আশ্রয়ণে তালা দিয়ে উধাও বাসিন্দারা
Published: 19th, January 2025 GMT
দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ নান্দাইল উপজেলার চর ভেলামারী আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুই-তৃতীয়াংশ ঘর। এসব ঘর বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। জমি ও বাড়ি আছে এমন লোকজনও বরাদ্দ পেয়েছেন। যে কারণে আশ্রয়ণের অনেক ঘর শুরু থেকেই তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। আবার যারা বসবাস করছেন, তাদের অনেকের নামে বরাদ্দ নেই। রক্ষণাবেক্ষণ ও কর্মের ব্যবস্থা না থাকার কারণেও চলে গেছেন অনেকে।
চর ভেলামারী আশ্রয়ণ প্রকল্পটি নান্দাইল উপজেলার চর বেতাগৈর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বপাড়ে অবস্থিত। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে নির্মিত এ প্রকল্পে রয়েছে ৭৩টি ঘর। প্রতিটি ঘর তৈরিতে ব্যয় ২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। এসব ঘরে গৃহহীন, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, প্রতিবন্ধী ও অসহায় পরিবারের বসবাস করার কথা। ২০২২ সালের ২১ জুলাই প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হয়। ওইদিন প্রকল্পের আঙিনায় জেলা ও বিভাগীয় কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ঘরের দলিল ও চাবি হস্তান্তর করা হয়। তদারকির অভাবে প্রকল্পের বাসিন্দারা নানা ধরনের দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
সরেজমিন প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, ৭৩টি ঘরের মধ্যে মাত্র ২৫টিতে লোকজন বসবাস করছেন। বাকি ঘরগুলোর দরজায় তালা দেওয়া। যেসব ঘরে লোকজনের বসবাস আছে, সেসব ঘরের মধ্যে আবার অনেকটির বরাদ্দ বসবাসকারীদের নামে নয়। যাদের নামে বরাদ্দ, তারা শুরু থেকেই এখানে থাকেন না।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে আশ্রয়ণের বাসিন্দারা জানান, এসব ঘরের প্রকৃত মালিক এখানে বসবাস করেন না। তাদের মধ্যে অনেকেরই অবস্থা ভালো, গ্রামে তাদের নিজস্ব বাড়িঘর ও জমিজমা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৭৩ নম্বর ঘরের বরাদ্দ কামাল হোসেনের নামে। গ্রামে তাঁর জমিজমা ও পাকা ঘর রয়েছে। হানিফার নামে বরাদ্দ ৪৩ নম্বর ঘর, গ্রামে তাঁর বাড়িসহ ২ একর জমি রয়েছে।
প্রকল্পে বসবাসকারী তাহের মোড়ল জানান, প্রকল্পের আশপাশে কাজ করে খাওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। নেই ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা করার প্রতিষ্ঠান। তা ছাড়া বাড়ি, জমিওয়ালারাও অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে বরাদ্দ নিয়েছেন। তাদের অনেকেই এখানে বসবাস করছেন না।
আশ্রয়ণের বাসিন্দা আছির উদ্দিনের ভাষ্য, তাঁর নামে কোনো ঘর বরাদ্দ নেই। বিউটির নামে বরাদ্দ ঘরে থাকেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘যারা থাহে না তারা ঘর পাইছে, আমি থাহি আমার নামে ঘর নাই।’ আবদুল কুদ্দুস নামে একজন জানান, তাঁর নামেও ঘর বরাদ্দ নেই। শাকিল নামে একজনের ঘরে থাকেন তিনি। শাহিনুর জানান, জসিম উদ্দিনের ৬ নম্বর ঘরে বসবাস করেন তিনি। যার নামে বরাদ্দ, সেই জসিম উদ্দিনকে কখনও দেখেননি তারা।
জানা গেছে, প্রকল্পের শুরুতে ১১টি নলকূপ বসানো হয়েছিল। প্রতিটি নলকূপ বসানোর পর থেকেই বিকল হয়ে পড়ে আছে। নিজেদের প্রচেষ্টায় দু-একটি নলকূপ চালু রাখা সম্ভব হলেও তা থেকে ঘোলা পানি উঠছে। রাতে আশ্রয়ণ প্রকল্পে অপ্রতুল চারটি বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা থাকলেও এখন একটিও জ্বলে না। এ কারণে সন্ধ্যার পর সেখানে ভূতুড়ে অবস্থার সৃষ্টি হয়।
