সেই তিন কার্গো ছেড়ে দিল আরাকান আর্মি
Published: 20th, January 2025 GMT
চার দিন আটক রাখার পর পণ্যবাহী কার্গো বোটগুলো ছেড়ে দিয়েছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন থেকে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে গত বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) নাফ নদীর মোহনায় তিনটি কার্গো বোট আটক করেছিল গোষ্ঠীটি।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় আটক তিন কার্গোর মধ্যে দুটি নাফ নদের জলসীমা নাইক্ষ্যংদিয়া থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। ইতোমধ্যে একটি কার্গো স্থলবন্দরের ঘাটে পৌঁছেছে।
টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্টের ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, ওই তিন কার্গোতে ৫০ হাজার বস্তা পণ্য আছে। কার্গোতে থাকা শুঁটকি মাছ, সুপারি, কফিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, “সকালে দুটি কার্গো ছেড়ে দিয়েছে আরাকান আর্মি। একটি বন্দর ঘাটে পৌঁছেছে। বাকি কার্গোগুলোর বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।”
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার ইয়াঙ্গুন থেকে টেকনাফে আসার পথে পণ্যবাহী তিনটি কার্গো নাফ নদের মোহনায় আটকে রাখে আরাকান আর্মি।
ঢাকা/তারেকুর/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আর ক ন আর ম
এছাড়াও পড়ুন:
টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে দেড় মাস ধরে বন্ধ সীমান্ত
কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরের সঙ্গে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন ও আকিয়াব বন্দরের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রায় দেড় মাস ধরে বন্ধ রেখেছে সে দেশের সরকার। কারণ, ইয়াঙ্গুন ও আকিয়াব বন্দর থেকে টেকনাফে আসার পথে পণ্যবাহী নৌযানগুলো আটকে দেয় দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সদস্যরা।
টেকনাফভিত্তিক আমদানি–রপ্তানিকারকেরা জানান, গত ১৬ জানুয়ারি তিনটি নৌযান আটকের পর ইয়াঙ্গুন ও আকিয়াব বন্দর থেকে আজ শনিবার দুপুর পর্যন্ত কোনো পণ্যবাহী নৌযান টেকনাফে আসেনি। ওই ঘটনার চার দিন পর পণ্যবাহী দুটি নৌযান ছেড়ে দেওয়া হয়। অন্যটি ছাড়ে ১৬ দিন পর। এ ছাড়া গত ১০ ফেব্রুয়ারি শাহপরীর দ্বীপের গোলারচর থেকে স্পিডবোটে ধাওয়া করে কাঠবোঝাই একটি ট্রলার অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। সেটি এখনো ছাড়েনি তারা। তবে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রিত রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের সঙ্গে টেকনাফ স্থলবন্দরের বাণিজ্য সীমিত পরিসরে চালু রয়েছে।
স্থলবন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা বলেন, মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সংঘাতের কারণে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে। এতে টেকনাফের ব্যবসায়ীরা বেকায়দায় ও বিপাকে পড়েছেন।
টেকনাফ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, নাফ নদী ও সাগরে আরাকান আর্মি পণ্যবাহী নৌযান আটেক দেওয়ায় টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে সীমান্ত বাণিজ্য প্রায় দেড় মাস ধরে বন্ধ রেখেছে মিয়ানমার সরকার।
এদিকে সরেজমিনে টেকনাফ স্থলবন্দরে গিয়ে দেখা গেছে, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের কোনো কর্মব্যস্ততা নেই। জেটিতে শুধু চালভর্তি একটি ট্রলার রয়েছে। আরেকটি ট্রলারে সিমেন্ট ও পানির বোতল ভর্তি করে রাখা হয়েছে।
স্থলবন্দরের শ্রমিকনেতা আজগর আলী বলেন, ‘শুধু মংডুর সঙ্গে টেকনাফের বাণিজ্য থেমে থেমে চলছে। গত দুই দিনে মংডু থেকে ৪ হাজার ৩০০ বস্তা চাল নিয়ে দুটি ট্রলার এসেছে। কোনো পণ্য না আসায় বসে থাকতে হচ্ছে। আমাদের আর কোনো আয়-রোজগারও নেই। খুব বেকায়দায় আছি আমরা।’
শুল্ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৪৯ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। এর বিপরীতে ২৯৫ কোটি টাকার রাজস্ব পেয়েছে সরকার। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১১ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানির বিপরীতে ৯১ কোটি টাকার রাজস্ব পায় সরকার। রাখাইনে সংঘাতের কারণে পণ্য আমদানি কম হওয়ায় রাজস্ব আদায় কমে গেছে। অন্যদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় এক কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল দুই কোটি টাকা মূল্যের ১ হাজার ৮২৮ মেট্রিক টন পণ্য।
টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক এনাম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ব্যবসায়ী এনামুল হক বলেন, সীমান্ত বাণিজ্য মূলত ইয়াঙ্গুন ও আকিয়াব বন্দরের সঙ্গে হয়। কিন্তু দুঃখজনভাবে গত দেড় মাস ধরে সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ রেখেছে মিয়ানমার সরকার। তিনি আরও বলেন, ‘দেশটিতে সংঘাতের কারণে উভয় দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি সীমান্ত বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা হতাশ।
মাছ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সুফিয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এম কায়সার জুয়েল বলেন, ‘মিয়ানমারের রুই, কাতলা ও ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশে। বিশেষ করে রমজানে বছরের অন্য সময়ের চেয়ে চাহিদা বৃদ্ধি পায়; কিন্তু এবার কোনো মাছই আসছে না। বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে দুই দেশের সরকারের এগিয়ে আসা উচিত।’
টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট টেকনাফ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গত দেড় মাসে ইয়াঙ্গুন-আকিযাব বন্দর থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে কোনো পণ্যবাহী নৌযান আসেনি। তবে মংডু টাউনশিপ থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রপ্তানি থেমে থেমে হচ্ছে। তা–ও আবার সীমিত পরিসরে।’
স্থলবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা বিএম আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, মিয়ানমার থেকে পণ্য আসা বন্ধ থাকায় দৈনিক ৪ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
মিয়ানমার থেকে সাধারণত ছোলা, পিঁয়াজ, রসুন, জিরা, হিমায়িত মাছ, শুঁটকি, আচার, শুকনা সুপারি ও নারকেলসহ বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়।
জানতে চাইলে টেকনাফর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, মিয়ানমারের জলসীমায় সে দেশের বিদ্রোহী আরাকান আর্মি তল্লাশির নামে পণ্যবাহী জাহাজ আটকে দেয়। এতে টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।