উদ্ভাবনী শক্তিতে গুগল অপ্রতিরোধ্য। তাবৎ বিশ্বকে নির্ঘুম করে ছেড়েছে চ্যাটবট। নতুন করে সার্চগুরু গুগল জানাল, তারা জেমিনির দ্বিতীয় সংস্করণ নিয়ে হাজির। কী নতুনত্ব, তা নিয়ে লিখেছেন সাব্বিন হাসান
উদ্ভাবনী গুগল জেমিনির নতুন সংস্করণে ২.০ প্রজেক্ট অ্যাসট্রো, গবেষণা, জেমিনি ২.০ ফ্ল্যাশ ছাড়াও বেশ কিছু সুবিধা যুক্ত হয়েছে। ধীরে ধীরে মানবিক হস্তক্ষেপ ছাড়াই সব ধরনের কাজে পারদর্শিতা দেখাবে জেমিনি।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) দুনিয়ায় এখন দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে গুগল উদ্ভাবিত চ্যাটবট জেমিনি। বলতে গেলে, জেমিনির দ্বিতীয় জেনারেশনের সুবিধা সামনে আনল গুগল। উন্মোচন করল জেমিনি ২.
তাবৎ বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগল উদ্ভাবিত এআই চ্যাটবট জেমিনির দ্বিতীয় সংস্করণ উন্নয়ন প্রসঙ্গে জানিয়েছে, নতুন সংস্করণ এতটাই শক্তিশালী হবে যে মানুষের সহায়তা ছাড়া বহু কাজ নির্বিঘ্নে করে ফেলতে পারবে, ঠিক যেমনটা চাওয়া হবে। অর্থাৎ নব্য উদ্ভাবনে এমন কিছু ফিচার সামনে আসছে, যা কল্পনার জগৎকেও রীতিমতো হার মানাবে। দ্বিতীয় সংস্করণে নিজেদের প্রতিযোগী ওপেনএআই ও মেটা এআই প্রযুক্তির থেকে অনেকটা এগিয়ে গেছে, তা প্রায় নিশ্চিত করে বলা যায়।
যা কিছু নতুন
ইউনিভার্সেল অ্যাসিস্ট্যান্ট হয়ে কাজ করবে জেমিনির দ্বিতীয় সংস্করণ, যা নিজস্ব চিন্তাশক্তির ওপর নির্ভর করে কাজ করবে। গ্রাহকের চাহিদা ও পছন্দকে জেমিনি নিখুঁতভাবে বুঝতে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। এমনকি গ্রাহকের নির্দেশনা বুঝে ঠিকঠাক তাঁর মতো করে ভেবেচিন্তে কাজ করবে।
lনতুন ফিচার, যা মাল্টিমোডাল একাধিক কাজ করতে সক্ষম। অর্থাৎ প্রম্পট অনুসারে টেক্সট, ইমেজ, ভিডিও একসঙ্গে কম্পাইল করে এবং একটি বিশেষায়িত রিপোর্ট দিতে পারবে।
lনতুন সংস্করণের সবচেয়ে বড় সুবিধা হবে এজেন্ট সুবিধা, যা বাস্তবে জেমিনি ২.০ সংস্করণের চলতি নানা ধরনের সফটওয়্যারের সমন্বিত রূপ। একসঙ্গে বহুমাত্রিক কাজ করার সক্ষমতা দেখাবে এজেন্ট।
সংস্করণে নতুন
আগেই গুগল জানিয়েছিল, জেমিনি নিয়ে তারা ধারাবাহিক মানোন্নয়নে কাজ করে যাবে। যার বাস্তবায়ন হবে ধাপে ধাপে। মূলত তিনটি সুনির্দিষ্ট ধাপে কাজ করবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স টুল– আলট্রা, প্রো আর ন্যানো। তিন মোডে আলাদা দক্ষতা পাওয়া যাবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এআই প্রযুক্তির বহু ধরনের কাজে আলট্রা মোডে লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (এলএলএম) ব্যবহৃত হয়। প্রো মোডে তুলনামূলক ছোট ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল কাজ করে। অনদিকে, ন্যানো মোড কাজ করে তুলনামূলক ছোট ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলে। কম্পিউটার ও স্মার্টফোনে সংস্করণে কমান্ড প্রম্পটে ন্যানো মোডে পরিচালিত হয়।
গুগল ক্লাউড এআই প্রযুক্তি উন্নয়ন বিভাগের সহসভাপতি জানান, নতুন ধরনের এআই মডেলকে সাধারণত আগে থেকেই প্রশিক্ষিত করা হয়। ঠিক তারপরই সে তার দক্ষতা উপস্থাপন করতে পারে। টুলকে প্রশিক্ষিত করতে গুগল তাদের বিশেষ টেনসর প্রসেসিং ইউনিট (টিপিইউ) ব্যবহার করবে। সঙ্গে থাকবে গ্রাফিকস প্রসেসিং ইউনিটও (জিপিইউ)।
নির্মাতা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জিপিইউর জন্য এনভিডিয়ার বিখ্যাত এইচ১০০ চিপ নির্ধারণ করেছে গুগল, যা মূলত জেনারেটিভ এআই উদ্দেশ্যেই নির্মিত। কার্যত ডেটা সেন্টার থেকে স্মার্টফোন– সবখানে সহজেই নিজের দাপুটে সক্ষমতা প্রকাশ করবে জেমিনি।
কী কী সুবিধা
যারা গুগল জেমিনির দ্বিতীয় সংস্করণের বিশেষ সাবস্ক্রিপশন নেবেন, তারা জেনারেটিভ এআই সুবিধা পাবেন। সঙ্গে পাবেন গুগল ওয়ানের টু-টেরাবাইট ক্লাউড সেবা। কর্তৃপক্ষের উন্নয়ন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বহুমাত্রিক নতুন ফিচারে সমৃদ্ধ জেমিনি, যার নাম জেমিনি (২.০) আলট্রা। প্রম্পট রিসার্চ, লজিক্যাল রিজনিং, কোডিং ছাড়াও বহু জটিল কাজ দ্রুত আর খুব সহজে সমাধান দিতে পারে চ্যাটবট জেমিনি।
নির্দেশ বা প্রম্পটের ওপর নির্ভর করে নির্ভুল সদুত্তর দিতে জেমিনির এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি পারদর্শী, যা প্রমাণিত। টুলটি গৃহশিক্ষকের ভূমিকাতেও সুদক্ষ। সারাবিশ্বের ১০৬টির বেশি দেশে ইংরেজি ভাষায় গুগল জেমিনি অ্যাডভান্স কাজ করবে।
নির্মাতা সূত্রে জানা গেছে, গ্রাহকের চাহিদা বিবেচনায় আরও ভাষার সংযোজন করতে প্ল্যাটফর্মটি নিয়মিত কাজ করে চলেছে। শুরু থেকেই চ্যাটজিপিটির সঙ্গে প্রতিযোগিতার আভাস দিয়ে কাজ করছে জেমিনি এআই। এ দাবি করে গুগল বলেছে, মানুষের থেকেও বুদ্ধিমান হবে জেমিনি। যার উন্নয়ন হবে ধাপে ধাপে, কিন্তু তা হবে পরীক্ষামূলক ও বাস্তবে প্রমাণযোগ্য।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চ য টবট জ ম ন র দ ব ত য় স স করণ ক জ করব ক জ কর ন নয়ন ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের সময় বাড়ল
