যশোরের ভবদহ জলাবদ্ধ অঞ্চলের অধিকাংশ জমিতে বোরো চাষ ব্যাহত হওয়ায় সপ্তাহব্যাপি এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি। তারা বোরো চাষ ব্যাহত হওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দায়ী করেছে। অন্যদিকে কৃষি অফিস অসত্য তথ্য প্রদান করে সরকারকে বিভ্রান্ত করছে।

রবিবার (১৯ জানুয়ারি) নীল রতন ধর রোডস্থ অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেন ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব চৈতন্য কুমার পাল।

লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, ভবদহ অঞ্চলের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ লাঘবে ৫টি দাবিতে আগামী ২৪ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপি এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। দাবি বাস্তবায়ন না হলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

এ সময় ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, আহ্বায়ক রনজিত বাওয়ালী, উপদেষ্টা তসলিম-উর-রহমান, সদস্য জিল্লুর রহমান ভিটু ও অনিল বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন। 

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব চৈতন্য কুমার পাল সংবাদ সম্মেলনে জরুরিভিত্তিতে ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নের আহবান জানান। দাবিগুলো হচ্ছে-

১.

আমডাঙ্গা খাল সংস্কারে ইউ-ড্রেন ৩৩ ফুটের স্থলে কমপক্ষে ১০ ফুট বাড়িয়ে ৪৩ ফুট করতে হবে।

২. চলতি বোরো আবাদ সফল করার লক্ষ্যে ভবদহ স্লুইস গেট খুলে দিয়ে পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। এক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা অপরিকল্পিত তৎপরতা বন্ধ করে ফসল ফলানো নিশ্চিত করতে হবে।

৩. এখনই সম্ভাব্য বিলে টিআরএম চালু করতে হবে। এটা সমাধানের প্রধান উপায় হিসেবে আইনি দীর্ঘসূত্রিতার অবসান করতে হবে।

৪. নদীগর্ভে সকল অবৈধ দখলদার স্থাপনা উচ্ছেদ ও তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

৫. কৃষি ঋণ আদায় বন্ধ করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ ও দিনমজুর গরীব কৃষকদের খাদ্য দিতে হবে।

চৈতন্য কুমার পাল জানান, ভবদহ জলাবদ্ধ অঞ্চলে অধিকাংশ জমিতে বোরো চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না। কৃষি অফিস অসত্য তথ্য প্রদান করে সরকারকে বিভ্রান্ত করছে। বোরো চাষ হবার যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল তা নস্যাৎ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড দায়ী।

তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ভবদহ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের ঘোষণা দেন এবং আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দেন। 

এসব দাবির ভিত্তিতে আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের প্রকল্প গ্রহণ ও টেন্ডার করা হয়েছে। তবে খালের ইউ-ড্রেন অংশ ৩৩ ফুট চওড়া করায় যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা পানি নিষ্কাশনে সমস্যা হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিকল্পনা রয়েছে ভবিষ্যতে আমডাঙ্গা খালের স্লুইসগেট প্রশস্ত করার। সেক্ষেত্রে ইউ-ড্রেন কমপক্ষে আরও ১০ ফুট বাড়ানো দরকার। ভবিষ্যতে বাড়াতে গেলে নতুন সংকট ও অর্থ অপচয় হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে এই জনপদ ডুবে যাবার যে সম্ভাবনা তা মোকাবেলায় পানি নিষ্কাশনের সকল পথ উন্মুক্ত প্রয়োজন।” 

তিনি আরও বলেন, “দ্রুত পানি নিষ্কাশন করে বোরো চাষ করার লক্ষ্যে ভবদহ স্লুইসগেট থেকে ভাটিতে ভরাট হয়ে যাওয়া হরি নদী খননের জন্য আমাদেরকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৮টি খনন যন্ত্র প্রদান করা হয়। নদী খননের সাথে সাথে গেট খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সে সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে চলেছেন। ফসল ফলানোর জন্য উপদেষ্টা মহোদয়ের বাস্তবসম্মত প্রতিশ্রুতি ব্যর্থ করে দেওয়া হচ্ছে।” 

তিনি বলেন, “বিগত সরকারের আমলে স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থে টিআরএম প্রকল্প বাতিল ও পাম্প চালু করে নদীকে হত্যা করা হয়েছিল। এখনো সেই চক্র সক্রিয় এবং তারা সরকারের কাছে কিছু স্বাক্ষরসহ আবেদন করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। স্থানীয় পাউবো কর্তৃপক্ষের মধ্যে সেই ভূত চেপে আছে। সে কারণেই সরকারি সিদ্ধান্ত বানচাল হতে চলেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই মুহূর্তে ভবদহ স্লুইসগেট খুলে দিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার অব্যাহত রাখলে ফসল ফলানো সম্ভব হতে পারে।”
 
তিনি বলেন, “টিআরএম প্রকল্প গ্রহণ করা হবে মর্মে সরকারি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও দীর্ঘসূত্রিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। টিআরএম বিরোধীরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তৎপর। ফলে জনপদের মানুষের মধ্যে সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা অভিজ্ঞতা থেকে বলতে চাই, চলমান নদী খনন কাজের সাথে এখনই একটি বিলে টিআরএম চালু করা হোক। তা না করা গেলে যে খনন কাজ হচ্ছে তা আবার ভরাট হয়ে যাবে। ফলে অভয়নগর, মণিরামপুর, কেশবপুর, ডুমুরিয়ায় নদী-খাল সংস্কারের কাজ অর্থহীন হয়ে পড়বে। ফলে জরুরী ভিত্তিতে টিআরএম প্রকল্প গ্রহণ ও চালুর উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “পানিসম্পদ উপদেষ্টা যশোর সার্কিট হাউজে গণশুনানিতে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে তদারকি কমিটি গঠন করার জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছিলেন। জেলা প্রশাসক সে নির্দেশ উপেক্ষা করেছেন।”

ঢাকা/প্রিয়ব্রত/টিপু 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রকল প উপদ ষ ট র জন য সরক র গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেনে জেলেনস্কির বিকল্প নেতা খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র!

ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পদত্যাগ করা লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের একজন নেতা প্রয়োজন, তিনি আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। তিনি শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন এবং এই যুদ্ধ থামাতে পারবেন।’ খবর- সিএনএন

গণমাধ্যমের সামনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডার পর এ কথা বললেন তিনি। বাগবিতণ্ডার এ ঘটনাটি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে বিশ্বজুড়ে। ওই ঘটনার পর ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেটিও বাতিল হয়ে যায়। আর এর পরই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কোন পথে, তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।

এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। শুক্রবারের ওই ঘটনায় সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গড়া ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। 

যদিও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আবারও এক টেবিলে বসার ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া-দুই পক্ষই আলোচনায় না বসলে যুদ্ধ থামবে না। হোয়াইট হাউসে শুক্রবার ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিতণ্ডার পর থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আর কথা হয়নি। যুদ্ধ থামানোর জন্য রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনতে হবে। তবে তাদের প্রতি বৈরী মনোভাব রাখলে, মস্কোকে আলোচনায় যুক্ত করা সম্ভব হবে না। কোনো চুক্তি করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মনোভাবই দেখিয়ে আসছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, সবকিছু আবার শুরু হতে পারে। আশা করি, তিনি (জেলেনস্কি) এটা বুঝতে পারবেন যে আমরা আসলে আরও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর আগে, তাঁর দেশকে সাহায্যের চেষ্টা করছি।’
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