টাঙ্গাইলে পর্নোগ্রাফি মামলায় স্কুলছাত্রী গ্রেপ্তার
Published: 20th, January 2025 GMT
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় শিক্ষিকা ও ছাত্রীসহ বিভিন্নজনের ছবি ব্যবহার করে পর্নো ভিডিও বানিয়ে বিভিন্ন ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে পোস্ট করে টাকা দাবির অভিযোগে স্কুলছাত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে গ্রেপ্তার ওই স্কুল শিক্ষার্থীকে আদালতে পাঠিয়েছে থানা পুলিশ। এর আগে গত রবিবার (১৯ জানুয়ারি) রাতে পূর্ব ভূঞাপুর বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার তাইবা সুলতানা মেধা উপজেলার ফলদা ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের শিক্ষক আব্দুল খালেকের মেয়ে। মেধা এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী।
ওই স্কুল ছাত্রীকে গ্রেপ্তারের খবরে কয়েকজন ভুক্তভোগী থানায় হাজির হয়। এ সময় তারা ওই ছাত্রীসহ তার অভিভাবকদেরও শাস্তি দাবি করেন।
আরো পড়ুন:
এক কলেজের ৫৩ শিক্ষার্থী পেলেন মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ
নিরলস অধ্যয়নে মেডিকেলে ভর্তিতে দেশসেরা সুশোভন
পুলিশ জানায়, উপজেলার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষিকা, ছাত্রী ও ব্যক্তিদের ছবি ব্যবহার পর্নো ভিডিও তৈরি করে একাধিক ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ বানিয়ে সেখানে পোস্ট করা হয়। পরে পোস্ট করা ভিডিওর সঙ্গে মোবাইল নম্বর দিয়ে লাখ লাখ টাকা চাওয়া হয়। ‘দিলরুবা’ ও ‘রাকিবুল ইসলাম’ নামের আইডি থেকে এলাকার অনেকের আইডি যুক্ত করে ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ তৈরি করে। পরে সেই গ্রুপে পর্নো ভিডিও পোস্ট করা হয়। পরে ফেসবুক, গুগল কর্তৃপক্ষের সঙ্গ যোগাযোগ করে আইডিগুলোর মালিক বা ব্যবহারকারী শনাক্ত করা হয়। এই ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে ভূঞাপুর পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী তাইবা সুলতানা মেধার ফোন ও ল্যাপটপ জব্দ করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে জব্দ করা ফোনে এ সব পোস্ট ও ভিডিও ছড়ানোর সত্যতা পাওয়া যায়।
গ্রেপ্তার স্কুল ছাত্রী তাইবা সুলতানা মেধা বলেন, ‘‘আমার ছবি ব্যবহার করে পর্নো ভিডিও বানানো হয়েছে। সেই ভিডিও দিয়ে আমার পরিবারের কাছে টাকা চাওয়া হয়েছে। এ ঘটনার জড়িত মির্জাপুরের সীমান্ত ও গোপালপুরের সিফাতকে পুলিশ ডেকে এনেছিল। তারা স্বীকারও করেছেন কিন্তু তারপরও তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের কাজের সঙ্গে আমি জড়িত না, সেটার প্রমাণ আমার কাছে আছে।’’
গ্রেপ্তার স্কুল ছাত্রী মেধার বাবা আব্দুল খালেক বলেন, ‘‘আমার মেয়ের ছবি দিয়ে নগ্ন ভিডিও বানিয়ে টাকা দাবি করা হয়েছিল। যে নম্বরগুলোতে টাকা চাওয়া হয়েছিল তাদের পুলিশ ধরেছিল। তারা স্বীকারও করেছেন। সেই সময় মেয়ের মোবাইল চেক করে কিছু পাওয়া যায়নি। পরে মোবাইল ফেরত দিলেও রবিবার রাতে মেয়েকে থানায় নিয়ে যায়। সোমবার পর্নোগ্রাফি মামলায় তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এটার সঙ্গে মেয়ে জড়িত না।’’
ভূঞাপুর থানার তদন্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, জি-মেইল দিয়ে একাধিক ফেসবুক আইডি খোলা হয়েছে ওই ছাত্রীর মোবাইল দিয়ে। লোকলজ্জার ভয়ে অনেকে কিছু বলতে চান না। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী একজন থানায় অভিযোগ করেন। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করা হয়। এতে গুগল, ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পরে তদন্তে আইডির ব্যবহারকারীর পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পরই ওই ছাত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা/কাওছার/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প স ট কর ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমার মতো দরিদ্র মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিতে চাই’
