পিরোজপুরের নাজিরপুরের দীর্ঘা ইউনিয়নের দীর্ঘা বাজার উন্নয়নের কাজ না করেই বিল তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। 
এলজিইডির তত্ত্বাবধানে পিরোজপুর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ২০২৩ সালের দরপত্রের মাধ্যমে বাজার উন্নয়নের কাজ পায় মাটিভাঙ্গার মাহমুদকান্দা এলাকার এস এস এন্টারপ্রাইজ। ওই প্রতিষ্ঠান কাজটি পিরোজপুর শহরের জাহিদুল ইসলাম অংশুকে দেয়। কাজের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ কোটি ১৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। ২০২৪ সালের ১২ এপ্রিল কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কাজের আওতায় রয়েছে দীর্ঘা বাজারের রাস্তা, টিউবওয়েল, টোলঘর ও বাজারের ঘাটলা নির্মাণ। 

সরেজমিন দেখা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শুধু একটি নলকূপ বসিয়েছে। এ ছাড়া সড়কে অল্প কিছু পাথর এনে ফেলে রাখা হয়েছে। নামমাত্র কাজ করলেও এরই মধ্যে ৮৩ লাখ ৮৩ হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার। সাবেক উপজেলা প্রকৌশলী জাকির হোসেন মিয়া ও জেলা এলজিইডির সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তার হাওলাদারের সহযোগিতায় ঠিকাদার বিল তুলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 
ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে বাজার উন্নয়নের কাজ ফেলে রাখায় দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। একটি টিউবওয়েল বসানো হয়েছে। তার ফ্লোর পাকা করা হয়নি। ফলে জায়গাটি সবসময় স্যাঁতসেঁতে থাকে। ময়লা পানি পান করা যায় না। অনেকেই পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। 

একই অভিযোগ করেন দীর্ঘা বাজার কমিটির সভাপতি আশীষ চন্দ্র হালদার। তিনি জানান, রাস্তার ইট তুলে ফেলে রাখা হয়েছে। বালু উড়ে দোকানের ভেতরে প্রবেশ করে মালপত্র নষ্ট হচ্ছে। কর্তৃপক্ষকে বলা হলেও কাজ হয়নি। অতিদ্রুত এ বাজার উন্নয়নের কাজ শেষ করা দরকার বলে জানান এ ব্যবসায়ী।

জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী রণজিৎ দে জানান, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তার হাওলাদার এ কাজের বিল পরিশোধ করেছেন।
সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক সাইফুল ইসলাম বলেন,  কাজটি পিরোজপুরের ঠিকাদার জাহিদুল  ইসলাম অংশুর কাছে  বিক্রি করেছেন। তাঁকে কাজ শেষ করতে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। 
এ বিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদার জাহিদুল 
ইসলাম অংশুর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। সাড়া না দেওয়ায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

দিনে খাবারের দোকান বন্ধ রাখতে হুঁশিয়ারি, দুর্ভোগ

রমজানের ‘পবিত্রতা’ রক্ষায় দেশের বিভিন্ন স্থানে দিনে খাবারের দোকান খোলা রাখায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে কঠোর সমালোচনা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে প্রশাসনকে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। নিরাপত্তার কথা ভেবে এসব জায়গায় দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন অসুস্থ ব্যক্তি, শিশু ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা। ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন বিপাকে।

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌর বাজারে রমজানে দিনে হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা রাখলেই ৩ হাজার টাকা জরিমানার ঘোষণা দিয়ে নোটিশ দিয়েছে স্থানীয় বণিক সমিতি। বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত  বাজারের হোটেল-রেস্তোরাঁ ও চায়ের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে ছেংগারচর পৌর সমবায় সমিতি। আদেশ অমান্যকারীদের জরিমানা করা হবে।

নোটিশে সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান লস্করের স্বাক্ষর রয়েছে। একই রকম আদেশ জারি করেছে উপজেলার সুজাতপুর বাজারের বণিক সমিতি। তবে এই বাজারে খাবারের দোকান খোলা রাখলে জরিমানা হবে ১ হাজার টাকা। 

ছেংগারচর  পৌর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, হোটেল, রেস্তোরাঁ ও চায়ের দোকানগুলো বন্ধ। চর অয়েস্টার থেকে ছেংগারচর বাজারে চিকিৎসা নিতে আসা রহমত মিয়া (৬৫) খাবার খেতে গিয়ে দেখেন, হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ। তিনি বলেন, রোগীর জন্য এটা খুব কষ্টকর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেস্তোরাঁ ও চা ব্যবসায়ীরা জানান, ব্যবসা বন্ধ থাকায় রোজগার বন্ধ। এবার ঈদ করা তাদের জন্য কষ্টকর হবে। ছেংগারচর পৌর বণিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আব্দুল মান্নান দোকান বন্ধের আদেশ এবং জরিমানার নির্দেশনা দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, ‘বিষয়টি জানি না। বণিক  সমিতির সঙ্গে কথা বলে জানাতে পারব।’

এদিকে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এতে দেখা যায়, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় হাজী শরীয়তুল্লাহ সমাজকল্যাণ পরিষদের প্রতিনিধি ও হাজী শরীয়তুল্লাহর বংশধর পীরজাদা হানজালা রমজান মাসে দিনে খাবারের দোকান খোলা রাখার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। রমজান শুরুর আগে তিনি এই ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।  ভিডিওতে হানজালাকে বলতে শোনা যায়, ‘রমজানের হেফাজত করা প্রতিটি মুসলমানের ইমানি দায়িত্ব। এ জন্য রমজান মাসকে কেন্দ্র করে শিবচরের ১৯টি ইউনিয়নে হাজী শরীয়তুল্লাহ সমাজকল্যাণের লোকজন কাজ করবে। এটা বাংলাদেশ, এটা ভারত নয়, মনে রাখতে হবে। রমজান মাসে সকালে চায়ের দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁ খোলা থাকবে– এটা হতে পারে না। তার সঙ্গে এটা হাজী শরীয়তুল্লাহর মাটি। এখানে এ কাজ হতে পারে না, হতে দেওয়া হবে না।’ ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি আপনাদের দোকান দিনে বন্ধ করতে ব্যর্থ হন, তাহলে আমাদের নেতৃবৃন্দ দোকান বন্ধ করতে বাধ্য হবে।’ তিনি নারীদের ‘বেপর্দায়’ বাজারে ঘোরাফেরা করতে নিষেধ করেন।

এ বিষয়ে হানজালা সমকালকে বলেন, ‘রমজান সিয়াম সাধনার মাস। এ মাসে যদি কেউ দিনে চা-সিগারেট বা অন্য কিছু খায়, বিষয়টা অনেক দুঃখজনক।’ এই ঘোষণায় অন্য ধর্মের মানুষরা বিপাকে পড়বেন কিনা– জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অন্য ধর্মের যারা আছেন, তারা তাদের মতো করে চলবেন, তাদের মতো করে খাবেন। আমার বার্তা ছিল মুসলমানদের প্রতি। তারা যেন এ মাসে বেহায়াপনা না করেন।’ বেহায়াপনা বলতে কী বুঝিয়েছেন তা জানতে চাইলে বলেন, অন্যান্য মাসে চায়ের দোকানে আড্ডা কিংবা বেহায়াপনা চলে। এটা বন্ধে কথা বলেছি।

এ বিষয়ে শিবচরের ইউএনও পারভীন খানম বলেন, কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীর মাধ্যমে এ বিষয়ে জানতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবসায়ী অভিযোগ করেননি। কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন মতলব ও শিবচর প্রতিনিধি)

সম্পর্কিত নিবন্ধ