়েছেন। তার শেষ বয়সে এলাকাবাসী ইমামকে সম্মানিত করতে সজ্জিত ঘোড়ার গাড়ি টমটমে করে বিদায় দিয়েছেন। এছাড়া ঘোড়ার গাড়ি বহরের সঙ্গী হয়েছে অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল। গ্রামবাসীরা হাত নেড়ে ইমামের কর্মজীবনের শেষ বিদায় জানান।
১৯৯১ সালে যুবক বয়সে ৬০০ টাকা বেতন পাওয়া ইমামের বিদায়কালে বেতন হয় ১৭ হাজার পাঁচশত টাকা। তিনি মির্জাপুর উপজেলার বানাইল ইউনিয়নের দেওড়া গ্রামের মৃত কুরবান আলীর ছেলে।
তিনি ঢাকার লালবাগের একটি স্বনামধন্য মাদ্রাসা থেকে মাওলানা পাস করেন। পরে তিনি এই মসজিদে ইমাম হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তার মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী সে সময়ে ৬০০ টাকা বেতন ধার্য করা হয়। দীর্ঘ ৩৪ বছরের ইমামতি পেশায় থাকাকালীন এলাকায় ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছেন। ফলে তার বিদায় বেলায় এককালীন পেনশন দেওয়া হয়েছে ৯ লাখ ৩ শত টাকা।
২০২৪ সালে গ্রামের পক্ষ থেকে এই ইমামকে ওমরাহ হজে পাঠানো হয়। এ ছাড়া, গ্রামের মানুষ নানা ধরনের উপহার দিয়ে বিদায় জানান। তার বিদায় সফরসঙ্গী হয়ে গ্রামের প্রায় ৩ শতাধিক মানুষ ৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ইমামের নিজ বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসেন। এমন বিদায় জানাতে পেরে খুশি স্থানীয় গ্রামবাসীরাও। এমন ব্যতিক্রমী বিদায়ে এলাকাবাসীর ভালোবাসার কাছে আবেগাপ্লুত হয়ে কেঁদে কৃতজ্ঞতা জানান ইমাম।
বিদায় সংবর্ধনা পাওয়া ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ শাজাহান খান বলেন, আমি গ্রামের প্রায় দেড় হাজার মানুষের জানাজা পড়িয়েছি। ৬০০ জনকে কোরআন শিক্ষা দিয়েছি। আল্লাহর রহমতে আমি কাজগুলো করতে পেরেছি, এজন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। আমার বিদায়বেলায় এলাকার মানুষ এত বড় আয়োজন করেছে তার জন্য এলাকার মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
নতুন কহেলা গ্রামের বাসিন্দা আবুল হাশেম খান বলেন, ইমান মাওলানা মোহাম্মদ শাজাহান খান তার চাকরি জীবনে গ্রামের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এই ইমামের প্রতি যে গ্রামবাসীর ভালবাসা তা জনশ্রুতেই বুঝা যায়।
নতুন কহেলা জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি সেলিম খান বলেন, এমন বিদায় সমাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তিনি এলাকার মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। ইমামের পরবর্তী জীবন ভালো কাটতে সরকারি চাকুরীর মত পেনশন দেওয়া হয়েছে।