বাবা ইজিবাইকচালক, মা গৃহিণী। এক টুকরো ভিটে ও টিনের ঘর ছাড়া কিছুই নেই। এই দারিদ্র্যও দমাতে পারেনি মেধাবী মেয়েটিকে। দারিদ্র্যকে জয় করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
এমন কৃতিত্বের অধিকারী নন্দিনী রানী সরকার মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের গিলন্ড গ্রামের অনিল চন্দ্র সরকারের মেয়ে। দুই বোনের মধ্যে নন্দিনী বড়। ছোট বোন বিনা রানী সরকারও মেধাবী শিক্ষার্থী। এবার সে এসএসসি পরীক্ষা দেবে।
নন্দিনীর সাফল্যে পরিবারের পাশাপাশি শিক্ষক ও এলাকার লোকজন সবাই খুশি। তবে আর্থিক টানাপড়েনে মেয়ের পড়াশোনার পরবর্তী খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে পরিবারটি। ইতোমধ্যে অবশ্য অনেকেই নন্দিনীর পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন।
নন্দিনী পিএসসিতে জিপিএ ৫, জেএসসিতে জিপিএ ৪.৪৬, এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ ৫ ও এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পান।
নন্দিনীদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট একটি টিনের ঘর। প্রতিবেশীরা নন্দিনীর সাফল্যে তাদের বাড়িতে এসে শুভ কামনা জানাচ্ছেন। বাড়ির উঠানে রান্না করছেন নন্দিনীর মা সীমা সরকার। মায়ের পাশে বসে রয়েছেন নন্দিনী ও তাঁর বোন বিনা।
নন্দিনীর বাবা অনিল চন্দ্র সরকার জানান, ইজিবাইক চালিয়ে দুই মেয়ে, স্ত্রী ও বাবা-মাকে নিয়ে ছয় সদস্যের সংসার চলে। তাঁর দুই মেয়েই বেশ মেধাবী। মেয়েদের যে চাহিদা, সেটা বাবা হিসেবে কখনও পূরণ করতে পারেননি। মেয়ের স্কুলের শিক্ষকদের কারণে তাঁর মেয়ে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এতে তিনি অনেক আনন্দিত। তিনি বলেন, ‘মেডিকেলে পড়ানোর মতো টাকাপয়সা নাই আমার। মেডিকেলে মেয়ের পড়াশোনায় কেউ যদি সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসত তাহলে চিন্তা থাকত না।’
নন্দিনীর মা সীমা রানী সরকার বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে মেয়েগো প্রাইভেট পড়াতে পারি নাই। পড়ার জন্য নাই কোনো টেবিল-চেয়ার। মাস্টাররা সাহায্য-সহযোগিতা না করলে আমার মেয়ে এতদূর আসত পারত না, ভালো রেজাল্ট করতে পারত না। কিন্তু পড়ালেখার খরচের কথা মাথায় আসলে সেই আনন্দ আর থাকে না।’
নন্দিনী রানী সরকার একজন সফল চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলছি। স্কুল ও কলেজে স্যাররা আমাকে বিনা বেতনে পড়িয়েছেন। বই থেকে শুরু করে সব সহায়তা পেয়েছি। আমার বাবার সামর্থ্য নাই, এত টাকা দিয়ে আমাকে পড়াবেন। সরকার বা কেউ সাহায্য করলে আমার মেডিকেলে পড়ালেখা করা সম্ভব হবে। আমার স্বপ্ন, আমি যেন ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে পারি। আমি যেমন দরিদ্র, অনেক দরিদ্র মানুষ আছেন যারা বিনা চিকিৎসায় মারা যান তাদের সাহায্য করতে চাই, সেবা করতে চাই।’
নবগ্রাম ইউনিয়নের কানিজ ফাতেমা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন নন্দিনী। এ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আবদুল হালিম বলেন, নন্দিনী মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় তাঁর স্কুল ও কলেজের সবাই খুশি। এখন মেডিকেলে ভর্তির জন্য নন্দিনীর পাশে তার স্কুল থাকবে।
জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, আমরা নন্দিনীর মতো অদম্য মেধাবীদের দিয়ে আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ গড়ব। মেধাবীদের এগিয়ে নিতে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।