বিলিয়নেয়ারের দিন শেষ, আসছে পৃথিবীর প্রথম 'ট্রিলিয়নেয়ার'
Published: 20th, January 2025 GMT
নিজেকে কল্পনা করুন ধনী একজন মানুষ হিসেবে। আপনার কাল্পনিক সম্পদের পরিমাণ কত হবে? লাখ, কোটি, মিলিয়ন, বিলিয়ন? নিজেকে কল্পনা করুন একজন বিলিয়নেয়ার হিসেবে। এবার ভাবুন একজন বিলিয়নেয়ারের চেয়েও বড় ধনকুবেরকে- তিনি হলেন একজন ট্রিলিয়নেয়ার। আগামী দশকের মাঝেই পৃথিবীর অন্তত পাঁচজন মানুষ এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিকারি হয়ে যাবেন, হয়ে উঠবেন পৃথিবীর প্রথম ট্রিলিয়নেয়ার। বৈশ্বিক অর্থনীতির বর্তমান ধারা বজায় থাকলে এক দশক পর আর বিলিয়নেয়ারদের আধিপত্য থাকবে না, তাদের স্থান দখল করে নেবে ট্রিলিয়নেয়াররা, রোববারের এক প্রতিবেসনে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফাম।
কারা হতে চলেছেন প্রথম ট্রিলিয়নেয়ার?
টেসলা এবং স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও ইলন মাস্ক বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। ৪৩০ মার্কিন ডলারের মালিক এই ধনকুবের আগামী পাঁচ বছরের মাঝেই হয়ে উঠতে পারেন একজন ট্রিলিয়নেয়ার। অন্যান্যদের মাঝেও রয়েছেন পরিচিত কয়েক ধনকুবের। আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস, ওরাকলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসন, মেটা সিইও মারর জাকারবার্গ- তারাও মাস্কের পর পরই হতে চলেছেন ট্রিলিয়নিয়ার। ফরাসি ফ্যাশন কোম্পানি লুই ভিটনের সিইও বার্নার্ড আর্নো এবং তার পরিবার রয়েছেন তাদের ঠিক পেছনেই।
ফোর্বসের সংগ্রহ করা তথ্য থেকে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে অক্সফাম। দেখা গেছে, পৃথিবীর বিভিন্ন ধনকুবের এবং তাদের পরিবারের জন্য ২০২৪ সালটি একেবারে সোনায় সোহাগা অবস্থায় পার হয়েছে। এর পেছনে মার্কিন স্টক মার্কেটের আংশিক প্রভাব ছিল। এক বছরেই এসব ধনকুবেরের সম্পদ এত দ্রুত ফুলেফেঁপে উঠেছে যে অক্সফাম বলতে বাধ্য হয়েছে- আগামী দশ বছরের মাঝেই পাওয়া যাবে একজন ট্রিলিয়নেয়ারকে।
সারা বিশ্বের জন্য খুশির সংবাদ নয় এটি
একদিকে পৃথিবীর হাতেগোনা কিছু মানুষ বিপুল ঐশ্বর্যের অধিকারি হতে যাচ্ছেন, অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যা তলিয়ে যাচ্ছেন দারিদ্র্যে- তা আসলে বিশ্বের জন্য ভালো কিছু নয়।
এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার একটি অবিশ্বাস্য পরিমাণ, বলেন অক্সফামের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা রেবেকা রিডেল।
"ধনসম্পত্তির এমন বিশাল বৈষম্যে আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই," মনে করিয়ে দেন তিনি।
দিনে দিনে বেড়ে চলেছে বিলিয়নেয়ারের সংখ্যা। বর্তমানে প্রায় ২,৭৭০ মানুষের গায়ে লেগেছে বিলিয়নেয়ারের তকমা। অথচ দারিদ্র্য কমেনি বললেই চলে। ১৯৯০ সালে পৃথিবীতে যে পরিমাণ দরিদ্র মানুষ ছিলেন, এখনো তাদের সংখ্যা প্রায় তেমনই আছে, বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে জানা যায়।
ধনী মানুষরা পরিশ্রম করে নিজেদের এই বিশাল সম্পদ তৈরি করেছেন, এমনটাও বলা যায় না। অক্সফামের প্রতিবেদন বলে বর্তমানে বিলিয়নেয়ারদের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি এই বিপুল সম্পত্তি পেয়েছেন উত্তরাধিকার সুত্রে।
টাকার সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে রাজনীতি
ধনকুবেররা তাদের সম্পত্তি ব্যবহার করে রাজনীতিতে প্রভাব খাটাচ্ছেন- এ ধরনের ঘটনা ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প- আজকে যার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান- তার নির্বাচনী প্রচারণায় নজিরবিহীন টাকা ঢেলেছেন ইলন মাস্ক। প্রচারণায় ২৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করার ফলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে ট্রাম্পের সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে বেশ টেকসই একটা আসন পেতে যাচ্ছেন মাস্ক। ফলে ধরেই নেওয়া যায় ট্রাম্পের শাসনামলে বিভিন্ন সিদ্ধান্তে তার প্রভাব থাকবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইলন ম স ক ন একজন পর ম ণ
এছাড়াও পড়ুন:
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: আবারও উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা
