খাগড়াছড়িতে জানুয়ারি মাসের শুরুতেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৩ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শীতজনিতসহ অন্যান্য রোগে মারা গেছে আরো ৬ শিশু। এরআগে ডিসেম্বরে খাগড়াছড়িতে ১৪ শিশু প্রাণ হারিয়েছে।

খাগড়াছড়ি সিভিল সার্জন অফিস থেকে এ তথ্য জানা গেছে। 

সিভিল সার্জন অফিস জানায়, খাগড়াছড়িতে ডিসেম্বরে নিউমোনিয়া, এআরআই (অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন), ব্রঙ্কাইটিস ধরনের রোগে হাসপাতালে অনেক শিশু এসেছে। ডিসেম্বরে শীতজনিত নানা রোগে খাগড়াছড়িতে ১৪ জন শিশু মারা গেছে। যাদের বেশির ভাগই শিশু। জানুয়ারিতেও অনেক রোগী ভর্তি হয়েছে, এর মধ্যে শিশু রোগী বেশি। এ মাসে শীতজনিত রোগে ৯ জন শিশু মারা গেছে। তারমধ্যে নিউমোনিয়ায় মারা গেছে ৩ জন। আগামীতে আরো শীত বাড়তে পারে, তাই শিশুদের যাতে ঠান্ডা না লাগে সে বিষয়ে অভিভাবকদের সর্তক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

খাগড়াছড়িতে শীতের প্রকোপ কিছুটা কম থাকলেও তুলনামূলক রোগীর সংখ্যা বেশি। রবিবার জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১৬০ জন। এদের মধ্যে অধিকাংশই নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশিসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। 

চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনরা জানান, শীতজনিত রোগ নিয়ে তারা ভর্তি হয়েছেন। এক্ষেত্রে হাসপাতালের চিকিৎসকরা আন্তরিকভাবে চিকিৎসা দিলেও জটিল অবস্থা হওয়ায় শিশুদের রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। 

বর্তমানে খাগড়াছড়ি সদর হাসাপাতালে শীতজনিত রোগে ১২ জন শিশু ভর্তি রয়েছে। খাগড়াছড়ি সদরের মহাজন পাড়া থেকে আসা যোগী চাকমা জানান, তার মেয়ের বয়স দেড় মাস। ঠান্ডায় নিউমোনিয়া হওয়ার কারণে তিনি তার মেয়েকে ভর্তি করেছেন। এখন অবস্থা ভালো। 

দীঘিনালা মেরুং থেকে আসা আমেনা খাতুন জানান, তার ছেলের শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল তাই হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এখন অবস্থা ভালো। 

খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা.

রিপল বাপ্পি চাকমা বলেন, “২৫০ শয্যার খাগড়াছড়ি হাসপাতালে গত মাসে (ডিসেম্বর) এখানে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিল ২০৩ জন রোগী। এ সকল রোগীর মধ্যে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ অন্যান্য রোগীও ছিল। ডিসেম্বর মাসে সেসব রোগীর ১৪ জনই মারা গেছে। এর মধ্যে ৪ জন ছিলেন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত।” 

ঢাকা/রূপায়ন/টিপু 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

হাত জোড় করছি, ফিরিয়ে দিন সন্তানদের

‘কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। দোষ থাকলে, অন্যায় করলে উপযুক্ত শাস্তি দিন। তবু সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারও বুকে না লাগে। আমি হাত জোড় করছি, আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিন।’

গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে এমন আকুতিই জানান অপহৃত দিব্যি চাকমার মা ভারতী দেওয়ান। বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে ফেরার পথে গত বুধবার ভোর ৬টার দিকে পাহাড়ি পাঁচ শিক্ষার্থী অপহৃত হন। এ অপহরণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- ইউপিডিএফকে (প্রসীত) দায়ী করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপহৃতদের উদ্ধরে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।

পিসিপির কেন্দ্রীয় শাখার সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, ‘আমরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, ইউপিডিএফ অপহৃতদের অভিভাবকদের একটি স্থানে ডেকেছে। বিকেলে অভিভাবকরা সেখানকার উদ্দেশে রওনা হন। পরে আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।’ তিনি অবিলম্বে অপহৃতদের সুস্থ শরীরে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা বলেন, অপহরণকারীরা সকালে একটি স্থানের নাম বলেছিল অভিভাবকদের। পরে পরিবর্তন করে আরেকটি স্থানে ডাকে। বিকেল থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। 

অপহৃতরা হলেন– চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও পিসিপির চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা, একই বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংঙি ম্রো। তাদের মধ্যে রিশন চাকমার বাড়ি রাঙামাটির জুরাছড়ির মৈদং ইউনিয়নের জামেরছড়িতে। লংঙি ম্রোর বাড়ি বান্দরবানের আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নে; একই জেলায় বাড় অলড্রিন ত্রিপুরার; রাঙামাটির বরকল সদরের চাইল্যাতুলিতে দিব্যি চাকমা ও একই জেলার বাঘাইছড়ির বটতলায় মৈত্রীময় চাকমার।

এর আগে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যান। উৎসব শেষে গত মঙ্গলবার তারা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে আসেন। সেখানে বাসের টিকিট না পাওয়ায় খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছুদূরে পানছড়ি সড়কের কুকিছড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতযাপন করেন। গত বুধবার ভোরে কুকিছড়া থেকে অটোরিকশায় খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল নামক জায়গায় দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে তাদের অপহরণ করে। 

এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও অপহৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত ১৮৩ আদিবাসী শিক্ষার্থী যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথী ভুবন চাকমার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হলেও তাদের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন অপহরণের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মানবাধিকারবিরোধী ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার পরিপন্থি। অপহৃতদের উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।

ইতোমধ্যে অপহৃতদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের অবস্থান কিছুটা শনাক্ত করা গেছে।

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, বিভিন্নভাবে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে আসলে ঘটনাটি কী, কাদের হেফাজতে তারা রয়েছে। যৌথ অভিযানে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