কাজের লোককে ‘ঝি’ বলা যাবে না কেন, প্রশ্ন অঞ্জন দত্তর
Published: 20th, January 2025 GMT
ভারতীয় বাংলা গানের শ্রোতাপ্রিয় সংগীতশিল্পী অঞ্জন দত্ত। অভিনয়, গান, পরিচালনা— সবক্ষেত্রে চর্চিত তিনি। তাকে নিয়ে ভক্তদের উৎসাহ অন্তহীন। মাঝে মাঝে চলচ্চিত্রের পাশাপাশি ব্যক্তিগত, সমাজ-রাষ্ট্র, রাজনীতি নিয়ে নিজের ভাবনার কথা বলে থাকেন।
কিছু দিন আগে কলকাতার একটি পডকাস্টে কথা বলেন অঞ্জন দত্ত। এ আলাপচারিতায় উঠে আসে আজকালের কলকাতার প্রসঙ্গ। এ শহরের মানুষ ‘রাজনৈতিকভাবে সঠিক’ থাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এই ব্যাপারটির সঙ্গে ঠিকমতো মানিয়ে নিতে পারছেন না তিনি।
এ বিষয়ে অঞ্জন দত্ত বলেন, “পলিটিক্যালি কারেক্টনেসের একটা সমাজ তৈরি হয়েছে। তাতে নিজেকে অ্যাডাপ্ট করতে পারছি না। এই শহরটা, এই কলকাতা কখনই পলিটিক্যালি কারেক্ট ছিল না। সত্তর দশকে এখানে কত কী হয়েছে। এখানে একটা আন্দোলন হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ শেষ কথা নয়।”
আরো পড়ুন:
সারেগামাপা’র বিজয়ী শ্রদ্ধা
সৃজিত-ঋতাভরী কেন আলোচনায়?
এরপর সঞ্চালক গায়ক বলেন, আগে কালো সাহেবের মেয়ে বলা গেলেও সেটা এখন বলা যাবে না। তাহলেই রেসিস্ট তকমা দেগে দেওয়া হবে, এই বিষয়ে আপনার মত কী? প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে অঞ্জন দত্ত বলেন, “এগুলোকে সামনে আনার ইচ্ছা আমার আছে। আমি আজ আমার স্ত্রীকে আমার সমান মনে করি। কেউ তার প্রেমিকাকে নিজের সমান মনে করেন। কিন্তু তাই বলে কি সে সচেতন হবে? নারী স্বাধীনতা তো কবে হয়ে গেছে। তারপরও এই ইকুয়ালিটি এখনো চাপিয়ে দেওয়া হবে কেন?”
খানিকটা ব্যাখ্যা করে অঞ্জন দত্ত বলেন, “মোটাকে ‘মোটা’ বললে বডি শেমিং। মোটাকে ‘মোটা’ বলব না, কালোকে ‘কালো’ বলব না, বোকাকে ‘বোকা’ বলব না তো কী বলব? ঠাট্টা-মজা যদি না করতে পারি একে অন্যকে নিয়ে তাহলে তো গম্ভীর হয়ে থাকতে হবে। তাসের দেশে থাকতে হবে। আনন্দ করে থাকব আমি, এত সচেতন হয়ে থাকব কেন? অফিসে সচেতন থাকব। সবসময় কেন?”