শেয়ারবাজারের নেগেটিভ ইকুইটি বা ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের সময় বাড়ানো হয়েছে। শর্তসাপেক্ষে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শেয়ারবাজারের ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতির ক্ষেত্রে ছাড় পাবেন।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এক জরুরি সভায় আজ বৃহস্পতিবার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এত দিন বিষয়টি নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছিল। এ কারণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) ও মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএসইসির জরুরি সভা শেষে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিএসইসি জানিয়েছে, এই সুবিধা নিতে হলে প্রত্যেক ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংককে তাদের ঋণাত্মক ঋণ হিসাব বা অনিরূপিত (আনরিয়ালাইজড) লোকসানের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতির সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। সেই পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ ৩০ জুনের মধ্যে কমিশনে জমা দিতে হবে। যারা এই পরিকল্পনা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা দেবে, তারা নিরাপত্তা সঞ্চিতির ক্ষেত্রে এই সুবিধা পাবে।
শর্তসাপেক্ষে এই সুবিধা দেওয়ার কারণ হিসেবে জানা যায়, ঋণাত্মক ঋণ হিসাব নিয়ে একেক প্রতিষ্ঠানের সমস্যা একেক রকম। কারও নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ বা প্রভিশনিং করতে হবে বেশি, কারও কম। এই বাস্তবতায় শর্তসাপেক্ষে এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। অতীতে সর্বজনীনভাবে বারবার সময় বাড়ানোর পরও প্রতিষ্ঠানগুলো এই সমস্যার সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এ কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো যেন নিজে থেকে এই সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেয়, সে জন্য শর্ত আরোপ করেছে বিএসইসি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সার্বিকভাবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণে সময় বাড়ানো হলেও পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিকল্পনাসাপেক্ষে প্রতিষ্ঠানভেদে এই সময়সীমা আরও বাড়তে পারে।
ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের এই সমস্যা তৈরি হয় মূলত ২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের পর। ওই ধসের পর শেয়ারের ব্যাপক দরপতনের কারণে শেয়ারের বিপরীতে দেওয়া বিপুল ঋণ আর আদায় করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানগুলো। আবার শেয়ারের বাজার মূল্য কমে যাওয়ায় শেয়ার বিক্রি করেও পুরোপুরি ঋণ সমন্বয়ের সুযোগ নেই। সে জন্য এসব ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের বিপরীতে এত দিন নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশনিংয়ে ছাড় পেয়ে আসছিল প্রতিষ্ঠানগুলো। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে এই সময় শেষ হয়। ফলে নিয়ম অনুযায়ী, ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে ঋণাত্মক ঋণের বিপরীতে শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা দেখা দেয়। আবার ঋণ সমন্বয় করতে গিয়ে ঋণাত্মক ঋণ হিসাবে থাকা শেয়ার বিক্রির চাপও তৈরির সম্ভাবনা তৈরি হয়। উভয় ক্ষেত্রেই বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে ঋণাত্মক ঋণ হিসাব সমন্বয়ে আরও সময় চায় ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো। ডিবিএ ও বিএমবিএর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বিএসইসির হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়। এ নিয়ে শেয়ারবাজারের শীর্ষ ২০ ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীরা গত মঙ্গলবার বিএসইসির সঙ্গে বৈঠকও করেন।
বিএসইসিতে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকের পর এ বিষয়ে বিএসইসির পক্ষ থেকে সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে বিএসইসির সঙ্গে বৈঠকে শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউসের প্রতিনিধিরা ২০৩০ সাল পর্যন্ত ঋণাত্মক ঋণ হিসাব ও লোকসানে থাকা ডিলার হিসাবের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতিতে ছাড়ের দাবি জানিয়েছিলেন।