উপাচার্যের একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে বারবার অশান্ত হয়ে উঠছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)। গত ২৩ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক ড. শুচিতা শারমিন উপাচার্য নিযুক্ত হওয়ার পর গত ৭ মাসে একাধিকবার তাঁর পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহসিন উদ্দিনকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর আখ্যা দিয়ে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রতিবাদে তারা আবারও আন্দোলনে নেমেছেন। ড. মুহসিনকে পুনর্বহাল ও উপাচার্যকে ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীরা সোমবার ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন।
ড. মুহসিন জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে এবং উপাচার্যের আস্থাভাজন শিক্ষকরা আন্দোলনের বিপক্ষে ছিলেন– তাঁর একটি ভার্চুয়াল সভার অডিও গত শনিবার ভাইরাল হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষকদের নিয়ে ওই সভাটি করেছিলেন। অডিও ভাইরাল হওয়ার পর ড. মুহসিনকে পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার দুপুরে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও পরে উপাচার্যের দপ্তরে গিয়ে শিক্ষার্থীরা ৪ দফা দাবিসংবলিত স্মারকলিপি দেন। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি না মানলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। দাবিগুলো হলো– অধ্যাপক মুহসিন উদ্দিনের বিরুদ্ধে মিথ্যা-অপমানজনক অপবাদ প্রত্যাহার, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য পদে পুনর্বহাল; অবসরের পর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণ; ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের দোসর শিক্ষকদের লাভজনক কমিটি থেকে অপসারণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যমান উন্নয়ন না করে একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসন করায় উপাচার্যকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া।
আন্দোলনকারীদের অন্যতম ইংরেজি চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিন খান জানান, একজন নিরপরাধ শিক্ষককে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ায় সাধারণ শিক্ষর্থীরা ক্ষুব্ধ। সোমবার তারা উপাচার্যের দপ্তরে গিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন। তারা জেনেছেন, গতকাল তিনি ক্যাম্পাসে ছিলেন না। চার দফা দাবি না মানলে বড় আন্দোলন গড়ে তুলবেন।
উপাচার্যের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
ড. শুচিতা যোগদানের পরই শিক্ষার্থীরা অভিযোগ তোলেন, তিনি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর অনুসারী। জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের ৩৫০ বিশিষ্টজন গত বছর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সমর্থনে বিবৃতি দিয়েছিলেন। উপাচার্যও সেই বিবৃতিদাতাদের একজন। এ ছাড়া কলিমুল্লাহকে ববির একাডেমিক কাউন্সিলর, পরীক্ষা কমিটি ও পূর্বের চাকরি গণনা কমিটির সদস্য করা হলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রত্যাহার করেন তিনি।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম রাব্বানীর অভিযোগ, তিনি সব একাডেমিক কাজের প্রশাসনিক তত্ত্বাবধান করবেন। কিন্তু উপাচার্য তাঁকে বাদ দিয়েই নথিভিত্তিক ও সভাভিত্তিক একাডেমিক সিদ্ধান্ত নেন। কোষাধ্যক্ষ ড. মামুন অর রশিদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিতে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত চেক কোষাধ্যক্ষ এবং তদূর্ধ্ব চেক উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ যৌথ স্বাক্ষর করবেন। কিন্তু উপাচার্য সব চেকে একাই স্বাক্ষর করেন। এসব অভিযোগ এর আগে শিক্ষার্থীরা দুইবার উপচার্যের পদত্যাগে এক দফার আন্দোলনে নেমেছিলেন। গত ২৮ নভেম্বর তাঁর কক্ষে তালাও লাগিয়েছিলেন তারা।
শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে বক্তব্য জানতে উপাচার্য ড. শুচিতা শারমিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল ও মেসেজ দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি। পরে সোমবার রাতে তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা সাকিব হোসেন জানান, উপাচার্য সারাদিন একাধিক বৈঠক করেছেন। এখন তিনি বিশ্রামে রয়েছেন।