চিত্রনাট্য লেখার ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে অঞ্জন দত্তের। এ তথ্য স্মরণ করে এই শিল্পী বলেন, “নিজেরই স্ক্রিপ্ট লিখতে অসুবিধা হয়। কাজের লোককে ‘ঝি’ বলা যাবে না। কেন ‘কাজের লোক’ বললে কি তার জাত উঠে যাচ্ছে, না নেমে যাচ্ছে, বুঝতে পারছি না। ‘বেশ্যা’ কেন বলতে পারছি না? সেক্স ওয়ার্কার কেন বলতে হবে এটা বুঝতে পারছি না। এটা করতে করতে আমরা আমাদের জীবনের মজা হারিয়ে ফেলছি। বাঁচার আনন্দ হারিয়ে ফেলছি। প্রতি মুহূর্তে সচেতন থাকছি। এটা আমাদের কোথাও পৌঁছে দেবে না।”
গানের পাশাপাশি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেও খ্যাতি কুড়িয়েছেন অঞ্জন দত্ত। ১৯৯৮ সালে ‘বড়দিন’ সিনেমা পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে অভিষেক ঘটে তার। পরবর্তীতে আরো ২১টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ২০১১ সালে তার নির্মিত ‘রঞ্জনা আমি আর আসবোনা’ সিনেমাটি ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে।
তথ্যসূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র চলচ চ ত র
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭% শুল্ক আরোপ করল যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছেন, যাকে ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করছে অনেক দেশ। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়েছে। এতদিন দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ করে শুল্ক ছিল।
বাংলাদেশের প্রধান দুই রপ্তানি বাজারের একটি যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের একটি বড় অংশ রপ্তানি হয় দেশটিতে। যুক্তরাষ্ট্রে বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি হয় প্রায় ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন (৮৪০ কোটি) ডলার, যা প্রধানত তৈরি পোশাক। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তান ৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন (৭৩৪ কোটি) ডলারে।
নতুন করে উচ্চ মাত্রায় এই শুল্ক আরোপে বাংলাদেশের রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা।
ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বুধবার বিকেল ৪টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার দিবাগত রাত ২টা) হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন করে শুল্ক ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে উপস্থিত সাংবাদিকসহ সমবেতদের উদ্দেশে বক্তব্যের শুরুতেই ট্রাম্প বলেন, ‘আজ খুব ভালো খবর’ থাকবে। এ সময় দর্শক সারি থেকে করতালি দিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানানো হয়।
এই দিনকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিবস’ অভিহিত করেন ট্রাম্প। নতুন শুল্ক আরোপকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হিসেবে উল্লেখ করেন। ট্রাম্প বলেন, এই দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ দিন ধরে অপেক্ষা করছে।
ট্রাম্পের পাল্টা এই শুল্ক আরোপে ভারতের পণ্যের ওপর ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। পাকিস্তানের পণ্যের ওপর ২৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে ৩৪ শতাংশ।
এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ, ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার পণ্যে ৪৪ শতাংশ, তাইওয়ানের পণ্যে ৩২ শতাংশ, জাপানের পণ্যে ২৪ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যে ২৫ শতাংশ, থাইল্যান্ডের পণ্যে ৩৬ শতাংশ, সুইজারল্যান্ডের পণ্যে ৩১ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ৩২ শতাংশ, মালয়েশিয়ার পণ্যে ২৪ শতাংশ, কম্বোডিয়ার পণ্যে ৪৯ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের পণ্যে ১০ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার পণ্যে ৩০ শতাংশ, ব্রাজিলের পণ্যে ১০ শতাংশ, সিঙ্গাপুরের পণ্যে ১০ শতাংশ, ইসরায়েলের পণ্যে ১৭ শতাংশ, ফিলিপাইনের পণ্যে ১৭ শতাংশ, চিলির পণ্যে ১০ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ, তুরস্কের পণ্যে ১০ শতাংশ, কলম্বিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ আরোপ করা হয়েছে।
অন্যান্য যেসব দেশের পণ্যের ওপর বেশি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে মিয়ানমারের পণ্যে ৪৪ শতাংশ, লাওসের পণ্যে ৪৮ শতাংশ এবং মাদাগাস্কারের পণ্যের ওপর ৪৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
পাল্টা এই শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে থাকা ট্রাম্প বলেছেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কখনো কখনো ‘বন্ধু শত্রুর চেয়ে খারাপ হয়’।
যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের বিদেশি গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় যেসব গাড়ি উৎপাদন করা হয় তার ৮০ শতাংশের বেশি সেদেশে বিক্রি হয়। আর জাপানে যেসব গাড়ি বিক্রি হয় সেগুলোর ৯০ শতাংশের বেশি সেদেশে তৈরি হয়। এসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি বিক্রি হয় খুব সামান্য।
মার্কিন কোম্পানি ফোর্ড অন্যান্য দেশে খুব কম গাড়ি বিক্রি করে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, অন্য যে কোনো দেশে তৈরি মোটরযানের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে এবং এটা আজ মধ্যরাত থেকেই কার্যকর হবে।
শুল্ক আরোপের ঘোষণাকে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রতিফলন উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, আজকের দিনকে আমেরিকান শিল্পের ‘পুনর্জন্ম’ এবং আমেরিকাকে ‘আবার সম্পদশালী’ করার দিন হিসেবে স্মরণ করা হবে।
এই সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বাধার মুখে রয়েছে।
অন্যান্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে অশুল্ক বাধা আরও খারাপ অবস্থা তৈরি করেছে।
বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের মেধাসত্ত চুরিসহ অন্যান্য বিধিনিষেধ আরোপের অভিযোগ করেছেন তিনি।