খাদ্যগুদাম ধান কিনছে প্রতি মণ ১ হাজার ৩০০ টাকা। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা ১ হাজার ৩২০ টাকা মণ দরে বাড়ি থেকে নিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া গুদামে মিটার পাস করে ধান দিতে হয়। এমন নানান কারণে গুদামে ধান দিতে কৃষকের আগ্রহ নেই। কথাগুলো রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মিলনপুরের কৃষক মশিয়ার রহমান জাদু ও কুমারগাড়ীর মকবুল হোসেনের। দাম কমতে শুরু করেছে, এমন ভাবনা থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি সময় শেষের আগে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্র কিছুটা পূরণ হবে বলে আশা কর্মকর্তাদের।
উপজেলার ভেন্ডাবাড়ি ও পীরগঞ্জ এলএসডি খাদ্যগুদামে গত ২৮ নভেম্বর ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। ৫৩ দিনে এক কেজি ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। মশিয়ার ও মকবুলের মতো কৃষকরা গুদামে যেতে আগ্রহ দেখাননি। কৃষকের বাড়ি থেকেই ক্রেতারা ধান সংগ্রহ করায় গতকাল রোববার বালুয়াহাটের ধানহাটা ক্রেতা-বিক্রেতাশূন্য দেখা যায়। অথচ এদিন ছিল হাটবার।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি মৌসুমে সরকারিভাবে দুটি গুদামে ১ হাজার ৬৫৫ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে মাইকিং, লিফলেট বিতরণসহ লোকবল দিয়ে ক্যাম্পেইন চালানো হয়েছে। তবুও সাড়া মেলেনি। খোলাবাজারের চেয়ে সরকারি গুদামে দাম কম হওয়ায় এমন পরিস্থিতি বলে মত সংশ্লিষ্টদের। 
এ সময় চাল সংগ্রহেও আশার খবর নেই। চলতি মৌসুমে চাল সংগ্রহের জন্য সাতটি অটো রাইসমিলসহ ৫৬টি হাসকিং চাতালের সঙ্গে খাদ্যগুদামের চুক্তি হয়েছে। চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার তিন ভাগের এক ভাগ এ পর্যন্ত পূরণ হয়েছে। চলতি মৌসুমে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ১৪৩ টন। গত ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ১ হাজার ৮১০ টন চাল সংগ্রহ হয়েছে। এতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
উপজেলার ভেন্ডাবাড়ি ও পীরগঞ্জ খাদ্যগুদামে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব না হলেও চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অমুল্য কুমার সরকারের। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত চাল সংগ্রহ হয়েছে ১ হাজার ৮১০ টন। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে এক কেজি ধানও সংগ্রহ হয়নি। সরকারিভাবে চালের কেজি ৪৭ এবং ধানের দাম ৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
উপজেলার চাতাল মালিকরা বলছেন, সরকারিভাবে ধান ক্রাসিংয়ে অটো রাইস মিল মালিকদের বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এতে হাসকিং চাতাল ব্যবসায়ীরা বঞ্চিত হয়েছেন। ২০১৮ 
সালে উপজেলায় ২১০টি হাসকিং চাতাল ছিল। বর্তমানে রয়েছে ৯৮টি। বরাদ্দ না পাওয়ায় দিন 
দিন ব্যাংকে ঋণের পরিমাণ বাড়ায় অনেকে দেউলিয়া হয়ে গেছেন।
খোলাবাজারে প্রতি কেজি ধান ৩৬ থেকে ৩৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে উপজেলার চাতাল মালিক সমিতির সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, খাদ্যগুদামে ধান দিতে কৃষককে আগে আবেদন করতে হয়। সরকারি দর ৩৩ টাকা। সাধারণ কৃষক, খুচরা ব্যবসায়ী এবং চাতাল মালিকরা লোকসান করে তো গুদামে ধান দেবেন না। চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে। যাদের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে, তারা জরিমানা ও সরকারের সঙ্গে চুক্তি ঠিক রাখতে লোকসানেও চাল দেবেন।  
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চাতাল মালিকের ভাষ্য, অনেকে দীর্ঘদিন কোনো বরাদ্দ পাননি। ব্যবসা না থাকায় ব্যাংক ঋণ বেড়ে যাওয়ায় চাতাল বন্ধ করে দিয়েছেন। অতীতে সরকারের লোকজনের সঙ্গে অটো রাইসমিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে সব বরাদ্দ নিয়ে গেছেন। দলীয় প্রভাবের কারণে বরাদ্দে বৈষম্য ছিল। এতে 
হাসকিং চাতাল মালিকরা বঞ্চিত হয়েছেন। বর্তমানে সরকারি দর খোলাবাজারের চেয়ে কম। সে কারণে ধান সংগ্রহ হচ্ছে না।
এ বিষয়ে পীরগঞ্জ এলএসডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফ হোসেন বলেন, বাজারে ধানের দাম কমে আসছে। এতে খাদ্যগুদামে ধান আসবে, এখনও সময় আছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শর্ত সাপেক্ষে চুক্তি রয়েছে, তাই চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: খ দ যপণ য ল ম ল কর উপজ ল র প রগঞ জ সরক র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেনে জেলেনস্কির বিকল্প নেতা খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র!

ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পদত্যাগ করা লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের একজন নেতা প্রয়োজন, তিনি আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। তিনি শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন এবং এই যুদ্ধ থামাতে পারবেন।’ খবর- সিএনএন

গণমাধ্যমের সামনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডার পর এ কথা বললেন তিনি। বাগবিতণ্ডার এ ঘটনাটি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে বিশ্বজুড়ে। ওই ঘটনার পর ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেটিও বাতিল হয়ে যায়। আর এর পরই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কোন পথে, তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।

এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। শুক্রবারের ওই ঘটনায় সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গড়া ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। 

যদিও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আবারও এক টেবিলে বসার ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া-দুই পক্ষই আলোচনায় না বসলে যুদ্ধ থামবে না। হোয়াইট হাউসে শুক্রবার ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিতণ্ডার পর থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আর কথা হয়নি। যুদ্ধ থামানোর জন্য রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনতে হবে। তবে তাদের প্রতি বৈরী মনোভাব রাখলে, মস্কোকে আলোচনায় যুক্ত করা সম্ভব হবে না। কোনো চুক্তি করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মনোভাবই দেখিয়ে আসছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, সবকিছু আবার শুরু হতে পারে। আশা করি, তিনি (জেলেনস্কি) এটা বুঝতে পারবেন যে আমরা আসলে আরও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর আগে, তাঁর দেশকে সাহায্যের চেষ্টা করছি।’
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