প্রকল্পের সভাপতি নাসির উদ্দিনের দাবি, একটি ড্রেন নির্মাণ ও নলকূপগুলো সচল করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে অনেকবার আবেদন করছেন; কিন্তু কাজ হচ্ছে না।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিন জানান, প্রকৃত ভূমি ও গৃহহীন লোকজন বরাদ্দ পায়নি বলেই ঘরগুলো তালাবদ্ধ থাকে। জানতে চাইলে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার বলেন, আশ্রয়ণের খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প র ব যবস থ উপজ ল অবস থ করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
পাবনায় পেঁয়াজের দাম মনপ্রতি বেড়েছে ৬০০ টাকা
পাবনায় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম মনপ্রতি দাম বেড়েছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। আর খুচরা বাজারে কেজিতে দাম বেড়েছে ২০ টাকা।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকালে পাবনার কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে এই তথ্য জানা যায়। সরেজমিনে পাবনার বড় বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিমণ পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা। অথচ দুই সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছে ১২০০ টাকায়।
অন্যদিকে, খুচরা বাজারে বর্তমানে এক কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৩০-৩৫ টাকা।
আরো পড়ুন:
পেঁয়াজের দামে ক্রেতা খুশি, লোকসানে কৃষক
এক লাফে পেঁয়াজের দাম কমলো কেজিতে ১০ টাকা
এ বিষয়ে পাইকারি ব্যবসায়ী আশরাফ আলী বলেন, ‘‘বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ নাই। আবার যে আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজ ছিল, সেটাও শেষ। এ কারণে চাহিদা বেড়ে গেছে। বাজারে এখন হালি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে, যেটা সারা বছর ঘরে রাখা যায়। তাই কমবেশি সবাই পেঁয়াজ কিনে মজুত করছেন। ফলে দাম কিছুটা বেড়েছে।’’
খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা আব্দুল মমিন বলেন, ‘‘গত সপ্তাহে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। আজ প্রতিমণ পাইকারি কিনলাম ২০০০ টাকায়। তাহলে কেনা পড়ল ৫০ টাকা কেজি। আমরা ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করব। বেশি দামে কিনলে তো বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে। লোকসান দিয়ে তো ব্যবসা করা যাবে না।’’
আরিফুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘‘হঠাৎ পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে যদি কেজিতে ২০ টাকা বাড়ে তাহলে সামনে আরো কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। সিন্ডিকেট চক্র আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা পেঁয়াজ কিনে মজুত করে রাখছে।’’
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম প্রামাণিক বলেন, ‘‘পাবনায় এবার পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫২ হাজার ৮০১ হেক্টর জমি। আবাদ হয়েছে ৫৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। জেলায় পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬৩৭ মেট্রিক টন। মজুদ রয়েছে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন।’’
তিনি বলেন, ‘‘মুড়িকাটা পেঁয়াজ শেষ হওয়ায় বাজারে চাহিদা বেড়ে গেছে। যে কারণে দামও কিছুটা বেড়েছে। তবে ৫০ টাকা কেজি পেঁয়াজ এটা স্বাভাবিক দাম। কৃষক অন্তত বাঁচবে। এর চেয়ে বেশি হলে তখন সেটা অস্থিতিশীল হবে। মজুতদার সিন্ডিকেট প্রতিরোধে জেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিদপ্তর যৌথভাবে কাজ করব।’’
ঢাকা/শাহীন/রাজীব